অ্যাটম বোমা এআইএমআইএম অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে

0
521

১) অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে আগমন হল অন্ধ্রপ্রদেশের কট্টর মৌলবাদি মুসলমান দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমেন(এআইএমআইএম) – এর এবং আগামী বিধানসভা ভোটে ভাগ্য নির্ধারণ করতে নামছে। নামটি সম্ভবত পাঠকদের কাছে নতুন নয় কারণ দলের প্রধান নেতা জনাব আসাদ উদ্দিন ওয়েসি ও তাঁর ভাই আকবর উদ্দিন ওয়েসি৷ দুই ভাই-ই তাঁদের হিন্দু বিরোধি মানসিকতার জন্য সুবিখ্যাত! পনেরো মিনিটের জন্য পুলিশকে সরালে তাঁরা কি কি করতে পারে তার দূরেক্ষণ (video) কমবেশি সকলেই দেখেছেন এই উপমহাদেশে। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে নামার আগেই শাসক গোষ্ঠি তৃণমূলকে শাসিয়ে এআইএমআইএম গোষ্ঠির রাজ্য পর্যবেক্ষক অসীম ওয়াকার বলেছেন, আমাদের দলকে তুচ্ছ মনে করবেননা, ছোট হলেও কিন্তু আমরা অ্যাটম বোমার সমান! তিনি আরোও বলেছেন, শাসকদলের সঙ্গে জোট বেধে যেমন আমরা লড়তে রাজি আছেন তেমনি শাসকদলের বিরুদ্ধেও লড়তে পিছপা নই!

যদিও এ প্রসঙ্গে তৃণমূল বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে কোন উচ্চবাচ্য করেননি ঠিকই, কিন্তু মাননীয়ার তোষণ ও পোষণ নীতিতে কদলীতরুর ন্যায় পরিপুষ্ট সেই মুসলমান সম্প্রদায় কাকে গ্রহন করবে সেটা সহজেই অনুমেয়!

প্রশ্ন হচ্ছে মাননীয়া কি তাঁর সযত্নে লালিত বাগানে অন্য কারুর হস্তক্ষেপ সহ্য করবেন? করলে কি তাঁর হিন্দু ভোটদাতাদের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে? নির্বাচনে জিতলে কি সমীকরণ হবে মন্ত্রিত্বে? নির্বাচনে আসন সমীকরণই বা কি হতে পারে? আর মাননীয়া যদি এআইএমআইএম গোষ্ঠির প্রস্তাব মেনে না নেন তাহলে তাঁর দুধেল গাইদের দৃষ্টি ও সমর্থনকে নিয়ন্ত্রন করবেন কি করে? মাননীয়া কি শেষমেষ জাঁতাকলে পড়লেন?

—————————————

২) কাফে কফি ডে-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণার জামাই ভি জি সিদ্ধার্থ দুদিন আগে গত সোমবার রাত্রি ভ্রমণে বেরিয়ে নেত্রাবতি নদীর ওপর একখানি নব্যনির্মিত সেতু দর্শনার্থে শকটযান (car) থেকে নেমে সেই যে অদৃশ্য হলেন ৩৬ ঘন্টা ধরে তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর আজ সকালে তাঁর প্রানহীন দেহ মিললো ম্যাঙ্গালোরের কাছে নেত্রাবতি নদীর উপরে ওই সেতু থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরত্বে!

আত্মহননের পূর্বে তিনি নিজের কোম্পানির কর্মীদের উদ্দেশ্যে একখানি পত্র লেখেন। তাতে বর্ণিতঅ আছে যে কিভাবে তাঁকে দুই বছর পূর্বে আয়কর কার্যালয়ের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক হেনস্থা করেছিলেন। মাইন্ডট্রি নামক সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ হওয়ায় কাফে কফি ডের শেয়ারও অনেকটা পড়ে গিয়েছে। দুই বছর পূর্বে আয়কর আধিকারিক তাঁর কার্যালয়ে হানা দিলে ৪৮০ কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসায়ের দুটি প্রমান পাওয়া গেলে তিনি তা স্বীকারও করেন। তিনি তাঁর সংস্থার সমস্ত কর্মচারী, অংশীদার (share holders) ও সঞ্চালকগণকে (Directors) উদ্দেশ্য করে লিখিত ওই পত্রে ঋণদাতার সমুৎপীড়নের কথাও লিখেছিলেন। আয়কর আধিকারিক ন্যায্য শুল্ক দাবি করবে, অংশীদার তার নিজস্ব পাওনা গন্ডাও বুঝে নেবে, ঋণদাতাও সচেষ্ট হবে ঋণ ও সুদের অঙ্ক আদায় করবে এটাই স্বাভাবিক। অপারগ ব্যক্তি বা সংস্থার উচিত নিজেকে সর্বস্বান্ত (bankrupt) ঘোষণা করা। শুধু আয়করকে দোষারোপ না করে, শাসক গোষ্ঠী, ধনাগার (bank) বা ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও অত্যাধিক সুদের হারকেও দোষারোপ করতে পারতেন।

কিন্তু ভি জি সিদ্ধার্থের এই মর্মান্তিক ব্যবসাগত ও ব্যক্তিগত পরিণতি থেকে সবার শিক্ষা নেওয়াও আবশ্যক। ব্যবসায়ীদের, কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দলসমূহ, এবং জনসাধারণেরও শিক্ষা প্রাপ্তি হওয়া একান্ত প্রয়োজনও। ব্যবসায়ের উন্নতিতে মূলধনের চাহিদা কেবলমাত্র ঋণ মেটাতে পারেনা, সম-মূলধণের (equity capital) বিকল্প অবিরাম ঋণগ্রহণ হওয়া অনুচিত। এই পরিস্থিতিতে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে যান। সিদ্ধার্থের পত্রে তাই-ই লেখা আছে। সর্বস্বান্ত হবার আগে অংশীদার, সঞ্চালকগণ ও ঋণদাতার বিশ্বাস অর্জন করে বিপদ কালে যাতে তাদের সকলের সাহায্য পাওয়া যেতে পারে সেই চেষ্টাই করা উচিত। অর্থের অভাব গোপন করলে সময়কালে অর্থদাতাদের সহায়তা পাওয়া যায়না। রাজনৈতিক ঘনিষ্টতা অনেক ব্যবসায়ীদের যেমন উত্থানের কারন তেমনি পতনেরও কারন হয়।

শাসক গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এই ঘনিষ্টতার বিরুদ্ধাচরন করবেই। সিদ্ধার্থের সঙ্গে কংগ্রেস দলের ঘনিষ্টতা সর্বজনবিদিত। কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠী ও আয়কর আধিকারিকদেরও অতিরিক্ত কর আদায় করার প্রবণতা বর্জন করা উচিত। করবিভাগের সংস্কারসাধন করলে ব্যবসা-বানিজ্যে বাস্তবিকতা ও নিত্য নতুন দ্বারোন্মোচন হবে। ধনবানের ওপর আয়করের নতুন বোঝা চাপিয়ে মোদি সরকার যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাজনিত প্রকল্পগুলিতে অর্থলগ্নি করছেন তাতে বর্তমানের দূর্বল অর্থনীতিতে কিরকম সাফল্য পাবে তা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে। বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো না হলেই হলো।

—————————————

৩) গত রবিবার রায়বেরেলি থেকে ফেরার পথে মুখোমুখি একটি ভারবাহী যানের (Truck) সঙ্গে সংঘাত ঘটলে দুর্ঘটনাগ্রস্থ হয় উন্নাওয়ের ধর্ষিতা ও তার পরিবার, দুজন মারাও যায়। মেয়েটি এখন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে জীবন প্রতিপোষক উপচারাধীনে (life support system) রয়েছে। দুর্ঘটনায় তদন্তের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা(CBI)কে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হল। গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা এখন ওই ভারবাহীযানের খোঁজ করছে। মঙ্গলবার যোগী আদিত্যনাথ দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছেন।

এই দুর্ঘটনায় ধর্ষিতার পরিবার দাবি করে, বন্দি বিধায়ক কুলদীপ সেনগারের নির্দেশেই তাঁদের গাড়িকে একটি ট্রাক ধাক্কা মেরেছিল। মঙ্গলবার সংসদে ও লখনউতে ঘটনার বিরুদ্ধে বিরোধীরা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, সরকার ধর্ষিতাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অভিযোগটিও ক্ষতিয়ে দেখবে গোয়েন্দা সংস্থা| তদুপরি ধর্ষনের অভিযোগও ক্ষতিয়ে দেখা হবে|

কুলদীপ সেনগার নির্যাতিতা বা তার পরিবারকে আরো বেশী ক্ষতি করতে পারে এই আশঙ্কায় পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন নির্যাতিতা, সেইমত নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হলে তারাই নাকি নির্যাতিতার সব গতিবিধি বিধায়ককে জানিয়ে দিত। ২০১৭ সালে নির্যাতিতার পিতাকে বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে পুলিশ বন্দি করেছিল, তিনি সেখানেই মারা যান, এর পরেই কুলদীপ সেনগারকে বন্দি করা হয়। এই বিধায়ক পরপর চার বার বানগেরমাউ কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিল, প্রথমবার বহুজন সমাজ পার্টি থেকে, তার পর দু বার সমাজবাদি পার্টি থেকে। ২০১৭ তে সেনগার বিজেপির হয়েই দাঁড়ায়। তার ভাই অতুলের হাতে নির্যাতিতার পিতা প্রহৃত হন, অতুলও এখন কারাবন্দী।