বিষ্ণুস্তোত্র

0
584

হে প্রসন্নবদন প্রাণনাথ! তুমি

চেয়ে আছো মুখপানে;

এ অকারণ করুণা, হে স্বামী,

জানিনি তো কভু আগে।

 

শুক্লার চাঁদ-বরণ তোমার

উড়নী-প্রান্ত ডাকে,

হাতটি রেখেছ’ বাড়িয়ে, তবুও

সাড়া দিইনি তো আগে।

 

তোমার দু’খানি আয়ত চক্ষে

প্রীতিমাখা ছবি জাগে,

কী অপূর্ব প্রেম হে তোমার –

চিনিনি তো প্রভু আগে।

 

তোমার গায়ের গাঢ় রঙ যেন

মহাশূণ্যকে আঁকে,

এমন মধুর হাসতে তোমায়

দেখিনি কখনো আগে!

 

তুমি প্রিয়ভাষী সিংহ, তুমি

প্রতাপী ও কমনীয়,

এমন ক’রে যে হাতছানি দাও

চোখে পড়েনি তো আগে!

 

ভ্রুকুটি করেছ’, হয়েছে তিলক

নবতর অনুরাগে –

তুমি যে আমারই, একথা কখনো

আসেনি তো মনে আগে।

 

হে প্রিয় কেশরী, উষ্ণীষ তব

দেখে মনে লাগে ধাঁধা,

চন্দ্র-সূর্য গ্রহ-তারকারা

মালা দিয়ে যেন গাঁথা।

 

চক্রের ছটা, পদ্মের আভা,

মৃত্যুর পাশে জন্ম;

শঙ্খনিনাদে আহ্বান তোলো,

গদা দিয়ে রাখো ধর্ম।

 

রাধিকার পাশে বংশী বাজিয়ে

ব্রজে করো তুমি লীলা;

প্রেমের ঠাকুর, পত্নীর টানে

সাগরে ভাসাও শিলা!

 

কংসের সভা তর্জন ক’রে

চাণূর করেছ’ বধ,

হরি-হরধনু হেলায় উঠিয়ে

হরেছ’ রামের মদ।

 

ত্রেতার ত্রাতা শ্রীরামচন্দ্র,

অথবা দ্বাপরে কৃষ্ণ–

যখনই ধর্ম গ্লানিতে ভুগেছে

(তুমি) ধরায় এসেছ’, বিষ্ণো!

 

তোমার রথে, হে মধুসূদন,

আমাকেও নাও তুলে;

এ মহাসমরে কখনোই যেন

তোমাকে না যাই ভুলে।

 

(আজ) কীক’রে তোমায় এ গান শোনাবো

বাঁধবো তা কোন্ রাগে –

তুমি সবই জানো, অন্তর্যামী

কেন ডাকো নি আমায় আগে!

 

হৃদয়পদ্মে পেতেছি আসন–

সেইখানে এসো স্বামী,

আনন্দময় দেবতার কাছে

আজ ধরা দেব’ আমি।।

 

পাদটীকাঃ

১. ‘রাম’ শব্দে এখানে নির্দেশ করা হচ্ছে জামদগ্ন্য রাম, অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার শ্রী শ্রী পরশুরামকে। মহর্ষি বাল্মীকি-কৃত রামায়ণের বালকাণ্ডে দেখতে পাই, শ্রীরামচন্দ্রহরধনু ভঙ্গ করবার পরে পরশুরাম তাঁর শক্তির প্রতি অবিশ্বাস ও অবজ্ঞা প্রকাশ ক’রে শ্রীরামচন্দ্রকে অন্য আরেকখানি ধনুতে জ্যারোপণ এবং শর যোজনা করতে বলেন। সঙ্গে জানান যে এই দ্বিতীয় ধনুখানি ছিল বিষ্ণুর। ক্ষত্রিয়কুলনাশন ভার্গব পরশুরামের হাত থেকে এই ধনুটিও অনায়াসে উত্তোলন ক’রে শ্রীরামচন্দ্র পরশুরামের তেজ হরণ করেন।

২. ‘বিষ্ণু’ শব্দের একবচন সম্বোধন পদে রূপ দাঁড়ায় ‘বিষ্ণো’।