করোনা আবহে জৌলুসহীন বিশ্বকর্মা পুজো

0
821

বঙ্গদেশ ডেস্ক: বিশ্বকর্মা পুজো আর মহালয়া এ বছর একইদিনে। রেডিওর প্রভাতী মহালয়ার অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পর গঙ্গার ঘাটে ঘাটে তর্পণের চেনা ছবিটাই দেখা গিয়েছে। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর জৌলুসটাই নেই। শিল্পাঞ্চল থেকে মাঝারি, ছোট কল কারখানা, ছবিটা মোটামুটি একই। বাস, মিনিবাস, অটো, রিক্সা স্ট্যান্ড নমো নমো করে পুজো হচ্ছে। বউবাজারের সোনাপট্টিও অন্য কথা বলছে না। আসলে করোনার ধাক্কায় বেসামাল ব্যবসা, বিশ্বকর্মা পুজোয় তারই ছাপ পড়েছে।

অন্যান্য বছর বিশ্বকর্মা পুজোর দিন দুয়েক আগে থেকেই কারখানা চত্বরে উৎসবের মেজাজ চোখে পড়ে। পুজোর দিন পরিবার-সহ কর্মীরা হাজির হন। খাওয়া দাওয়ার এলাহি আয়োজন থাকে। এবার সেসব উধাও, নিয়মরক্ষার পুজো হচ্ছে। ভারত চেম্বার অফ কমার্সের মতো কোম্পানিতেও পুজো হল ছোট করে। তাঁদের ফলতা, হুগলি ও হাওড়ার কারখানায় উৎপাদিত ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য বিদেশে রফতানি করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২০ শতাংশ ব্যবসা কমেছে। তাই পুজো এবার অনেক ছোট।
বউবাজারের সোনাপট্টির ছবিটা আরও করুণ। যেখানে অন্যান্য বছর ৭ হাজার পুজো হতো, এবার সেখানে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৩০০। অন্যান্য বছর পুজোর আগে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটির ব্যবসা হয়। এবার করোনার জেরে ব্যবসায় মন্দা। ৯০ শতাংশ সোনার কারখানা বন্ধ। তাই এবার নিয়মরক্ষার পুজোয় সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বউবাজারের সোনাপট্টিকে।

একই ছবি জেলাগুলোতেও। বহরমপুরের পঞ্চাননতলায় পাশাপাশি তিনটি ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন রয়েছে। তৃণমুল, কংগ্রেস ও সিটু ট্রাক ইউনিয়নগুলি ঘটা করে প্রতিবার বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করে। ওই তিন ইউনিয়নের পুজো ঘিরে শুরু হত প্রতিযোগিতা। কে কত বড় প্যান্ডেল করতে পারবে, কার পুজো মণ্ডপে কত বড় বিশ্বকর্মা হবে, কী ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে, কে কত বস্ত্র বিতরণ করতে পারবে তা নিয়ে সরগরম থাকত শহর। বসত তিনদিনের মেলা। কিন্তু এবার বিষাদের সুর। করোনা সক্রমণ কেড়ে নিয়েছে পুজোর প্রতিযোগিতা। অতিমারী রুখতে তিন শ্রমিক সংঘঠন অর্ধেকের বেশি বাজেট কমিয়ে দিয়েছে।

একই অবস্থা বাঁকুড়াতেও। এবছর বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া এবং বিষ্ণুপুর শিল্পাঞ্চলেও কোনক্রমে নিয়ম মেনে হচ্ছে বিশ্বকর্মা আরাধনা। গত কয়েক বছর ধরে শিল্পসংস্থাগুলি রুগ্ন হয়ে পড়ায় পুজোর জৌলুস কমলেও আনন্দে ঘাটতি ছিল না। কিন্তু চলতি বছর করোনা সংক্রমণের জেরে সেই উদ্যোগটুকুও উধাও হয়ে গিয়েছে। বাঁকুড়া শহরের বড় বাজার বাসস্ট্যান্ড, তামলিবাঁধ, লালবাজার-সহ শহরের একাধিক গ্যারেজ পট্টিতে বড় পুজো হত। এছাড়া বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা ও বড়জোড়া এবং গঙ্গাজলঘাটি এলাকায় ছোটবড় শিল্পসংস্থা থাকায় এই অঞ্চলে সবচেয়ে বড় উৎসব ছিল বিশ্বকর্মা পুজো। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। শিল্পাঞ্চলগুলির শ্রমিক থেকে রিকশা, টোটো চালক-সহ পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, প্রায় ৫০০ পুজোর মধ্যে এবার হাতে গোনা কয়েকটি হচ্ছে।