– নুপুর শর্মা
শাহীনবাগের পরে লালকেল্লা
এই ঘটনা অনভিপ্রেত কেউই বলতে পারবে না গত তিন মাস ধরে, তথাকথিত এই কৃষক বিক্ষোভে খালিস্তানি যোগসাজশের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। বিশেষত জাস্টিস ফর শিখ, একটি নিষিদ্ধ খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইন্ডিয়া গেট এবং লাল কেল্লায় খালিস্তান পতাকা উত্তোলনের জন্য পুরষ্কার অবধি ঘোষণা করেছিল। যদি কেউ মূর্খের স্বর্গে বসবাস না করেন তবে খালিস্তানপন্থী এই কৃষক আন্দোলনের হিংসাত্মক পরিণতির দিকটি সহজেই অনুমেয়।
হিংসাত্মক কার্যক্রম অবিরতভাবে চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এই বিক্ষোভের সুপ্রিম টার্গেট ছিল প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন লাল কেল্লায় খালিস্তানি পতাকা উত্তোলন।
সেকুলার সাংবাদিকদের খালিস্তানের দালালি
এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে ডিফেন্সিভ টোনে প্রথম উল্লেখ করেন এনডিটিভি সাংবাদিক, এবং এক্ষেত্রে ‘সাংবাদিক’ শব্দটি শ্রীনিবাসন জৈনের কারণে কলঙ্কিত হয়েছে।
As per NDTV’s @ghazalimohammad, the flag hoisted by protestors at the Red Fort is sacred to Sikhs, seen outside gurudwaras where it is called the Nishan Saheb. It did not (mercifully) replace the tricolour, which remains aloft at the Red Fort at an elevation.
— Sreenivasan Jain (@SreenivasanJain) January 26, 2021
শ্রীনিবাসন জৈন জাতীয় পতাকা অবমাননা করে সময় নিশান সাহেবের পতাকা উত্তোলনের বিষয়টি বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন। দেশের প্রতি, জাতির প্রতি তাঁর এই ছোট্ট দয়ালু মনোভাব দেখানোর জন্য অশেষ ধন্যবাদ! কিন্তু আমাদের দেশের অত্যুৎসাহী ধর্মনিরপেক্ষ সেকুলারবর্গ এই লজ্জাজনক ঘটনা বেশ উপভোগ করেছেন এবং এর হয়ে সাফাই গেয়েছেন।
আজ লিবারেলপন্থীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপরে ধর্মীয় পতাকা উত্তোলনকে ন্যায়সঙ্গত মনে করে সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করছে। প্রজাতন্ত্র দিবসের পুণ্য তিথিতে লালকেল্লার মতো জায়গাকে কালিমালিপ্ত করা হল, এরপর হয়তো সংসদ বা দেশের আরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এই ন্যক্কারজনক কাজটিকে অনেকেই ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করছেন কারণ যে আন্দোলনকারীরা নিশান সাহেবের পতাকা উত্তোলন করেছেন তারা খালিস্তানী, হিন্দু নন। এমনকি তারা যদি ইসলামপন্থীও হত তবে তাদের এই কাজকে ন্যায্য মান্যতা দেওয়া হত। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লি দাঙ্গার সময়, মুসলমানরা যদি জাতীয় পতাকার ঠিক পাশে লালকেল্লায় ইসলামিক পতাকা উত্তোলন করত, তবে খালিস্তানিদের কাজকে আজ যেভাবে ন্যায্যতা দান করা হচ্ছে সেকুলার মিডিয়া সেভাবেই ইসলামপন্থীদের কাজকে ন্যায্য বলে দাবি করতো।
হিন্দু ফল বিক্রেতাদের গেরুয়া পতাকা
২০২০ সালের এপ্রিলে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল যেখানে একজন ফল বিক্রেতা এবং তার সহযোগী, দলিত হিন্দু, তাদের দুজনকেই বিহারের বেগুসরাইয়ে স্থানীয় মুসলমানদের হাতে হেনস্তা হতে হয়েছিল। তাদের অপরাধ ছিল, তারা তাদের গাড়িতে একটি গেরুয়া পতাকা লাগিয়েছিল। এই দুজন দরিদ্র ব্যক্তি করুণভাবে বলেছিলেন, কীভাবে তাদের মাঝপথে থামানো হয়েছিল এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তাদের কাঠের গাড়িতে কেন গেরুয়া পতাকা লাগানো হয়েছে। তাদের আক্রমণাত্মক সুরে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “এই পতাকা লাগিয়ে তারা কী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে?”, মুসলমানদের দলটি এই দুজনকে রীতিমতো ভয় দেখিয়েছিল।
পুলিশ বেশ কয়েকটি ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ধারা যেমন ১৪৭(দাঙ্গা), ১৪৯ (বেআইনী সমাবেশ), ১৫৩ ক (ধর্মের নামে শত্রুতা প্রচার), ১৮৮ (অভব্য আচরণ) এবং ২৯৫ ক (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে আইন অমান্য) এর অধীনে অভিযোগ চাপানো হয়েছিল। এছাড়াও, জামশেদপুরে একদল ফল বিক্রেতাকে সিটি পুলিশ “বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কি অনুমোদিত হিন্দু ফল দুকান” লেখার জন্য আটক করেছিল। এছাড়াও, দোকানের ব্যানারগুলিতে দোকান মালিকদের ফোন নম্বর সহ হিন্দু দেবদেবতা – শিব এবং ভগবান রামের ছবিও টাঙানো হয়েছিল। হিন্দু দেবদেবীর প্রতি আস্থা বিষয়টি পুলিশ ভালোভাবে নেয়নি। এবং বিষয়টি সর্বপ্রথম টুইটারে তুলে ধরেন আহসান রাজি নামে একজন টুইটার ব্যবহারকারী। পুলিশ সেই টুইটের সূত্র ধরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ব্যানারগুলি সেই জায়গা থেকে সরিয়ে দেয়।কিন্তু ব্যক্তিগত পরিসরে স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস প্রদর্শন করার জন্য হয়রানি করা যথেষ্ট ন্যায়সঙ্গত?
সম্প্রতিককালে, চার জন ব্যক্তিকে তাজমহলের ভিতরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এই পদক্ষেপগুলি সেক্যুলার মিডিয়ার সাংবাদিকদের কাছে ন্যায়সঙ্গত কারণ তারা তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে যে ধর্মনিরপেক্ষ দেশে এই লজ্জাজনক কাজে কোনো ভুল নেই করে। সেইসব সেকুলার সাংবাদিকরা আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন কারণ দৃশ্যতঃ, লালকেল্লায় শিখ পতাকা উত্তোলনের আগে ভারতীয় পতাকা সরানো হয়নি।
উপরে তালিকাভুক্ত বিষয়গুলি সত্যিই প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা করে খালিস্তানী পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারের জন্য তুলে ধরা হয়নি। ওই বিক্রেতারা আদর্শগতভাবে তাদের ঠেলাগাড়িতে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করতেই পারে কারণ এর ফলে জাতিবিরোধী কোনো কাজ করা হচ্ছে না। তবে, লিবেরালরা লাল কেল্লায় শিখ পতাকা উত্তোলনে জাস্টিফিকেশনের জন্য অজুহাত খুঁজতে ব্যস্ত এবং দরিদ্র বিক্রেতাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে আক্রমণ করে তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গের আওয়াজ তুলতে তারা পটু। এভাবেই ভণ্ডামি দেখিয়ে চলে।
যখন তাদের প্রোপাগান্ডার উদ্দেশ্য সকালে কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, তখন তাদের পরিকল্পিত লক্ষ্যটি দ্রুত বদলে যেতে শুরু করে। যেমন প্রজাতন্ত্র দিবসের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, খালিস্তানীরা কতটা নিরীহ ও গোবেচারা ছিল এবং তাদের দাবিদাওয়া সঠিক সে নিয়ে ন্যারেটিভ নামতে শুরু করেছে। এবং হিন্দুদের অভিযোগ করার বিন্দুমাত্র অধিকার নেই এই জাতীয় লেখাপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে গিয়েছে। কারণ চারিদিকে এতো বেসামাল অবস্থার মধ্যেও প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে উত্তরপ্রদেশের ট্যাবলোর মাধ্যমে জয় শ্রী রাম মন্ত্রের মাঝে অযোধ্যার গৌরবময় সংস্কৃতি প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রজাতন্ত্র দিবসে আল্লাহু আকবর ধ্বনি
লাল কেল্লায় যখন শিখ পতাকা উত্তোলন করার বিষয়টি জনসমক্ষে এলো এবং লজ্জাজনক ঘটনাটিকে সকলেই খালিস্তানি আগ্রাসনের সুস্পষ্ট চিহ্ন হিসাবে কটাক্ষ করতে শুরু করলো। লাল কেল্লা দখলের ঘটনা থেকে বহুলাংশে স্পষ্ট যে খালিস্তানী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বহু আগেই বিক্ষোভ হাইজ্যাক করেছিল এবং এসএফজে লাল কেল্লা এবং ইন্ডিয়া গেটে খালিস্তানি পতাকা উত্তোলনের আহ্বানও জানিয়েছিল। খালিস্তানীদের যেহেতু একটি পৃথক ধর্মীয় পরিচয় রয়েছে এবং তারা পৃথক জাতি-রাষ্ট্রের দাবিতে নেতৃত্ব দেয়, তাই লাল কেল্লার উপরে নিশান সাহেবের উত্তোলনকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনা করা উচিত।
সুতরাং, ভণ্ড লিবারেলরা এই ঘৃণ্য কাজকে সমর্থন করে নিজের পায়ে নিজেই গুলি করেছে তা বোঝাই যাচ্ছে।
এখন সচেতন হিন্দুরা যদি প্রশ্ন করতে শুরু করে যে তাদের ধর্মীয় পতাকা কেন লাল কেল্লা বা এমনকি সংসদের উপরে উত্তোলন করা যেতে পারে না, তবে ভবিষ্যতে সেকুলারদের বলার মুখ খোলার মতো কোনো রাস্তা নেই। যদিও একজন সাধারণ ভারতীয় হিসেবে আমি তীব্রভাবে এই চিন্তা ভাবনার সমালোচনা করি, কিন্তু, ধর্মনিরপেক্ষ সেকুলারদের চিন্তাধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক ভারতবাসীর গৌরব জাতীয় পতাকার ঠিক পাশে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের (হিন্দু বাদে) পতাকা জাতীয় পতাকার থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে উড়ছে দৃশ্যটি একইসাথে উপভোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য। এবং তাদের নিম্ন মানসিকতার চিন্তা ভাবনা থেকে দেখলে সত্যিই তাদের দোষ দেওয়া যায় না।
তবে, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যদি লিবারেলরা খালিস্তানীদের দ্বারা সংঘটিত ঘৃণ্য ঘটনাটিকে সমর্থন করেন, তবে হিন্দুরাও যদি নিজের দেশের সভ্যতা ঐতিহ্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে গেরুয়া ধ্বজা উত্তোলন করতে পারেন। তবে তখন লিবারেলপন্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করবে কেন? কিন্তু কোটি টাকার প্রশ্ন হচ্ছে, হিন্দুরা যদি এখন ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে গর্বের সঙ্গে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করেন এবং হিন্দু ধর্মীয় দেবদেবীদের পতাকা উত্তোলন করেন তবে উদারপন্থীরা সেই কাজ স্বেচ্ছায় গ্রহণ করার মতো মানসিক দৃঢ়তা রাখবেন তো!?