‘অহিংস’ সেকুলাররাই দিল্লি দাঙ্গার নেপথ্যে! ফাঁস হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট

0
1311

বঙ্গদেশ ডেস্ক: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দিল্লির বিভিন্ন অংশে দাঙ্গা সংগঠিত হয়৷ বহু মানুষ প্রাণ হারান৷ সেই ঘটনার তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই সামনে এসেছে এই ঘটনার পিছনে পরিকল্পনার বিষয়টি৷ এবার সামনে এল একটি হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট৷ যেখানে দিল্লিতে অশান্তি ছড়ানোর পরিকল্পনা করার প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গিয়েছে৷

ইংরেজি সংবাদমাধ্যম ওপইন্ডিয়া টিভি চ্যানেল টাইমস নাওকে উদ্ধৃত করে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে৷ সেখানেই এই হোয়াটস অ্যাপের বিষয়টি সামনে আসে৷ ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লিতে অশান্তি হঠাৎ করে শুরু হয়নি৷ বরং আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ আর তা জানা সত্ত্বেও বামপন্থী ও দেশের সেকুলার ব্রিগেড তা নিয়ে চুপ ছিল৷

প্রসঙ্গত, গত বছরের শেষে শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়৷ সেই আইনে প্রতিবেশী দেশে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার সংখ্যালঘুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু আইন পাস হতেই তাকে মুসলিম বিরোধী আখ্যা দিয়ে দেশের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ শুরু হয়৷ দিল্লির শাহীনবাগে ধর্না শুরু করেন মহিলারা৷

সেই ধর্না থেকেই দিল্লিতে অশান্তি ছড়ানোর প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয় বলে অভিযোগ আগেই উঠেছিল৷ এবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জড়াল৷ ওই বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ হয়েছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেখানকার পড়ুয়ারাই দেশজুড়ে যে কোনও ধরনের অশান্তি ছড়াতে দক্ষ বলে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে আলোচনা হয়েছে৷

হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের যে স্ক্রিনশটগুলো সামনে এসেছে সেখানে ১৭ ই ফেব্রুয়ারির চ্যাট পাওয়া গিয়েছে। কথোপকথন থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে দিল্লির দাঙ্গা সুপরিকল্পিত চক্রান্ত এবং জণগণকে উত্তপ্ত করার জন্য উস্কানিমূলক কথাবার্তা সেখানে আলোচনা করা হয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে দেখা যাচ্ছে যে ওই গ্রুপে শাহজার রাজা খান নামে একজন লিখেছেন, “দেশব্যাপী নিজেদের পরিকল্পনা কায়েম করার মাধ্যমে জামিয়াদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব। তবে, এটা অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত এব্যাপারে সর্বত্র যে কোনও জামিয়া মেয়ে বা ছেলেকে উপস্থিত থেকে অবশ্যই এটি সম্পাদন করতে হবে।” দিল্লির দাঙ্গার অন্যতম অভিযুক্ত সাফোরা জার্গার তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিল যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সমস্ত পরিকল্পনা প্রকাশ না করার পরিবর্তে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।

অন্যদিকে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ভয়ংকর পরিকল্পনা দেখে প্রমাদ গুণেছিলেন ওবাইস সুলতান খান। তাঁর বক্তব্য ছিল, “এই পরিকল্পনার কারণে আমরা সিলামপুর ও ট্রান্স-যমুনার মানুষেরা খুব সমস্যায় পড়েছি। সমস্ত এলাকা উদ্বিগ্ন। আমরা এখনও ৯২, ২০০৬ এর ক্ষত সারিয়ে উঠতে পারিনি এবং রাষ্ট্র যখন আমাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল, তখন আপনাদের কেউই আমাদের পাশে ছিলেন না। যা ভীষণ দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।”

গ্রুপের একজন মেম্বার প্রশ্ন করেছিলেন, “পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীকে আক্রমণ করার জন্য মহিলাদের মধ্যে লাল লঙ্কা গুঁড়োর প্যাকেট কেন বিতরণ করা হয়েছিল?”

এই প্রশ্নের উত্তরে অপর একজন জবাব দিয়েছিল, “এই আন্দোলনের পরবর্তী পর্বটি ভীষণ সংঘাতমূলক হবে এবং আমাদের সবরকম ভাবেই প্রস্তুত থাকতে হবে।” টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট গ্রুপে পিঞ্জড়া তোড় গ্যাংয়ের নাম‌‌ও জড়িত ছিল। স্থানীয় মহিলারা সড়ক অবরোধের বিরোধিতা করতে শুরু করলে ওই গ্যাংয়ের বক্তব্য ছিল, “আমরা এখানে একটি দীর্ঘমেয়াদী ও গঠনমূলক পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি। যারা আমাদের বিরোধিতা করছে তারা দেশ বিরোধী।”

এই সংক্রান্ত আর‌ও বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট সংবাদমাধ্যমের হাতে উঠে এসেছে। যেখান থেকে জানা যাচ্ছে, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত থাকা লোকজন সচেতনভাবেই সমাজের একটি অংশের মধ্যে হিংসা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করেছে এবং পুরো বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের অগোচরে ঘটানোর পরিকল্পনা করেছে।

অন্যদিকে বামপন্থী সেক্যুলার গোষ্ঠীগুলো এই চ্যাটের কথপকথন স্বীকার করতে নারাজ। মিডিয়ার সামনে বারবার চিৎকার করে হাজাইফা আমির রাশেদি (General Secretary of the Aligarh Muslim University Student Union) বলেছেন, “নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরোধী আন্দোলন সবসময় শান্তি ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়েছে। রাজনৈতিক রং লাগানোর জন্য পরিকল্পনা করে এসব করা হয়েছে। যদি হাতের কাছে সমস্ত প্রমাণ মজুত ছিল‌ই৷ তবে তা প্রকাশ্যে আনতে এত দীর্ঘ সময় নেওয়া হল কেন?”

কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (সিপিআই)-র নেতা দীনেশ বর্ষণী দাবি করেছেন যে, দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে পেশ করা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটগুলিকে প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করতে আদালত অস্বীকার করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে সম্পূর্ণভাবে চক্রান্ত করে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বিরোধী আন্দোলনকে অন্যভাবে প্রচার করার প্ল্যান চলছে‌।

হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট গ্রুপের সমগ্র কথপোকথন ২৩ ফেব্রুয়ারি রবিবার মধ্যরাতের ছিল এবং পরে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে স্ক্রিনশট লিক হয়েছিল। নেজিজেনদের একাংশ এই ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ বলে অভিহিত করেছে। ঠিক তার আগের দিন অর্থাৎ শনিবার গভীর রাতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিক্ষোভকারীরা সিলামপুর থেকে মৌজপুর অবধি এবং যমুনা বিহারের সাথে সংযোগকারী ৬৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিল।

তবে, বিজেপি আইটি সেল এর প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেছেন, সহিংস ও বিদ্বেষমূলক নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সূত্রপাত বাম আশ্রিত মৌলবাদী জঙ্গিদের দ্বারা হয়েছিল।