নেতাজীর উত্তরসূরী কারা?

0
2044

২১শে অক্টোবর লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ দিবস উপলক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদীর পতাকা উত্তোলনের পরে বাম ও কংগ্রেসী বুদ্ধিজীবি, ঐতিহাসিকদের কিছু গোঁসা হয়েছে। তাদের বক্তব্য নরেন্দ্র মোদী কেন আজাদ হিন্দ দিবস পালন করবেন? কেনই বা তিনি হটাত নেতাজীর প্রতি অনুরাগ দেখাবেন?

আচ্ছা এইসব বিজ্ঞরা কি বলবেন কেন গত ৭০ বছরে ভারতবর্ষের সরকার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করেনি? কে তাদের আটকে রেখেছিল? তারা কি বলবেন আজ যখন তারা নেতাজীকে “নিজেদের” বলে প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন গত ৭০ বছরে নেতাজী ও তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনীর ইতিহাস তুলে ধরায় তাদের ভূমিকা কি ছিল? বা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তারা ঠিক কতটা সমর্থন নেতাজীকে করেছিলেন বা সেই সময়ে তাদের ভূমিকাই বা কি ছিল?

২১শে অক্টোবর কেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন এবং কেনই বা বাম ও কংগ্রেস আশ্রিত ঐতিহাসিক, বুদ্ধিজীবিরা নরেন্দ্র মোদীর উপরে এতটা চটেছেন। আজ যারা নেতাজীকে “নিজেদের” লোক বানাতে উঠেপড়ে লেগেছেন আদতে নেতাজী কতটা তাদের লোক ছিলেন তাও জানতে গেলে আমাদের একটু ইতিহাসের দিকে দেখা দরকার।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের ভারতবর্ষের রাজনীতিতে আগমন ঘটে ১৯২১ সালে যখন সুভাষ চন্দ্র বোস, চিত্তরঞ্জন দাসের অভিভাবকত্বে বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল কংগ্রেসের প্রচারবিভাগের দায়িত্ব নেন এবং স্বরাজ পত্রিকা চালু করেন। এরপরে ১৯২৩ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া ইউথ কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং বেঙ্গল স্টেট কংগ্রেসের সম্পাদকরূপে দায়িত্বভার গ্রহন করেন।এরপরে ১৯২৪ সালে চিত্তরঞ্জন দাস কোলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশানের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে সেখানে সুভাষ চন্দ্র CEOর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপরে ১৯২৫ সালে বৃটিশরা তাকে গ্রেপ্তার করে ও মান্দালয় জেলে তাকে বন্দী রাখা হয়।

সুভাষ চন্দ্র বোস কংগ্রেসের যুবকশ্রেণীর নেতা হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯২৮ সালে তার নেতৃত্বেই কোলকাতা কংগ্রেসের সময় বেঙ্গল ভলিন্টিয়ার্সের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৩০ সালে বিনয়, বাদল ও দীনেশ বেঙ্গল ভলিন্টিয়ার্সের তিন সদস্য রাইটার্সে তৎকালীন ইন্সপেক্টার জেনারেল অব প্রিজন, কুখ্যাত এন এস হত্যা করেন।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বেঙ্গল ভলিণ্টিয়ার্সের অবদান ও তার গড়ে ওঠায় সুভাষ চন্দ্র বোসের অবদান অনস্বীকার্য। যদিও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে ইতিহাস রচনা করা হয়েছে সেখানে এই অধ্যায়ের বিশেষ উল্লেখ পাওয়া যায়না।

সুভাষ চন্দ্র বোস ১৯২০ থেকে ১৯৩০-এর দশকে ধীরে ধীরে কংগ্রেসের যুবকশ্রেনীর অবিসাংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন।অবশ্য কংগ্রেস আশ্রিত ইতিহাসবিদরা এই শ্রেণীকে “র‍্যাডিকাল” উপাধিতে আখ্যায়িত করেছেন। দেশের জন্য প্রাণত্যাগ এনাদের কাছে র‍্যাডিকালিজম ছাড়া আর কিছুই নয়।

১৯৩৮ সালে সুভাষ চন্দ্র বোস প্রথমবার কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সময়েই তিনি পরিষ্কার ভাবে জানান ভারতের মানুষের একটাই দাবী, তা হোল পূর্ণ স্বরাজ এবং এর জন্য বৃটিশ রাজের বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগেও তিনি পিছপা নন। এই নিয়েই মূলত তাঁর ও গান্ধীজির মধ্যে মতানৈক্যের সূত্রপাত।একদিকে গান্ধীজি ও তাঁর অসহযোগ আন্দোলন, নিষ্ফলা আবেদন নিবেদন। অপরদিকে সুভাষের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও লড়ার অঙ্গীকার। এই দুইয়ের বিরোধের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৯ সালের বার্ষিক সভা।একদিকে গান্ধীজি মনোনীত পট্টভি সীতারামাইয়া, অপরদিকে সুভাষ। কিন্তু তারুণ্যের শক্তির কাছে হার মানতে বাধ্য হয় গান্ধীজির অসহযোগের পন্থা। নির্বাচনে জয়লাভ করেন সুভাষ। তবে নির্বাচনে জয় লাভ করলেও সুভাষ হার স্বীকার করতে বাধ্য হন কংগ্রেসের গান্ধীবাদীদের কাছে। বস্তুত পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে সেই সময়ে গান্ধী অনুগামী নেতাদের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে সুভাষের সাথে অসহযোগিতা, বৃটিশ সরকারের সাথে অসহযোগিতা নয়। শেষে সুভাষ বাধ্য হন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করতে এবং ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন করতে।

এই হোল কংগ্রেসের সাথে সুভাষের রাজনৈতিক ইতিহাস। এর থেকেই বোঝা যায় সুভাষ চন্দ্র বোসের জন্য কংগ্রেসের প্রেম কতটা ছিল। আর বাকীটা বোঝা যায় কংগ্রেস আশ্রিত ইতিহাসবিদদের ইতিহাস রচনা দেখে। যেখানে তারা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অর্পণ করেছেন একটি বিশেষ পরিবারের প্রতি। এদের মধ্যে লক্ষণীয় ভাবে বাঙালি ঐতিহাসিকদের সংখ্যা প্রবল। কাজেই বাঙালি মাত্রেই যে নেতাজীপ্রেমী এমন ভাবার কোন কারণ নেই। এই ঐতিহাসিকদের মধ্যে অন্যতম, মৃদুলা মুখার্জী। এনার একটি নিবন্ধে ইনি বলেছেন সুভাষ চন্দ্র বোস জাতীয়তাবাদী ছিলেন কিন্তু তিনি অপরিণামদর্শী ছিলেন।কারন তিনি হিটলারের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। যদিও সেই নিবন্ধে তিনি আমাদের একথা জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি যে সুভাষ চন্দ্র বোসের তাহলে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সফলতা লাভের জন্য কার সাথে হাত মেলানো উচিত ছিল? আর সুভাষ যদি হিটলারের সাথে হাত মেলানোর জন্য অপরিণামদর্শী আখ্যা পেতে পারেন একজন ইতিহাসবিদের কাছ থেকে তাহলে কেন বাংলায় কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ তৈরি করে প্রায় তিন কোটি মানুষকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেওয়া চার্চিলের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হাত মেলানোর জন্য একই আখ্যা গান্ধী বা নেহেরু সম্বন্ধেও দেওয়া হবেনা? নাকি গেঁয়ো যোগী ভিখ পায়না তেমনই ঘরের জেনোসাইড জেনোসাইড বলে গণ্য হবেনা?

বস্তুত কংগ্রেস আশ্রিত ইতিহাসবিদদের মধ্যে এমন দ্বিচারিতার নমুনা অসংখ্য। যে গান্ধী বা নেহেরু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বৃটিশ রাজকে সমর্থন করলেন, যারা ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছিলেন সুভাষ যদি তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে ভারতের মাটিতে পদার্পন করেন তাহলে তারা খোলা তলোয়ার হাতে দাঁড়াবেন সুভাষের বিরুদ্ধে। তারা পেলেন স্বাধীনতা লাভের প্রায় সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ও তাঁর আজাদ বাহিনীর সংগ্রামের ইতিহাসকে ঠেলে দেওয়া হোল অন্ধকারে। যে বাহিনীর সাথে লড়াইকে বৃটিশরা তাদের গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ যুদ্ধগুলির মধ্যে একটি বলেছে।

কংগ্রেস এবং তার আশ্রিত ইতিহাসবিদদের এই দ্বিচারিতা শুধুমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ও আজাদ বাহিনীর সংগ্রামের ইতিহাস রচনাতেই নয়, নেতাজীর মৃত্যু রহস্যের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ২০০৬ সালে যখন কোনভাবেই সরকারের পক্ষে প্রমান করা সম্ভব হলনা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনাতেই মৃত হয়েছিলেন তখন তারা পার্লামেন্টের অধিবেশনে কমিশানের রিপোর্ট ধামাচাপা দেয় জোরজবরদস্তি। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য এই বিশেষ অধিবেশন চলার সময় স্পিকারের চেয়ারে ছিলেন সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি কয়েকজন বক্তা নিজেদের বক্তব্য পেশ করার পরেই তড়িঘড়ি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শিবরাজ পাটিলকে বলেন একশান টেকেন রিপোর্ট পেশ করতে এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে আলোচনা অসম্পূর্ণ রাখেন।

শুধুমাত্র এক্ষেত্রেই নয় বারেবারেই নেতাজীর মৃত্যু রহস্যের সমাধানে গঠিত কমিশানগুলির সাথে কংগ্রেস সরকার একইভাবে অসহযোগীতা করেছেন। এই ক্ষেত্রে এনডিএ আমলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আদবানীজির ধন্যবাদ প্রাপ্য যে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেই হাইকোর্টের আদেশের ভিত্তিতেই তদন্ত কমিশান গঠন করেন কালবিলম্ব না করে। যা কিনা কংগ্রেস আমলে গঠিত হওয়া শাহনওয়াজ কমিশান বা খোসলা কমিশানের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। দুটি ক্ষেত্রেই নানা টালবাহানার পরে তারা কমিশান গঠন করতে রাজী হন। এছাড়াও কমিশান চলাকালীন নেতাজী অন্তর্ধান সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নষ্ট করার ইতিহাস তো আছেই। আজ যখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু হয়নি তারপরেও কংগ্রেস আশ্রিত ইতিহাসবিদরা বারেবারেই বোঝাতে চেষ্টা করেন যে নেতাজী বিমান দুর্ঘটনাতেই মারা গেছেন। যা তাদের দ্বিচারিতার আরও একটি নমুনা।

কাজেই আজ যদি কংগ্রেস বলে নেতাজী তাদের তাহলে বলতে হবে, “অমন বলবেননা কত্তা, ঘোড়াতেও হাসবে”।কাজেই আজ যখন ২১শে অক্টোবর লালকেল্লায় পালিত হচ্ছে তখন তা নিয়ে কংগ্রেস বা কংগ্রেস আশ্রিত বুদ্ধিজীবিদের কোন বক্তব্য থাকতে পারেনা।

আমাদের দেশের কমিউনিস্টরাও কিন্তু ভারী মজার। তারা এই সেদিনও সুভাষকে তোজোর কুকুর ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের তাদের অবদান বলতে পিপলস ওয়ার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত নেতাজীকে নিয়ে কিছু অপমানজনক কার্টুন। ভারতবাসী যখন স্বাধীনতা সংগ্রামে রত ছিলেন তখন তারা তাদের আনুগত্য বজায় রেখেছেন বৃটিশদের প্রতি, তারাও আজ গলা ফাটিয়ে বলছেন সুভাষ চন্দ্র বোস নাকি তাদের। কারন তিনি নাকি বামমনোভাবাপন্ন ছিলেন। তা একটু দেখা যাক সুভাষ চন্দ্র বোস কেমন বাম মনোভাবাপন্ন ছিলেন।

১৯২৯ সালে রংপুরে একটি ভাষণে তিনি সোশ্যালিজিমের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন বিবেকানন্দের কথা। তিনি সাম্যবাদের, সোশ্যালিজিমের উদাহরন দিতে গিয়ে বিবেকানন্দের সেই অমোঘ বাণীর কথা বলেছেন, “তোমরা উচ্চবর্ণেরা কি বেঁচে আছো? তোমরা শূন্যে বিলীন হও, আর নতুন ভারত বেরুক।বেরুক লাঙল ধরে, চাষার কুটির ভেদ করে; জেলে, মালা, মুচী, মেথরের ঝুপড়ির মধ্যে থেকে। বেরুক মুদীর দোকান থেকে, বেরুক ভুনাওয়ালার উনুনের পাশ থেকে। বেরুক কারখানা থেকে, বেরুক হাট থেকে, বাজার থেকে”। সুভাষ চন্দ্র এই উদাহরণ টেনে এনে বলেছেন, “এই তো বাংলার সোশ্যালিজিম, এই সোশ্যালিজিমের জন্ম কার্ল মার্ক্সের পুথি হতে নয়। এই সোশ্যালিজিমের জন্ম ভারতের শিক্ষাদীক্ষা ও অনুভূতি হইতে।” এই ভাষণে তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের মনে রাখা উচিত যে জাতির ইতিহাসের ধারা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও আবহাওয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয়তার কথা অবহেলা করিয়া কোন মতবাদ বলপূর্বক কোন দেশে প্রয়োগ করা যায়না। এইরূপ চেষ্টা করিলে হয় সেদেশে বিপ্লবের সৃষ্টি হইবে নতুবা ফ্যাসিজিমের মতো কোন বিরুদ্ধ মতবাদের প্রতিষ্ঠা হবে”।

এই একই ভাষণে তিনি একথাও বলেছেন, “আজকাল পাশ্চাত্য দেশ হইতে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র বিষয়ক আধুনিক চিন্তার ধারা এদেশে আসিতেছে। ইহার ফলে অনেকের চিন্তাজগতে বিপ্লব উপস্থিত হইতেছে। কিন্তু যাহা নতুন বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে তাহা প্রকৃতপক্ষে অতি পুরাতন। গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র এদেশে নতুন তত্ত্ব নয়। আমরা আমাদের দেশের ইতিহাসের ধারা হতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছি এবং এখনো ভারতের কোন নিভৃত প্রান্তে গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রমূলক রাষ্ট্র আছে তাহা জানিনা বলিয়া অতি পুরাতনকে নতুন অতিথি জ্ঞান করিয়া আদরের সঙ্গে আহ্বান করিতেছি”।

তাহলে বোঝা গেল ভারতবর্ষের কমিউনিস্টদের সাথে সুভাষ চন্দ্র বোসের কতটা মতের মিল ছিল? এর থেকে বোধহয় এও বোঝা গেল পিপলস ওয়ার ম্যাগাজিনের কার্টুনগুলির হেতু। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কমিউনিস্টদের দান ঐ কতিপয় কার্টুনই। শূন্য।বস্তুত ভারতের কমিউনিস্টরা কখনই সুভাষ চন্দ্র বোসকে চিনে উঠতে পারেনি। আর পারেনি বলেই তারা এখন নিজেদের কুকীর্তি লুকোতে হাজির করেছে ১৯৪৫ সালে মারাঠি অগ্রণী পত্রিকায় প্রকাশিত একটি কার্টুনকে। যেখানে দেখানো হয়েছে রাবণরূপী গান্ধীজির সাথে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, নেহেরু প্রভৃতিকে। এখন কমিউনিস্টদের বক্তব্য ঐ ছবিতে একটি মুখ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের। কিন্তু যেহেতু এদেশীয় কমিউনিস্টরা কোনদিনই তাঁকে চিনে উঠতে পারেনি তাই এবারেও তারা ভুল করেছে, যেমন ভুল তারা আগেও করেছিল পিপলস ওয়ার ম্যাগাজিনে কার্টুনগুলি ছাপার সময়ে। যাকে তারা সুভাষ বোস বলছে তিনি আসলে চক্রবর্তী রাজাগোপালচারী। এছাড়াও যে কেউ ইতিহাস সম্বন্ধে সামান্য জ্ঞানও রাখেন তিনিও জানেন যে ১৯৪৫ সালে গান্ধীজির পাশে সুভাষকে রাখার মতো কোন কারণ ছিলনা। কাজেই কমিউনিস্টরা তাদের স্বভাববশতই এবারেও ভুল। তবে এটি নেতাজীকে তোজোর কুকুর বলে পরে আবার ঐতিহাসিক ভুল স্বীকার করার মতো ভুল নয়। এটি কোন বংশগত কম্যুনিস্টের অশিক্ষা।

যাইহোক এসব থেকে যা বোঝা যাচ্ছে সুভাষ চন্দ্র বোস ঠিক কমিউনিস্টদেরও ছিলেননা।তাহলে তাঁর উত্তরাধিকার কারা দাবী করতে পারে? ফরোয়ার্ড ব্লক? যেহেতু আমার শব সাধনায় কোন উৎসাহ নেই তাই এই দলটিকে নিয়ে বিশেষ শব্দ খরচে আমি আগ্রহী নই। যারা নেতাজী প্রবর্তিত পতাকা পালটে, নেতাজীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা কমিউনিস্টদের সাথে ৩৪ বছর এক সরকারে থেকেও ২১শে অক্টোবর আজাদ হিন্দ দিবসকে জাতীয় স্বীকৃতি আদায়ে নিশ্চেষ্ট থাকে তাদের এখন অন্য কে কি করছে তা নিয়ে কিছু বলা মানায়না। একেবারেই মানায়না।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের উত্তরাধিকার প্রতিটি জাতীয়তাবাদী ভারতবাসীর। তাই আজ যখন ২১শে অক্টোবরের দিনটি জাতীয় স্বীকৃতি পায় তখন তা জাতীয়তাবাধী ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত আনন্দের দিন। বিশেষত দিনটিতে যখন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী প্রথা ভেঙে লালকেল্লায় দ্বিতীয়বারের জন্য জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

এইখানেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাহবা প্রাপ্য। তিনি তাঁর উত্তরসূরীদের অনুসরণ করে শুধুমাত্র একটি বিশেষ পরিবারের প্রতি আনুগত্য দেখাননি। তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সব থেকে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করে একটি বিশেষ দিনকে জাতীয় স্বীকৃতি দিয়েছেন। নিন্দুকদের এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো ২১শে অক্টোবরের আজাদ হিন্দ দিবস নরেন্দ্র মোদী এই প্রথমবার পালন করলেননা। এর আগে ২০১২ সালেও তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে গুজরাটে এই দিনটির জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এছাড়াও নেতাজী সংক্রান্ত বেশ কিছু ফাইল যা পূর্ববর্তী সরকারগুলি তালাবন্ধ রেখেছিল তাও তিনি প্রকাশ করে জনসমক্ষে এনেছেন। কাজেই নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তিনি বরাবরই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন এবং এই সম্মান প্রদর্শনে অন্য কারুর কারুর মতো হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে নেতাজী আমার না তোমার এই খেলাতেও নামেননি।দিনটি তিনি পালন করেছেন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, দলীয় কার্যকর্তা হিসাবে নয়। সেই কারণেই আজ তিনি বাম এবং কংগ্রেসী ঐতিহাসিকদের চক্ষুঃশূল হলেও ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের বাহবা পাচ্ছেন।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র ভারতবর্ষের ইতিহাসে একটি অধ্যায়।সেই ইতিহাসের বহু অংশ এখনও আলোচিত হয়নি। আশা করব ২১শে অক্টোবরে লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ইতিহাসের সেই লুকিয়ে রাখা অংশগুলি জনসমক্ষে আসা শুরু হবে এবং তা নিয়ে চর্চাও হবে আগামীদিনে এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস ও তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনীর আত্মবলিদানের সম্পূর্ণ ইতিহাস রচিত হবে

 

ফীচার: Scroll