যুদ্ধবিরতি আর পঞ্চমবাহিনী

রমজান মাসে রোজার পুণ্য নিয়ে বহু কথা আছে ইসলামি শাস্ত্র গ্রন্থে ৷ কোরানের  সুরা বাকারা ২:১৮৫ -তে সক্ষম মুসলমানের পক্ষে রোজা রাখা প্রায়-বাধ্যতামুলক ৷ কারো কারো মতলবি ব্যাখ্যায় আছে এ সময় নাকি যুদ্ধের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে ৷ ৬২৪ খৃ. ১৫ মার্চ বদরের যুদ্ধে নামেন হজরত মহম্মদ ৷ তা হয় রমজান মাসে ৷ ১৯৪৬-এর আগস্ট মাসে রমজান মাসে মুসলিম লীগ ডাকে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম ! উর্দু প্রচারপত্র বিলি হয় ; পবিত্র রমজান মাসেই কাফের ধ্বংস করার জন্য অস্ত্র ধরার ‘খুলে আম’ হুঙ্কার দেওয়া হয় ! ফল সবাই জানি : Great Calcutta Killing !

কাশ্মীরের উজির-এ-আজম মেহবুবা  মুফতি আর সমস্ত কাশ্মীরি মুসলিম রাজনৈতিক নেতা এবারের রমজান মাসে যুদ্ধ-বিরতির জন্য আবেদন করার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী তা মেনে নেয় ৷ আমরা তখনই লিখেছিলাম, এই যুদ্ধ বিরতি অর্থহীন ৷ এ হল মেহবুবার ছলনা ৷ জঙ্গীরা এটা  মানবে না ৷ তাই হয়েছে ৷ পাকিস্তানী হামলা বন্ধ হয়নি ৷ প্রচুর প্রাণহানিও ঘটেছে ৷ সীমার ওপারের হামলাকে স্বাভাবিক মনে করা যেতেই পারে ৷ কিন্তু কি হল শুক্রবার ? শ্রীনগরে একটি অঞ্চলে সি. আই. এস.এফ.-এর একটি গাড়ি ঘিরে জৈবিক উন্মাদনায় মেতে উঠল শতশত যুবক ৷ ছুঁড়তে লাগল পাথর ৷ প্রাণ বাঁচাতে চালক গাড়ি চালাতে বাধ্য হলেন ৷ কয়েকজন আক্রমণাত্মক যুবক জেহাদি জোশ চলন্ত গাড়ির চাকায় পা-রেখে বনেটে উঠতে গেল ! যথারীতি চাকার নীচে চাপা পড়ে মারা গেল এক যুবক ৷ যেকোনো মৃত্যুই গভীর বেদনার; আমরা এই ঘটনায় আহতদের দ্রুত নিরাময় আর নিহত আত্মীয়দের প্রতি সমর্মমিতা জানাই ৷ কিন্তু এই বে-লাগাম হামলার কারণ কি ছিল ? বলা হচ্ছে এই এলাকায় শুক্রবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় মসজিদ-কর্ত্তৃপক্ষ !তাই এই প্রতিরোধ ! অবাক করার মত বিষয় বটে ৷ দেশ কি এখন থেকে মসজিদ থেকেই শাসিত হবে ? আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসী এরকম ফরমানে অভ্যস্ত ৷ মসজিদ নয় এইরকম নিষেধাজ্ঞা জারি করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী ! এই ক্ষেত্রে তিনি কাশ্মীরি প্রধানমন্ত্রী (সংবিধান অনুসারে তাই !)-র চেয়ে কয়েক কদম অগ্রসর !

কাশ্মীর সরকারে অন্যতম শাসক বিজেপি ৷ তারা এসব অন্যায় আবদার মানছেন কেন ? প্রশ্ন উঠলেও উত্তর খুব কঠিন ৷ সময় সুযোগ এলে তারা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন, আশা করা যাক ৷ তবে অবস্থা খুবই ঘোরাল সন্দেহ নেই ৷

এই দুর্ঘটনার কিছু প্রতিবেদন বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে দেখে তাজ্জব হতে হয় ৷ কার্য কারণ সম্পর্ক তারা ভুলেছেন ! যুবকের মৃত্যুকেও কারণ আর পরবর্তী বিক্ষোভকে ফল বলে দেখিয়েছেন তারা ৷ পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমগুলি ঘটনার কিছুমাত্র ছবি দেখাননি ! ফলে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে নির্ভর করবেন বাংলাভাষী সাধারণ জনতা ৷ সত্যকে আড়াল আর মিথ্যাকে নির্মাণ করা সাংবাদিকতার পক্ষে পাপ ৷ এই ঘটনাটি পরিবেষণ মাধ্যমে নামী সংবাদপত্র গোষ্ঠীগুলিই তাই করলেন ৷

মেহবুবা মুফতি যা করেছেন তার তুলনা ভূভারতে আর কোথাও নেই ? পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য এরকমই হয় ৷ অত্যাচারিত মানুষ প্রতিবাদ করুন না করুন, তাদের নামে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে দেয় ৷ মুফতিও ওরই গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে কেস দিয়ে রমজান মাসকে পবিত্রতা করেছেন !

ইসলামি মৌলবাদের কাছে বিকিয়ে যাওয়া গণমাধ্যম আর কাশ্মীরের পক্ষে আজাদি-গোষ্ঠী আজ ঠা ঠা করে হাসছে, রোজা না রেখে ইফতার পার্টিতে তাদের জন্য সাজানো ভোজসভার টুংটাং শোনা যাচ্ছে ৷ দেশ রক্ষায় নিযুক্ত জোয়ানদের মৃতদেহ পোড়ানোর ধোঁয়া ক্রমশ বাতাস ভারী করছে ৷ এখন যুদ্ধ ভিতরে বাইরে ৷ সেই যুদ্ধে সমাবেশ মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে আসছে ৷ এটা ভালো লক্ষণ ৷ ভিতরকার শত্রুপক্ষ চেনা হলে সেনাপতির ব্যূহ বিন্যাসে সুবিধাই হবার কথা ৷৷

কৃতজ্ঞতা: প্রাত্যহিক খবরে প্রকাশিত এবং অনুমতিক্রমে পুনঃপ্রকাশিত। লেখাটি দিনকতক পূর্বে লিখিত। তখনও বিজেপি সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেনি।

ফীচার: Deutsche Welle