‘অরবিন্দ ভবন’ নিয়ে

কলকাতা শহরের থিয়েটার রোভের এই বাড়িটিতে ঋষি অরবিন্দ জন্মেছিলেন ৷ এ আমাদের পবিত্র তীর্থস্নান ৷ সহসা কোন কাণ্ডজ্ঞানহীন রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষে থাকা কারও মনে হলেই এই তীর্থক্ষেত্রটি দান করে দিতে পারেন ? এককথায় বলছি, না পারেন না ৷ রাজনৈতিক ক্ষমতা সাময়িক ৷ ‘চিরদিন সবার সমান নাহি যায় ৷’ ঋষি অরবিন্দের আসন নিত্য শাশ্বত চিরন্তন ৷ থিয়েটার রোডের ‘অরবিন্দ ভবন’ বাংলাদশের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এটি তিনি রাখতে পারেন না ৷ নির্বাচনে জিতে এতখানি অধিকার তিনি পেতে পারেন না ৷

 

‘অরবিন্দ ভবন’ একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ৷ শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্ব তখন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ৷ রীতিমত আইন করে গড়ে উঠেছে এই বাড়ি ৷ অছি পরিষদের সভাপতি হলেন মহামান্য রাজ্যপাল মহোদয় ৷ অন্যতম সদস্য হলেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ৷ এই দুটি আসনই পদাধিকার বলে প্রাপ্য ৷ সে হিসাবে আপনি অবশ্যই একজন অছি ৷ কিন্তু তা বলে এ নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা, বা বাংলাদশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সঙ্গে কথা বলা নিতান্তই অনুচিত কর্ম ৷ এটা করা বে-আইনী ৷  আইনকানুনের অনেক উপরে আছে মানুষের মন ৷ যতই ভোট-ভাগাড়ে পচনশীল হোক বাঙালীর শিক্ষা-রুচি- জ্ঞান-ধর্মবিশ্বাস এখনও ততটা জাহান্নামে পাঠানো যায়নি যাতে ঋষি অরবিন্দের জন্মভূমি বন্ধক দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সখ্য খরিদ করতে হবে ৷ এ ধরণের যে কোন অপপ্রয়াসের আমরা তীব্র প্রতিবাদ করব ৷  আপত্তি জানাব ৷

 

বাড়িটি নিয়ে বাংলাদশের স্মৃতি কাতরতা থাকতে পারে ৷ ১৯৭১ -এর মুক্তিসংগ্রামের দিন গলিতে এই বাড়িটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র ৷ প্রচার অবশ্য হত সীমান্ত অঞ্চলের ‘মুজিব-নগর’ থেকে ৷ এইখানে আশ্রয় পান বাংলাদশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহমেদসহ কিছু নেতা ৷ তাই এই বাড়ি নিয়ে আগ্রহ থাকা অবাস্তব নয় ৷ কিন্তু বাংলাদেশ কি এখন ১৯৭১-এর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নীতি মনে রেখেছে ? এখানে এক কথায়  জবাব দিচ্ছি : না ৷ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির বাড়িতে  মুজিবর রহমান সপরিবার নিহত হবার পরই বাংলাদেশ সেই ঘোষিত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত ভ্রষ্ট ইসলামি মৌলবাদের অরণ্যে নির্বাসিত হয়েছে ৷ দেশটি এখন হিন্দু-শূন্য হয়েছে প্রায় ৷ এমন তো হবার কথা ছিল  না ! কোন নৈতিক অধিকারে তারা অরবিন্দ ভবন হস্তান্তরের স্বপ্ন দেখবেন ?

 

জাতীয় শিক্ষা পর্ষদের প্রতিষ্ঠাতা, মহাবিপ্লব অরবিন্দ, মানিকতলা বোমা মামলার আসামী, ‘বন্দেমাতরম’ সম্পাদক অরবিন্দকে স্মরণ করার অধিকার বর্তমান ত্রিখণ্ডিত ভারতের মধ্যে যদি থাকে তা আমাদের আছে ৷ আমরা যারা উত্তরে হিমাচল দক্ষিণে হিন্দমহাসাগর এই ভারত রাষ্ট্রকে জানি ৷ পণ্ডিচেরী আশ্রমে রক্ষিত অখণ্ড ভারতের মানসপ্রতিমা আমাদের ৷ এই জননী জন্মভূমিকে ছিন্ন টুকরো করে একটি অংশে রাষ্ট্র নির্মাণ করেছেন বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান ৷ অন্তত একটি বিষয়ে তাঁকে  আমরা শ্রদ্ধা জানাই ৷ তিনি তরুণ বয়সের দেশ ভাঙার পথ যে ভুল ছিল বুঝেছিলেন ৷ কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর বাংলাদেশের রাজনীতি ঢুকে পড়েছে হিন্দু-বিরোধী জেহাদি ভাবাদর্শের কানাগলিতে ৷ ঋষি অরবিন্দের স্মৃতি বিজড়িত ভবনটি তাদের হাতে তুলে দেবার প্রশ্নই ওঠে না ৷ আমরা এই প্রস্তাবটিতে তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি ৷ এরপরও কোন স্বৈরাচারমূলক প্রক্রিয়ায় ‘অরবিন্দ-ভবন’ যদি হস্তান্তরিত করার উদ্যগে নেওয়া হয় ভয়ঙ্কর আন্দোলন হবে ৷ দেশ বিদেশের অরবিন্দ অনুরাগীরা বুঝিয়ে দেবেন তাদের ভারতবর্ষ কালে কালোত্তরে দেশে দেশান্তরে কতটা শক্তি ধরে ৷৷

 
কৃতজ্ঞতা: প্রাত্যহিক খবরে প্রকাশিত এবং অনুমতিক্রমে পুনঃপ্রকাশিত।

ফীচার: The Hindu