আপন রক্তে শোধ করিব মাতৃভাষার ঋণ – ১

২০ শে সেপ্টেম্বর – বাংলা ভাষা দিবস – এক অনির্বাণ জ্যোতি

ভাষা। এটি একটি শব্দ। এবং এটি যেহেতু একটি শব্দ তাই তার একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ থাকার প্রয়োজন। অনেকের মতে এটি একটি মস্তিষ্কজাত অবস্থা মনের ভাব  প্রকাশ করার জন্য। অন্যত্র, বিশেষত বিশ্রুত অভিধান চলন্তিকার মতে, ভাষা হল দেশবিশেষে বা জাতি বিশেষের মধ্যে প্রচলিত অথবা বিশেষ উদ্দেশ্যে বা রূপে ব্যবহৃত শব্দাবলী এবং তার প্রয়োগ প্রণালী।  ভাষার ইংরেজী শব্দার্থ হল language অর্থাৎ a systematic means of communicating by the use of sounds and conventional symbols ..এর সাথেই আমরা উপলব্ধি করি semantics বা relating to meaning in language or logic…এতদ্বারা, আমাদের কাছে একটি মুল বিষয় সুস্পষ্ট। ভাষা এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য মানব সমাজে যার মাধ্যমেই একজন মানুষের অন্তর্নিহিত চিন্তা প্রকাশ পায়। সমস্যাও আছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমগ্র পৃথিবীতে ৬, ৫০০ টি কথ্য ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ২, ০০০ ভাষার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গিন। ১, ০০০ বা তার সামান্য বেশী বক্তার মাধ্যমে সেগুলি এখনো জীবিত রয়েছে। ভারতবর্ষে অবস্থাটি বেশ কিছুটা পৃথক। এক অর্থে প্ৰকাণ্ড ভারতবর্ষে ভাষা কটি তা নিয়ে একটি সুমহান বিতর্ক রয়েছে এবং তা নিয়ে গবেষণা ক্রমাগত হয়েই চলেছে।  তার মধ্যে ২২টি হল প্রধান বা সরকারি ভাষা – যার অন্যতম হল বাংলা, যাকে গৌরবের সাথে সংস্কৃতের দুহিতাও বলা হয়। বাংলাভাষীর স্থান সমগ্র ভারতবর্ষে তৃতীয় ও একসাথেই বেশ কিছু রাজ্যে তা প্রধান বা দ্বিতীয় প্রধান ভাষা। সমস্যা হল, এই সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকা সত্বেও তা প্রণয়নের দাবীতে, বিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রাণঘাতী সংগ্রাম করতে হয়, ভূমি লাঞ্চিত হয় মৃত্যুঞ্জয়ীর রক্তে।

প্রত্যেক অর্থেই এটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ভাষা একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা সেই ব্যক্তির আত্মারূপে কাজ করে। অথচ এটিও ঠিক যে বহু ভাষাবিদ ব্যক্তিও বিরল নয়; যদিও, কর্ম বা ইচ্ছার প্রয়োজনে শেখা ভাষা এবং মাতৃভাষার মধ্যে প্রভেদ আকাশপ্রমাণ। যা নিজের আত্মাস্বরূপ বা যা ভিন্ন নিজ চেতনাকে সম্পূর্ণ অনুভব করা যায়না তার ওপরই যদি অত্যাচারীর, অন্যায়কারীর খড়্গকৃপান নেমে আসে?

সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮ তে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার মহকুমা শহর ইসলামপুর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে দাড়িভিট গ্রামে অবস্থিত দাড়িভিট হাইস্কুলে যা হল তাকে কোন ভিন্ন অর্থে বর্ণনা করা যায়? মাতৃভাষা বাংলার সম্মান রক্ষার্থে প্রশাসনের অবিমৃষ্যকারিতা ও নিষ্পেষণের বলি হলেন দুজন যুবক – রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মন। লাঞ্চিত হলেন সংগ্রামরত ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকেরা। অপরাধ কি ছিল তাঁদের? অপরাধ কি এই কো-এডুকেশনাল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দু হাজার ছাত্রছাত্রীর?  তাঁদের দাবী কি ছিল যা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষে মেটানো সম্ভব ছিল না? দাবী তো ছিল সামান্যই – বাংলা ভাষার শিক্ষা ক্রমশ বিদ্যালয়ে অপ্রতুল হয়ে পড়ছে; অতএব, তাঁদের প্রত্যাশা ছিল বাংলা ভাষার শিক্ষকের। বিভিন্ন প্রামাণ্য সূত্রের মতে, বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষকের অপ্রতুলতার সমস্যার সম্মুখীন। তা সত্বেও, দাড়িভিট হাইস্কুলের পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক এবং তা, একান্তভাবেই ছাত্রছাত্রীদের ধীশক্তি ও পরিশ্রমের জন্য। কিন্তু আরও ভালো ফলাফল করতে গেলে প্রয়োজন সমতুল পরিকাঠামো। যে গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষে বাক স্বাধীনতা ও তার প্রকাশকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সেখানে এটি কি কোন দাবী না অধিকার। নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গীসহ বিচার করলে তা শুধু ন্যায্য নয় বরং একটি আবশ্যকতাও বটে। এবং তা পূর্ণ করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারেরই। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে যখন সেই দাবিপূরণের জন্যে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের পথে নামতে হয়, সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয় আর পরিণামে পাওয়া যায় শুধু গুলি, রক্ত আর হাহাকার।

কথা অনেক কিছুর আছে। দাড়িভিট কোনমতেই একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল বা গ্রাম নয় বরঞ্চ আধুনিক মাপকাঠিতে একটি মাঝারি গোছের গঞ্জ। অর্থাৎ এই স্থানে আধুনিক ব্যবস্থা কিঞ্চিৎ হলেও উপস্থিত। বর্তমান যোগাযোগব্যবস্থার বিপ্লবের ফলে ইন্টারনেট ব্যবস্থাও উপস্থিত যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের হাতের মুঠোয় সমস্ত বিশ্ব। তাঁরা শিখছেন, জানছেন বিশ্বের তথা বাকি ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাটিও। তাঁরা দেখছেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কি প্রকারে শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকতম নিদর্শনগুলি ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। এবং সেখানে মাতৃভাষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যৱহৃত হচ্ছে। যা অন্য রাজ্যে হচ্ছে তা পশ্চিমবঙ্গে হবে না কেন? দীর্ঘদিন ধরেই এ রাজ্যে শোনা যাচ্ছে মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ। দলমতনির্বিশেষে রাজ্য সরকার মেলা গঠন করছেন, বইমেলা করছেন প্রত্যেকটি জেলাতে যা মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্যই। কিন্তু সচেতন ছাত্রছাত্রী যদি মাতৃভাষার প্রতি শিক্ষা ব্যবস্থার বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন তখন প্রতিদান দেওয়া হয় বুলেটের মাধ্যমে। নিমেষে শেষ হয়ে যায় দুটি প্রাণ – তাঁদের জীবনের সমগ্র আশা, পিতামাতার আকাঙ্খা নিভে যায় এক লহমায় – কিছু মুহূর্ত আগে পর্যন্ত দুটি প্রাণচঞ্চল যুবক হয়ে ওঠেন মৃত্যুঞ্জয়ী। কিন্তু আশ্চৰ্য তাঁরা দুজনেই এই একই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। বিদ্যালয়ের গরিমা অক্ষুণ্ন রাখতে, কনিষ্ঠ ছাত্রছাত্রীদের পাশে তাঁরা থাকতে পারবেন না? কে সিদ্ধান্ত নেয় এই মর্মান্তিক আদেশ দানের এবং পালনের?

এই প্রশ্নই খুঁজে বেড়ানো হচ্ছে। কারণ এখনো পর্যন্ত ন্যায় অধরা থেকে গেছে। অধরা থেকে গেছে দোষী পুলিশ অফিসারদের গ্রেপ্তারও। তবে কি, এই হতভাগ্য রাজ্যের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই এক্ষেত্রেও বিচারের বাণী নীরবে ও নিভৃতে কাঁদবে? মাতা কি পাবেন না তাঁর পুত্রর অকস্মাৎ মৃত্যুর বিচার? পিতা কি পাবেন না জানতে সেই দোষীর পরিচয় যার নিষ্ঠুরতা বঞ্চিত করল তাঁর আপন পুত্রের অপার সম্ভাবনাময় জীবনকে? সমগ্র দাড়িভিটে আজ এই প্রশ্ন আকাশে বাতাসে ধ্বণিত হচ্ছে। ক্রন্দনে, নিষ্ফল আক্রোশে বাতাস ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছে। প্রতিবাদস্বরূপ, সজল চোখে গ্রামবাসীরা এই দুই যুবকের শবদেহ অগ্নিস্পর্শে শেষকৃত্য পালনের পরিবর্তে সমাধিস্থ করেছেন গ্রামেরই এক প্রান্তরে।

তথ্যসূত্রে প্রকাশিত হয়েছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষকের অভাব দীর্ঘদিনের অথচ স্থানীয় প্রশাসনের কোন ভ্রুক্ষেপ তাতে নেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকার মতে, “আমাদের স্কুলে পূর্ণ সময়ের শিক্ষক রয়েছেন ১৩ জন, ৫ জন পার্শ্বশিক্ষক, কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য রয়েছেন ৪জন। ” অর্থাৎ এক অতীব অপ্রতুল শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমেই বিদ্যালয়টি স্থিত আছে। তাহলে নবনিযুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে এত আপত্তি কিসের? ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী,  বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকের অভাব রয়েছে; তার সাথে বাংলা ভাষারও।  কিন্তু নবনিযুক্ত শিক্ষকরা উর্দুভাষায় দক্ষ; তাঁদের বিদ্যালয়ে গ্রহণ করা হয়েছে এই ভাষায় শিক্ষাদানের জন্য। কিন্তু দাড়িভিট স্কুলে তো উর্দু ছাত্রছাত্রীই নেই!! তাহলে এই অপচয় কিসের জন্যে? প্রয়োজনীয় শিক্ষক প্রেরণের পরিবর্তে অপ্রয়োজনীয় উর্দু শিক্ষক এলেন কিসের জন্যে? একি নিছক কোন ভুল না কোন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রের হিমশৈলের চূড়া মাত্র? মানসবসভ্যতায় মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু তার পার্শ্বে ভাষা নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতির হলাহলের উদ্গিরণ বা সেই বিষ নিয়ে নিষ্পেষণের ইতিবৃত্তও তো ছোট নয়। ইতিহাসের পালাবদলে ভাষা বহু সময়েই এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বা catalyst/অনুঘটকের কাজ করেছে। অর্থ-খাদ্যদ্রব্য-বাসস্থানের মতো ভাষাও এক রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, এক নতুন ভাষার অথবা তার শিক্ষাদানের প্রারম্ভের মাধ্যমে জনতাত্বিক বিন্যাসের উপর এক গুরুতর প্রভাব সৃষ্টি করে। জনতাত্বিক ভারসাম্যও ব্যাহত হয়। যদি সমগ্র অঞ্চলে এই এটি বিদ্যালয়েই উর্দু ভাষা পড়ান হয় তাহলে তা শেখার জন্য পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রমশ বিদ্যার্থীর আগমন ঘটবে। আগমন ক্রমশ এক জনবিস্ফোরণের আকার ধারণ করতে পারে যা রাজনৈতিকভাবে বহুদূর প্রসারিত হতে পারে। তার অপার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাহলে কি দাড়িভিট স্কুলে উর্দু শিক্ষক প্রেরণের সিদ্ধান্ত কি একান্তভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যা ভবিষ্যতের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখেই গৃহীত হয়েছে!!

এর প্রতিবাদই দাড়িভিটকে পরিণত করে রণক্ষেত্রে। কিন্তু এই রক্তপাত, বিভীষিকা কি এড়ানো যেতোনা? এই প্রশ্নটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যার উত্তর ক্রমশ বোধগম্য হবে।

বিদ্যালয়ে একান্ত প্রয়োজন ছিল বাংলা শিক্ষকের কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘদিনের দাবিপূরণের এক অঙ্গ হিসেবে পেলেন অপ্রয়োজনীয় উর্দু মাধ্যমের শিক্ষক। যা ক্রোধে আহুতি প্রদানের কাজ করে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে,বাংলা শিক্ষকের দাবিতে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বুধবার) বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পথ অবরোধে অংশগ্রহণ করেন। এই মহা বিপত্তির ফলে অশেষ চিন্তাগ্রস্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়ে বলেন যে এখনই উর্দুর শিক্ষক নিয়োগ করা হবে না। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরের দিন ওই উর্দু শিক্ষকদের কাজে যোগ দেওয়াতে অথবা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করাতে চেষ্টা করে  বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জানিয়ে দেন যে তাঁরা কিছুতেই বিদ্যালয়ে নিস্প্রয়োজন উর্দু শিক্ষকদের কাজে যোগ দিতে দেবেন না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে পিছিয়ে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন স্থানীয়জনেরা। কিন্তু সম্যক পরিস্থিতির অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন তাঁরা, রাজনীতির যে অদৃশ্য অঙ্কটি ইতিমধ্যে কষে ফেলা হয়েছে তার সাথে জড়িত আছে আপন ঘৃণ্য স্বার্থ এবং যাঁর সঙ্গে জনগণের কোন যোগ নেই। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি অতীব মহৎ শব্দগুলি শুধু হাসিরই উদ্রেক করে মাত্র। এক্ষেত্রেও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি।

বৃহস্পতিবার ওই উর্দু শিক্ষকদের কাজে যোগ দিতেই জবাব চেয়েই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ইসলামপুরের দাড়িভিট। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় – পড়ুয়ারা প্রথমে স্কুলের ফটকে তালা ঝোলায়। তারপরে দুপুর দেড়টা নাগাদ ইসলামপুর-গোয়ালপোখর সড়ক অবরোধ করে। দু’ ঘণ্টা পরে পুলিশ জোর করে অবরোধ তুলতে গেলে এবং স্কুলে ঢোকার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে।

ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য অনুযায়ী, রক্তাক্ত ঘটনার দিন অর্থাৎ বুধবারে উর্দু শিক্ষক উপস্থিত হন বিদ্যালয়ে ও প্রধান শিক্ষকের ঘরে সটান প্রবেশ করেন। সেই মুহূর্তে ঘরটিতে উপস্থিত ছিলেন তিনজন মাত্র – প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও জনাব আসিফ ইকবাল, বিদ্যালয়ের পুরানো করণিক। অকস্মাৎ এই সংবাদটি সমগ্র বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে পড়ে। ফলতঃ, ক্রুদ্ধ ছাত্রছাত্রীরা আপন ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন ও এক স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা প্রধান শিক্ষকের সাথে সাক্ষ্যাৎ কথা বলতে চাইলেও অনুমতি পায়না যা পরিস্তিতিকে আরো উত্তেজক করে তোলে। বিদ্যালয়ের মূল দ্বারেও তাল লাগানো হয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষকের বক্তব্য অনুযায়ী, “সেদিন বেলা ১টা নাগাদ ক্লাস সেরে বাইরে বেরিয়েই দেখি নবম-দশম শ্রেণি এবং উচ্চমাধ্যমিকে র প্রায় শ’ দুয়েক ছাত্রছাত্রী প্রধান শিক্ষকের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে। তারা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করার দাবি জানায়।প্রধান শিক্ষক স্কুলের সভাপতি নিশাকুমার গণেশের মোবাইলে মেসেজ করে গোটা পরিস্থিতির কথা জানান। তিনি পুলিশ ডাকেননি।’’ তাঁর আরও সংযোজন, “ওইদিন অন্য এক শিক্ষক আসরাফুল হক ফোন করে স্থানীয় থানা, বিডিও, জেলা স্কুল পরিদর্শক সবাইকে খবর দেন। তারপর সাড়ে তিনটে নাগাদ ওঁরা সবাই আসেন।সাথে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছয় ঘটনাস্থলে।

প্রচন্ড উত্তেজক অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি হয় ক্ষণিকের মধ্যেই এবং তা এক অসম যুদ্ধে – একদিকে নিরস্ত্র, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যাঁরা মাতৃভাষায় পাঠ নিতে ইচ্ছুক, অন্যদিকে এক নিষ্ঠুর প্রশাসনের প্রতিনিধিরা যাঁরা সমস্ত গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণাকে কার্যত বধ করে এক নরমেধ যজ্ঞে  মেতে ওঠে। ঘটনাচক্রে সেইদিন স্থানীয় অঞ্চলে হাটবার ছিল। মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যালয়ের গোলযোগ, পুলিশের প্রবেশ এক সীমাহীন উত্তেজনা সৃষ্টি করে।  কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদ্যালয়ের সম্মুখে এসে উপস্থিত হন অভিভাবকেরা, প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা ও অসংখ্য সমব্যাথী সাধারণ মানুষ। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত, শান্তিপূর্ণ অবস্থান প্রশাসনের কাছে এক ভয়ঙ্কর সঙ্কট হিসেবে উপস্থিত হওয়ায় তা এক নিমেষে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য সমস্ত গণতান্ত্রিক বোধকে লঙ্ঘন করে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশাল পুলিশবাহিনী। সশস্ত্র প্রশাসন আর নিরস্ত্র জনগনের মধ্যে খন্ডযুদ্ধ ক্রমশ আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। স্থানীয় অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং রবার বুলেট ছুঁড়তে শুরু করে। কার্যত রণক্ষেত্রর চেহারা নেয় স্কুল চত্বর। পড়ুয়া এবং পুলিশ দু’পক্ষেরই অনেকে আহত হন। ৩ জন পুলিশ কর্মী ছাড়াও আরও ৯ জন আহত হন বলে জানা যায়। অবরোধ-বিক্ষোভ চলাকালীন হঠাৎ পুলিশ গুলি চালায় বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের উপর। এই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন  রাজেশ সরকার নামক দাড়িভিট উচ্চবিদ্যালয়ের এক ২৭ বছর বয়সী প্রাক্তন ছাত্র। ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তাপস বর্মণ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এই নিয়ে যাওয়াও সুগম হয়নি। রাস্তায় অবরোধ করে কিছু উর্দুপন্থী লোক। আহতের গাড়ি বহুক্ষণ আটকে রাখা হয় ও মারধোর করা হয় ।সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে ইসলামপুর মহাকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাপস-রাজেশকে। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। শুক্রবার ভোরে সেখানকার চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। ওই গুলিতে জখম হয় বিপ্লব সরকার নামা এক ছাত্র, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও অভিভাবক যথাক্রমে শ্রী মধু বর্মন ও শ্রী কৃপানাথ সরকার। ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলে।

কেন প্রাণ হারালেন এই দুই নবীন যুবক? কি অপরাধ ছিল তাঁদের? বাংলা ভাষার পঠন পাঠন ও তার হৃত সম্মান পুনরুদ্ধার কি কোন অপরাধ? যে ভারতবর্ষে স্বাধীন মত ও তার প্রকাশের অধিকার এক মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সেখানে মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের দাবীর পরিবর্তে ধেয়ে আসবে গুলি আর মৃত্যু? আর তাও আবার একটি রাজ্য যার নাম পশ্চিমবঙ্গ? এমন এক রাজ্য যেখানে বাংলা ভাষাই সংখ্যাগুরু ভাষা হিসেবে স্বীকৃত? ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘ কিন্তু তা সশস্ত্ররূপে নিষ্পেষিত করা হয় বিশেষ করে যখন প্রশাসন অন্যধর্মীয় বা অন্যভাষী। কিন্তু এখানে প্রশাসন ও তার অত্যাচারের শিকার – সবাই তো বাঙ্গালী। তা হলে? একি আগামী কোন ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহক না এক সুগভীর চক্রান্তের সামান্যতম নিদর্শন? হতভাগ্য রাজেশের ভগ্নী (অন্যতম প্রতিবাদরত ছাত্রী ও যাকে রক্ষা করার জন্যই রাজেশের অকুস্থলে প্রবেশ) র বক্তব্য অনুযায়ী, গুলিচালনার পরে রক্তাক্ত রাজেশকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সটিকে ঘোলাপাড়া নামক এক স্থানে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট আটকে রাখা হয়। প্রশ্ন জাগে, রাজেশের অ্যাম্ব্যুলেন্স কারা আটকে রেখেছিল এবং কেনই বা আটকে রেখেছিল ওদের? অ্যাম্বুলেন্স কে কারা আক্রমণ করেছিল? পুলিশ কেন তাদের গ্রেপ্তার করেনি?  পুলিশ কেন সেখানে লাঠি চার্জ করে রাস্তা খালি করে অ্যাম্বুলেন্সটিকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করল না?  তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কেন পুলিশ গুলি চালালো না? পুলিশের উপরে কি খালি ছাত্র আন্দোলনের উপরেই অস্ত্র চালানোর নির্দেশ ছিল? অন্যথায় যে প্রশ্ন এলাকাবাসী করছেন – পুলিশ কি রাজেশের মৃতদেহ উধাও করে দিতে চেয়েছিল?

প্রশ্ন আরও বহু – ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ এক সম্পূর্ণ নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালাতে পারে তার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে? কোথায়, কখন পুলিশ লাল ফ্ল্যাগ দেখিয়ে মানুষকে সতর্ক করে? কখন শুধুমাত্র পা লক্ষ্য করে গুলিচালনা করা হয়? একবারে ছাতি লক্ষ্য করে গুলিচালনা কোন সভ্য দেশের আইনের পুস্তকে লেখা থাকে? যার জন্য অকালে ঝরে যায় অফুরন্ত সম্ভাবনাসম্পন্ন দুটি প্রাণ তার ক্ষতিপূরণ কে করবে ও কি প্রকারে? এর কি আদৌ কোন ক্ষতিপূরণ হয়? প্রশাসন এক বান্ডিল টাকা রাজেশের পিতা মাতার হাতে দিয়ে বলবে এটিই ক্ষতিপূরণ আর রাজেশের মৃত্যু একটি অসাবধানতার ফল? প্রশাসন কি আদৌ জানে কি অবস্থা তার ভগ্নীর যার রক্ষার্থেই রাজেশ ছুটে গিয়েছিল বিদ্যালয়ে, প্রতিদানে পেল গুলি, রক্ত ও মৃত্যু?

কিন্তু – এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে – সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কি আদৌ অনুতপ্ত? উত্তরটি অত্যন্ত পরিষ্কার – না। ইতিমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, বহিরাগতরা নাকি সশস্ত্র ছিলেন। এটি কি অনুতাপ না অজুহাত? যদি তাই হয়, এত বড় বিশাল সশস্ত্র জনসমাবেশ কিন্তু পুলিশ নির্বিকার রইল। স্পেশাল পুলিশের জন্য অপেক্ষা করা হল না কেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই পুলিশের একমাত্র কাজ। কিন্তু অস্ত্র জোগাড় হয়ে গেলো নির্দ্বিধায়। অর্থাৎ আইন শৃঙ্খলা, দণ্ডের ভয় জনসাধারণের নেই। তাহলে তো রাজ্য সরকার তথা প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। রাজ্য সরকার একটি মাত্র কর্মই করুক – ইস্তফা দিয়ে প্রত্যাহার করুক নিজেদের। কিন্তু তা কি আদৌ হতে পারে? হয়ওনি। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক কিছু তথ্য অনুযায়ী, এ রাজ্যের পুলিশের উপরে কোন অবস্থাতেই গুলি চালানোর অর্ডার থাকে না।  যদি বিগত কিছু সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘর্ষ যথা  কালিয়াচক, ধূলাগড়, বাদুড়িয়া, বসিরহাট, রানীগঞ্জ দেখা যায় তাহলে তাই প্রতীয়মান হয়। সঙ্ঘর্ষজনিত কান্ড হেতু অবস্থার ক্রমশ অবনতি হয় কিন্তু পুলিশের আঙ্গুল ট্রিগারের ওপরেই ন্যস্ত থাকে। আদেশ বিনা তার নড়চড় হয়না। অথচ দাড়িভিট  কান্ড সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করছে!! এখানে অর্ডারের কোন প্রয়োজনীয়তা ছিলনা। অর্থাৎ ষড়যন্ত্র, নির্দেশ পূর্বেই তৈরী ছিল, শুধু উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করা হচ্ছিল মাত্র।

প্রশ্ন আরও অনেক। স্কুলটিতে ১৫ জন শিক্ষকের পদ খালি আছে, সেগুলি ভর্তি না করে শুধুমাত্র উর্দুর শিক্ষক নিয়োগের জন্য এত তৎপরতা কেন? এর পেছনে কি কোন বিশেষ লবির চাপ ছিল ডিআই-এর উপরে? সরকারের কেন হঠাৎ মনে হল যে ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞানের থেকে উর্দু শেখা বেশী জরুরী? সেটা জানতে হলে প্রথমেই চোখ রাখব ১১-১২ শিক্ষক নিয়োগে। কারণ ইসলামপুরের ঘটনাটির সূত্রপাত ১১-১২ শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে WBCSSC 1ST SLST-র নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এরপর viva voce  র জন্য ডাকা হয় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের।

এবার দাড়িভিট বিদ্যালয় সংক্রান্ত একটি বিষয়ের ওপর দৃষ্টিপাত করা একান্ত প্রয়োজন। ২০০৮ সালে এই উচ্চবিদ্যালয়টিতে একজন উর্দু শিক্ষক নিযুক্ত হন। নাম মোহঃ সাজ্জাদ হোসেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি স্কুলে উর্দু পড়ান। ২০১৪ সালে অসুস্থ হওয়াতে প্রায় তিন মাস তিনি স্কুলে আসতে পারেননি। সেই কারণে উর্দু পঠনপাঠন বিঘ্নিত হয় এবং উর্দুর ছাত্রছাত্রীরা অন্য স্কুলে চলে যান। কারণ ইসলামপুরের মতো বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে যেখানকার ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে বঞ্চিত হন, তাদের কাছে শিক্ষা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – কোনও সন্দেহ নেই। তাহলে দাড়িভিটের ছাত্রছাত্রীরা কি উর্দুর বিরোধিতার জন্য এই আন্দোলন করছিল? নাকি সত্যিই ওদের বাংলা সহ অন্য বিষয়ের শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল? যে স্কুলের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উর্দুবিদ্বেষী এবং সাম্প্রদায়িক ট্যাগ লাগানো হচ্ছে, তারা ২০০৮ থেকে ২০১৪, এই ছ-বছরে উর্দু শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেনি কিন্তু! আর এটাও ঠিক পশ্চিমবঙ্গে চাকরি সহ একাধিক পরীক্ষায় উর্দু অপেক্ষা মাতৃভাষা বাংলা এবং সরকারি ভাষা ইংরেজীর প্রয়োজনীয়তা বেশি।

তাহলে মূল রহস্য কি? সেটি কি লুকিয়ে আছে অন্যত্র? demographics র মাধ্যমে? বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল, দীর্ঘদিন ধরেই বল্গাহীন অনুপ্রবেশের অভিযোগ, অস্থির স্থানীয় জনমানস, ভ্রুক্ষেপহীন প্রশাসন – এর মধ্যেই মূল রহস্য নিহিত রয়েছে?  এটি এক গভীর অন্বেষণের প্রয়োজন কারণ ভাষা কোন বায়বীয় পদার্থ নয় যার স্থান একমাত্র মহাকাশে। ভাষা আপনার বা আমার রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অথনৈতিক ব্যবস্থার একটি অঙ্গ, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলির অন্যতম। তাই নব ভাষার প্রাধান্য বা তা করতে যুযোগ দেওয়ার অর্থ এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গীর উত্থান – তা আপনার স্বার্থাবাহী অথবা স্বার্থের সম্পূর্ণ বিপরীতেও অবস্থান করতে পারে। হয়তো সেইজন্যেই এই ভয়ঙ্করতম হত্যাকাণ্ডের পরেও প্রশাসনিক মহলে তাপ উত্তাপ দেখা যায়না। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে শুধু কাঁদে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ মাসে তদন্ত এক পাও এগোয়নি। ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোন অভিযুক্ত পুলিশের হেফাজতেও নেই। অন্যদিকে, গত ২০ সেপ্টেম্বর দাড়িভিট হাইস্কুলে গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যুর পর সরকার উত্তর দিনাজপুরের জেলা স্কুল পরিদর্শক শ্রী রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলকে সাময়িকভাবে কর্মচ্যুত করে। তদন্তের ফলাফল জানা যায়নি, অথচ চার মাসের মাথাতেই সেই রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের বেমালুম প্রোমোশন হয়ে গেল। বিকাশ ভবনে পর্ষদের সহ সচিবের পদে তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্দ্বিধায়, নিঃসঙ্কোচে। কাহিনীর শেষ এইখানেই নয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা স্কুল পরিদর্শক শ্রী নারায়ণ সরকারকেও সাময়িকভাবে কর্মচ্যুত করা হয়েছিল। গত ২৯ ডিসেম্বর ফের তাঁকে পদে ফিরিয়ে আনা হয় মাত্র তিনদিনের জন্য।  কারণ? ৩১ ডিসেম্বরই তাঁর কর্মজীবনের সময়সীমা শেষ।

এরপরে কি আর কোন প্রত্যাশা থাকে!! কিন্তু এই অমর ভাষা আন্দোলন, মহান আত্মত্যাগ তো বিফলে যেতে পারেনা। বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার্থে যুগে যুগে সংগ্রাম হয়েছে, রক্ত ঝড়েছে, বাংলা ভাষার সম্মান উড্ডীন রয়েছে। তাই ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ মিশে এক হয়ে যায় ১৯শে মে, ১৯৬১ র শিলচরের বাংলা ভাষা আন্দোলনের সাথে। তার সাথে মিশে যায় বাংলা ভাষার অমর চেতনা।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)