মরিচঝাঁপি গণহত্যা দিবসে ‘আত্মবিস্মৃত’ অপবাদ ঘোচাতে উদ্যোগী বাঙ্গালী

0
606

বঙ্গদেশ ডেস্ক:-বাঙ্গালীর আত্মবিস্মৃত অপবাদটি দীর্ঘদিনর। সেই অপবাদ কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় জাতীয়তাবাদী বাঙ্গালী নেতৃত্ব। আজ মরিচঝাঁপি গণহত্যা দিবসে ‘মরিচঝাঁপি অভিযান’ কর্মসূচী নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। ৪৩ বছর আগে এই দিনেই পশ্চিমবঙ্গের মার্ক্সবাদী শাসকরা সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপে বাঙ্গালী হিন্দু উদ্বাস্তুদের গণহত্যা সম্পন্ন করেন। তরুণ প্রজন্মের কাছে গণহত্যার সেই ইতিহাস তুলে ধরতে এই কর্মসূচী। এর পাশাপাশী যাদবপুর বাস স্ট্যান্ডে ‘মরিচঝাঁপি দিবস’-ও পালিত হচ্ছে।

১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ভয়াবহ গণহত্যার পর লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালী হিন্দু পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিলে রাজ্যের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে বাঙ্গালী হিন্দু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয় দণ্ডকারণ্যে। রুক্ষ ঊষর দণ্ডক অঞ্চলে বাঙ্গালী উদ্বাস্তুরা কয়েক বছরের মধ্যেই গড়ে তলে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা পরিবেশ। যেন ছোট্ট এক টুকরো বাংলা।

উদ্বাস্তুদের দাবার ঘুঁটি বানিয়ে রাজনীতি করা মার্ক্সবাদী নেতাদের পছন্দ হয়নি এই উন্নয়ন। উদ্বাস্তুদের যদি ক্রমশঃ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে পুনর্বাসন দেওয়া হয়, তাহলে তারা রাজনীতি করবেন কাদের নিয়ে? অতএব, উদ্বাস্তুদের পশ্চিমবঙ্গে পুনর্বাসনের দাবীতে কমিনিস্ট পার্টি আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের দাবী ছিল দণ্ডকারণ্যের উদ্বাস্তুদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনতে হবে। তৎকালীন বামফ্রন্টের দাপুটে নেতারা দণ্ডকারণ্যে গিয়ে উদ্বাস্তুদের আশ্বাস দিতে শুরু করলেন যে বামেরা ক্ষমতায় এলে দণ্ডকারণ্যের উদ্বাস্তুদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনা হবে।

১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দণ্ডকারণ্যের উদ্বাস্তু নেতারা দলবল নিয়ে দক্ষিন ২৪ পরগণার সুন্দরবনের মরিচঝাঁপি দ্বীপে ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার করতে শুরু করেন। পুনর্বাসনের পর উদ্বাস্তুদের উদ্যোগেই সেখানে চাষ শুরু হয়, মাছ চাষের জন্য পুকুর কাটা হয়, পানীয় জলের জন্য নলকুপ বসানো হয়। মরিচঝাঁপির মতো পরিত্যাক্ত একটি দ্বীপ যখন মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠে, তখন সরকারের টনক লড়ে। এত উন্নয়ন হলে, উদ্বাস্তুদের নিয়ে রাজনীতি হবে কীভাবে? শুরু হলো সরকারী অত্যাচার।

রাজ্য সরকারের পক্ষে নানান ভাবে দমন-পীড়ন চালানো হয়।বাড়ীঘরে আগুন লাগানো, মাছ চাষের পুকুরে ফলিডল মেশানো, নলকুপে বিষ ঢেলে দেওয়া, এমনি কি অন্তঃসত্ত্বা মায়েদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। ১৯৭৮ সালের ১৯ আগস্ট প্রচুর সংখ্যায় পুলিশবাহিনী দিয়ে লঞ্চের সাহায্যে সম্পূর্ণ সামরিক কায়দায় গোটা মরিচঝাপি দ্বীপকে অবরোধ করা হয়। ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশের দল খাদ্যসামগ্রী বোঝাই প্রায় ২০০টি লঞ্চকে নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছিল। ২৪ ডিসেম্বর মরিচঝাপিতে প্রথম ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

১৯৭৯ সালের ১৩ জানুয়ারি ভোর থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত পর্যায়ে উচ্ছেদ অভিযান। মরিচঝাঁপির সমস্ত বাড়ি-ঘর, বাজার-দোকান এমনকী স্কুলেও আগুন লাগানো হয়। পরে ২৪-৩১ জানুয়ারি এই আটদিন ধরে চলে নির্মম নরসংহার। পুলিশের গুলি থেকে বাঁচতে বহু মানুষ নদীতে ঝাপ দিয়ে অতলজলে তলিয়ে গিয়েছিল। সেদিন বহু অভিবাসী হিন্দু পুলিশের হাতে নিহত হয়েছিল এবং অনেক মহিলা গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল।বাকি মৃত ও অধমৃত মানুষগুলিকে নৌকা করে ফেলে দেওয়া হয় মাঝ নদীতে। সেদিন জ্যোতিবসুর স্নেহধন্য তথ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সদর্পে ঘোষণা করলেন, মরিচঝাঁপি সম্পূর্ণ উদ্বাস্তুশূন্য।