পুরসভার উন্নয়নের কোপে ‘আরণ্যক’, উদ্বিগ্ন বিভূতিভূষণের পরিবার

0
615

বঙ্গদেশ ডেস্ক : পুরসভার শপিং কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছিল। আর সেই কমপ্লেক্স তৈরি করতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে কালজয়ী সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির একাংশ। সম্প্রতি, এবিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভূতিভূষণের পুত্রবধূ মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই তাঁর পোস্ট ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে রাজ্যবাসীর মনে।

উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করলেও বিভূতিভূষণের পৈতৃকনিবাস বারাকপুরে। স্টেশনের কাছাকছি এসএন ব্যানার্জি রোডে সুকান্ত সদনের পাশেই পথের পাঁচালির স্রষ্টার বাড়ি ‘আরণ্যক’। বিভূতিভূষণ যদিও এখানে আসেননি কিন্তু এখানে রয়েছে তাঁর রচিত পথের পাঁচালির পাণ্ডুলিপি, তাঁর ব্যবহৃত পোশাক, কলম, হুঁকো ইত্যাদি। কিন্তু সে সবই এই মুহূর্তে চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

আরণ্যকের ঠিক গা ঘেঁষে গড়ে তোলা হচ্ছে পুরসভার মার্কেট কমপ্লেক্স। আর এ জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে বিভূতিভূষণের বাড়ির পাঁচিলের একাংশ, সঙ্কটে পড়েছে নিকাশী ব্যবস্থা।

রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি পোস্ট করেন, “আমি কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ। বারাকপুর স্টেশনের কাছাকাছি সুকান্ত সদনের পেছনে রয়েছে আমাদের বাড়ি ‘আরণ্যক’। প্রায় দু’বছর ধরে আমাদের বাড়ির গা ঘেঁষে পৌরসভা পরিচালিত একটি বিশাল শপিং কমপ্লেক্স গড়ে উঠছে।

তিনি আরও লিখেছেন, কাজ শুরুর প্রথম দিকে আমাদের বাড়ির পেছনের অংশের পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং এই কাজ করা হয়েছে বিনা অনুমতিতে। এছাড়া আরও বিভিন্নরকম উৎপাত চলতেই থাকে। দিনরাত মাটির তলায় বোরিং-এর অসহ্য আওয়াজ, বাড়ির পিছনের দিকের বাথরুম ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে প্রভৃতি।

পরবর্তীতে উপরের পোস্টটি ডিলিট করে একটি নতুন পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “আমি কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ। আজ দুপুরে আমাদের বাড়ি সম্পর্কে একটি তথ্য তুলে ধরেছিলাম যে কীভাবে বারাকপুর পৌরসভা আমাদের বাড়ির পেছনের একটি শপিং মল খুলতে গিয়ে দু’বছর আগে আমাদের বাড়ির পেছনের অনেকখানি অংশ ভেঙে দিয়েছে এবং পরবর্তীতে তা মেরামতি করে দেবে বলেও কিছু করেনি।

বহু জায়গায় হাঁটাহাঁটি করে দেখেছি আমাদের মতো ক্ষুদ্র ক্ষমতাসম্পন্ন লোকেরা এদের কোটি কোটি টাকার খেলার কাছে আমরা অপারগ। ওদের কাছে বিভূতিভূষণের গুরুত্ব আছে? তাঁর অনেক জরুরি লেখা, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এখন হার্টের ও নার্ভের রুগী।”

বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই শুরু হতেই বারাকপুর পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য ও তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া শীলভদ্র দত্তের অনুগামী শুভ্রকান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বাড়িটি পরিদর্শনে যান। পুরসভার মুখ্য প্রশাসক উত্তম দাসের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেন তিনি। শুভ্রকান্তিবাবু বলছেন, উত্তম দাস কোনও কিছু দেখেও দেখেন না, এত বড় একটা মূল্যবান জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,অথচ তিনি কোনও গুরুত্ব‌ই দিচ্ছেন না, শপিং কমপ্লেক্সই তাঁর কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁর অভিযোগ, উত্তমবাবু তাঁদের সঙ্গে কোনও ব্যাপারে আলোচনা করেন না, একা একাই সিদ্ধান্ত নেন। যদিও উত্তম দাস বলেছেন, শুভ্রকান্তি ইচ্ছাকৃতভাবে এসব বলছেন, মার্কেট কমপ্লেক্সের জন্য বিভূতিভূষণের বাড়ির আদপে কোনও ক্ষতিই হয়নি, তাঁরা বহুবার স্বচক্ষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান উত্তম দাস জানিয়েছেন, “আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি ওঁনার বাড়ি সময়মতো মেরামত করে দেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণও পাবেন পরিবারের সদস্যরা। সেই আশ্বাস থেকে এক পাও সরছি না। তবে উন্নয়নের কাজ চলছে। সেই কাজ থামিয়ে দিয়ে এভাবে বাধাদান করাটাও ঠিক নয়। কাজটা আগে শেষ হোক, তারপর দেখা যাবে।”