বঙ্গদেশ ডেস্ক: সম্প্রতি আসামের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে নাস্তিক সম্মেলন। চানমারিতে অবস্থিত একটি ইনষ্টিটিউটে সম্পন্ন হয়েছে চতুৰ্থ নাস্তিক সন্মিলন৷সেখানে উপস্থিত ছিলেন চিন্তাবিদ রিপুঞ্জয় গগৈ। এই সম্মেলন বিশিষ্ট লেখক আয়ুব আলী শর্মার অনুদিত বই ‘বিষফোঁড়া’ প্রকাশিত হয়েছে, যা ইতিমধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন আসামের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অধ্যাপক দ্বিজেন বর্মন, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও অ্যাক্টিভিস্ট কস্তুরী লালবেগী, যুক্তিবাদী লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট রিপুঞ্জয় গগৈ এবং সাবেক মাদ্রাসাশিক্ষক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আবদুল্লাহ আল মাসুদ।
এই সম্মেলনে সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয় ছিল আয়ূব আলী শর্মার অনুদিত বই ‘বিষফোঁড়া’। সংখ্যাগরীষ্ঠ ইসলামিক প্রধান দেশ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত উপন্যাস ‘বিষফোঁড়া’ এবার আসামে অসমীয়া ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। বইটি ‘মুক্তবাক অসম প্রকাশন’ প্রকাশ করেছে। গবেষণালব্ধ ও মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণের মতো বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করেই বইটি লেখা। বইটির প্রকাশ উপলক্ষে শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে একটি উৎসবের আয়োজনও করেছিল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও বইটির ভারতে প্রকাশনা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও বইটি আসামে আমরা প্রকাশ করেছি কারণ, আমরা মনে করি এ বইটি দেশের জনগণের হাতে পৌঁছানো দরকার। তাছাড়া প্রকাশক মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশ সরকার বইটি যে অজুহাতে নিষিদ্ধ করেছে তা বাকস্বাধীনতার অন্তরায়।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশে যেভাবে কওমি মাদ্রাসায় শিশুদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় ঠিক একই পদ্ধতিতে ভারতের কওমি মাদ্রাসাতেও শিশু নির্যাতন হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কওমি মাদ্রাসার হেডকোয়ার্টার ভারতেই রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এ বইটি যেভাবে পৌঁছানো দরকার ছিল ঠিক একইভাবে ভারতের মানুষের কাছেও বইটি সেভাবে পৌঁছানো দরকার। তাছাড়া ভারতে মুসলিম আধিক্য রাজ্যের মধ্যে আসাম অন্যতম। সেখানে মাদ্রাসার সংখ্যা নেহাত মন্দ নয়। ওইসব মাদ্রাসায় লাখ লাখ শিশু পড়াশোনাও করে।
প্রকাশক, আসামের মাদ্রাসগুলিতে শিশু ধর্ষণের হার নিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশের মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণের পরিমাণ ভারতের আসামের মতোই সমতুল্য। তবে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সেসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে ভয় পায়। কেন তারা ভয় পায় কারণটা আমরা জানি না।মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ প্রসঙ্গে অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আসামের মুসলিম জনগণ বাংলাদেশের মুসলিমদের মতোই একই ধারায় চিন্তাভাবনা করে। বাংলাদেশের অভিভাবকদের মতোই আসামের মাদ্রাসাছাত্রদের অভিবাবকদের মানসিকতা উগ্র ধরনের।
যদিও বর্তমানে আসাম সরকার সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু কওমি মাদ্রাসা যেহেতু সরকারের টাকায় চলে না তাই কওমি মাদ্রাসা বন্ধ হয়নি। তবে প্রকাশক বলেছেন, আসামে আমরা যারা আছি তারা ভীষণভাবে চাই, ঘৃণা না ছড়িয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং শিশুদেরকে মাদ্রাসা নামক জেলখানা থেকে মুক্ত করতে। ‘বিষফোঁড়া’ বইটি মানুষের হাতে পৌঁছালে এই চাওয়া অনেকটা ত্বরান্বিত হবে বলে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মাদ্রসায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ করেছেন লেখক সাইফুল বাতেন টিটো। মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ নিয়ে গবেষণা করে সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে তিনি ‘বিষফোঁড়া উপন্যাসটি লিখেছেন। বইটির ভূমিকা লিখেছেন আবদুল্লাহ আল মাসুদ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে বইটি প্রকাশ হলেও পরে তা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন ভাষায় বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় অসমীয়া ভাষায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। অসমীয়া ভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন লেখক ও অনুবাদক আয়ুব আলী শর্মা।
অসমীয়া ভাষায় ‘বিষফোঁড়া’ প্রকাশ নিয়ে বইটির লেখক সাইফুল বাতেন টিটো বলেছেন, আমি চাই এই বই পৃথিবীর সকল ভাষায় অনুবাদ করা হোক। বিশেষ করে মুসলিম দেশের ভাষায় তো অবশ্যই অনুবাদ করা হোক। কওমি মাদ্রাসায় শিশু ধর্ষণ বিষয়টি এখন এমন বিশ্বে অন্যতম মহামারির রুপ নিয়েছে। তিনি একথাও বলেছেন, পৃথিবীতে এমন কোনও দেশ নেই যেখানে মাদ্রাসা বা সমগোত্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু ধর্ষণ করা হয় না। এই জঘন্যতম অন্যায় এতোদিন আড়ালেই ছিল। এখন ভয়ংকরভাবে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আয়ুব আলী শর্মা ইসলাম ধর্ম বিরোধী কবি বলে জেলেও গিয়েছেন। ‘বিষফোঁড়া’ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ইসলাম মোটেই শান্তির ধর্ম নয়, ইসলামের দোহাই দিয়ে মুসলমানরা এমন অত্যাচার করে যা কখনও শান্তির বার্তা হতে পারে না। কিন্তু সেই ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আসে না। আমি ইসলাম ধর্মের বিরোধিতা করিনি কিন্তু ইসলাম ধর্মানুরাগীদের ধর্মের আস্ফালনের বিরোধিতা করছি।