চীনের হাতের মুঠোয় চট্টগ্রাম, বিনিয়োগে ভারতের অনীহা

0
1110

বঙ্গদেশ ডেস্ক: দীর্ঘ পাঁচ বছর কুঁড়েমির পর, শেষমেশ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে (সিইআইজেড) উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছে চীনা কোম্পানি চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।

২০১৪ সালে বেইজিং সফরে চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে এই জোনের প্রস্তাব রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে চীনের জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি ভাবনা চিন্তা করে অনুমোদন দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পটির বাস্তবায়নের দিকে এগোতে থাকে।

চায়না হারবার এই প্রকল্পে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানায়। বাংলাদেশ সরকার বরাদ্দ করে ৫০ মিলিয়ন ডলার।এই পর্যন্ত‌ই চলে, এরপর কোনো অগ্রগতিই ঘটেনি। এমনকি এই মাসের শুরুর দিকেও বন্ধ ছিল এই প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজ।

এই মাসের শুরুতেই বেজাকে চিঠি লেখে চায়না হারবার। চিঠিতে প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরের উল্লেখ করা হয়। যৌথ এই প্রকল্পে চীনের ওই কোম্পানির অংশীদারিত্ব থাকবে ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ থাকবে বাংলাদেশ সরকারের।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৮০০ হেক্টর জমির ওপর চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চলটি অবস্থিত। এই অঞ্চলটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের কাছেই, যা বাংলাদেশের সবথেকে বড় সমুদ্র-বন্দর।

এই অঞ্চলটি রেলওয়ে স্টেশনের পাশাপাশি জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গেও ভালভাবে সংযুক্ত। এক‌ই সঙ্গে চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্প অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে যাতায়াতের সময়কে অনেকটাই কমিয়ে দেবে কর্ণফূলী টানেল।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও এই অঞ্চল থেকে মাত্র ২০ কি.মি দূরে অবস্থিত। অনেক ভাবনা চিন্তা করেই এমনই একটি প্রধান ও অনুকূল পরিবেশ যুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল চীনকে দেওয়া হয়, যাতে চীনের বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো সফলভাবে তা পরিচালনা করতে পারে।

কর্ণফূলী নদীর ওপর নির্মিতব্য কর্ণফূলী টানেল নির্মাণে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে চীন। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারই ব্যয় করছে।করোনা ভাইরাসের প্রকোপ সত্ত্বেও ওই টানেলের বিভিন্ন অংশে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে চীনা কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চীন থেকে নিয়মিত আসছে সেখানে।

পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য যোগাযোগকে জরুরি মাধ্যম হিসেবে ধরে নিয়ে তার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মায়ানমারের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম ও কুনমিংকে সংযুক্ত করতে ৯০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করতে হবে। এই সড়কের মাধ্যমে বাংলাদেশ চীনের মেকং উপ-অঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ পাবে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবসা বানিজ্য বৃদ্ধি করবে এবং উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ আরও দৃঢ় হবে।

বাংলাদেশ তার খোলনলচে বদলে নিজেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে তুলে ধরার পর থেকে চীন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করলেও ভারত এই বিষয়ে বিশেষ আশানুরূপ সাড়া দেয়নি। চীন ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে ভারতকে টপকে গেছে। আর তখন থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারীর হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে।

বাস্তবিকপক্ষে দুই সহযোগী দেশ ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তুলনায় নিজস্ব প্রয়োজনকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার।

ভারতকে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে অতিদ্রুত কাজ শুরু করতে হবে। এক হাজার হেক্টরের এই অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে ভারতের সঙ্গে ২০১৫ সালে বেজার চুক্তি হলেও উন্নয়নমূলক কাজ সেই তিমিরেই পড়ে আছে। ভারতীয় সংস্থা আদানি পোর্টস ও স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেডকে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মাণকার্যের জন্য অনুমোদন‌ও দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত ১১৫ মিলিয়ন ডলার সরবরাহ‌ও করেছে।

বর্তমানে বেজা এবং ভারতীয় বিনিয়োগকারী কোম্পানির মধ্যে যৌথ উদ্যোগ চুক্তি নিয়ে জোরকদমে আলোচনা চলছে। গত জুনে এই নিয়ে ভারতকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ করে চীন বাংলাদেশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে দেখে আন্তর্জাতিক মহলে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে আওয়াজ উঠেছে চীন ভারতকে কোনঠাসা করতে বদ্ধপরিকর। তাই আশেপাশের দেশগুলোর ওপর অধিকার কারায়ত্ত করতে চাইছে‌।