পূর্ণ হিন্দুত্ব ১: বঙ্গীয় হিন্দুত্ব এবং সঙ্ঘীয় হিন্দুত্ব

0
3683

ইতিপূর্বে লেখক বঙ্গদেশে বাঙ্গালীর জাতিসত্তা নিয়ে অন্যত্র আলোচনা করেছেন। এবার হিন্দুত্বের পালা। জাতিসত্তার পাঠ ছাড়া রাষ্ট্রসত্তার পাঠ অসম্পূর্ণ। তাই পাঠককে অনুরোধ করবো এই প্রবন্ধটিও পড়তে।

পূর্ণ হিন্দুত্ব ১: বঙ্গীয় হিন্দুত্ব এবং সঙ্ঘীয় হিন্দুত্ব

“India and especially Bengal have the best chance and the best right to become the leaders of the future. But first they must learn to think, to cast away old ideas, and turn their faces resolutely to the future. But they cannot do this, if they merely copy European politics or go on eternally reproducing Buddhistic asceticism.” – Sri Aurobindo

[“ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙ্গালীর কাছে আগামী দিনে মানবজাতিকে নেতৃত্ব দেবার সবচেয়ে ভালো সুযোগ ও অধিকার রয়েছে। কিন্তু তার জন্য প্রথমে তাদের চিন্তার মৌলিকত্ব চাই, পুরনো সংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে তাদের তাকাতে হবে ভবিষ্যতের পানে। কিন্তু ইউরোপীয় ধাঁচের রাজনীতি করে বা বৌদ্ধ সন্ন্যাস আদর্শের বারংবার নকল করে তা হবার নয়।” – শ্রীঅরবিন্দ]

বিষয়সূচি
‘হিন্দুত্ব’: সেকাল ও একাল
হিন্দু, হিন্দুত্ব, হিন্দুত্ববোধ

পরিভাষাকোষ
জাত – Caste
জাতি – Ethnic group
জাতিসত্তা, জাতীয়তা – Ethnicity
জাতীয় – Ethnic
দেশ, বর্ষ – Country
প্রশাসন – Administration, Management
রণ-রাজনীতি – Geopolitics
রাষ্ট্র – Nation (Country অর্থে)
রাষ্ট্র-জাতি – Nation (People অর্থে)
রাষ্ট্রবাদ – Nationalism
রাষ্ট্রবাদী – Nationalist
রাষ্ট্রসত্তা, রাষ্ট্রীয়ত্ব – Nationality
রাষ্ট্রীয় – National
স্বরাজ্য – Nation-State
শাসনশক্তি – State
শাসনযন্ত্র – State Machinery

 

‘হিন্দুত্ব’: সেকাল ও একাল

শ্রীরাম মন্দির আন্দোলন ও বিজেপির রাজনৈতিক উত্থান ‘হিন্দুত্ব’-কে মূলধারার রাজনৈতিক চর্চায় স্থান করে দেয় এবং সঙ্ঘ পরিবার তথা হিন্দু জাতীয়বাদের সমর্থকরা পরিচিত হয় ‘হিন্দুত্ববাদী’ বলে। ‘হিন্দুত্ব’ অভিধাটি অবশ্য বিংশ শতকের কোনো আবিষ্কার নয়। বীর সাভারকরের হিন্দুত্ব নামক পুস্তিকা প্রকাশের প্রায় চার দশক পূর্বে শব্দটি ব্যবহার করেন বাঙ্গলার ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নবজীবন পত্রিকার এক ধারাবাহিক রচনায়, যা ১৮৮৮ বর্ষে ধর্মতত্ত্ব প্রথম খণ্ড: অনুশীলন নামে প্রকাশিত হয়। চার বছর পর, ১৮৯২ বর্ষে প্রকাশিত হয় তাঁর স্নেহভাজন চন্দ্রনাথ বসুর হিন্দুত্ব: হিন্দুর প্রকৃত ইতিহাস

বঙ্গভূমিতে হিন্দু জাগরণের সূচনা অবশ্য হয়েছিল বহু পূর্বে, যার কাণ্ডারী ছিলেন রামমোহন রায়। ‘হিন্দুইজম’ শব্দের প্রণেতা, বাঙ্গলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ গ্রন্থ গৌড়ীয় ব্যাকরণ-এর রচয়িতা, ইসলামের কঠোর সমালোচক[1] এবং খ্রিস্টীয় ত্রিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ববাদের দাবিকে ধূলিসাৎ করার নায়ক রামমোহন রায় প্রকৃতপক্ষে ছিলেন আধুনিক হিন্দু রাষ্ট্রবাদের জনক। হিন্দুধর্মের সংস্কারের মাধ্যমে তাঁর দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ছিল হিন্দু সমাজকে রাজনৈতিক ভাবে সংহত ও শক্তিশালী করা। চিৎপুরে ‘ব্রহ্মসভা’-র (পরবর্তীকালে ‘ব্রাহ্ম সমাজ’) প্রথম অধিবেশনের কয়েক মাস পূর্বে, ১৮২৮ সালের ১৮ই জানুয়ারী জন ডিগবীকে (John Digby) প্রেরিত একটি পত্রে তিনি লিখেছিলেন:

I regret to say that the present system of religion adhered to by the Hindus is not well calculated to promote their political interest. The distinction of castes and innumerable divisions and sub-divisions among them, has deprived them of patriotic feeling, and the multitude of religious rites and ceremonies and the laws of purification have totally disqualified them from undertaking any difficult enterprise. […] It is, I think, necessary that some change should take place in their religion at least for the sake of their political advantage and social comfort.

(বঙ্গানুবাদ: আমি দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য, হিন্দুদের বর্তমান ধর্মীয় বিধি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের অনুকূল নয়। জাতপাতের অসংখ্য বেড়াজাল তাদের দেশাত্মবোধ থেকে বঞ্চিত করেছে, এবং অগুনতি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও শুদ্ধি-বিধি তাদেরকে কোনোরকম বড় উদ্যোগ গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণ অযোগ্য ঘোষণা করেছে। […] আমি মনে করি, অন্তত রাজনৈতিক স্বার্থ এবং সামাজিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তাদের ধর্মে ন্যূনতম কিছু সংস্কার হওয়া প্রয়োজন।)[2]

ব্রাহ্ম সমাজের এই সংস্কার আন্দোলন ছিল বেদান্ত ও তন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত। রামমোহন শুধু বৈদান্তিক ছিলেন না, ছিলেন কৌলতন্ত্র মার্গেরও সাধক। হরিহরানন্দ তীর্থের শিষ্য রামমোহন[3] মহানির্বাণ তন্ত্রের দ্বারা ভীষণ প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তার ধারাভাষ্য প্রণয়ন করতে তাঁর গুরুদেবের সহায়তা করেন। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন,

রাজা রামমোহন রায় যে ব্রাহ্ম ধর্ম এ দেশে প্রচার করেন, তাহা তন্ত্রধর্মের একটা শাখা মাত্র। মহানির্বাণ তন্ত্রের গোড়ার কয়টা উল্লাস আদি ব্রাহ্ম সমাজের ‍বুনিয়াদস্বরূপ। উহাতে লিখিত তন্ত্রস্তোত্রসকল এখনও আদি সমাজে নিয়মিত পঠিত হয়, উহার দীক্ষাদান-পদ্ধতি মহর্ষি দেবেন্দ্ৰনাথের জীবিতকাল পর্যন্ত আদি সমাজে প্রচলিত ছিল। এমনি কি, ঠাকুরবাড়ীর যে বিবাহপদ্ধতি প্ৰচলিত আছে, তাহাও মহানিৰ্বাণ তন্ত্রসম্মত। ইদানীং বাঙ্গালায় ব্ৰাহ্মণ্য প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়াতে এবং তান্ত্রিকগণের ব্যবহারদোষে তন্ত্র সর্বসমাজে নিন্দনীয় হওয়াতে রাজা রামমোহন ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ মহানির্বাণ তন্ত্রসম্মত আদি ব্ৰাহ্ম ধর্মের উপর উপনিষদের ধর্মের আবরণ দিয়াছিলেন। সাধারণ্যে উপনিষদের দোহাই দিয়াই ব্ৰাহ্ম ধর্মের প্রচার করা হইত, পরন্তু দীক্ষিত ব্রাহ্মের সাধন বিষয়ে মহানির্বাণ তন্ত্রের পদ্ধতিই অবলম্বিত হইত।[4]

দূরদর্শী রামমোহনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়নি। ১৮৪৩ বর্ষে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বামী হরিহরানন্দের অনুজ রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন এবং ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। রামমোহনের সার্থক উত্তরসূরি দেবেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ব্রাহ্ম সমাজ খ্রিস্টান মিশনারীদের ধর্মান্তরকরণ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে নেমে হয়ে ওঠে খ্রিস্টানদের প্রধান প্রতিস্পর্ধী। কেশবচন্দ্র সেনের ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজ-এর খ্রিস্ট ভজনার সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হেঁটে দেবেন্দ্রনাথের আদি ব্রাহ্ম সমাজ ছিল একান্তভাবে হিন্দু। তাঁর আদি ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম নেতা গৌরগোবিন্দ রায়ের মতামত—

“The religion was an organised Hindu monotheism. The members were so many Hindus both in worship and social life. They looked at everything from a Hindu stand point, they accepted everything which was Hindu in its characters, they rejected everything which was un-Hindu.”[5]

রামমোহনের মৃত্যুর পরবর্তী তিন দশক ব্রাহ্ম সমাজ এবং বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে বঙ্গীয় হিন্দু সমাজের ভিতর সজীবতা আসতেই আমরা প্রবেশ করলাম রাজনীতির আঙ্গিনায়। দেবেন্দ্রনাথের আদি ব্রাহ্ম সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগে, বিশেষ করে রাজনারায়ণ বসুর অনুপ্রেরণায় ও নবগোপাল মিত্র প্রচেষ্টায় বঙ্গে রাজনৈতিক হিন্দু রাষ্ট্রবাদের প্রকাশ্য আবির্ভাব ঘটল ঊনিশ শতকের ষাটের দশকে শুরু হওয়া হিন্দু মেলার মাধ্যমে। হিন্দু রাষ্ট্রসত্তার (Hindu Nationhood বা Hindu Nationality হতে Hindu Nation-state বা হিন্দু স্বরাজ্য স্বতন্ত্র) সংজ্ঞা নবগোপাল মিত্রই সম্ভবত প্রথম দেন—

“Hindu nationality is not confined to Bengal. It embraces all of Hindu name and Hindu faith throughout the length and breadth of Hindustan; neither geographical position, nor the language is counted a disability. The Hindus are destined to be a religious nation.”

(বঙ্গানুবাদ: “হিন্দু রাষ্ট্রসত্তা বাঙ্গলায় সীমাবদ্ধ নয়। প্রত্যেক হিন্দু নামধারী এবং হিন্দু [উপ]ধর্মীয় মতকে সে বেষ্টন করে; ভৌগলিক অবস্থান বা ভাষা এক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। হিন্দুদের একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র-জাতিতে পরিণত হওয়া নিয়তির দ্বারা নির্ধারিত।”) [6]

১৮৭২-এ রাজনারায়ণ বসুর ‘হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠতা’ শীর্ষক বক্তৃতার সময় থেকে বঙ্গদেশে হিন্দু রাষ্ট্রবাদী ভাবধারার যে স্ফুরণ ঘটে, তা প্রগতিশীল ও রক্ষনশীল এই দু’টি ধারায় সমান্তরাল ভাবে গড়ে উঠেছিল। আর্যদর্শন, নবজীবন, বঙ্গবাসী-র মতন পত্রিকায় চলে রক্ষণশীল ভাবধারার প্রচার, বিশেষ ভূমিকা নেন অক্ষয়চন্দ্র সরকার, কৃষ্ণপ্রসন্ন সেন সহ অন্যান্যরা, উদয় হয় শশধর তর্কচূড়ামণির মতো রক্ষণশীল বাগ্মীর। অপরদিকে প্রগতিশীল ধারা পুষ্ট হয় বঙ্কিমচন্দ্র, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সহ বিশিষ্ট বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবীদের লেখনীতে। এই আদর্শে উদ্বুদ্ধে হয়ে রচিত হয় বহু কবিতা, গান, নাটক ও উপন্যাস। বঙ্কিমচন্দ্র আনন্দমঠ-এ বন্দেমাতরম্ গীতে বঙ্গমাতার যে ছবি চিত্রিত করেন তা বাঙ্গালীর জাতীয় চেতনার সামনে নব দিগন্তের উন্মোচন করে। ‘ভারত কলঙ্ক’ নিবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র হিন্দু রাষ্ট্রসত্তার মূল ভাবটি ব্যক্ত করেন—

আমি হিন্দু, তুমি হিন্দু, রাম হিন্দু, যদু হিন্দু, আরও লক্ষ লক্ষ হিন্দু আছে। এই লক্ষ লক্ষ হিন্দুমাত্রেরই যাহাতে মঙ্গল, তাহাতেই আমার মঙ্গল। যাহাতে তাহাদের মঙ্গল নাই, আমারও তাহাতে মঙ্গল নাই। অতএব সকল হিন্দুর যাহাতে মঙ্গল হয়, তাহাই আমার কর্ত্তব্য। যাহাতে কোন হিন্দুর অমঙ্গল হয়, তাহা আমার অকর্ত্তব্য। যেমন আমার এইরূপ কর্ত্তব্য আর এইরূপ অকর্ত্তব্য, তোমারও তদ্রূপ, রামের তদ্রূপ, যদুরও তদ্রূপ, সকল হিন্দুরই তদ্রূপ। সকল হিন্দুরই যদি একরূপ কার্য্য হইল, তবে সকল হিন্দুর কর্ত্তব্য যে একপরামর্শী, একমতাবলম্বী, একত্র মিলিত হইয়া কার্য্য করে, এই জ্ঞান জাতিপ্রতিষ্ঠার প্রথম ভাগ; অর্দ্ধাংশ মাত্র।

হিন্দুজাতি ভিন্ন পৃথিবীতে অন্য অনেক জাতি আছে। তাহাদের মঙ্গলমাত্রেই আমাদের মঙ্গল হওয়া সম্ভব নহে। অনেক স্থানে তাহাদের মঙ্গলে আমাদের অমঙ্গল। যেখানে তাহাদের মঙ্গলে আমাদের অমঙ্গল, সেখানে তাহাদের মঙ্গল যাহাতে না হয়, আমরা তাহাই করিব। ইহাতে পরজাতিপীড়ন করিতে হয়, করিব। অপিচ, যেমন তাহাদের মঙ্গলে আমাদের অমঙ্গল ঘটিতে পারে, তেমনি আমাদের মঙ্গলে তাহাদের অমঙ্গল হইতে পারে। হয় হউক, আমরা সে জন্য আত্মজাতির মঙ্গলসাধনে বিরত হইব না; পরজাতির অমঙ্গল সাধন করিয়া আত্মমঙ্গল সাধিতে হয়, তাহাই করিব। জাতিপ্রতিষ্ঠার এই দ্বিতীয় ভাগ। [7]

অনেক হিন্দুর কাছে দ্বিতীয় ভাগটি আপাত দৃষ্টিতে দোষাবহ মনে হতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে হিন্দুধর্ম আব্রাহামীয় ধর্মের ন্যায় পরমত অসহিষ্ণু নয়, তাই হিন্দু জাতির পক্ষে স্বজাতির কল্যাণে আরব বা ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের মতো ধ্বংসাত্মক, গণহত্যাপরায়ণ, পরধর্ম বিনাশকারী রূপ ধারণ করা সম্ভব নয়। এর বিপ্রতীপে হিন্দুধর্মের ঔদার্য হেতু আব্রাহামীয় মতাবলম্বী ও আব্রাহামীয় দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত রাজনৈতিক মতবাদীদের দ্বারা নির্যাতিত ইহুদি, পার্সী এবং তিব্বতীদের হিন্দু জাতি সাদরে আশ্রয় দিয়েছে। হিন্দু রাষ্ট্রের উত্থান সেই সনাতন হিন্দুধর্মের উত্থান ছাড়া কিছু নয়, এ কথা ‘উত্তরপাড়া অভিভাষণ’-এ শ্রীঅরবিন্দ দ্ব্যর্থহীন ভাবে ঘোষণা করেছেন—

I say that it is the Sanatana Dharma which for us is nationalism. This Hindu nation was born with the Sanatana Dharma, with it it moves and with it it grows. When the Sanatana Dharma declines, then the nation declines, and if the Sanatana Dharma were capable of perishing, with the Sanatana Dharma it would perish. The Sanatana Dharma, that is nationalism. This is the message that I have to speak to you.

(বঙ্গানুবাদ: সনাতন ধর্মই আমাদের কাছে রাষ্ট্রবাদ। এই হিন্দু রাষ্ট্র জন্মেছিল সনাতন ধর্মের আবির্ভাবের সাথে, এবং তার বৃদ্ধির সাথে রাষ্ট্র বর্ধিত হয়। এই ধর্মের যখন ক্ষয় হয়, হিন্দু রাষ্ট্রেরও তখন ক্ষয়, আর সনাতন ধর্ম যদি কোনোদিন বিনষ্ট হয়, তাহলে সনাতন ধর্মের সাথেই এই রাষ্ট্র বিনাশপ্রাপ্ত হবে। সনাতন ধর্মই আমাদের রাষ্ট্রবাদ। এই বার্তাই আপনাদের কাছে আমার দেবার আছে।)[8]

১৮৯২ বর্ষে বঙ্কিমচন্দ্রের বিশেষ প্রীতিভাজন ও ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ভাব-শিষ্য চন্দ্রনাথ বসু লেখেন হিন্দুত্ব: হিন্দুর প্রকৃত ইতিহাস, যেখানে তিনি বিভিন্ন আঙ্গিকে আব্রাহামীয় Monotheism বা ‘একদেবপূজ্যবাদ’-এর বিপ্রতীপে সনাতন হিন্দুধর্মের তুলনামূলক আলোচনা করেন। তার এক বছর পর, ১৮৯৩ বর্ষে পাশ্চাত্যে আত্মপ্রকাশ ঘটে স্বামী বিবেকানন্দের বেদান্ত-ভিত্তিক হিন্দুধর্ম প্রচার, তাঁর সাফল্যে সমগ্র ভারতে হিন্দু জাতি হয়ে ওঠে উদ্দীপ্ত। বঙ্গের এই নব্য হিন্দুযুগে হিন্দু রাষ্ট্রবাদীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অনুশীলন সমিতি ও অন্যান্য বিপ্লবী সংগঠনের মাধ্যমে যে অগ্নিযুগের সূত্রপাত হয়, তার অন্যতম মুখ্য প্রেরণা ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের ‘অনুশীলন তত্ত্ব’, যার মর্মকথা—

ঈশ্বর সর্ব্বভূতে আছেন; এই জন্য সর্ব্বভূতে প্রীতি, ভক্তির অন্তর্গত, এবং নিতান্ত প্রয়োজনীয় অংশ। সর্ব্বভূতে প্রীতি ব্যতীত ঈশ্বরে ভক্তি নাই, মনুষ্যত্ব নাই, ধর্ম্ম নাই।

আত্মপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বদেশপ্রীতি, পশুপ্রীতি, দয়া, এই প্রীতির অন্তর্গত। ইহার মধ্যে মনুষ্যের অবস্থা বিবেচনা করিয়া, স্বদেশপ্রীতিকেই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম্ম বলা উচিত।[9]

হিন্দু জাগরণের এই জোয়ারে ১৮৯৫ সালে মহারাষ্ট্রে প্রবর্তিত হবার সাত বছর পর শিবাজী উৎসব প্রথমবার বঙ্গে পালিত হয় ১৯০২ সালের ২১শে জুন। ওই বছরের অক্টোবর মাসে সরলা দেবী দূর্গাপূজার মহাষ্টমীর দিনে বীরাষ্টমী উৎসব প্রচলন করেন। এরপর তিনি শিবাজী উৎসবের আদলে ১৯০৩ সালে প্রচলন করেন প্রতাপাদিত্য উৎসব ও উদয়াদিত্য উৎসব। এইরূপ প্রায় চার দশক ধরে হিন্দু রাষ্ট্রবাদী ভাবধারায় লালিত বাঙ্গালী কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে গড়ে তোলে স্বদেশী আন্দোলন, নেতৃত্বে থাকেন অরবিন্দ ঘোষ, বিপিন পাল ও আচার্য সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো দিকপালরা।

সুতরাং আমাদের বঙ্গভূমিই ভারতের হিন্দুত্ব আন্দোলনের আদি পীঠস্থান। বর্তমান হিন্দুত্ব আন্দোলনের সূচনা হয় মহারাষ্ট্রে, বিনায়ক সাভারকরের প্রেরণায়। ১৯২১-এ মালাবারের মুসলিমদের দ্বারা সংঘটিত হিন্দু গণহত্যা, নারী ধর্ষণ ও বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত অনেক হিন্দু রাজনৈতিক নেতা ও বিপ্লবীদের আগামীদিনের পথ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করায়। মুসলিম সমস্যাকে এড়িয়ে ইংরেজ বিরোধিতা নাকি হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে মুসলিম আগ্রাসনকে প্রতিহত করা, এই দুইয়ের মধ্যে তাঁরা শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় পন্থাকে গুরুত্ব দেন। তাঁরা যে কতটা দূরদর্শী ছিলেন তা দুই দশক পর পাকিস্তান আন্দোলনের আবির্ভাব থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়। বিপ্লবী বীর সাভারকর ছিলেন তাঁদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। ১৯২১-এ আন্দামান থেকে তিনি স্থানান্তরিত হন রত্নাগিরি জেলে, রচনা করেন ‘হিন্দুত্ব’ শীর্ষক দীর্ঘ প্রবন্ধটি। তাঁর হিন্দুত্ব অবশ্য বঙ্গীয় ভাবনার থেকে পৃথক—এখানে ধর্ম নয়, মাতৃ বা পিতৃভূমিই মুখ্য, যদিও তা হিন্দুধর্মের উৎসভূমি হিসেবে পুণ্যভূমি রূপে গণ্য। সাভারকর নিরীশ্বরবাদী ছিলেন বলে ধর্ম তাঁর চেতনায় বিশেষ স্থান পাবে না তা স্বাভাবিক, কিন্তু এছাড়াও এইরূপ উপস্থাপনার অন্যতম কারণ, সেসময় হিন্দু সমাজ সম্প্রদায়, জাত ও আঞ্চলিক চেতনায় বহুধা বিভক্ত হওয়ায় সেসবকে উপেক্ষা করে হিন্দু চেতনার একটি সাধারণ ভিত্তি গড়ে তোলার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। ১৯২৪-এ শর্তাধীন মুক্তি পেলে রত্নাগিরিতে থেকেই শুরু হয় তাঁর হিন্দু সমাজকে সংগঠিত করার কাজ। এরপর ১৯২৫ বর্ষে একদা অনুশীলন সমিতির বিপ্লবী ডঃ হেডগেওয়ারের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা হয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের। হিন্দু মহাসভার সহায়তায় ও সঙ্ঘের প্রচারকদের অক্লান্ত চেষ্টায় সঙ্ঘের শাখা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে ভারতের সর্বত্র। চল্লিশের দশক থেকে গড়ে ওঠে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য শাখা সংগঠন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আবির্ভাব ঘটে ভারতীয় জন সঙ্ঘের, যার দ্বিতীয় সংস্করণ ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি।

বঙ্গীয় হিন্দুত্বের ভিত্তি ছিল হিন্দু দর্শন ও বঙ্কিম, শ্রীঅরবিন্দ, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখের উৎকৃষ্ট রাষ্ট্রবাদী সাহিত্য। বর্তমান হিন্দুত্বের কিন্তু কোনো দৃঢ় তাত্ত্বিক ভিত্তি নেই। সাভারকরের হিন্দুত্ব হিন্দু রাষ্ট্রবাদের একটি প্রাথমিক রূপরেখা মাত্র; সঙ্ঘের ‘হিন্দুত্ব’ আর সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ সমার্থক নয়, তা সত্ত্বেও সঙ্ঘ কোনো দার্শনিক গ্রন্থ প্রণয়ন করেনি। রাজনৈতিক দল বিজেপির পূর্বসূরি জনসঙ্ঘের আদর্শ ছিল ‘হিন্দু’ শব্দ বর্জিত ‘একাত্ম মানববাদ’, পরে বিজেপি গঠিত হলে বাজপেয়ীর নেতৃত্বে গৃহীত হয় গান্ধীবাদী সমাজতন্ত্র, যার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। মতাদর্শ প্রসঙ্গে পার্টির বর্তমান অবস্থান পরিষ্কার নয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের মানসিকতার উপর দলের নীতি নির্ভর করে। তাই এক রাজ্যে যখন দলের সংখ্যালঘু মোর্চা ভেঙে দেওয়া হয় তখন অপর এক রাজ্যে দলীয় সরকার হিন্দু মন্দিরের অর্থভাণ্ডার (ফাণ্ড) থেকে ইমাম ভাতা দেবার কথা ঘোষণা করে! তাছাড়া বর্তমান হিন্দুত্ব আন্দোলন চরিত্রে শহুরে হিন্দু সমাজের মতো অনেকটা পাশ্চাত্যধর্মী ও সেক্যুলার; হিন্দু ধর্মদর্শন, সংস্কার ও চর্যার সাথে তা সম্পর্করহিত। কোরান, হাদিস এবং ইসলামের ইতিহাস পঠনের মধ্যে দিয়ে যেখানে একজন ইসলামাবাদী গড়ে ওঠে, বর্তমান হিন্দুত্ব আন্দোলনের ক্ষেত্রে কিন্তু হিন্দুধর্ম ও দর্শন, হিন্দু সভ্যতার ইতিহাস এবং হিন্দুত্ববাদী দর্শন বা সিদ্ধান্তের সাথে অপরিচিত, অনভিজ্ঞ হয়েও একজন নিজেকে ‘হিন্দুত্ববাদী’ বলে ঘোষণা করতে পারেন। এর ফলে হিন্দুত্ববাদীদের হিন্দু চেতনার ভিত থাকে দুর্বল, ‘হিন্দুত্ব’-এর অর্থ নিয়ে থাকে ধোঁয়াশা, জীবনযাপনেও সেক্যুলার হিন্দুর থেকে তাদের বিশেষ পৃথক করা যায় না।

হিন্দু, হিন্দুত্ব, হিন্দুত্ববোধ

হিন্দুত্বের সরল অর্থ ‘হিন্দুসত্তা’ বা ‘Hinduness’, যদিও এর ব্যবহারিক অর্থ ‘হিন্দু রাষ্ট্রসত্তা’ বা ‘Hindu Nationality’। এই সত্তা ত্রিবিধ—সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক। কেমন এই হিন্দুত্বের সাংস্কৃতিক রূপ? বিপ্লবী তারকনাথ দাসের জীবনের একটি ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ পাই বাঘা যতীনের পৌত্র পৃথ্বীন্দ্রনাথের লেখায়—

পরিধানে নিখুঁত স্যুট-নেকটাই, পক্ককেশ কৃষ্ণকায় সাহেবটির সামনে একথালা গরম লুচি; সাবেকি হিন্দু রীতিতে আচমন সেরে তিনি সান্ধ্যভোজনে বসেছেন। গৃহকর্ত্রী মন্তব্য করলেন, “কাকাবাবু, কে বলবে আপনি পঞ্চাশ বছর প্রবাসী থেকে এই সদ্য দেশে ফিরেছেন?” প্রত্যুত্তরে বৃদ্ধ জবাব দিলেন: “মাগো, হিন্দুর ছেলে,—যেখানেই থাক, তার হিন্দুত্ব হারাবে কি ক’রে?”[10]

“হিন্দুর ছেলে, হিন্দুত্ব হারাবে কি ক’রে?”, বিপ্লবী তারকনাথের এই প্রশ্ন বা অভিমত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হিন্দুর ছেলে হিন্দুত্ব হারাতে পারে না, কারণ ‘[সাংস্কৃতিক] হিন্দুত্ব’ কোনো মতবাদ নয়, এই সাংস্কৃতিক সত্তাকে আমরা নিয়ত বহন করে চলি আমাদের ভাবনায়, আচরণে, যাপনে। এই সত্তাকে অন্তরে-বাহিরে লালন করার মধ্যে দিয়ে জেগে ওঠে হিন্দুত্বের প্রাথমিক ভিত। এর সাথে যুক্ত করতে হয় রাজনৈতিক চেতনা বা ‘রাজনৈতিক হিন্দুত্ব’, যা বিকশিত হয় হিন্দু দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ইতিহাস ও সমকালীন রাজনীতিকে দেখতে শিখলে। স্বামী বিবেকানন্দ লাহোরের এক অভিভাষণে আদর্শ হিন্দুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন,

একমাত্র তখনই তুমি হিন্দু পদবাচ্য যখন শব্দটি তোমার মধ্যে তীব্র শক্তির সঞ্চার করবে। একমাত্র তখনই তুমি হিন্দু পদবাচ্য যখন দেশ-ভাষা নির্বিশেষে কারুর হিন্দু পরিচয় তাঁকে তোমার নিকটাত্মীয় করে তুলবে। একমাত্র তখনই তুমি হিন্দু পদবাচ্য যখন হিন্দু পরিচয়ধারী কোন ব্যক্তির দুর্দশা তোমার আপনজনের দুর্দশা বলে মনে হবে।[11]

অর্থাৎ স্বামীজীর চোখে সেই ব্যক্তি আদর্শ হিন্দু যিনি নিজের হিন্দু পরিচয়ের জন্য গর্ববোধ করেন, এবং সমগ্র হিন্দু সমাজকে নিজের পরমাত্মীয় বোধ করে হিন্দুধর্ম ও সমাজের রক্ষার্থে এগিয়ে আসেন। 

হিন্দু পরিচয়ের অহঙ্কার কিন্তু তখনই আসবে যখন আমরা হিন্দুধর্ম এবং হিন্দু জাতির গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জানব। যে বাঙ্গালী নেতাজির রাজনৈতিক জীবন অথবা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্রিকেট জগতের কৃতিত্ব সম্পর্কে অবগত নন, তার পক্ষে কি এই দুই বিখ্যাত বাঙ্গালীকে নিয়ে কোনো অহঙ্কার থাকতে পারে? বৃত্তকে একটু সম্প্রসারিত করে যদি প্রশ্ন করি, একজন বাঙ্গালীর বাঙ্গলা সংস্কৃতির সাথে বিশেষ পরিচয় যদি না থাকে, যদি বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস তার অজ্ঞাত থাকে, তাহলে কি তার পক্ষে বাঙ্গালী হিসেবে যথেষ্ট গর্বিত হওয়া সম্ভব? সুতরাং হিন্দুধর্ম ও জাতির ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা থাকলে স্বধর্মের প্রতি অহঙ্কার আমাদের মধ্যে জাগ্রত হতে পারে না। সেই ইতিহাস চেতনা জাগানোর জন্য চাই যদুনাথ সরকার, রমেশচন্দ্র দত্তের ইতিহাস গ্রন্থের অধ্যয়ন, চাই বঙ্কিম, বিবেকানন্দ, শ্রীঅরবিন্দ প্রমুখের সাহিত্য পাঠ। এই উভয়ের সমন্বয় প্রয়োজন, নাহলে অনেক সময় দেখা যায় কোনো মঠ-মিশন থেকে দীক্ষা নেওয়া হিন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান হিন্দুধর্ম ও জাতির অস্তিত্বের স্বার্থের পরিপন্থী!

বাকি থাকে ‘সামাজিক হিন্দুত্ব’। হিন্দু দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্ম ও ইতিহাস চর্চা হিন্দু সমাজের সাথে একাত্মবোধের জন্য যথেষ্ট নয়। তার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত সামাজিক মিলন, যেখানে ধর্মীয় এবং ইতিহাসের আলোচনার পাশাপাশি থাকবে হিন্দু সমাজের হিতের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী। এই সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে হিন্দুরা নিজেদের কায়-মন-ধন সমর্পণ করবে হিন্দু সমাজের উন্নতিকল্পে, ক্রমশ নিজেকে অঙ্গীভূত করবে বৃহৎ হিন্দু পরিবারে।

নিত্য হিন্দুধর্ম পালন এবং হিন্দু ইতিহাস চর্চা, সাথে নিয়মিত হিন্দু মিলন, এই তিনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে যথার্থ হিন্দুত্ববোধ। এখন চাই মন্দির কেন্দ্রিক এক মিলন ক্ষেত্র, যেখানে অনুকূল ধর্ম-সংস্কৃতির কাঠামোর মাধ্যমে ঘটবে হিন্দুধর্মের, হিন্দু চেতনার, হিন্দু সঙ্ঘ শক্তির উদ্বোধন।

(এই প্রবন্ধের পরবর্তী পর্বগুলোতে থাকবে হিন্দুর ইতিহাসকে জড়িয়ে হিন্দু ধর্মতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব ও রাষ্ট্রতত্ত্ব নিয়ে কিছু আলোচনা ও ভাবনা।)

প্রসঙ্গসূত্র:

[1] তুহফৎ-উল-মুয়াহিদ্দিন লেখার ‘অপরাধে’ মৌলবীদের রোষ থেকে বাঁচতে তাঁকে মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করতে হয়েছিল

[2] Rammohun Roy, Selected Works of Raja Rammohun Roy, Publication Division, Ministry of Information and Broadcasting, GoI, 1958, p. 296

[3] দেবেন্দ্রনাথ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন,

এখানে [দিল্লীতে] সুখানন্দ নাথ স্বামীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হইল। তিনি তান্ত্রিক ব্রহ্মোপাসক। হরিহরানন্দ তীর্থস্বামীর শিষ্য। এই হরিহরানন্দের সঙ্গে রাম মোহন রায়ের বড় বন্ধুত্ব ছিল। তিনি রাম মোহন রায়ের বাগানেই থাকিতেন। ইহাঁরই কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাম চন্দ্র বিদ্যাবাগীশ। […] সুখানন্দ স্বামী বলিলেন যে, “আমি আর রাম মোহন রায় উভয়েই হরিহরানন্দ তীর্থস্বামীর শিষ্য। রাম মোহন রায় আমার মতন তান্ত্রিক ব্রাহ্মাবধূত ছিলেন।”—‘পূজ্যপাদ শ্রীমন্মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বরচিত জীবন-চরিত’—প্রিয়নাথ শাস্ত্রী কর্তৃক প্রকাশিত (১৮৯৮), পৃ. ১৪৩।[বাণান অপরিবর্তিত]

উদ্ধৃত: ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘হরিহরানন্দনাথ তীর্থস্বামী কুলাবধূত’, সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা, ১ম খণ্ড, ১৩৪৬ বঃ, পৃ. ৩০-৩১

[4] পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘তন্ত্রের ঐতিহাসিক মূল্য’, বাঙলার তন্ত্র, খোয়াবনামা, ১৪২৬ বঃ, পৃ. ২৩০

[5] উদ্ধৃত: স্বপন বসু, বাংলায় নবচেতনার ইতিহাস, পুস্তক বিপণি, ২০১৬, পৃ. ৩৪১

[6] উদ্ধৃত: Biman Behari Majumdar, History of Indian Social and Political Ideas (From Rammohan to Dayananda), Firma KLM Pvt. Ltd., 1996, p. 184

[7] বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিম রচনাবলী: সাহিত্য সমগ্র, ১৯৯১, পৃ. ২৩৯

[8] Sri Aurobindo, ‘Uttarpara Speech’, Karmayogin: Political Writings and Speeches 1909-1910, The Complete Works of Sri Aurobindo, Vol 8, Sri Aurobindo Ashram Trust, 1997, p. 12; বঙ্গীয় সংস্করণ: ‘উত্তরপাড়া অভিভাষণ’; মূল ইংরেজি হতে অনুবাদ

[9] বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ‘ধর্মতত্ত্ব’, বঙ্কিম রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড, কামিনী প্রকাশালয়, জানুয়ারি ১৯৯১, পৃ. ৬৭১

[10] পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, সাধক বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, ২০১২, পৃ. ৩৯৯

[11] Swami Vivekananda, ‘The Common Bases Of Hinduism’, Lectures from Colombo to Almora, Complete Works of Swami Vivekananda, Vol 3, Advaita Ashrama, Online Edition, https://advaitaashrama.org/cw/volume_3/lectures_from_colombo_to_almora/the_common_bases_of_hinduism.htm; বঙ্গীয় সংস্করণ: ‘হিন্দু ধর্মের সাধারণ ভিত্তি’; মূল ইংরেজি হতে অনুবাদ