বাংলাদেশী সন্দেহে বেঙ্গালুরুর জেলেই দিন কাটছে অধিকারী দম্পতির, চিন্তায় পরিবার

0
411

বঙ্গদেশ ডেস্ক:শ্রমিকের কাজ করতে ভিনরাজ্যে গিয়ে ভয়ানক পরিস্থিতির শিকার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা এক দম্পতি। এমনকি রেহাই মেলেনি তাঁদের দেড়বছরের শিশুপুত্রও। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীর অভিযোগে এই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কর্ণাটক পুলিশ তাদের জেলে পাঠিয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে শিশু পুত্র আদিকে নিয়ে বেঙ্গালুরুর জেলে দিন কাটাচ্ছে পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী।

পরিবার পরিজন বেঙ্গালুরু গিয়ে ওখানকার পুলিশকে ছেলে ও বৌমার ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণ পত্র সহ নথি দেখালেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ছেলে,বৌমা ও নাতির জেল থেকে মুক্তির জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেছেন অসহায় পরিবার।

পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তেলে গ্রামের বাসিন্দা। সেখানে টিনের চালার একটি বাড়িতে তারা বাস করে। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, বাড়িঘর দেখলে বোঝা যাবে আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এই ঘটনায় স্তম্ভিত তেলে গ্রামের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা।

পলাশ বাবুর নিকট আত্মীয় পিন্টু হাওলাদার বলেছেন, তেলে গ্রামেই বাস পলাশ অধিকারীর। ঠিকা শ্রমিকের কাজের জন্য চলতি বছরের জুন মাসে শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে পলাশ ও তার স্ত্রী বেঙ্গালুরু যায়। সঙ্গে ছিলেন বাবা পঙ্কজ অধিকারী, মা সবিতাদেবী ও প্রতিবেশী সুনীল অধিকারীও। ওখানে মারাথাহাল্লি মহকুমার ভারথুর থানার সুলিবেলে গ্রামের বাসিন্দা কায়েন খানের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন তারা। সেখানে ৩০০-৪০০ টাকা রোজকার মজুরিতে কাজ শুরু করে পলাশ। তাদের কাজ ছিল হোটেল, রেঁস্তোরা, সিনেমা হল সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত বর্জ্যবস্তু, বোতল, প্লাস্টিক সরঞ্জাম বাছাই করা।হুগলির বৈচিগ্রামে পলাশের আত্মীয় সুজন হালদার বলেছেন, পলাশ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানের কথা শোনার পর তিনি ব্যাঙ্গালোরে গিয়েছিলেন। সেখানে একজন আইনজীবীকে নিয়োগ করেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ।

সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু গত ২৭ জুলাই ভারথুর থানার পুলিশ কায়েন খানের ডেরায় হানা দেয়। অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে বাংলাভাষীদের প্রত্যেককেই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ভারথুর থানার পুলিশ পাকড়াও করে তাদের থানায় নিয়ে যায়। যদিও পলাশ, তাঁর স্ত্রী, বাবা-মা ও প্রতিবেশী সুনীল অধিকারী, সবাই ভারথুর থানার পুলিশকে জানান তাঁরা কেউই বাংলাদেশী নন। নিজেদের ভারতীয় বলে দাবি করে নিজের নিজের আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড দেখান। লোকাল পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা, মা ও প্রতিবেশীকে ছেড়ে দিলেও পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্র সহ সাত জনকে ছাড়েনি। সেই থেকে প্রায় তিন মাস হয়ে গেল শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে পলাশ ও তাঁর স্ত্রী বেঙ্গালুরুর জেলেই দিন কাটাচ্ছে।

জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেছেন, এমন ঘটনার কথা তিনি শুনেছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলোক মাঝি বলেছেন, পলাশ অধিকারী ও তাঁর পরিবার আমার বিধানসভা এলাকার তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ও ভোটার। ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রামাণপত্রও থাকা সত্ত্বেও কোন যুক্তিতে বেঙ্গালুরু পুলিশ এবং তাঁর স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে জেলে রাখা হয়েছে সেটাই আশ্চর্যের। তিনি আরও জানান,কালী পুজো মিটলেই তিনি বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের মাধ্যমে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।