১৫ দিন হাসপাতালের বেডে জীবন-মরণ লড়াইয়ের পর হার মেনেছে আরেক নির্ভয়া। মাঝরাতে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার দেহ। চিতার আগুন শান্ত হলেও এখনও দেশ জুড়ে জ্বলছে সেই আগুন। এখনও সেই ঘা দগদগে অনেকের স্মৃতিতে।এরই মধ্যে ফের আরও এক দলিত মহিলার গণধর্ষণের খবর উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমের পাতায়।
হাথরাস ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবার উত্তরপ্রদেশের বলরামপুরে। এখানে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ২২ বছরের এক দলিত কন্যাকে। বুধবার মারা যায় সেই হতভাগী ধর্ষিতা এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পোস্টমর্টেমের পর তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার তার গ্রামের কাছাকাছি একটি কলেজে ভর্তি হতে গিয়েছিলো এই তরুণী। কলেজ থেকে ফেরার পথে তাকে তুলে নিয়ে যায় দু’জন ব্যক্তি। তারপর ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই ছাত্রীটিকে পা ও স্পাইনাল কর্ড ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে রিক্সায় তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাতে ঝোলানো ছিল গ্লুকোজের ড্রিপ। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, সেখানেই মৃত ঘোষণা করা হয় ওই তরুণীকে।
অপইন্ডিয়া সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বলরামপুর থানার পুলিশ সুপার দেব রঞ্জন ভার্মা জানিয়েছেন, তরুণীর থেকে তার পরিবারের লোকেরা জানতে পারে যে দুই যুবক তাকে ধর্ষণ করেছে ও বাধা দিতে যাওয়ায় তাকে অমানুষের মতো শারীরিক অত্যাচার করেছে।
ধর্ষিতার পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, তরুণীর হাত ও পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। যদিও পোস্টমর্টমে সেরকম কিছু তথ্য পাওয়া যায় নি। মৃতার ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শাহিদ ও সাহিলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরায় দুই অভিযুক্ত স্বীকার করেছে তারা মেয়েটিকে বন্ধুত্বের অছিলায় বাড়িতে ডেকে এনেছিলো।
এই দুজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও হত্যার চার্জ এনেছে পুলিশ। পুলিশ তদন্ত চলাচ্ছে এই ঘটনায় আরোও অন্য কেউ যুক্ত আছে কি না। ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে এই মামলার বিচার হবে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।
মৃত্যুর আগে মেয়েটি তার পরিবারকে জানিয়েছে, “দুই যুবক তাকে অপহরণ করে জোর করে মাদক মেশানো দ্রব্য খাইয়ে দেয়। এরপরেই শুরু হয় অমানুষিক অত্যাচার।”
পরিবার সূত্রে খবর, অনেক রাতে রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি ফেরে তাদের মেয়ে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে সারা শরীরে প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভব করছে। ধর্ষিতা তরুণী বারবার বলতে থাকে, সে হয়তো আর বাঁচবে না। এরপরেই তড়িঘড়ি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয় তাকে।
তবে গ্রামীণ চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন তরুণীর চোট অত্যন্ত গুরুতর। তাকে অতিশীঘ্র বড় কোনো হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। সেই মতো বড় হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় ওই তরুণীর। অত্যধিক রক্তক্ষরণের কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। উল্লেখ্য, বলরামপুরের গোসরি থানার বাসিন্দা ছিল ওই তরুণী। সে এলাকায় ভীষন মেধাবী ছাত্রী হিসাবে পরিচিত ছিল। স্থানীয় একটি সংস্থায় কমিউনিটি রিসার্চ পার্সন হিসেবে কর্মরত ছিলো ওই তরুণী। নরপশুদের হাতে আবারও একটি নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে গেল।