অতিমারীর সময়ে, ধর্মান্ধ দলগুলি ধর্মীয় নিন্দার বিরুদ্ধে নানা প্রতিবাদ মিছিল করছে, ‘জেল ভরো’র প্রচার করছে, মুণ্ডচ্ছেদের শ্লোগান তুলছে।
তিনদিন আগে, বিখ্যাত আজমির শরীফ দরগার সামনে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ জমায়েত হয়ে ধর্মীয় নিন্দার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামেন। এই দরগাহ্ যেখানে পারস্যের সুফি মুসলিম ধর্ম প্রচারক খাজা মইনুদ্দিন চিশতীর সমাধি রয়েছে, কিছুদিন আগেই ঘোষণা করা হয় সেটি ৩০শে এপ্রিল অবধি বন্ধ থাকবে।
এই সময়ে যখন সরকারের পক্ষে ভিড় সামলানো মুশকিল হয়ে উঠছে, দরগার কর্তৃপক্ষ তাদের ধর্মপ্রবক্তার সম্মান রক্ষার্থে এই জমায়েত হয়েছে বলে দাবি করে।
নীচের ভিডিওতে জমায়েতের ছবি ফুটে উঠেছে:
Covid-compliant crowd – at Ajmer dargah yesterdaypic.twitter.com/N0AvSqSOUd
— Swati Goel Sharma (@swati_gs) April 17, 2021
সামাজিক মাধ্যমে এই প্রতিবাদ মিছিলের নানা দৃশ্য বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ ‘আল্লাহু আকবর’ ও ‘নারায়ে তাকবীর’ বলে শ্লোগান দিচ্ছে এবং এই জমায়েতের উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তি বলছেন যে, বিগত পাঁচ-ছয় বছর ধরে সারা ভারত জুড়ে ধর্মপ্রবক্তা মহম্মদের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য শোনা যাচ্ছে। এই ব্যক্তি দরগার খাদিম, সৈয়দ সরওয়ার চিশতী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের উত্তেজিত করবেন না না হলে আমরা (মুসলিমরা) এই দেশে আবার একাধিপত্য বিস্তার করতে চাইব।’
ভিডিওটি নিম্নরূপ:
“We ruled over you for centuries. We were the rulers, you were the subjects. Don’t try us, or we will rule over you again”
– Sufi Maulana at a Covid-compliant gathering at Ajmer dargah two days ago giving Sharia-compliant warnings pic.twitter.com/oXjEkEr0U7
— Swati Goel Sharma (@swati_gs) April 18, 2021
ইন্টারনেটের একটি গণনা অনুযায়ী, কেবল ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ এই প্রতিবাদের খবর প্রচার করে। সেই রিপোর্টে বলা হয়, দরগাহ্ বাজারে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল করে এবং দাসনা মন্দিরের পুরোহিত যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতীর গ্রেফতারের দাবি জানায়।
সেই রিপোর্টে বক্তার একটিমাত্র উদ্ধৃতি রয়েছে, ‘সমস্ত ধর্মের ধার্মিক ব্যক্তিত্বকে সম্মান করা আমাদের ধর্মমতের মূল উদ্দেশ্য। সরস্বতী ইসলামের ধর্মপ্রবক্তার অপমান করে মুসলিমদের উত্তেজিত করতে চেয়েছেন। এটি অপরাধমূলক কাজ এবং এর জন্য ওঁকে গ্রেফতার করা উচিত।’
কিন্তু এই ভিডিওগুলি আরও অনেক কিছু উদ্ঘাটিত করে। বক্তার মতে, ‘যখন শহরের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, রেলওয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, তখন আপনারা কি আমাদের গৌরবান্বিত ইতিহাসকে রবার দিয়ে মুছে ফেলতে চাইছেন? আমরা যে এই দেশে ১৪০০ বছর শাসন করেছি তা অস্বীকার করতে চাইছেন? আমরা পরাধীন ছিলাম না, আমাদের আবার শাসক হয়ে উঠতে বাধ্য করবেন না।’
এই প্রতিবাদ সভা রাজস্থানে আয়োজিত হলেও, সমগ্র উত্তরপ্রদেশ জুড়ে অধার্মিক চর্চার প্রতিবাদে একই রকমের জমায়েত দেখা গেছে ও ধর্মান্ধ দলগুলির নানা উত্তেজিত বক্তৃতা শোনা গেছে। এদের ক্ষোভের মূল লক্ষ্য গাজিয়াবাদ জেলার দাসনা অঞ্চলে এক বেসরকারি মন্দিরের পুরোহিত যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী।
নরসিংহানন্দ সম্প্রতি দিল্লির প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে ধর্মপ্রবক্তা মহম্মদের বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করেন যা সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
নরসিংহানন্দের বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে নানান পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। নিউ দিল্লিতেও নরসিংহানন্দের বিরুদ্ধে আম আদমি পার্টির আমানতুল্লাহ খান অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ দায়ের করার আগে, খান ট্যুইটারে একটি বার্তায় লেখেন, ধর্মের নিন্দার জন্য নরসিংহানন্দের মাথা ও জিভ কেটে ফেলা উচিত। মানুষ এই নিয়ে প্রতিবাদ জানালে, ট্যুইটার এই বার্তাকে খারিজ করে।
আজমির প্রতিবাদের এক সপ্তাহ আগে, উত্তরপ্রদেশের বরেলি শহরের এবং তার আশেপাশের বাসিন্দারা শহর জুড়ে জমায়েত হয়ে খোলাখুলিভাবে মুণ্ডচ্ছেদের হুমকি দেয়। জমায়েতে বারবার বলা হয়”গুস্তাখ এ রসুল কি একহি সাজা, সার তন্ সে জুদা, সার তন্ সে জুদা [ধর্মপ্রবক্তার বিরুদ্ধে মন্তব্য করার একটাই শাস্তি তা হল মুণ্ডচ্ছেদ]”।
জমায়েতের সেই দৃশ্য নিম্নরূপ:
The crowd we need to talk about. Bareilly, last week.
“Sar tan se juda sar tan se juda” pic.twitter.com/mTXh3UHCxr— Swati Goel Sharma (@swati_gs) April 14, 2021
এই প্রতিবাদকে জাতীয় ইংরেজি গণমাধ্যম এড়িয়ে যায় এবং হিন্দি গণমাধ্যমেও এই খবর দমিয়ে দেওয়া হয়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এই প্রতিবাদ মিছিল আয়োজিত হয় জামাত রাজা-ই-মুস্তাফা নামক এক সংস্থার দ্বারা এবং গতরাতে মসজিদের মাইকে এই প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা করা হয়। রিপোর্টে আরও বলা হয়, যে শহরের ম্যাজিস্ট্রেট এই প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজকদের অনুরোধ করেন তারা যাতে অতিমারীর কথা চিন্তা করে জামা মসজিদের বাইরে নিজেদের দাবিদাওয়াগুলি চিঠিতে লিখে জমা দেয়, কিন্তু তারা রাজি হয় না।
মুণ্ডচ্ছেদের হুমকির পাশাপাশি, জমায়েতে নরসিংহানন্দ জাতীয় সুরক্ষা আইনের (এনএসএ) আওতাভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
নিউ দিল্লির এক সংস্থা তেহরিক ফারুক-ই-ইসলাম এই সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে ঘোষণা করে ‘আব ‘ইয়া তো গুস্তাখ রহেঙ্গে ইয়া হাম'( হয় এই নিন্দুকরা থাকবে, না হলে আমরা)।
এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক মৌলানা গণমাধ্যমকে জানান যে, ২১দিনব্যাপী রমজানের শুরুর থেকে অর্থাৎ ৪ঠা মে থেকে দেশের সমস্ত মুসলিমরা ‘জেল ভরো’ প্রতিবাদে সরব হবে। সেই মৌলানা বলেন, ‘হিন্দুস্থানের জেলে স্থানাভাব দেখা দেবে’। তিনি এও বলেন যে, মুসলিমদের করোনাভাইরাস অতিমারী নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই।
জমায়েতের বক্তা দাবি করেন, ভারতে ধর্ম নিয়ে নিন্দা করে যারা তাদের অন্তত ২০বছরের জেল হওয়া উচিত।
বক্তা আমানতুল্লাহ খানের মুণ্ডচ্ছেদের বার্তাকেও সাধুবাদ জানান। মৌলানা বলেন যে, ইসলাম ধর্মের ১৪০০ বছর পুরোনো ইতিহাসে ধর্ম নিয়ে নিন্দা করে এমন মানুষের মুণ্ডচ্ছেদের অনেক উদাহরণ রয়েছে এবং এই নিন্দুকদের ইসলামীয় শাস্তি হিসেবে মুণ্ডচ্ছেদের দাবি করে খান সঠিক কাজ করেছেন।
Reporter: Why does it matter so much what anybody said?
Sufi Maulana: We have a 1400-year-old tradition of beheading people over such comments. Amanatullah was absolutely right in saying that the correct punishment is beheading. But we live in a non-Islamic state so… pic.twitter.com/Ym83zFRWuN
— Swati Goel Sharma (@swati_gs) April 17, 2021
মৌলানা বলেন, ‘আমরা ইসলাম শাসিত প্রদেশে থাকলে শাস্তি হিসেবে মুণ্ডচ্ছেদকেই প্রাধান্য দেওয়া হত। কিন্তু ভারত সংবিধান মেনে চলে বলে আমরা কেবল দাবিদাওয়া নিয়ে চিঠি লিখছি ও অভিযোগ দায়ের করছি কিন্তু কেউ সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
কানপুরেও এক প্রতিবাদ মিছিল আয়োজিত করা হয়, যেখানে রাস্তায় নরসিংহানন্দ ও ওয়াসিম রিজভির মুণ্ডচ্ছেদের দাবিতে নানা হোর্ডিং টাঙানো হয়। সামাজিক মাধ্যমে এই হোর্ডিংয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়লে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং পরে পুলিশ এইসব হোর্ডিং সরিয়ে নেয়।
Portrait of a Hindu Rashtra pic.twitter.com/rVfvDvEx4Z
— Swati Goel Sharma (@swati_gs) April 12, 2021
এইসব প্রতিবাদকে জাতীয় ইংরেজি গণমাধ্যম সাবধানে এড়িয়ে যাচ্ছে। এমনকী হিন্দি গণমাধ্যমেও এর আংশিক প্রচার হচ্ছে, এই সব বিক্ষুব্ধ শ্লোগান ছাড়া।
মূল লেখাটি স্বরাজ্য পত্রিকায় প্রকাশিত, লিখেছেন স্বাতী গোয়েল শর্মা। অনুবাদ করেছেন অঙ্কুষা।