শরদ পাওয়ার থেকে মমতা ব্যানার্জী! আঞ্চলিক নেতাদের ক্রমাগত উপেক্ষা ডেকে এনেছে কংগ্রেসের বিপর্যয়

0
449

বঙ্গদেশ ডেস্ক: দিল্লিতে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার সঙ্গে রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটের বৈঠক এবং বর্তমানে রাজস্থানে রাজনৈতিক চাপানউতোরের দিকে নজর রাখছে গোটা দেশ। দলের অন্দরে মতভেদের কারণে মধ্যপ্রদেশ হাতছাড়া হয়েছে অনেক আগেই৷ এরপরে যদি রাজস্থানেও বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তবে বলাই বাহুল্য জাতীয় রাজনীতিতে একদা সর্বশক্তিশালী কংগ্রেসের বামনে পরিণত হওয়ার পথ আরো প্রশস্ত হবে।

কংগ্রেস থেকে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার পদত্যাগ যেমনভাবে মধ্যপ্রদেশে সরকার বদলে দিয়েছিল, কমলনাথ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বিজেপির শিবরাজ চৌহানকে। তেমনই সচিন পাইলট নিজের দাবি মত যদি ৩০ জন বিধায়ককে নিয়ে দল ছাড়েন, তবে কংগ্রেসের পক্ষে একেবারেই সহজ হবেনা নিজেদেরকে শাসকের আসনে অটল রাখা।

ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে যে নেতাদের দলবদল ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে হামেশাই ঘটেছে। সাম্প্রতিক অতীতে বহুবার কংগ্রেসে ভাঙন ধরেছে এই দলবদলের জন্য। একাধিকবার এমনও হয়েছে যে দলের প্রাণভোমরা নেতারা দল ছেড়েছেন, কখনো আবার জোটসঙ্গী আঞ্চলিক দল থাকতে চায়নি পাশে৷

কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করে সাফল্যলাভকারী নেতা নেত্রীদের মধ্যে প্রথম নাম হিসেবে অবশ্যই উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। ২৬ বছর ধরে কংগ্রেসের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার পরে তিনি নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৯ সালের মধ্যভাগে ভারতের নির্বাচন কমিশন তৃণমূল কংগ্রেসকে একটি স্বাধীন দল হিসেবে ভোটে লড়ার ক্ষমতা প্রদান করে৷

তৎকালীন কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি হতে পারতেন মমতা। কিন্তু কংগ্রেসই তাকে সেই সুযোগ দেয়নি৷ একঘরে করে দিয়েছিল দলের অন্দরে৷ দলের মধ্যে একঘরে হয়ে সামান্য এক নেত্রী হয়ে থেকে যেতে চাননি মমতা। কংগ্রেস ছাড়ার ১৩ বছর পর ২০১১ সালে তার দল তৃণমূল বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসে। এবং এর পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটকে হেলায় হারিয়ে দেয়৷ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস বিলুপ্তপ্রায় এক দল। বামেদের গ্রহণযোগ্যতাও কমে তলানিতে ঠেকেছে এই রাজ্যে৷ এক এবং একমাত্র বিরোধী দল হিসেবে রাজ্য রাজনীতিতে উঠে এসেছে বিজেপি। ২০২১ সালের বিধানসভায় বিজেপিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান কাঁটা৷

দেশের অন্যতম প্রবীন নেতা শরদ পাওয়ারও ছিলেন কংগ্রেসের জোটসঙ্গী৷ ১৯৯৯ সালে সোনিয়া গান্ধী দলের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হওয়ায় তিনিও সম্পর্কচ্ছেদ করেন কংগ্রেসের সাথে। জোট থেকে বেরিয়ে এসে নিজে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (NCP) প্রতিষ্ঠা করেন৷ যদিও ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে অবধি এই দলটি ইউপিএ সরকারকে সমর্থনকারী গুরুত্বপূর্ণ একটি দল ছিল।

তবে দেশের রাজনৈতিক ধুরন্ধররা জানেন যে পাওয়ার কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় একটা বড় অংশ ভোট হাতছাড়া হয়েছে তাদের। বর্তমানে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, শিবসেনা, কংগ্রেসের জোট সরকার মহারবষ্ট্রে ক্ষমতায় রয়েছে ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেসের নেতাদের হামেশাই অভিযোগ করতে শোনা যায় যে সিদ্ধান্তগ্রহণের সময় তাদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছেনা।

শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা শরদ পাওয়ার নন, কংগ্রেসের সাথে একদা জোট করেছেন অথচ পরবর্তীতে বেরিয়ে এসেছেন এমন নেতার উদাহরণ আরো রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই.এস.জগনমোহন রেড্ডি, বিজেপি শাসিত আসামের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও একসময়ে কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। স্বাধীনতা উত্তর ভারতবর্ষে ৫৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস অধিকাংশ সময়েই বিভিন্ন রাজ্যের রাজনীতিও নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে। তবে সম্প্রতি নেহেরু-গান্ধী বংশের একাধিপত্য, স্বজনপোষণের ফলে বহু আঞ্চলিক নেতা-নেত্রী বাধ্য হয়েছেন দলত্যাগ করতে৷

জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং সচিন পাইলট, উভয়েই মুখ্যমন্ত্রী পদের যোগ্য দাবিদার ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে সেই পদে আসীন হতে দেয়নি দল। গান্ধী পরিবারের অনুগত নেতাদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। দেশীয় রাজনীতিতে ভবিষ্যতে রাহুল গান্ধীর প্রতিযোগী হিসেবে যাতে সচিন কিংবা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মত তরুণ নেতারা না উঠে আসেন, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং এই কারণেই একের পর এক বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতা হারিয়েছে কংগ্রেস৷