বিভিন্ন জিহাদের অন্তিমেই গাযওয়া ই হিন্দের লড়াইয়ের নিশানা

0
1224

ঋতম দেব সিংহ

তপু ও অজিত বসে আছে একটি পুরনো ভাঙ্গা পাঁচিলের উপর। শহরের কোলাহলের বাইরে, এই নীরবতার খুব প্রয়োজন। দেহের নীরবতার খুব প্রয়োজন। একটু ভাবতে, একটু বুঝতে, আর একটু বিশ্রামের জন্যও।

অজিতদা বলছে,

হে পথিক, তিষ্ঠ ক্ষণকাল,
লহ বিশ্রাম মোর বটশিখড়ে
হাজার পথের মহা ক্লান্তি ভুলো,
আর শোনাও পথের গল্প আমারে।

– অজিতদা, ভারতের এই পবিত্র ধরিত্রীতে আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিনিয়ত সংগ্রামের ইতিহাসও তো বিস্তর এক মহাপথ। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে সে পথের পথিক আমরা, বর্তমান থেকে বার্তা বা সংগ্রাম পৌঁছে দিবো ভবিষ্যতে।

– হ্যাঁ রে দার্শনিক। আমরা বা আমাদের দেহের জিন হলো সেই পথিক, আমাদের ইতিহাসের গল্প হলো সেইই পথিক।

– ওইদিন গাযওয়া ই হিন্দ নিয়ে বলেছিলে, রাজা দাহিরের সময় থেকেই আক্রমণ করে এসেছে তারা, এখনও চলেছে। এটাও এরকমই কিছু?

– একদম। গাযওয়া ই হিন্দ একটি স্বপ্নের নাম। মুসলিমরা যখন ভারতে আসে নি। দেখতো, সোনার দেশ ভারত। অর্থ সম্পদে প্রভাবশালী। এ দেশ জয় করতেই হবে। তখনই হাদিসে ঢুকে যায় গাযওয়া ই হিন্দ গল্প। আর সে স্বপ্ন সবাইকে বিশ্বাস করানো হয়। প্রতিটা মুসলিম তাইই স্বপ্ন দেখে ভারতে, কাফের হিন্দুদের সাথে তাদের লড়াই হবে। আল্লার মহা কুদরতে ভারতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই স্বপ্নেই হাজারো বছর আগে আক্রমণ করে ভারতে। ধীরে ধীরে সিন্ধুদেশ, বেলুচিস্তান যা বালুচদেশ বাস্তবে, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, কাশ্মীরে ধীরে ধীরে তারা ইসলাম কায়েম করে ফেলেছে। কায়েম করে ফেলেছিলো আমাদের এই বাঙ্গালাতেও। তাই অর্ধেকটা ভেঙ্গে বানাতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

– তবুও কি আছে নিস্তার? পশ্চিমবঙ্গেই তারা এখন ৩৫%। কেরলেও ৪০% ক্রস করে ফেলেছে। দিল্লীতে ঝেঁকে বসেছে। সারা ভারতেই।

– দেখ আগে ব্যাপার ছিলো, কিছু সৈন্য থাকলেই, আক্রমণ করে পরাজিত করে, সেখানে লুটতরাজ, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদি করে ইসলাম কায়েম করা। কিন্তু দিন বদলেছে। এখন ওভাবে আক্রমণ করে কিছু তেমন করা যায় না। এখন অন্যরকমভাবে করতে হবে।

– কীরকম?

– বর্তমান দুনিয়াতে, জনসংখ্যাই শেষ কথা, যদি ব্যবহার করা যায়। তাই তারা প্রচুর জনসংখ্যা বিস্ফোরণ করছে। দ্রুতই। সেই সাথে ব্যাপারটা বলতে খারাপ লাগলেও, নারী হচ্ছে একপ্রকার এসেট। ওই যে মুহাম্মদ কোরআনে বলেছে, নারী মানেই শস্য ক্ষেত্র, এটা এক প্রকার সত্যিইই। এখানে শস্য হলো মানুষ, জনসংখ্যা।

– তাইই কি ওরা এতো গুলো করে বিয়ে করে, আর এত এত জন্ম দেয়?

– হ্যাঁ হ্যাঁ। তাইই। শুধু তাই নয়। পুরুষ আর নারীর রেশিও প্রায় সমান। এখন একটি পুরুষ যদি দুটি করে নারীকে বিয়ে করে। তাহলে বাকি অর্ধেক পুরুষ কি কুমার থাকবে? থাকবে না নিশ্চয়ই?

– হ্যাঁ। তারা তখন অন্য সমাজ থেকে তাদের মেয়েদের ফুসলিয়ে ধরে এনে বাচ্চা পয়দার কাজে লাগিয়ে দিবে।

– কিন্তু দেখ, আমরা যে অনুকূল ঠাকুরকে নিয়ে খিল্লি করি, হ্যাঁ তার যদিও যথেষ্ট কারণ আছে বলেই, তবুও “যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন” স্মরণ করিয়া একবার ঢুঁ মেরে দেখেছি ভদ্রলোক বিশাল একটি উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন।

“পুরুষের অনুলােম অসবর্ণ বিবাহ ও বহুবিবাহ একান্ত দরকার। বহুবিবাহ হতে শুরু করলে নিকৃষ্ট পুরুষেরা মেয়ে পাবে না, ফলে অন্য সমাজ থেকে অনুলােম ক্রমে মেয়ে আহরণ করতে চেষ্টা করবে, এতে সমাজ পুষ্টই হতে থাকবে—সমাজের আত্মীকরণ ও আপ্তীকরণ ক্ষমতাও বেড়ে যাবে।” (আ. প্র. ১ম/২.৭.১৯৪০)

– আচ্ছা আচ্ছা। হিন্দু অনুকূল ঠাকুর হিন্দুদের সমাজ বর্ধনের অঙ্ক বুঝিয়ে দিলেন। আর তা কাজে লাগাচ্ছে মুসলিমরা।

– একদমই। আর উল্টো গীত গাইতে গাইতে হিন্দুরা ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে। গাযওয়া ই হিন্দ সফল করতে মুসলিমরা প্রতিদিনই কিছু না কিছু করে যাচ্ছে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে যা কিছু করা যায়। আর মুসল্লিরা তো উৎসাহও দিচ্ছে। ইমাম মাহদীর কাজ যতটুকু এগিয়ে নেওয়া যায়। পপুলেশন জিহাদ আর লাভ জিহাদের ন্যায় আছে ল্যান্ড জিহাদ।

– সেটা কীরকম?

– হিন্দুরা স্বভাবতই উন্নত জাতি বা উন্নত জীবন ধারায় বসবাস করতে ইচ্ছুক। সেজন্য গ্রামের দিকে মুসলিমরা গিয়ে প্রথমে জমি কিনে। আর হিন্দুরাও জানে আর কেউ কিনবে না। তাই মুসলিমদের নিকট জমি বিক্রি করে দিয়ে তারা শহরে চলে আসে। আর মুসলিমরা এভাবে একের পর এক গ্রাম দখল করে নিচ্ছে। দেশের সীমান্ত অঞ্চলে এর সংখ্যা বা উদাহরণ অনেক বেশিইই পাবি।

– এভাবে একদিন ভারতের অধিক জমির মালিক তারা হয়ে যাবে।

– হ্যাঁ। আর দেখ। ছোট ছোট যে কাজ গুলো। আমরা ঘৃণা করি। সে তোর বিভিন্ন শ্রমজীবী কাজ। যেমন ধর রাজমিস্ত্রির কাজ, ধোপার কাজ, মাংস বিক্রেতার কাজ, ড্রেন পরিষ্কারের কাজ, জমি চাষাবাদ ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ গুলো। দেখবি মুসলিমদের সংখ্যা এগুলোতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

– এটার অভিসন্ধি আবার কী গো?

– বুঝলি না? সবইই ওই গাযওয়া ই হিন্দের প্রস্তুতি। দেখ এই নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজগুলো যদি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায় একদিন বা এল সপ্তাহের জন্য, তাহলে আমাদের অবস্থানটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? যখন সিভিল ওয়ার শুরু হবে, এই প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে আমরা অসহায় হয়ে যাবো। আর তারা নিজেদেরকে সাপোর্ট দিতে পারবে।

– আর আমরাও এক দুই সপ্তাহের মাঝেই পরাজিত হয়ে যাবো।

– একদম নিঃচিহ্ন হয়ে যাবো। আরও একটি বিশেষ জিহাদের কথা না বললেই নয় রে। সেটা হলো পলিটিক্যাল জিহাদ। ওরা সব সময়ই ব্লক ভোট দিবে। মানে সবাই মিলে একজনকেই ঠিক করে ভোট দিবে। আমাদের মতো কোনো ব্যক্তিগত চয়েজ অনুসারে নয়। এভাবেই তারা কুক্ষিগত করে এমএলএ, এমপি বা একটি পুরো সরকারকেই। তাদের সমাজের হিতে কাজ করতে বাধ্য করায়, তাদের অবৈধ দাবিও মেনে নেয়।

– আর তাই সংখ্যাগুরুকে এড়িয়ে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এই ব্লক ভোটের জন্য লেলিয়ে থাকে।

– হ্যাঁ একদমই। এভাবেই তারা বিভিন্ন জিহাদের মাধ্যমে লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে ভারতের প্রান্তে প্রান্তে। আর আমরা পলিটিক্যাল ডিবেট, ক্যারিয়ার গঠন, উন্নত জীবনের আশায় শহরে গমন প্রভৃতি করতে ব্যস্ত আছি। আর ভারতের সীমান্ত থেকে কেন্দ্রের দিকে ক্রমশ ধেয়ে আসছে অন্ধকারময় ভবিষ্যতের হাতছানি।

– ঠিক যেন ফ্রি ফায়ার গেমের Zone ধেয়ে আসার মতো!

– একদমই। এই রে চল চল। ছটা বেজে গেলো। বাড়িতে আজ পাঠাবলি হয়েছে। কব্জি ডুবিয়ে খেতে হবে। তুইও থেকে যাস আমার সাথেই আজ।

তপু আর অজিতদা দুজনে হাঁটতে লাগলো।

রাতের অন্ধকারটা যেন ধেয়ে আসছে তাদের দিকে। তপুর ফ্রি ফায়ার গেমের Zone ধেয়ে আসার কথা মনে হলো।

ফ্রি ফায়ার গেমের Zone ধেয়ে আসার মতোই ইসলামের কালো হাতছানি ধেয়ে আসছে ভারতের প্রতিটি প্রান্ত হতে প্রতিটি কোনা হতে, গাযওয়া ই হিন্দের রূপ ধরে।

তপুর হৃদয়ে কে যেন ঝনঝনে কণ্ঠে বলে উঠলো, “গাযওয়া ই হিন্দ ধেয়ে আসছে, হিন্দু তুমি কি জেগে আছো?”

#অজিত_ও_তপু_২