হিন্দুধর্ম সন্ত্রাসবাদ ছড়ায়!? পাঠ‍্যপুস্তকের বিরুদ্ধে সরব বৃটিশ হিন্দুরা, পুস্তক প্রত‍্যাহৃত

0
1453

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- বিদেশ বিভুঁইয়ে হিন্দু ধর্মকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তুলনা করা নিয়ে ধুন্ধুমার। স্বরাজ্যম্যাগে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ GCSE-র একটি ধর্মীয় অধ্যয়নের বই স্কুল ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং প্রকাশক ব‌ইটি প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছেন। কারণ ব‌ইটি ব্রিটিশ ভারতীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে যেহেতু ব‌ইটিতে সনাতন হিন্দু ধর্মকে সন্ত্রাসবাদের সাথে তুলনা করা হয়েছে ওই।

Wire এজেন্সির রিপোর্টে বলা হয়েছে, AQA লোগো সহ বইটি পশ্চিম মিডল্যান্ডসের সোলিহুলের একটি পরিচিত মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয় ল্যাংলি স্কুলের ওয়েবসাইটের পাঠ্যক্রম বিভাগ থেকে ডাউনলোডযোগ্য ছিল -গত সোমবার পর্যন্ত (৬ অক্টোবর)

বইয়ের চার নম্বর পাতায় হিন্দুধর্মের বিবরণে বলা হয়েছে:”হিন্দু ধর্মের পবিত্র ব‌ইগুলি আমাদের শিক্ষা দেয় ধর্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করা ন্যায়সঙ্গত। একজন ক্ষত্রিয় হিসাবে অর্জুনকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ধর্ম রক্ষার জন্য সত্যের পথে হেঁটে যুদ্ধ করায় কোনো অধর্ম নেই।”
ব‌ইটিতে আরোও লেখা হয়েছে, ” ন্যায়সঙ্গত কারণে হিন্দুরা হাতে অস্ত্র নিতে পারে। কারণ আত্মরক্ষার বিষয়টি সবার আগে। বর্তমানে আগ্রাসনকারীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ভারতের কাছে যথাযথ পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। তবে কিছু কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিন্দুধর্ম রক্ষার জন্য সন্ত্রাসবাদকে বেছে নিয়েছে।”

“অর্থশাস্ত্র”-এ বলা হয়েছে যে রাজাকে অবশ্যই একটি উপযুক্ত নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে, যার দ্বারা সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”

বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হতেই ব্রিটিশ হিন্দুদের জন্য একটি সংস্থা হিন্দু ফোরাম অফ ব্রিটেনের (এইচএফবি) সভাপতি তৃপ্তি প্যাটেল বলেছেন: “এগুলো আসলে হিন্দুধর্ম ও ভারতকে বদনাম করার একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ। আমি নিশ্চিত এটি ইচ্ছাকৃতভাবে লেখা হয়েছে।”

প্যাটেল এবং HFB-র ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ পাট্টনী, এইচএফবির ধর্মীয় শিক্ষা কমিটির সভাপতি, AQA এবং যোগ্যতা নিয়ন্ত্রক Ofqual-কে একটি চিঠি মারফত জানিয়েছেন, “পাঠ্যটি উদ্বেগজনক, ভুলতথ্য সম্বলিত এবং এর দ্বারা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে শিশুমনে ভুল ধারণা তৈরি করা হচ্ছে।”

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে: “আপনারা হিন্দুধর্মের অর্থের পুরোপুরি ভুল ব্যাখ্যা করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত করে অন্যায় করেছেন। এমনকি অর্জুন সম্পর্কে ব্যাখ্যাও পুরোপুরি ভুল। আমাদের সন্দেহ করি যে হিন্দু ধর্ম এবং ধর্মীয় রীতিনীতির অপপ্রচারের পিছনে কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা লুকিয়ে আছে।” আমরা আশা করছি AQAকর্তৃপক্ষ যথাযথ তদন্ত করবেন।

AQA-র এক মুখপাত্র বলেছেন: “সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ওয়ার্কবুকটি শেয়ার করা হয়েছে তা আমরা তৈরি করিনি এবং আমাদের অনুমতি ছাড়াই ব‌ইটিতে লোগো ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ব‌ইয়ের কিছু উদ্ধৃতাংশ পাঠ্যপুস্তক থেকে তোলা হয়েছিল – আমরা প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলার পর প্রকাশনী সংস্থা ব‌ইটি প্রত্যাহার করে নেয় ”

তবে সূত্রের খবর, ল্যাংলি স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন যে সোমবার ইমেল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব‌ইটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়া হয়। তবে কর্তৃপক্ষ একটি ব্যাপারে নিশ্চিত নয় যে ওয়ার্কবুকটিতে কেন AQA লোগো রয়েছে এবং এমন একটি ব‌ই শিক্ষাক্ষেত্রে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, “বেশ কয়েক বছর আগে আমাদের স্কুল কমিটির একজন সদস্য এই ব‌ইটি টাইমস এডুকেশনাল সাপ্লিমেন্ট ওয়েবসাইট থেকে কিনেছিলেন। অসতর্কতাবশত আমরা লেখকের নামটি এড়িয়ে গেছি। আমাদের ছোট্ট একটা অসতর্কতা এতো বড় একটা বিপর্যয় ঘটিয়ে দিয়েছে। আমরা আশ্বাস দিচ্ছি এই ব‌ইটি স্কুলে আর কখনো ব্যবহার করা হবে না।”