হিন্দুত্ববাদ, ভারতীয় সংস্কৃতি ও শবরীমালা -২

0
2930

(পূর্ব প্রকাশের পর…)

আজ জানুন ও ভাবুন হিন্দুত্ব ও ভারতীয় সংস্কৃতি কি? ভারত এক মহান রাষ্ট্র যার এক স্বর্ণময় ইতিহাস রয়েছে। ইংরেজ, মোগল, সুলতান, মধ্য-প্রাচ্যের ইসলামিক দস্যুদের আক্রমণের আগে ভারত ছিল সোনার পাখি। তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জ্ঞান গোটা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম ছিল। আপনিও শুনে থাকবেন ‘সোনে কি চিড়িয়া’ বলা হতো ভারতকে। আর এই ভারতবর্ষের ভিত্তি হল হিন্দু ধর্ম। ধর্ম থেকেই সংস্কৃতির উৎপত্তি। জানি এবার আপনি বলবেন যে আমি একজন সাম্প্রদায়িক, উগ্র হিন্দুত্ববাদী, গো-সন্তান। তাহলে উদাহরণ দিয়ে দেখাই? পায়ে হাত দিয়ে নমস্কার করা, এটাকে বলা হয় ভারতীয় সংস্কৃতি। তাই তো? এই সংস্কৃতি এল কোথা থেকে? হিন্দু ধর্মে বলা হয় তোমার থেকে যে বড়ো সে তোমার প্রণম্য , তার সামনে মাথা নত করে তাঁকে সন্মান জানিয়ে তার থেকে আশীর্বাদ গ্রহন করা। হিন্দু ধর্মের এই রীতি ভারতীয় সংস্কৃতি হিসাবে পরিচিত, কিন্তু বুঝলেন এই সংস্কৃতির উৎস কোথায়? ভারতীয় সংস্কৃতির এই ধারার সর্বক্ষেত্রেই আপনি হিন্দু আচার পাবেন। কারণ ভারত মানে হিন্দুত্ব। হিন্দু ধর্মের জন্মভূমি। ভারত চিরকালই সহিষ্ণু ও জ্ঞান-বন্টনকারী দেশ। আজ নিজের প্রাচীন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুন।

বর্তমানে গোটা পৃথিবীর রাষ্ট্রনেতারা বলছেন আন্তর্জাতিকতাবাদ। যার ফলে দেশে দেশে যুদ্ধ, হানাহানি কমবে। ভারত এর উপলব্ধি বহুযুগ আগেই করেছিল আর তাই ‘বসুদৈব কটুম্বকম’ শব্দটির প্রচলন হয় যার অর্থ গোটা পৃথিবীই আমাদের আত্মীয়। আত্মীয়কে কেউ কখনও আক্রমণ করে তার ক্ষতি করে না আর তাই ভারত কখনও কোনও দেশের ওপর আগে আক্রমণ করেনি সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের লোভে। ভারতের ঐশ্বর্য্য লুট করতে বারে বারে মধ্য প্রাচ্য থেকে দস্যুরা এসেছে, রক্ত ঝড়িয়েছে, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করে এই দেশের সংস্কৃতি ও হিন্দুত্বকে শেষ করে দিতে চেয়েছে।পরবর্তী কালে ইউরোপীয়ানরা এসেছে বণিকের বেশে। ভারতবাসী সানন্দে তাঁদের গ্রহন করেছে। তারপর বণিকের মানদন্ড রাজদন্ড রূপে প্রকাশ পেয়েছে।ভারত মোগল পাঠান হিন্দুর সবার কিন্তু মোগল পাঠানের দেশে হিন্দুর অস্তিত্ব কি?

৯৮০ খৃষ্টাব্দে আফগানিস্তানে হিন্দু রাজা জয়পালের শাসন ছিল। হ্যাঁ। ঠিকই দেখলেন। বিশ্বাস করতে হবে না আমার কথা। তথ্য মিলিয়ে দেখে নিন। আফগানিস্তানে হিন্দু রাজার শাসন ছিল, সেই আফগানিস্তান যেখানে আজ তালিবান শাসন চলে। হিন্দু জনসংখ্যা – শূন্য।

নারী অধিকার নিয়ে আজ মাতামাতি চলছে আর ইউরোপীয়ান সংস্কৃতির দোহাই দেওয়া হচ্ছে। সেই ইউরোপীয়ান সংস্কৃতি যেখানে এক সময় মহিলাদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত গাউন পরে ঘুরতে হতো। মহিলাদের পক্ষে সভা সমিতি, এমনকি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করা তো দূর, তাঁরা সেসব চাক্ষুস করার ও অনুমতি পেতেন না। আর এসব খুব পুরনো ইতিহাস না। মাত্র ১৪০০-১৫০০ শতকের ইতিহাস। আর অন্যদিকে প্রাচীন বৈদিক যুগ যেখানে বিদূষী মহিলাদের উল্লেখ পাওয়া যায়, তাঁরা সাহিত্য, নৃত্য, সঙ্গীত শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন। যেমন-লোপামুদ্রা,আত্রেয়ী প্রভৃতি প্রণম্য নারীগণ। বৈদিকযুগে মহিলারা যজ্ঞেও পুরুষের সঙ্গে অংশগ্রহন করে যজ্ঞে আহুতি প্রদান করতেন। বাল্যবিবাহ, সতীদাহ প্রথা, পর্দা প্রথা কিছুই সে কালে ছিল না। এসব অনেক পরে আসে যখন কিছু স্ব-ঘোষিত ধর্মধ্বজী হিন্দু ব্রাহ্মণ মধ্য প্রাচ্যের সংস্কৃতি থেকে পাঠ গ্রহণ করে। সে যুগে মহিলারা যুদ্ধাভ্যাসও যে করতেন তারও উল্লেখ বৈদিক সাহিত্যে পাওয়া যায়।

শিক্ষালাভের জন্য আজকাল ভারতীয়রা আমেরিকা, ইংল্যান্ড যাত্রা করে। একটা সময় ছিল, যখন বৈদিক ও বৈদিক-পরবর্তী যুগেও বিদেশীরা ভারতে আসতেন বিদ্যালাভের আশায়। নালন্দা, তক্ষশীলা, ভারতের গুরুকূল বিদ্যালাভের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে উৎকৃষ্ট উপাসনাস্থল ছিল। যে সময় ইউরোপ ক্ষুধা, দারিদ্রতা, অশিক্ষার অন্ধকারে হাবুডাবু খাচ্ছিল তখন ভারতে মানব সভ্যতার যাত্রাপথের নব দিগন্ত উন্মুক্ত হয়েছিল। আর পরবর্তীকালে এই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার পাঠাগারে থাকা অমূল্য পুস্তকভান্ডার মহম্মদ বিন বক্তিয়ার খিলজি পুড়িয়ে নষ্ট করেন শুধু মাত্র তার অজ্ঞ ধর্মগোঁড়া মনের ধার্মিক শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপনের আশায়।

আজ ওষুধের রসায়নের প্রভাবে মানুষের শরীরে রোগ কমার বদলে বিপরীত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে।  গোটা পৃথিবী প্রাকৃতিক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার স্মরনাপন্ন হচ্ছে। এই আয়ুর্বেদের জন্ম ভারতেই এবং বৈদিক সভ্যতার সময় থেকেই। শল্যচিকিৎসাও ভারতেই শুরু হয় যার আবিষ্কার করেন সুশ্রুত। বেদেও আয়ুর্বেদিক চিকিত্সার কথা পাওয়া যায়।

শুধুমাত্র শারীরিক নয়। মানসিক রোগের চিকিৎসার কথাও হিন্দু সভ্যতাতেই প্রকাশ পায়। আজ সাইক্রিয়াটিস্টদের কাছে মানুষ ছোটে তার ট্রমা কাটানোর জন্য। ইউরোপ এই মানসিক রোগের আবিষ্কার কবে করেছে? এই হালফিলে। আর ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতিতে 5000 বছর আগে এর উল্লেখ রয়েছে। প্রানায়াম, যোগা, ধ্যান এসবের মাধ্যমে মানসিক অশান্তি থেকে মনকে মুক্ত করে মন:সংযোগ বাড়ানো, মনকে শান্ত করা, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া। আজ এসবের গুরুত্ব বুঝে বিদেশেও এর প্র্যাকটিস হচ্ছে।

গণিতের সংখ্যাতত্ব তো সীমিতই থেকে যেত যদি না আর্যভট্ট শূন্যের আবিষ্কার করতেন।

অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে ইউরোপের গবেষণা কোন বছরে আরম্ভ হয়েছিল? আর মহাকাশ, সূর্য, চন্দ্র নিয়ে পঞ্চাঙ্গতত্ব সেই সময়ের যখন ইউরোপে কেউ যদি বলতো সূর্য স্থির,পৃথিবী তার চারপাশে ঘোরে, তাঁকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হতো। এ ব্যাপারে একটি ছোটো উদাহরণ দিই। মহাকুম্ভ মেলা কখন হয়? প্রতি ১২ বছর অন্তর। কেন? কারণ জুপিটার বা বৃহস্পতি প্রতি ১২ বছরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। যে রাশি থেকে প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল আবার সেই রাশিতে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। সুতরাং ভারতীয় মুনি-ঋষিগন নিশ্চয়ই এ বিষয়ে জ্ঞাত ছিলেন। এটি তারই প্রমাণ এবং অভ্রান্ত। কিন্তু আমাদের দেশেরই কিছু বুদ্ধিজীবি মনে করে এসব খুবই অবৈজ্ঞানিক। তবে এবার বিজ্ঞানের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ দিই-

প্রতিটি দেশেই তার ভাষা তার সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে। আমাদের ভারতের বহু প্রাচীন ভাষার মধ্যে সংস্কৃত ভাষার মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। বেদ, বেদাঙ্গ, বেদান্ত, রামায়ণ, মহাভারত, শ্রীমদ্ভাগবৎ গীতা সবই সংস্কৃত ভাষায় লিখিত। সংস্কৃত ভাষাকে তাই দেবভাষা ও আমাদের দেশের আঞ্চলিক ভাষাগুলি যেমন বাংলা, হিন্দি ও উত্তর ভারতের সব ভাষাই এই সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপন্ন হওয়ার কারণে একে ‘সকল ভাষার জননী’ ও বলা হয়। নিঃসন্দেহে, সংস্কৃত একটি কঠিন ভাষা। কিন্তু তা থেকে সৃষ্টি হওয়া কয়েক কোটি ভারতবাসীর মাতৃভাষা বাংলা, হিন্দিকেও ভুলিয়ে সেখানে ইংরেজি কে ঢোকানো হচ্ছে ও নিজ ঐতিহ্য বিস্মৃত ভারতীয় এব্যাপারে অজ্ঞাত। ইংরেজিতে ৫টি স্বরবর্ণ এবং এতে মাত্রারও কোনও স্থান নেই আর তাই ইউরোপের বিভিন্ন যায়গায় যদি যান, দেখবেন সেখানে ইংরেজির উচ্চারণ আলাদা, আমেরিকাতে তো লেখার ধরন ও বানান ও আলাদা হয়। আমাদের ভারতেও ইংরেজির উচ্চারণশৈলী ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের। একজন পাঞ্জাবি,একজন দক্ষিণ ভারতীয় ও একজন বাঙালিকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দিন। প্রমাণিত হবে যে তিনজনের উচ্চারণশৈলী আলাদা আলাদা। কিন্তু আপনি কি সংস্কৃতে উচ্চারিত মন্ত্রের কোনও উচ্চারণঘটিত পার্থক্য লক্ষ্য করেছেন স্থানভেদে?  না। কোথাও পাবেন না। কারণ কি?

মূল কারণ হল – সংস্কৃত ভাষায় যে বর্ণ রয়েছে তার উচ্চারণ পদ্ধতি। ক থেকে ঙ পর্যন্ত ৫ টি বর্ণ আমরা কণ্ঠের সাহায্যে উচ্চারণ করি। ক থেকে ঙ পর্যন্ত উচ্চারণ করার সময় খেয়াল করবেন যে আপনার জিহ্বা আপনার মুখের মধ্যে তালু স্পর্শ করছে এবং ‘ক’ থেকে শুরু করে ‘ঘ’ পর্যন্ত একটু একটু করে জিহ্বা পিছনে গলার দিকে সরে উচ্চারিত হচ্ছে এবং শেষে ‘ঙ’ যখন বলছেন তা গলা থেকে বেরিয়ে আসছে। তেমনই চ থেকে ঞ পর্যন্ত বর্ণগুলিতে জিহ্বা সক্রিয় ভাবে তালুতে স্পর্শ করে। একই সাথে উচ্চারিত বর্ণ যেমন-ত থ দ ধ ন এগুলি দাঁতের সাহায্যে উচ্চারিত। প ফ ব ভ ম এগুলি ঠোঁটের সাহায্যে উচ্চারিত। কিন্তু এ সত্ত্বেও ইংরেজি জানা কে আমাদের দেশে শিক্ষার ও শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ মাপকাঠি ধরা হয়। আসলে আপনার অজ্ঞানতার সুযোগে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ তাদের অসৎ প্রচার চালাতে চাইছে। এদের প্রধান কাজই হল ভারতীয় সংস্কৃতি ও তার স্থপতিকার হিন্দুত্ব কে অবমাননা করে এই সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দেওয়া। আর কোনও দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি হারিয়ে গেলে সেই দেশ বিজাতীয় সংস্কৃতির ক্রীতদাসে পরিণত হয়। উদাহরণ হিসাবে আপনার চারপাশে এশিয়ার দেশগুলিকে দেখুন। ইরান, মালয়েশিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান; এছাড়া মিশর দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি আজ লুপ্ত হয়েছে। আজ – তারা আরব সংস্কৃতির দাস। যে ইরান একসময় নারী স্বাধীনতার জন্য বিখ্যাত ছিল, ১৯৭৯ সাল থেকে সে দেশে ইসলামী মৌলবাদী বিচারএকজন ইসলামিক ধর্মালম্বী ব্যক্তি ধারার বাড়-বাড়ন্ত শুরু হয় আর আজ সে দেশে মহিলারা হিজাব ছাড়া বাইরে বেরতে পারেন না।

এবার প্রশ্ন – এই অপপ্রচার চালানো মানুষজন কিভাবে আপনাকে ভুলিয়েছিল? আজ থেকে ৫০ বছর আগে বলা হত কৃষকদের জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে, জৈব সার, গোবর দিয়ে চাষ হয়? আর আজ সেই জৈব সার ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে, ফসলে রাসায়নিকের প্রভাবে মানব শরীরে রোগ দেখা দিচ্ছে।

এদেশে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেটাকে সাধারণ আর ৫ টা অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে পৃথকভাবে দেখানো হয়। অতএব, মিডিয়ায় তার টিআরপি বেড়ে যায়। শুধুমাত্র জাতীয় পর্যায়ে নয়, একেবারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচার চালানো হয় যে ভারত অসহিষ্ণু। যে দেশ ধর্মের ভিত্তিতে বাঁটোয়ারা দেখার পরও ধর্মনিরপেক্ষ; কট্টর ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়নি, যে দেশে একজন ইসলামিক ধর্মালম্বী ব্যক্তি রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ পদ ‘রাষ্ট্রপতি’র আসনে বসতে পারে, যে দেশে বিখ্যাত চলচ্চিত্রশিল্পীরা (বলিউড সমেত) মুসলিম সম্প্রদায় থেকে এসেছে সেই দেশ অসহিষ্ণু? যেখানে সবার প্রতি সম্মান প্রদর্শিত হয়, যেখানে সবার মত গ্রাহ্য করা হয়, সবার চিন্তনের ও বাক-স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে, সেই দেশ অসহিষ্ণু?

ভারতে রামের ও পূজা হয় আবার রাবণেরও হয়। যতই আদর্শ হোক ভিন্ন, পূজা চলে নিরুপদ্রবে। এখানে আদর্শ পুরুষকে যেমন ভগবান রামের সঙ্গে তুলনা করা হয় তেমনই একজন বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, পন্ডিত ব্যাক্তিকে রাবণের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তার দশ মাথার বুদ্ধির প্রসঙ্গ তোলা হয়। আর অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে দেখুন। শিয়া-সুন্নী বিবাদে সবসময় গৃহযুদ্ধে আচ্ছন্ন। প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও আহমেদীয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমদের মুসলমান বলে মর্যাদা দেওয়া হয় না। ইরানে কোনও ভিনদেশি মহিলা গেলেও তাঁকে ইরানের ইসলামি কানুন মোতাবিক হিজাব পরিধান করতে হবে আর ভারত অসহিষ্ণু, ভারতীয় সংস্কৃতি অবৈজ্ঞানিক, হিন্দু ধর্ম গোঁড়া? সনাতন হিন্দু ধর্ম হল পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ধর্মমতগুলির একটি। এর জন্য গর্ববোধ করুন। কমিউনিস্ট নাস্তিক দেশ চীন বলছে হিন্দুত্ববাদকে ধন্যবাদ, যার জন্য উত্তর পূর্ব এশিয়ায় মৌলবাদ বিস্তার হতে পারেনি। এই সেই  সনাতন ধর্ম সমুদ্র যার বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে আপনি দিগন্তরেখা দেখে ভাবছেন আপনি এর সবটা দেখে ফেলেছেন কিন্তু দিগন্তরেখার কাছে গিয়ে দেখুন তার পিছনে আরও কতো বড়ো সমুদ্র রয়েছে। আমাদের দেশের কিছু স্ব-ঘোষিত বুদ্ধিজীবি তাঁদের স্বল্প জ্ঞানভান্ডার নিয়ে এর সমালোচনা করতে এগিয়ে আসেন।

আজ প্রকৃতি বাঁচাও অভিযান চলছে গোটা পৃথিবীতে আর হিন্দুরা প্রকৃতিকে মা রূপে পূজা করে আসছে যুগ যুগ ধরে,তার রক্ষা করছে। যে ধর্ম-সংস্কৃতিতে একজন নারী, বিদ্যা, সঙ্গীতের প্রতিমূর্তি সেই সংস্কৃতি নারী-বিরোধী? কুসংস্কারাচ্ছন্ন? অবৈজ্ঞানিক? যে সংস্কৃতিতে নারী মহামায়া, সকল শক্তির আধার, সেই সংস্কৃতি পশ্চাদপদ? কিছু স্ব-ঘোষিত ধর্মধ্বজী ব্যক্তিরা বহিরাগত সংস্কৃতির প্রভাব নিজ স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সনাতন ধর্মে ধার করে নিয়ে আসে ও কুসংস্কারের সূচনা করে। বৈদিক পরবর্তী যুগেই এর সূচনা হয়। সেই কুসংস্কার অবশ্যই দূর করা প্রয়োজন। রাজা রামমোহন রায় বেদ-উপনিষদের ব্যাখ্যা করে মানুষকে বলেছিলেন যে সতীদাহ কুসংস্কার, হিন্দু ধর্মে এর স্থান নেই। শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ডিরোজিওর আদর্শে অনুপ্রাণিত ধর্মত্যাগী যুবকদের ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনকে সমর্থন করেননি। তিনি বলেছিলেন, আমার সংস্কৃতি, ধর্মে যদি কিছু খারাপ থাকে তবে আমি সেটাকে সংশোধনের চেষ্টা করবো। তার থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করব না।

সবশেষে এটাই বলবো নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি, নিজের ধর্মাচার সম্পর্কে জানুন ও অপরকে তা গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করুন।

(সমাপ্ত)…