মস্কোর বৈঠকে জয়শঙ্করের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে ব্যর্থ চিন

0
540

বঙ্গদেশ ডেস্ক: সীমান্ত সংঘাত মেটাতে এবার ভারত ও চিনের মধ্যে বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হল৷ রাশিয়ায় দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী বৈঠক করেন৷ সরকারি সূত্রের খবর, সেখানে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের একাধিক প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি চিনা বিদেশমন্ত্রী৷ ওয়াংই ই৷ যদিও ওই বৈঠকে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘাত মেটাতে পাঁচ দফা পরিকল্পনাও নেওয়া হয় দুই দেশের মধ্যে৷

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মে মাস থেকেই লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একাধিক জায়গায় চিনের পিপল’স লিবারেশন আর্মির সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘাত শুরু হয়। ভারতীয় ভূখণ্ডে জোর করে ঢুকে পড়ার অভিযোগের তীর ওঠে লালফৌজের বিরুদ্ধে। প্যাংগং লেক বরাবর ফিংগার ৪ পয়েন্ট পর্যন্ত এগিয়ে আসে চিনা সেনা। ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে চিনা সেনাকে সরতে বললেও লালফৌজ সে কথা কানে তোলেনি। যার জেরেই ১৫ জুন রাতে গলওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত ঘটে। সেই সংঘাতে নিহত হন ভারতের ২০ বীর সেনা জওয়ান।

এর পর সীমান্ত পরিস্থিতিতে শান্ত করতে দুই দেশের সেনার তরফে বৈঠক হয়৷ দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধিরাও বৈঠক করেন৷ দুই দেশই সেনা সরানোর কাজও শুরু করে৷ কিন্তু অগস্ট মাসে পরিস্থিতি আবার আচমকা বদলে যায়৷ চিন আবার সেনা না সরানোর দাবিতে অনড় হতে শুরু করে৷ অগস্টের শেষে আরও একবার ভারতের ভূখণ্ডের দখল করারও চেষ্টা করে৷

এই আবহে সেনা বৈঠক যেমন চলছিল, তেমনই চলে৷ তার মধ্যে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক হয়৷ তার পর বৃহস্পতিবার বিদেশের মাটিতে মুখোমুখি হন দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় সাংহাই কো-অপারেশন সামিটে জড়ো হয়েছেন একাধিক দেশের প্রতিনিধিরা। আর সেখানেই রয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। মস্কোতে ভারত-চিনের বিদেশমন্ত্রীদের মধ্যে প্রায় দু ঘণ্টা কুড়ি মিনিটের দীর্ঘ বৈঠক চলে।

সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আলোচনা চলাকালীন সীমান্ত থেকে চিনকে সেনা সংখ্যা হ্রাস করতে বলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য দু’দেশের মধ্যে বৈঠকে পাঁচ দফা সূত্র নিয়ে আলোচনা করা হয় বলে জানা গিয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের পর সীমান্তে এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, বৈঠকে চিনা সেনার আগ্রাসনের কথা তুলে ধরে ভারত। ১৯৯৩-৯৬ সালে হওয়া চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও দাবি করে ভারত। পাশাপাশি চিনের কাছে ভারতের মন্ত্রী প্রশ্ন করেন, চিন কেন এত সেনা সীমান্তে মোতায়েন করেছে? যদিও এর প্রত্যুত্তর মেলেনি বলে জানা যায়।

এই বৈঠক শেষে দুই দেশ পাঁচ দফার যৌথ বিবৃতি জারি করেছে-

১) উভয় দেশের নেতৃবৃন্দের উচিত আলোচনা করা এবং একটি মতভেদকে বিবাদে পর্যবসিত না করা।

২) সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে উভয় দেশের সেনাবাহিনী নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চালিয়ে যাবে এবং সীমান্তের পরিস্থিতি সংশোধন করার জন্য চেষ্টা হবে।

৩) উভয় দেশই ভারত ও চিনের সীমান্ত নিয়ে হওয়া চুক্তি অনুসরণ করবে এবং শান্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে।

৪) সীমান্ত বিরোধ নিয়ে বিশেষ প্রতিনিধিদের মধ্যেও আলোচনার ধারা অব্যাহত থাকবে।

৫) শান্তি প্রতিষ্ঠার পরবর্তীতে উভয় দেশই তাদের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করবে।

দুই মন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেন যে, সীমান্তরেখা বরাবর উত্তেজনা কোনও দেশের পক্ষেই কাম্য নয় এবং তা কমাতে সামরিক থেকে কূটনৈতিক সবরকম আলোচনা দরকার। একই সঙ্গে দুই দেশেরই উচিত সীমান্ত থেকে অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহার এবং শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখা প্রয়োজন।

বৈঠক চলাকালীন ভারতের বিরুদ্ধে অহেতুক গুলি চালানোর অভিযোগ করেন চীনা বিদেশমন্ত্রী। এতে সীমান্তে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে অভিমত তাঁর। সীমান্তে উত্তেজনা নিরসন করতে হলে দুই দেশের সেনারই কোনও রকম অস্ত্র ব্যবহার উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে প্যানগং লেকের যে অংশ ভারতীয় সেনা দ্বারা দখল করা, সেই অংশ থেকেও ভারতকে সেনা প্রত্যাহার করতে বলেন তিনি।

যদিও ভারতের পাল্টা দাবি, ভারতীয় সেনা নিজেদের অংশেই আছে। দুই দেশের সীমান্ত সম্পর্কে ভারতীয় সেনা যথেষ্ট সচেতন এবং কখনওই অন্য দেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করবে না ভারতীয় সেনা। দুই দেশের অতীতে যে শান্তি চুক্তি হয়েছে তার পূর্ণ মর্যাদা ভারত অক্ষুণ্ণ রেখেছে। সীমান্তে স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত করার অভিপ্রায় ভারতের নেই।