ব্যক্তিস্বাধীনতা বনাম সামাজিক অস্তিত্বঃ সংঘর্ষ ও পথ

0
683

“একক ব্যক্তিত্ব হল একটি সামাজিক চুক্তি”- এর কাছাকাছি আর কোনো উপায় নেই

প্রায় প্রতিটি আধুনিক অধিকারের আন্দোলনের সূচনা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্র থেকেই : যে কোনো সমাজের সবচেয়ে প্রাথমিক ধাপ হল একজন একক ব্যক্তিত্ব।

যত শীঘ্র আমরা এই দৃষ্টান্তটিকে স্বীকার করে নেব, তত বেশি আমরা সমস্ত সাবেকি উপাখ্যানগুলির থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলব এবং ‘অবিচ্ছেদ্য ব্যক্তিগত অধিকার’-এর আধুনিক দৃষ্টান্তগুলির কাছে অর্পণ করে ফেলব। তারপর অধিকারগুলি মৌলিক-এ রূপান্তরিত হয়। কর্তব্য ‘সামাজিক সংগঠন’-এ পরিণত হয়।

এটিকে অপর একটি প্রাণনাশক সর্বজনবিদিত তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করুন : বিশ্বজনীন সাম্য ও আধুনিক পৃথিবীর সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মূল শিকড়টি এখানেই নিহিত।

যদি একক ব্যক্তি প্রাথমিক ধাপ হয় ও সাম্য একটি পাপ হয়, তবে তবে নারী ও পুরুষের সম্পর্কটিকে শোষণের সম্পর্ক ছাড়া আর কোনোভাবে দেখার কোনো উপায় নেই। পিতামাতারা তাঁদের সন্তানদের নিপীড়ন করেন। পরিবার একজন একক ব্যক্তিকে নিপীড়ন করেন এবং ইত্যাদি আরো নানা কিছু…

যদি একক ব্যক্তি প্রাথমিক ধাপ হয়, তবে অধিকার হল বিশ্বদর্শনের মৌলিক পন্থা। যখন পরিবার (বা সম্প্রদায়) সমাজের প্রাথমিক ভিত্তি হয়ে যায়, তখন দৃষ্টান্তটি বিপরীত হয়ে যায় এবং কর্তব্যগুলি সমাজের মুখ্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। গোষ্ঠীর চাহিদাগুলি হল মুখ্য বিষয় এবং প্রত্যেকের কিছু না কিছু কর্তব্য পালন করার আছে। একটি কর্তব্যের দৃষ্টান্ত কখনই ব্যক্তিদের ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাথমিক সম্পর্ককে মতবিরোধ হিসাবে দেখে না।

ধীরে ধীরে বিজ্ঞান ও বিশেষত সামাজিক-জীববিদ্যা প্রমাণ করে যে, একক ব্যক্তি সমাজের মূল ভিত্তি- এটি একটি বোধোদয়মূলক আবিষ্কার। সমাজ ও সংস্কৃতি হল জীববিদ্যাগতভাবে মৌলিক বিষয়। একক ব্যক্তিত্ব মৌলিক ভিত্তি এই ধারণাটি হল একটি ‘সামাজিক সংগঠন’ এবং একটি বোধোদয়মূলক আবিষ্কার যাকে স্বতঃসিদ্ধ বলে জ্ঞান করা হয়।

ইতিহাসে বিজ্ঞান বিষয়ে একজন অন্যতম বিস্মৃত ও ন্যায্য সম্মান থেকে বঞ্চিত লেখক। তিনি অর্ধ শতাব্দী পূর্বে এটি বলেছিলেন :

“যেহেতু আমরা পূর্বে ভেবে রাখা বিংশ শতকের বিবর্তনবাদী চিন্তার এবং এত পর্যন্ত মেনে আসা দর্শনচিন্তাগুলির প্রভাব দেখতে পাচ্ছি, আমি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একজনকে খুবই হতাশ দেখতে দেখতে পাচ্ছি। আঠেরো শতকে আমরা প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সামজিক নিয়মাবলিগুলি ঠিক রপ্ত করতে পারিনি। যদি আমরা রুশোর ধারণা গ্রহণ করি যে – প্রকৃত মানুষ একাকী ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং বনের মধ্য দিয়ে শান্তিতে সে চলছে – অথবা হবস-এর পূর্ববর্তী ধারণা সমূহ- যে প্রাথমিক ভাবে প্রতিটি মানুষ একে অন্যের বিপক্ষে ছিল- আমরা তবে একজন ব্যক্তিকে প্রাচীন বাস্তবতা হিসাবে এবং সমাজকে মানুষের আবিষ্কারের চোখে দেখব। তথাপি সবচেয়ে বিস্তৃত ও সবচেয়ে ত্রুটিবিহীন সিদ্ধান্ত হল যে প্রায় সকলের জন্যই এবং সবসময়ই সমাজ প্রকৃতির শৈশবস্থা। সামাজিক অনুশাসন ও তার সঙ্গে এর নিয়ম-কানুন, এর আদি ও অন্ত, এর ভূখণ্ডগুলি ও এর শ্রেণিবিন্যাস, এর প্রতিযোগিতা এবং এর বহিরাগত আতঙ্ক – এটি বিবর্তনমূলক উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং যদি আমি সঠিক হই, তবে স্বতন্ত্র ব্যক্তি বলে আমরা যাঁকে জানি, তাই হল মানুষের আবিষ্কার”। – রবার্ট আরড্রে

এটি কোনো আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রীয় ভিত্তি। যে আত্ম আত্ম অহং একটি সামাজিক চুক্তি এবং আত্মোপলব্ধির লক্ষ্য হল অহং-কে অতিক্রম করে যাওয়া এবং বিশ্বজনীন চেতনাপ্রবাহের সংহতির অভিজ্ঞতা অর্জন করা।

মূল লেখাটি পঙ্কজ সাক্সেনার, অনুবাদ করেছেন অঙ্কুশা।