‘আপনারাই কৃষি বিলের সংস্কার চেয়েছিলেন’, মনমোহনের বক্তব্য তুলে কংগ্রেসকে স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

0
804

বঙ্গদেশ ডেস্ক: রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির স্বাগত ভাষণের জবাবি ভাষণে বিরোধীদের দ্বিচারিতা নিয়ে সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সাফ বক্তব্য, দেশের বর্তমান বিরোধীরা শুধু বিরোধিতার জন্য‌ই বিরোধিতা করছে। আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের ব্যাঙ্গ করছি। কৃষি আইন নিয়ে বিরোধিতা যে পুরোপুরি ভিত্তিহীন, তা বোঝাতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পুরনো একটি বক্তব্য ব্যবহার করেছেন মোদীজী। বক্তব্য তুলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কৃষিক্ষেত্রে যে সংস্কার প্রয়োজন তা কংগ্রেসই বলেছিল ক্ষমতায় থাকাকালীন। কিন্তু এখন তারাই ‘ইউ টার্ন’ নিচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মোদী যখন মনমোহনের পুরনো বক্তব্য তুলে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করছেন, তখন রাজ্যসভায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নিজেও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি চুপ ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, “কৃষি বিক্ষোভ নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছে। আন্দোলন নিয়ে কীভাবে কী হচ্ছে তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে ? কেন এত তীব্র হচ্ছে? এসব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েই চলেছে। কিন্তু আন্দোলনের মূল কারণ নিয়ে কখন‌ও কোনও আলোচনাই হল না।” প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংয়ের এক উক্তি তুলে ধরে মোদী মনে করিয়ে দেন, “আজ দেশের ৬১ শতাংশ কৃষকের কাছে ১ হেক্টরেরও কম পরিমাণ জমি রয়েছে। ৮৬ শতাংশ কৃষক ২ হেক্টরেরও কম জমির মালিক। এই ১২ কোটি কৃষকের জন্য আমাদের কোনও দায়িত্ব নেই?” মোদীজীর দাবি, এই ১২ কোটি ছোট কৃষক প্রথম থেকেই বঞ্চিত। কোনও কিছুরই সুযোগ সুবিধা এরা পায় না। এরা কৃষি ঋণ মকুবের সুবিধাও পায় না, আবার ফসল বিমার সুবিধা পায় না। এদের জন্য‌ই এই সংস্কারের প্রয়োজন ছিল।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহন সিং বলেছিলেন, “একটা বৃহৎ বাজার হিসেবে ভারতকে তুলে আনার ক্ষেত্রে যা যা বাধার সম্মুখীন হবো, সেটার বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে। কৃষকরা যাতে ফসলের সর্বোচ্চ দাম পায়, তা নিশ্চিত করতেই এই সংস্কারের প্রয়োজন।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দাবি, সব সরকারই কৃষি সংস্কারের পক্ষে কমবেশি সরব ছিল। কিন্তু এখন কংগ্রেস স্রেফ রাজনীতির জন্য উলটো কথা বলছে। তথাকথিত কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে সবুজ বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,”সবুজ বিপ্লবের সময়ও প্রচুর বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে কেউই কৃষিমন্ত্রী হতে রাজি ছিলেন না। বামেরা লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে আমেরিকার এজেন্ট বলে কটাক্ষ করেছিল। তবু, তার সংস্কার হয়েছিল। যার ফলাফল আজ দেশ দেখছে। আমাদের কৃষিক্ষেত্রে নানান সমস্যা আছে। আর সেই সমস্যা মেটাতে আমাদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সশস্ত্র আন্দোলন ছেড়ে আলোচনায় আসুন আমরা সমস্যা মিটিয়ে ফেলব।”

প্রধানমন্ত্রী কটাক্ষ করে বলেছেন, দেশে বেশ কিছুদিন ধরে নতুন একটা জামাতের সৃষ্টি হয়েছে। যারা কিনা ‘আন্দোলনজীবী’-র বেশে আসলে পরজীবী। এদের কাজ‌ই হচ্ছে সবকিছুর বিরোধিতা করা। যে কোনও আন্দোলনে গিয়ে এরা সবার প্রথমে বসে পড়ে। এদের থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। মোদীর ইঙ্গিত, তথাকথিত কৃষক আন্দোলনের পিছনেও রয়েছে এই আন্দোলনজীবীদের হাত। ‘অন্নদাতা’ কৃষকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, “কোনও প্ররোচনার ফাঁদে পা না দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করুন। আসুন একসাথে বসে আলোচনা করি। সব রাস্তা এখনও খোলা রয়েছে।”