নতুন কৃষি আইনের প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ

0
849

 অধ্যাপক অজয় পাল

এতদিন আমরা যেভাবে দেশকে চলতে চালাতে দেখেছি, তার পরিবর্তনই আকাঙ্ক্ষিত ভারতবর্ষের মানুষের কাছে আর সেই পরিবর্তনের দিশারী হোলো জাতীয়তাবাদী দর্শন আর সেই দর্শন অনুপ্রাণিত করেছে নতুন কৃষি আইন প্রণয়নে

  প্রথমেই বলি, কৃষি এবং শিল্প একটি আর একটির পরিপূরক পূর্বে আমরা দেখেছি কৃষি জমিতে শিল্প স্থাপনে শিল্প সংস্থা গুলো প্রবল বাঁধা সম্মুখীন হয়েছে পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ থাকলে, মানুষ শিল্পের পক্ষে কারণ, কৃষিতে মুনাফা ভীষণ ভাবে নিম্নমুখী কৃষক যদি কৃষিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে, দেশে খাদ্য স্বনির্ভরতা হারিয়ে ফেলতে পারে এমত অবস্থায় এমন কিছু করার দরকার ছিল, যাতে করে, কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি সাথে সাথে কৃষকের মুনাফা বাড়ে এবং কৃষি পণ্য নষ্ট না হয় নতুন কৃষি আইনে এই তিনটি উদ্দেশ্য সাধিত হবে

 ১৯৫০৫১ সালে দেশে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৫০. মিলিয়ন টন ১৯৬০৬১ তে যা বেড়ে হয় ৮২ মিলিয়ন টন সেই সঙ্গে জনসংখ্যা ৩৬১ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৪৩৯. মিলিয়ন গিয়ে দাঁড়ায় ফলে প্রয়োজন এর তুলনায় খাদ্যশস্যের বিপুল ঘাটতি থেকেই যায় ১৯৯০৯১ হলে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে হয় ১৭৬. মিলিয়ন টন যা ১৯৫০৫১ সালের তুলনায় . গুণ বেশি যদিও জনসংখ্যা বেড়ে হয় ৮৪৬. মিলিয়ন (সূত্র- The Pocket Book of Agricultural Statistics) এর পর থেকে এখনও অবধি খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির মোটামুটি সমান্তরাল ভাবে এগিয়ে চলেছে দীর্ঘদিন এভাবে চলার ফলে কৃষকের জীবন ধারণের মান বাড়েনি, বরং কমেই চলেছে। 

  সমাজবাদী অর্থনীতি অধিক শ্রমনির্ভর হওয়াতে, নতুন টেকনোলজি প্রয়োগ হওয়ার ক্ষেত্রটা অধিকরূপে সঙ্কুচিত সেক্ষেত্রে জমির উৎপাদনশীলতা কমার সাথে সাথে কৃষি অধিক ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে এমত অবস্থায়, নতুন টেকনোলজি প্রয়োগ অবশ্যম্ভাবী নতুন টেকনোলজি প্রয়োগের জন্য নতুন ক্যাপিটাল প্রয়োজন কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে কৃষকদের মুনাফা বাড়াতে প্রয়োজনীয় টেকনোলজি ক্যাপিটাল আনয়নের একমাত্র উপায় হোলো কৃষিক্ষেত্র কে প্রতিযোগিতা মূলক ক্ষেত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা দেওয়া একইভাবে কৃষি পণ্য নষ্ট আটকাতে, কৃষি পণ্য মজুদ অনেক সহজলভ্য হওয়াটা খুবই প্রয়োজনীয় এক্ষেত্রে ক্যাপিটাল টেকনোলজিদুই প্রয়োজন

 তাহলে  দেখা যাচ্ছে, যদি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ক্যাপিটাল এবং টেকনোলজি প্রয়োগে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায় কৃষি পণ্য নষ্ট কমানো যায়, তাহলে কৃষি পণ্যের মোট উৎপাদনের দুই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি সম্ভব সেক্ষেত্রে দেশের বাজারে কৃষি পণ্যের দাম তো বাড়বেই না, উপরন্তু আমরা কৃষি পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাব

ক্ষুদ্র চাষীরা এক্ষেত্রে কিভাবে নতুন টেকনোলজি ক্যাপিটাল কিভাবে পেতে পারে? অনেক ছোট চাষীকে একত্রিত করে বৃহৎ পুঁজির বিনিয়োগ হতে পারে এক্ষেত্রে বৃহৎ পুঁজি ব্যক্তিগত ভাবে কোঅপারেটিভের ভূমিকা নিতে পারে বৃহৎ পুঁজি তার পুঁজির সাহায্যে টেকনোলজি কে ব্যবহার করিয়ে ক্ষুদ্র চাষীদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে কৃষি পণ্য উৎপাদন করিয়ে নিতে পারে ধরনের পদ্ধতি কে সাধারণত চুক্তি চাষ বলা হয় এছাড়া চাষী খোলাবাজারে তার উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে অধিক মুনাফা পেতেও পারে তাহলে দেখা যাচ্ছে, চাষী কাছে fixed and floating- দু উপায়েই মুনাফা অর্জনের সুযোগ থাকছে সুতরাং একজন কৃষকের হাতে মুনাফার টাকা আসলে, ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকও ভোগ্যপণ্য কিনবেন শিল্পক্ষেত্রের দ্রুত প্রসার ঘটবে সুতরাং কৃষিক্ষেত্রে সার্বিক বিকাশ দেশকে দ্রুত অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে

 কৃষকদের গরীব রেখে গরীবদরদী সাজার মতো হীন কাজ যারা করে, এবার তাদের বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে  সেজন্য কেন্দ্রীয় সরকার তিনটি কৃষি বিল লোকসভা রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে কৃষকদের সামনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটিয়েছে

 অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিল (সংশোধনী) ২০২০-এর মাধ্যমে মজুতের উর্দ্ধসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে যে পরিমাণ কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়, তার বেশ কিছুটা মজুত বণ্টনের অভাবে পচে নষ্ট হয়ে যায় কৃষিতে নতুন পুঁজি টেকনোলজি এলে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে সেই হারে মজুত বণ্টনের পরিকাঠামো বৃদ্ধি না পেলে, কৃষকের পক্ষে আশাব্যাঞ্জক লভ্যাংশ ঘরে তোলা সম্ভব নয় যদি প্রয়োজনের তুলনায় কম উৎপন্ন হোত, তাহলে এই সংশোধনীর কোনও প্রয়োজন হত না উৎপাদন আরও বাড়লে, অধিক পচন ঠেকাতে অধিক মজুত অবশ্যম্ভাবী এই কাজে সাধারণকে অংশগ্রহণ এর সুযোগ সরকার এই আইনের মাধ্যমে করে দিয়েছে

 কৃষিপণ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন পচন ঠেকানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকলে পর যেটা সর্বাগ্রে প্রয়োজন সেটা হলো কৃষক কৃষিপণ্য সংরক্ষণের পরিকাঠামো প্রস্তুতকারকদের লাভের মুখ দেখানো তার জন্য ফড়েরাজের বিনাশ ঘটিয়ে কৃষিপণ্যের সর্বাঙ্গীন বাণিজ্যের পথ প্রশস্ত করার খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল The Farmers’ Produce Trade and Commerce (Promotion and Facilitation) Ordinance 2020- সেই পথ কে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এখন একজন কৃষক কৃষি মান্ডি বাইরে বেরিয়ে যেকোনো ব্যবসায়িক এলাকায়সে ফার্ম গেট, কারখানা এলাকা, Warehouses, Silos বা Cold Storage, যাই হোক না কেন একইভাবে বিভিন্ন কৃষিপণ্য বেচাকেনা Electronic Trading Platform ব্যবহার করে কৃষকদের Electronic Trading সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে এই আইনে আর এই আইন অনুযায়ী, কৃষি মান্ডি বাইরে, কৃষিপণ্যের ব্যবসায়, কোন রাজ্য সরকার Market Fees লাগু করতে পারবে না

তৃতীয় যে আইন টা পাশ করানো হয়েছেসেটি হোলো– The Farmers (Empowerment and Protection) Agreement on Price Assurance and Farm Service Ordinance-2020. এই বিলের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণের চুক্তি করার ক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন করা হয়েছে কৃষিপণ্যের guaranteed price additional price উল্লেখ চুক্তিপত্রে পরিষ্কার করে থাকতে হবে ফলে ফসল নষ্ট হওয়া রুখতে ক্রেতা বিক্রেতাউভয়েই উদ্যোগী হবে এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে কোনো dispute তৈরী হলে, কিভাবে কৃষকদের protection দেওয়া হবে, সে বিষয়েও পরিষ্কার করে বলা আছে

সুতরাং উপরিউক্ত তিনটি বিল এর আইনে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে দেশের কৃষি বাজারে ফড়ে রাজের পরিসমাপ্তি ঘটল আর কৃৃষকদের নতুন ভবিষ্যত রচিত হলো যা দেশের সার্বিকঅগ্রগতি অধিক ত্বরান্বিত করবে

Show quoted text