একটি ছবির শিরোনাম “গান্ধীজি নোয়াখালীর একজন জীবিতের কথা শুনছেন, ১৯৪৬” থেকে পাল্টে “,আর এস এস নোয়াখালীর একজন জীবিতকে মুসলিমদের হত্যা করার প্ররোচনা দিচ্ছে, ১৯৪৬”, করে দেওয়া হয়।
বর্তমান যুগ প্রচারের যুগ। প্রচারের জোরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন মুসলমান বিরোধী হয়ে পড়ে যদিও এই বিলে ভারতের মুসলমানদের নিয়ে কোন কথাই নেই। দিল্লী দাঙ্গায় হিন্দুরা খুন হয়েও গণহত্যাকারী আখ্যা পায়। সেইরকমই ঘটনা ঘটল নোয়াখালীর ঘটনা নিয়ে। উইকিপিডিয়াকে সাধারণ মানুষ তথ্য সংগ্রহের জন্য আদর্শ জ্ঞান করেন। তাই উইকিপিডিয়ার প্রতি অসত্যের উপর আধারিত মতবাদগুলির নজর। তারা উইকিপিডিয়ায় হ্যাঁকে না আর নাকে হ্যাঁ করে দেয়।
উইকিপিডিয়ায় বর্বরতার একটি অস্বস্তিকর ঘটনায়, নোয়াখালী দাঙ্গা বিষয়ক পেজটিতে দেখা যায় যে দাঙ্গায় নিপীড়িত এবং নিপীড়নকারীদের ধর্ম পরিবর্তিত করে দেওয়া হয়েছে। এই জনপ্রচালিত অনলাইন এনসাইক্লোপডিয়া পেজটিতে ৯ই এপ্রিলে করা একটি পরিবর্তনে ( এডিটে) বলা হয়, “নোয়াখালী দাঙ্গা ১৯৪৬ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত) চিটাগং ডিভিশনে হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বারা মুসলিমদের আধাসংগঠিত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, অপহরণ আর বলপূর্বক হিন্দু ধর্মান্তকরণ এবং মুসলিম সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাবলী।” পেজের শিরোনাম পাল্টে নোয়াখালী গণহত্যা থেকে ভারতীয় (ইন্ডিয়ান) গণহত্যা করে দেওয়া হয়।
টুইটারে “স্টোরিজ অফ বেঙ্গলি হিন্দুস অন টুইটার” নামের এক ব্যবহারকারী এই বর্বরতা তুলে ধরেন।
The entire page on the Noakhali Hindu Genocide on Wikipedia has been edited by exchanging the worlds Hindu and Muslim!
I have no words to say how demeanous this is.
officially
5000 Hindus were killed in Noakhali Riots
32000 were converted to IslamWe plead for your help! pic.twitter.com/sdM3YPGbYa
— Stories of Bengali Hindus (@storiesofBHs) April 9, 2020
বলা বাহুল্য নোয়াখালী দাঙ্গা আদপে ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলায় মুসলিমদের দ্বারা হিন্দুদের ওপর একটি আক্রমণ ছিল। প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী এই দাঙ্গার ফলাফল হিসাবে প্রায় ৫,০০০ হিন্দুর মৃত্যু হয়। তাছাড়াও, মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বারা হাজার হাজার হিন্দু মহিলার ধর্ষণ করা হয় এবং হাজার হাজার হিন্দু নরনারী বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। হিন্দুদের মুসলিম লীগের জন্য জিজিয়া দিতেও বাধ্য করা হয়।
কিন্তু এই দাঙ্গা বিষয়ক উইকিপিডিয়া পেজটি ১০৩.৬৭.১৫৮.৫৬ আই পি অ্যাড্রেস ব্যবহারকারী কোন ব্যক্তির দ্বারা পরিবর্তিত হয়, যে পুরো নিবন্ধে হিন্দু মুসলিম শব্দ দুটির স্থান অদলবদল করে ঘটনাটিকে হিন্দুদের দ্বারা মুসলিমদের হত্যাকান্ডের রূপ দেয়। নিবন্ধে ব্যবহৃত একটি ছবিরও শিরোনাম পরিবর্তন করা হয়, আসল শিরোনাম ছিল, “গান্ধীজি নোয়াখালীর একজন জীবিতের কথা শুনছেন, ১৯৪৬”, এটা পাল্টে “,আর এস এস নোয়াখালীর একজন জীবিতকে মুসলিমদের হত্যা করার প্ররোচনা দিচ্ছে, ১৯৪৬”, করে দেওয়া হয়।
আসল নিবন্ধের একটি অনুচ্ছেদে যেখানে বলা হয়েছিল মুসলিমদের কড়া নজরদারিতে ৫০,০০০ হিন্দুকে আশ্রয়হীন করা হয়, সেটা পাল্টে করে দেওয়া হয় যে ভারতীর সেনার কড়া নজরদারিতে ৫০,০০৯ মুসলিমকে আশ্রয়হীন করা হয়।
পরে উইকিপিডিয়া পেজটি কিছু সতর্ক উইকিপিডিয়া সম্পাদক (এডিটর) পুনরায় আসল রূপে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। আসলে নোয়াখালী গণহত্যা অতি বিখ্যাত বলে সত্য প্রকাশ পেল, কিন্তু যদি ততটা বিখ্যাত না হত, তাহলে কি হত?
যে আই পি অ্যাড্রেস থেকে এই বর্বরতা সম্পাদিত হয়েছিল তা খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় যে সেটি বাংলাদেশের ঢাকা এলাকায় অবস্থিত। ইন্টারনেট সংযোগ বাংলা লিংক নামের বাংলাদেশের একটি সেলুলার সেবাপ্রদানকারী সংস্থার। এটি দর্শায় যে এই বর্বরতার পেছনে কোন ইসলামিক দলের হাত আছে, যা বর্তমান বাংলাদেশে ঘটিত হিন্দু গণহত্যায় মুসলিমদের ভূমিকা ধুয়েমুছে ফেলার একটি চেষ্টায় ব্রতী।
অপইণ্ডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট অবলম্বনে রচিত। অনুবাদে সহায়তা করেছেন শুভম ক্ষত্রী।