২০১৪ সালের শেষের দিকে ওহিওর ক্লিভল্যান্ডের একটি উদ্যানে তামির রাইস নামক একটি ১২ বছরের কিশোর খেলনা পিস্তল নিয়ে খেলছিলো।কোনও এক ব্যক্তি তাকে লক্ষ করেন এবং ৯১১ জরুরী পরিষেবার লাইনটিতে ফোন করে এমন এক পুরুষের বিষয়ে জানান, যিনিএলোপাথাড়িভাবে যে কোনও ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করে একটি বন্দুকের নল তাক করছেন। পুলিশ সেখানে পৌঁছায় এবং তার হাতে থাকা বন্দুকটি দেখার জন্য বলে। স্পষ্টতই, ১২ বছরের কিশোরটি তাদের নির্দেশ ঠিকমতো অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। তাই পুলিশ তার উপর দুবার গুলি চালায়, অন্তত একবার তার মুখ লক্ষ্য করে গুলি চলে। ফলে,কিশোরটি প্রাণ হারায়।
এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার ফলে গত বছর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেরশহরগুলিতে “ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার” (কৃষ্ণাঙ্গরাও মানুষ) আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো। হ্যাঁ, সম্ভবত এত দূর থেকে পুলিশের পক্ষে বলা কঠিন ছিলো যে, বন্দুকটি খেলনা পিস্তল না আসল আগ্নেয়াস্ত্র ছিলো।ক্লিভল্যান্ড একটি বিপজ্জনক শহর এবং পুলিশ কোনও প্রকার ঝুঁকি নিতে চায় নি। তবে, সবশেষে এক নিস্পাপ ১২ বছরের বালকের মৃত্যু হলো। আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা দায় করা হয় নি। যদি তামির রাইস একজন শ্বেতাঙ্গ হতো, তখন কি ৯১১ এ ফোন করা ব্যক্তিটি অথবা তাকে গুলিবিদ্ধ করা ভ্রমে থাকা পুলিশ আধিকারিকরা এই ধরনের কঠোরভাবে বিচার করতেন? আইনের খাতায় কলমে সুস্পষ্ট সাম্যবাদ থাকলেও আমেরিকার সমাজে সামগ্ৰিকভাবে বর্ণবাদ রয়ে গেছে। ফলত, সাধারণ মানুষ আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকে আরও বেশি বিপজ্জনক এবংসহজাতভাবেই একটি আতঙ্ক স্বরূপ হিসাবে গণ্য করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। বিএলএম আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিলো আমেরিকার সমাজের এই বিষয়ে চোখের ঠুলিটি সরিয়ে ফেলা।
আমরা যে শব্দটির সন্ধান করছি তা সমগ্ৰ জাগ্ৰত লিবারেলদের সবচেয়ে প্রিয় শব্দ, “নাগরিক অধিকার”।
দেশীয় লিবারেলরা কখনই পশ্চিমাদের নতুন নতুন প্রবণতাগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি, তাঁরা ভারতীয় প্রসঙ্গে এগুলোকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এখানে মহিলাদের অধিকার আছে এবংঅবশ্যই পুরুষদের অধিকারও রয়েছে এবং আমি সত্যিই সহমত যে, দুজনের অধিকার থাকাই উচিত। প্রকৃতপক্ষে, রাজনীতিতে, সংবাদ মাধ্যমে, বুদ্ধিজীবীদের স্তরে অথবা এমনকি সরকারী বা বেসরকারীক্ষেত্রে মধ্য এবং উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিক পদে আমাদের অনুন্নত শ্রেণীর কতজন মানুষ আছেন? আসলে, একটি একক উচ্চ বর্ণের হিন্দিভাষী পরিবার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর পদটিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। আপনি কি এই কথাটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, বর্তমানে ভারতে মাত্র একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন?
প্রত্যেকেই মনে করেন যে, তাঁরা তাঁদের পদ্ধতিতে কাজগুলো করেছে এবংবেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা প্রকৃতপক্ষেই তা করেন। তবে, এর নেপথ্যে কিছু হাত রয়েছে বলে মনে হয়, এটি নিশ্চিত হওয়া যায় কারণ এর ফলেকেবলমাত্র নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সদস্যরাই শীর্ষস্থান দখল করতে পারে। সেই অদৃশ্য হাতটিকে বলা হয় “নাগরিক অধিকার”।
তবে, কিছু লিবারেল নাগরিক অধিকারও রয়েছে। এবং অন্যান্য ধরনের সুযোগ-সুবিধার মতো যারা এই অধিকারটি পান, তাঁরা এই অদৃশ্যহাতটিকে কখনই লক্ষ করতে পারেন না। বর্তমান ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটেঅকুণ্ঠ সুযোগ-সুবিধাগুলি অবশিষ্ট মানুষের কাছে কখনই স্পষ্ট হয় নি।
সম্প্রতি গ্ৰেটা থানবার্গের টুলকিট মামলার সাথে জড়িত থাকার বিষয়েবেঙ্গালুরু থেকে যে পরিবেশ “কর্মীকে” জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে তুলে নিয়ে এসে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে, এই ঘটনাটিকে বিবেচনা করুন।উদার গণমাধ্যম এবং এমনকি সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল কিছু অংশের সংবাদ মাধ্যম একটি উদ্বেগ উত্থাপন করেছিলো। এই দেশের পরিচালক ক্ষমতাসীন সরকার কীভাবে এটি করতে পারে? তিনি ২১ বা ২২ বছর বয়সী মিষ্টভাষী, কুকুরপ্রেমী এবং নিরামিষাশী এক মহিলা।এবং তাঁর মতো নির্দোষের উপর দোষারোপ করা ঠিক নয়।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিবেদনগুলিতে দাবি করা হয় যে, তিনি সম্ভবত জানেন তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ-এর অধীনে অভিযোগ আনা হবে। আমি স্বাধীনভাবে প্রতিবেদনগুলির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারছি না, তবে কীভাবে বিষয়বস্তুর মূল লক্ষ্য তাৎক্ষণিকভাবে স্থানান্তরিত হয়েছিলো তা দেখতে পারছি। এখন লিবারেলদের জিজ্ঞাস্য হলো এটি সত্য হলেও কী হবে? কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের প্রারম্ভকালে ওই চমৎকার বয়সে আমরা সবাই কী বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন ছিলাম না?
এরপর আরেক দফা প্রতিবেদন জনসমক্ষে আসে। এতে বলা হয়েছে যে,এই টুলকিট মামলার সাথে জড়িত আরও কয়েকজন পালিয়ে গেছেন এবং তাদের আইনজীবীরা লিখিতভাবে স্বীকার করেছেন যে, তাদের মক্কেলরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে খালিস্তানি মো ধালিওয়ালের সাথে সাক্ষাত করেছে। পুনরায় আমি প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে এবং কারা দোষী হতে পারে বা নাও পারে, তা আমি নিশ্চিত করতে পারছি না। আমি কেবলমাত্র এরপর কীভাবে লক্ষ্যগুলি স্থানান্তরিত হয়েছে তা উল্লেখ করতে পারি। পুনরায়, তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন যে, এগুলি সত্য হলেই বা কী হবে। সম্ভবত, কিছু পরিবেশ কর্মী কিছুটা নির্বোধ ছিলেন এবং তারা যাদের সাথে কথা বলেন, তাদের সম্পর্কে কোনও তথ্যও জোগাড় করেন নি।
মনে রাখবেন যে, তথাকথিত কৃষক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বিরুদ্ধে কুৎসা করার জন্য বিদেশিদের দ্বারা সমন্বিত প্রচারের কথা লোকে যখন বলেছিলো তখন প্রথমবারের জন্য আপত্তি জনসমক্ষে আসে।লিবারেলরা বলেন যে, বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্যক্তিরা শুধুমাত্র তাদের বিবেক থেকেই টুইটগুলো করেছিলেন। তারপর তারা স্বীকার করেন যে,এখানে একটি টুলকিট ছিলো এবং এটি ছিলো একটি সুসংগঠিত প্রচার।কিন্তু তাতে কী? একটি টুলকিট থাকা কী অপরাধ? সহিংসতার কোনওরূপ সুস্পষ্ট পরিকল্পনা টুলকিটে উল্লেখ করা ছিলো না। এমনকি যদি খালিস্তানি গোষ্ঠীগুলি টুলকিট প্রস্তুত করার জন্য সাহায্যও করেন, তাতে কী?
আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, প্রতিটি পর্যায়ে কীভাবে ধরে নেওয়া হয় যে,লিবারেলদের উদ্দেশ্যগুলিই মহৎ এবং সর্বাধিক বিশুদ্ধ। এখন,নিরীহতা অনুমান করা খুব ভালো জিনিস, তবে সংবাদমাধ্যম খুব কম সময়ই আইন আদালতের মতো আচরণ করে। আমরা সবাই জানিসংবাদমাধ্যমগুলি কীভাবে খুব তাড়াতাড়ি একটি মীমাংসায় উপনিত হয়। এইবারেই তারা কোনও কারণে পিছিয়ে রয়েছে। এই অদৃশ্য হাতটি কী?
এই হাতটি হলো লিবারেলদের নাগরিক অধিকার। আপনি যদি লিবারেল হন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন না। কারণ আপনি তার কোলেই বসে আছেন। বিশ্বাস করুন, বাকি সবাই দেখতে পাবে যে, আপনি এই স্তম্ভগুলির, সুযোগ-সুবিধাগুলির উপরেই বসে আছেন এবংআপনাকে আদরের সহিত লালন পালন করা হচ্ছে।
এখানে কথা বলার ভঙ্গিমাটি লক্ষ করুন।
একজন লিবারেল যখন নয়ডা দিয়ে টেক্সি করে যাচ্ছিলেন, তখনহনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রা দেখতে তাঁর জানলার বাইরে তাকিয়ে তিনি বলেন জঙ্গি? ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ? অথবা তিনি একে “গেরুয়ারসমুদ্র” বলে সম্মোধন করেছিলেন। কমপক্ষে, তাঁর মনে হয়েছিলো যে, এই পুরুষগুলি সুনির্দিষ্টভাবে তাঁকে অথবা অন্য কাউকে হুমকি দিচ্ছে না।কিন্তু তিনি এতটাই আতঙ্কিত হয়েছিলেন যে, তিনি হিন্দু ধর্মকে জঙ্গি হিসাবে মনে করেন। এবং রাগান্বিত হনুমান শিল্পকর্মটি ভারতীয় রাস্তায় রাস্তায় জনপ্রিয়তা লাভ করে।
হনুমান তাঁর দিকে না হেসে “রাগান্বিত” হয়ে তাকানোর সাহস কীভাবে পায়? এটি অবশ্যই জঙ্গিবাদী হিন্দু ধর্ম। এবং অন্যান্য উল্কি এবংশিল্লকর্মকেই এর মতো করে ব্যাখ্যা করা হয় এবং অতিরিক্ত ব্যাখ্যাও করা যায় কি? সাম্যবাদী হাতুড়ি এবং কাস্তের ব্যাখ্যা কীভাবে করা যায়? এটিকমিউনিজম শাসনাধীনে ১০০ মিলিয়ন মানুষের ধারাবাহিক গণহত্যার কথা কি মনে করিয়ে দেয়? এতে কিছু যায় আসে না। “ক্ষুব্ধ হনুমান” এর শিল্পকর্মটি ওয়ারে প্রকাশিত হয় এবং সর্বত্রই লিবারেলরা এর প্রচার করেছিলো।
এটি হলো কর্মক্ষেত্রে লিবারেলদের অধিকার। কেউ তাঁদের হিন্দু পরিচয় প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের আরও বেশি করে অপকারী মনে হতে শুরুৎকরে।
ঠিক আছে, কিছু মানুষ তলোয়ার নিয়ে শোভাযাত্রা করেছিলেন। ধর্মীয় মিছিলগুলিতে অস্ত্র প্রদর্শন নতুন কিছু নয়। একটি বিশেষ শান্তিপূর্ণসম্প্রদায় মহরমে এটি নিয়মিত করে। তদুপরি, বর্তমান কৃষক আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেকেই তরোয়াল আস্ফালনও করেছেন।প্রকৃতপক্ষে, তাদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকদের উপর তরোয়াল চালিয়েছে। এটি লিবারেলদের তাদের অনুমিত কারণের শুচিতা ব্যতীত আর কিছুই মনে করিয়ে দেয় না। এমনকি তারা যখনলালকেল্লা আক্রমণ করে এবং ভিন্ন পতাকা উত্তোলন করে, তখনও লিবারেলদের কিছু মনে হয় নি। তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, এতে দোষের কী আছে? তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার উল্লেখ করেন যে,ভারতীয় সৈন্যের কিছু বাহিনী এই একই ধরনের পতাকা ব্যবহার করেন।
এটাই হলো লিবারেলদের নাগরিক অধিকার। আপনি যেরকমভাবেদেখতে চান সেরকমই পাবেন। আপনার বিশেষাধিকার রয়েছে, এমনকি যে লালকেল্লা আক্রমণ করেছিলো এবং ভিন্ন পতাকা উত্তোলন করেছিলো, তাকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা একটি শান্ত ব্যক্তি হিসাবেও ঘোষণা করা হয়। এদিকে, কিছু লোক গেরুয়া জামা পরে রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। তিনি একজন সন্দেহভাজন জঙ্গিতে পরিণত হন।
ভারতের কোনও একজন হিন্দু যদি কোনোভাবেই তাঁর ধর্মীয় পরিচয়প্রদর্শন করেন, তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে দেওয়াহবে। আপনার শিল্পকর্মে হনুমান হাসছেন না কেন? আপনি কেন “জয়সিয়া রাম” না বলে “জয় শ্রী রাম” বলেছিলেন? এবং এই সবজি বিক্রেতা কেন তার ঠেলাগাড়িতে একটি গেরুয়া পতাকা লাগিয়েছেন?তাঁর পরিকল্পনাটাই বা কী?
কিন্তু যদি কোনও পরিবেশ কর্মী একজন খালিস্তানির সাথে সাক্ষাৎকরেন, তবে সম্ভবত তিনি একটি মিষ্টভাষী কিশোরী, যিনি সবচেয়ে খারাপ সময়ে ক্ষুদ্র ভুলটি করেও থাকতে পারেন আবার নাও পারেন।
বিপরীতে, “ক্ষুব্ধ হনুমান” চিত্র সম্পর্কে ভয়ানক আতঙ্ক দ্রুত সীমানা পেরিয়েও ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি ওয়াশিংটন পোস্টও এই মারাত্মক নতুন হুমকির বিষয়ে একটি মতামত প্রকাশ করে।
বর্তমানে বাংলার কোনও বিজেপি কর্মী যদি রামের নামটি উচ্চারণ করেন, তাঁকে রাজ্যের বহিরাগত হিসাবে গণ্য করা হয়। তিনি কেন রামের নাম নিয়েছেন, দূর্গার নয়? আপনি কি কোনও প্রকার বাংলার জনসংখ্যার অথবা সাংস্কৃতিক আগ্ৰাসনের দালাল? এমনকি অমর্ত্য সেনও এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে সমর্থন করেন বলে মনে হয়। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে, তিনি তাঁরচার বছরের নাঁতনিকে জিজ্ঞেস করেছেন তার প্রিয় দেবতা কে।স্বাভাবিকভাবেই শিশুটি দূর্গার নাম নেয়। স্পষ্টতই এর অর্থ হলো যে,জয় শ্রী রাম উচ্চারণ করে এমন যে কোনও ব্যক্তি লোককে মারধরের চেষ্টা করছে। অন্য কথায় বলা যায় যে, আপনি যদি আমার পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিচয় থেকে কিছুটা আলাদা হন তবে আপনি বহিরাগতএবং সম্ভবত আপনি একজন অপরাধী। বহিরাগতর সংজ্ঞা। তবে “লিবারেলরা” অমর্ত্য সেনের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে একটি পূর্ণ পোস্টার তৈরি করেন এবং সমগ্ৰ বাংলা জুড়ে তা ছড়িয়ে দেন।
অধিকার হলো এমন একটি পদ্ধতি যা “অন্যকে” একটি প্রতারণামূলক পদ্ধতিতে মানহীন করে তোলে। আর সেই কারণেই যখন ১৮ বছর বয়সী বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতো বাংলার পুরুলিয়ায় একটি খুঁটিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, তখন দেশের মানুষের যেমন প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত, তেমন হয় না। এমনকি হত্যাকারীরা তার জামাতে লিখে দেয় যে, বিজেপি করার এটাই তার শাস্তি। কিন্তু সংবাদমাধ্যম থেকে আপনি যে প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলেন, তা কখনই আসে নি। কারণ বিজেপি কর্মী এবং সাধারণ হিন্দু ডানপন্থীরা এই জাতীয় দেশেরজনগণের বিবেকে সাড়া ফেলার জন্য অনেকটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছেন।
অন্য একদিন বজরঙ দলের কর্মী রিঙ্কু শর্মার কী হয়েছিলো বিবেচনা করুন। “ভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত” মানুষেরা তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে (দুঃখিত, ওই শব্দটি উচ্চারণ করতে পারবো না)। পুলিশ জানিয়েছে,এটি একটি ব্যবসায়িক ঝগড়ার ফল, কিছুদিন আগে একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যার সুত্রপাত হয়।আবার কেউ কেউ বলেন, হত্যার পেছনে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য ছিলো, কারণ নিহত তরুনটি অযোধ্যার রাম মন্দিরনির্মাণের জন্য সক্রিয়ভাবে অর্থ সংগ্ৰহ করছিলেন। আদালত এর সত্য খুঁজে বের করবেই, আমি নিশ্চিত।
গণ সংবাদমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ধর্মীয় পরিচয় যদি উল্টে যেতে তাহলে কি সংবাদমাধ্যমগুলি পুলিশের বিবৃতিগুলিকে এতো তাড়াতাড়ি গ্ৰহণ করে নিতো? জুনায়েদ খানের মৃত্যুটি মনে আছে?এমনকি হাইকোর্ট এই হত্যাকাণ্ডের সমস্ত রকমের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিকে নাকচ করে দিয়েছিলো এবং বলেছিলো যে, এটি ছিলো ট্রেনে বসার জায়গা নিয়ে সংগঠিত একটি বিবাদের ফলে খুন, যা একটি অপরাধ। তা সত্ত্বেও, অনেকেই এখনও জোর দিয়ে বলেন যে, জুনায়েদ খানের হত্যার ঘটনাটি জঙ্গি হিন্দু ধর্মের একটি উদাহরণ স্বরূপ।
আর গোধরা হত্যালীলাটি ভুলে যাবেন না। বেশ কয়েকজন আসামিকে বহু বছর পূর্বেই হাইকোর্ট কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিলো, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। জনপ্রিয় উদারনৈতিক লোককাহিনি অনুযায়ী,হত্যাকাণ্ডটিকে এখনও দূর্ঘটনা কিংবা খুব বেশি হলে অমীমাংসিত রহস্য এবং সবচেয়ে খারাপভাবে বিজেপির একটি ষড়যন্ত্র হিসাবে ধরা হয়।কারণ সাবরমতী এক্সপ্রেসের এস-৬ বগিতে আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষগুলো ছিলো হিন্দু কর্মী। লিবারেলরা তাদের মানুষ হিসাবে গণ্যই করেন না।
লিবারেলরা হিন্দুদের অধিকারকে অথবা হিন্দু অধিকার দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া যে কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তির অধিকারকে মান্যতাই দেন না, তাঁদের মৃত্যুতে হাসা সহজ হয়ে পড়ে। রাজাবালা দেবীকে মনে আছে?
লিবারেলরা নিজেদের শিল্পকর্মের মাধ্যমেই হিন্দুদের অধিকার নিয়ে সংবেদনশীল বিষয়গুলিকে নিয়েও মজা করে। মিষ্টভাষী, প্রধান শিক্ষকের পুত্র, গণিতের শিক্ষক, ক্রিকেটপ্রেমী, খুব অল্প বয়স্ক, বৃদ্ধ,নিরামিষাশী, কুকুরপ্রেমী প্রভৃতি। কিন্তু যা ঘটছে তা হলো, লিবারেলরাসম্পূর্ণ মানুষের একদিকটাই শুধু দেখতে পান। এমনকি তারা সন্ত্রাসবাদী হলেও, যে কোনও ব্যক্তির পুত্র বা কণ্যা হলেও। তারা সম্ভবত তাদের প্রেমে পড়ে যান, কখনও কখনও তাদের প্রতি আকর্ষিত হন। তারাসবাই মানুষ। যতক্ষণ না তারা হিন্দুদের অধিকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা অমানবিক হয়ে যান এবং তাঁদেরজীবনের কোনও গুরুত্বই থাকে না। সম্ভবত, রাজাবালা দেবীও মিষ্টভাষীছিলেন। কেউ কী সেটা দেখতে গেছেন?
যদি আপনি এই সুবিধাগুলি এবং শ্রেণী সম্পর্কে বুঝতে চান তবে শচীন তেন্ডুলকার সম্বন্ধে তাঁরা কী বলেছেন তা লক্ষ করুন। শচীন আমাদের কৃষিক্ষেত্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে মন্তব্য করার পরে, ভারতীয় অভ্যন্তরীণ বিষয় নামক এক নিবন্ধে ক্যারভান তাঁর “নৈতিক ভীরুতা”নিয়ে উপহাস করেন। তাঁরা এই ঘটনার সাথে তাঁর “নিম্ন মধ্যবিত্ত বেতনের” উৎসের সাথে সম্পর্কিত করেছেন। অন্য কথায়, তথাকথিতবুদ্ধিজীবীতা একটি সুবিধাভোগী বাচ্চাদের খেলার স্বরূপ। সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুরা বড়ো বড়ো উদার ধারণা জনসমক্ষে আনে যা দেশকে আরওএগিয়ে নিয়ে যায়। অবশিষ্ট অংশের মানুষেরা প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীনব্যক্তির কাছে তাঁর বিবেকটিকে নিখুঁতভাবে জমা দেন। আপনি যদি লিবারেল না হতে পারেন, তাহলে আপনার বলারও কোনও অধিকারনেই। আপনি মানবিকতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন।
আপনি কি ভাবেন নি যে, কেউ শচীন তেন্ডুলকারের সাথে সহমত হবেন,তাই না? কিন্তু এটাই হলো আসল নাগরিক অধিকার। ঘটনাচক্রে, যিনিএই প্রবন্ধটি লিখেছেন, তিনি শেষের দুটি লাইনে তাঁর নিজের সম্পর্কেলিখে রেখেছিলেন, সাধারণত যা হয়ে থাকে। তাঁর এই জীবনীর মাধ্যমেজানা যায় যে, তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, যাঁর কাজ নিউইয়র্কটাইমসেও প্রকাশ পেয়েছে। এই তথ্যটি আমাকে অবাক করে। আপনি কী ভাবেন, শচীন তাঁর জীবনী লিখে রেখেছেন? তাই আমি টুইটারে সন্ধান করেছি। শচীন তাঁর বায়োতে শুধু “গর্বিত ভারতীয়” লিখে রেখেছেন।দুটি শব্দ কেবল ১.৩ বিলিয়ন সাধারণ মানুষের থেকে তাঁকে আলাদা করে। শুনবেন? তিনি বলেছেন যে, তিনি হেরে গেছেন।
মূল লেখাটি অপইন্ডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিত, লিখেছেন অভিষেক ব্যানার্জি। অনুবাদ করেছেন অর্ণব মুখোপাধ্যায়।