পাকিস্তানে হিংলাজ মাতার মূর্তি ভেঙে ফেলা হল, দুর্বৃত্তরা অধরা

0
1920

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- বাংলাদেশের পর এবার হিন্দু মূর্তি ভাঙচুর করার ট্রেন্ড শুরু হয়েছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের গতকাল অষ্টমীর দিন নাগরপারকের এলাকায় মোয়া গ্রামের দুর্গা মন্দিরে হামলা চালায় কয়েকজন মৌলবাদী ব্যক্তি।

অপ‌ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার এই অঞ্চলে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যখন নবরাত্রির উপলক্ষে প্রার্থনা করার জন্য সমবেত হয়েছিল তখন এই ঘটনা ঘটে। অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা হিংলাজ মাতার প্রতিমার মাথা ভেঙে দিয়েছে, মাতার বাহনের মুখ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানি সাংবাদিক নায়লা ইনায়েত টুইটারে এই ঘটনাটি শেয়ার করেছেন।

ঘটনার নিন্দা করে সিন্ধু পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে যে হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুরের জন্য তারা শীঘ্রই দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করবে। পুলিশ জানিয়েছে, “আমরা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি এবং খুব তাড়াতাড়ি দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে।”

সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী পুঞ্জো ভিল বলেছেন যে এই জাতীয় ঘটনাগুলি পারস্পরিক ‘সহাবস্থান’ ধারণার পরিপন্থী। তিনি টুইট করেছেন, “থারপারকারের নগরপাড়া এলাকার মন্দির ভাঙচুরের বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং দুঃখজনক।” তিনি আরও জানিয়েছেন, “এই বিষয়টি নিয়ে এসএসপির সাথে কথা বলা হয়েছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে অতিদ্রুত তদন্তের জন্য অনুরোধ বলেছেন। কারণ থারপাড়কার ভালবাসা, শান্তি ও সম্প্রীতির স্থান হিসেবেই পরিচিত যেখানে এই ধরনের কর্মকাণ্ড পারস্পরিক সহাবস্থানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।”

পাকিস্তানি হিন্দুকর্মী কপিল দেব অতীতের ঘটনা উল্লেখ করে এই ধরনের ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা জানি পুলিশ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করবে এবং তদন্তে প্রমাণ হবে যে লোকটির স্থিতিশীল মানসিক অবস্থা নেই। এই ঘটনা প্রথম ঘটনা নয়, একই গল্পের বছরের পর বছর ধরে পুনরাবৃত্তি হয়ে চলেছে। ”

এর আগে, ইসলামাবাদ হিন্দু পঞ্চায়েত অভিযোগ করেছিল যে, উগ্রপন্থীদের একটি দল শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের বাউন্ডারি দেয়ালটি মাটিতে ভেঙে ফেলে দেওয়ার পরে নতুন শ্রী কৃষ্ণ মন্দিরের নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। একটি টুইটার হ্যান্ডেল (পাকহিন্ডস) থেকে আপলোড করা একটি ভাইরাল ভিডিওতে একজন উগ্রপন্থীকে অস্থায়ী সীমানা প্রাচীরটি ভেঙে ফেলতে দেখা যায় এবং ক্যামেরার সামনে উত্তেজিতভাবে কথা বলতেও দেখা যায়।

অভিযোগ, পাকিস্তানের কট্টরপন্থী-ইসলামপন্থীরা এর আগে পাকিস্তানে হিন্দু মন্দির নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল। বলা হয়েছিল হিন্দু মন্দির নির্মান পাকিস্তানের ধারণার বিরোধী, ইহা ইসলামে নিষিদ্ধ। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ইসলামাবাদে হিন্দু মন্দির নির্মাণে তহবিল দেওয়ার জন্য ইমরান খান সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন একদল ইসলামী নেতা, যারা এটিকে পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি হিন্দু মন্দিরে ইসলামিক কট্টরপন্থীদের আক্রমণ কোনো নতুন ঘটনা নয়।কয়েকদিন আগেই সিন্ধু প্রদেশের ইরাবতীর মন্দিরে হামলা চালিয়ে মুর্তি ভাঙচুর করেছিল একদল দুষ্কৃতী। তারপর করাচি শহরের একটি মন্দির ভেঙে দিয়েছিল মৌলবাদী লোকেশন। তারপরে সিন্ধু প্রদেশের এই ঘটনা। তবে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটলেও তা প্রতিরোধে কোন‌ও ব্যবস্থা নেয়নি সেদেশের সরকার। এমতঅবস্থায় পাকিস্তান হিন্দু শূন্য হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে।