বাঙ্গালীর চিরায়ত লজ্জাগৌরী চিহ্ন মুছে বাংলাদেশের প্যাঁচা: বিপাকে বাংলাপক্ষ

মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। ‘বাংলা পক্ষ’ বঙ্গাধিপতি শশাঙ্কের পোষ্টার চুরি করেছে! এ তো অগৌরবের নয়। এই চুরিতে তো সম্পদের হানি হয়নি। একটি প্রদীপ থেকে কেউ যদি নিজের প্রদীপটি জ্বালিয়ে নেয়, তাতে আলো বৃদ্ধি পায়, অন্ধকার দূর হয়। তাই ‘বাংলা পক্ষ’ ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’ নামক সংগঠনের গবেষণালব্ধ শশাঙ্কের ছবিসহ পোষ্টারটি চুরি করে নিজেদের ওয়ালে পোষ্ট করায় বেশ কিছু বাঙ্গালী বাংলাদেশীদের চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে অনেক বছর পর আবার নতুন করে শশাঙ্ককে বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে জানতে পারল।

রবীন্দ্রনাথের কবিতাটি মনে পড়ল —

…. ‘আমার কাছে নন্দগোপাল যখন হার মান ​​
আমারি সেই হার, লজ্জা সে আমার। ​​
ধুলোয় যেদিন পড়ব যেন এই জানি নিশ্চিত,
তোমারি শেষ জিত।’

‘বাংলা পক্ষ’ যদি বঙ্গাব্দের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্কে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের থেকে এক কদম এগিয়ে গিয়ে আমাদের হারিয়ে দেয়, সেই হারকে আমরা সচেতন বাঙ্গালীরা রবীন্দ্রনাথের কবিতার নন্দগোপালের দাদামশাইয়ের মত জয় হিসাবেই দেখব।

যাই হোক, ঘোর ভাঙল অচিরেই। ভালো করে দেখতেই চোখে পড়ল- ‘বাংলা পক্ষ’ শশাঙ্কের প্রতিকৃতির উপর থেকে সনাতনী বাঙ্গালীর পরমারাধ্য স্বস্তিকা বা লজ্জাগৌরী চিহ্নটি বাদ দিয়ে বাংলাদেশে বিশেষ গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত প্যাঁচার মুখোশের ছবি লাগিয়েছে, যে প্যাঁচা আদৌ বাঙ্গালীর মা লক্ষ্মীর বাহন লক্ষ্মীপ্যাঁচা নয়। উপরন্তু দেখা গেল ‘বাংলা পক্ষ’ শশাঙ্ককে প্রতিষ্ঠা করছে উত্তরভারতের পরাক্রান্ত সম্রাট হর্ষবর্দ্ধনের পাল্টা হিসাবে।


হর্ষবর্দ্ধন! হর্ষবর্দ্ধনের সাথে বঙ্গাব্দের কি সম্পর্ক? হর্ষবর্দ্ধন শশাঙ্কের মতই বিশাল সাম্রাজ্যের অধীশ্বর ছিলেন। শশাঙ্কের সাথে বেশ কয়েক বার যুদ্ধ হয়েছিল তাঁর। কিছুটা হিন্দু বিদ্বেষী বৌদ্ধ পক্ষপাতী হর্ষবর্দ্ধনকে বারবার প্রতিহত করেন হিন্দু রাজা শশাঙ্ক। কিন্তু হর্ষবর্দ্ধনের সাথে বহু দূর অবধি দেখলেও বঙ্গাব্দের কোনো সম্পর্ক নেই। হর্ষবর্দ্ধন যে শশাঙ্ককে বঙ্গাব্দ চালু করতে বাধা দেন- এমন কোনো নথিও নেই।

তবে ‘বাংলা পক্ষ’ নববর্ষের সাথে সম্পর্কহীন হর্ষবর্দ্ধনকে টেনে আনল কেন? কেন আবার! তাদের চিরাচরিত দেশদ্রোহিতার জন্য। হর্ষবর্দ্ধনকে গোবলয়ের প্রতিনিধি হিসাবে দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে উত্তরভারতের প্রতিপক্ষ হিসাবে খাড়া করে বৃহত্তর বাংলাদেশ গঠন।

কয়েক দশক ধরে, প্রধানত বাংলাদেশের মৌলবাদী শাসক এরশাদের সময় থেকে আকবরকে বঙ্গাব্দের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে প্রচার করে যাওয়া চক্রান্তের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি ‘বাংলা পক্ষ’। ওদের পোষ্টে বাংলাদেশের এই বহিরাগত আকবরপন্থী চক্রান্ত অথবা আকবরের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেনি। অপ্রাসঙ্গিক ভাবে টেনে এনেছে হর্ষবর্দ্ধনকে।

তবে তারা শেষ রক্ষা করতে পারেনি। সম্ভবত  প্রভু আকবরপন্থীদের চাপে পোষ্টটি মুছে দিতে বাধ্য হয়েছে তারা।

বাঙ্গালীর ভূমি চুরি করেছে বাংলাদেশ। কপিল মুনির বংশধর বাঙালী। শ্রীকৃষ্ণের সমসাময়িক পৌণ্ড্র বাসুদেবের কাল থেকে বঙ্গের গাথা। অন্ততঃ পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন বাঙ্গালীর ঐতিহ্যকে মাত্র ‘হাজার বছরের’ বলে বাকিটা লুকিয়ে রাখছে বাংলাদেশ। কারণ কি এটাই যে মোটামুটি হাজার বছর আগেই আরব সাম্রাজ্যবাদীরা বাংলার নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের মাধ্যমে তাদের পদচিহ্ন বাংলায় দেয়? ওরা বাঙ্গালীর ভাষাকে বিকৃত করছে ভাষার আরবীকরণ করে। আর বঙ্গাব্দকেও চুরির চেষ্টা চলছে বহিরাগত আকবরের নামের সিক্কা লাগিয়ে দিয়ে।

বাঙ্গালীর নাম করে লড়া ‘বাংলা পক্ষ’-এর বাইরের রূপের আড়ালে কঙ্কালটি সচেতন বাঙ্গালীর কাছে স্পষ্ট। একে ওকে আঁকড়ে ধরে বাঙ্গালীর জাতিসত্তাকে আরবপন্থীদের কাছে বিকিয়ে দেওয়া।

পুনশ্চ – চুরির প্রমাণ কিন্তু বাংলা পক্ষের টুইটারে এখনও দেখা যাচ্ছে।