পলান্ন, মাংসদন ‘অপভ্রংশ’ বিরিয়ানি: পর্ব ২

0
679

কুমারসম্ভবম

অধ্যায় ৩ — পাকদর্পণ

অতি উৎকৃষ্ট পলান্নের গুণাবলি প্রসঙ্গে নিষধরাজ্ নল তাঁর ‘পাকদর্পণ’ পুস্তকে ‘মাংসোদনস্য গুণাঃ’ অংশে উল্লেখ করে গেছেন:—

इदं रुचिकरं वृष्यं पथ्यं लघुबलप्रदम्।
धातुवृद्धिकरत्वाच्च व्रणदोषान् प्रशाम्यति ॥८०॥

मांसौदन, जिसे आजकल बिरयानी कहा जाता है, वे अत्यधिक स्वादिष्ट परन्तु अत्यंत पौष्टिक, बलवर्धक, लगुभार और उपयोगी होता है, अथापि यह बहुत सुगंधित भी होता है क्योंकि यह नवनीतज (घृतम्) और अत्यधिक कटुयुक्तं (मसालेदार) होने के कारण अत्यंत रति उत्तेजक होता है। पलान्नो, मांसौदन, या बिरयानी शरीर की कोशिकीयता के कारण शरीर के हृदय में लगे क्षतचिह्न को आरोग्यं प्राप्त करने में सक्षम है।

ইদং রুচিকরং বৃষ্যং পথ্যং লঘুবলপ্রদম্।
ধাতুবৃদ্ধিকরত্বাচ্চ ব্রণদোষান্ প্রশাম্যতি ॥৮০॥

অর্থাৎ পলান্ন বা মাংসদন (मांसौदन), অর্থাৎ বিরিয়ানি হল অতি সুস্বাদু অথচ অতি পুষ্টিকর, শক্তিবর্ধনকারী, হালকা এবং উপকারী তবে ঘৃত এবং উচ্চ মশলাযুক্ত হওয়ায় অতি রতি-উদ্দীপকও বটে। শরীরের কোষজনিত কারণে শরীরের অন্তরে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় তার নিরাময় করতে সক্ষম হল পলান্ন বা বিরিয়ানি।

নিষধরাজ্ নল রচিত ‘পাকদর্পণ’ গ্রন্থে অন্যান্য বিবিধ উৎকৃষ্ট রন্ধন প্রণালীর সঙ্গে কুঁচি করে কাটা কুক্কুটমাংস তথা লাবুকমাংসদন দিয়ে পলান্ন রন্ধন নির্মাণবিধি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তবে ‘পাকদর্পণ’ গ্রন্থে উল্লিখিত ‘লাবুক’ বা ‘লাবু’ কিন্তু বর্তমানে ব্যবহৃত লাউ নামক সবজি নয়, ‘লাবুক’ হল কোয়েল পাখির মাংস এবং তাই দিয়ে প্রস্তুত মাংসদনকেই লাবুক-মাংসদন বলে উল্লেখ করা হয়েছে; যেমন বর্তমানে হাঁস বা মুরগির মাংস দিয়ে মাংসদন বা পলান্ন প্রস্তুত করা হয়।

লাবুক-মাংসদন রন্ধনের জন্য মাংস একেবারে ছোট ছোট চালের দানার মত কুঁচি কুঁচি টুকরো করে নেওয়া হত। অর্থাৎ, আধুনিক কালের বর্ণনা অনুযায়ী কুঁচি কুঁচি টুকরো করে কাটা মাংসের কিমা। তারপরে সেই মাংসের জল বা রক্ত ঝরিয়ে নিয়ে তাকে পরিমান মত কবোষ্ণ ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া হত। তার কিছুক্ষন পরে, সেই কুঁচি করা কিমা খুব ভাল করে ঘিয়ে ভেজে তুলে নেওয়া হত। তারপরে পাত্রে পড়ে থাকা বাকি ঘিয়ে সরু লম্বা চাল ভেজে সেটা তুলে রাখা মাংসের সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নেওয়া হত। তারপরে সেই ভাজা চাল এবং মাংস আগে থেকে জল গরম করে তাতে অল্প তাপে (আঁচে) সেদ্ধ করা হত। রান্নার বিবরণে কাপড়ের থলিতে করে বিভিন্ন মিশ্রিত মশলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

কী মশলার ব্যবহার করা হত সেই কাপড়ের পুটলির মধ্যে? ব্যবহার করা হত নানা রকমের ভারতীয় ভেষজ এবং কুঁচি কুঁচি করা, পেশা বা গুঁড় করা মশলা। তাতে থাকত পানের শেকড় থেকে সুগন্ধী নানা পুষ্প, পত্র, পরাগ এবং উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত ভেষজ ইত্যাদি। যাদের হজমে দুর্বলতা রয়েছে, তাদের জন্য নিষধরাজ্ নল তাঁর ‘পাকদর্পণ’ গ্রন্থে পলান্ন বা মাংসদন রন্ধনের নির্দেশিকায় মশলার অংশ হিসাবে হিং, তিলের তেল ও সন্ধক বা সৈন্ধব লবণ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই আদি অকৃতিম ভাবে ভারতীয় সংস্কৃতি মূলত যেহেতু অত্যন্ত উদার প্রকৃতির এবং সদা সর্বদা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষাকে উৎসাহিত করে, সেই ঐতিহ্যের পরম্পরা অনুযায়ী নিষধরাজ্ নল’ও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মশলা এবং ভেষজ চয়নের বিষয়ে তথা তার পরিমান এবং অনুপান ব্যবহারের তুল্যমূল্য সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন মূল্যবান পরামর্শ দিলেও অন্তিম সিদ্ধান্ত বা চূড়ান্ত মতামত কিন্তু পাচকের নিজের স্বাদবোধ এবং রুচির ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন।

চলবে

Previous articleহিন্দু মেয়েদের মুসলিম পুরুষদের বিয়ে করা উচিত নয়: মহম্মদ সেলিম হায়দার
Next articleবাঙালীর খণ্ডিত জাতীয়তা: দেশভাগ ও প্রাদেশিক পেক্ষাপট
কুমারসম্ভবম্
লেখক প্রায় ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন পেশার সিঁড়ি, যথা অন্তর্জাল তথা বাণিজ্যিক প্রযুক্তি, মানব তথা পরিচালন সম্পদ উন্নয়ন তথা পররাষ্ট্র বিভাগীয় কর্মসঞ্চালনার পথ অতিক্রমণ করে অবশেষে প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রদের পরিচালন ব্যবস্থার পাঠ শিখতে সহযোগিতা করেন। লেখকের ভাবনা চিন্তা তথা লেখনীর প্রধান বিষয়বস্তু - প্রধানতঃ সনাতন ধর্ম, মাতৃভূমি রাষ্ট্র ভারতবর্ষ, ভারতীয় সুপ্রাচীন ঐতিহ্য, প্রাগৈতিহাসিক প্রাচীন ইতিহাস, ভারতীয় ভাষা, শত সহস্র আঞ্চলিক খাদ্য-আহারাদি, বিবিধ পোশাক-পরিচ্ছদ, অতি প্রাচীন লোক সংস্কৃতি, সর্বৎকৃষ্ট মার্গীয় সঙ্গীত, বিভিন্ন অননুকরণীয় শিল্পকলা ইত্যাদি বিভিন্ন মৌলিক বিষয়-বস্তু সংক্রান্ত ভাবনাতেই কেন্দ্রীভূত।