রবীন্দ্রনাথ আর শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী নন? বাঙ্গালীর জাতিসত্ত্বা চুরি হচ্ছে ওপাশে

0
1863

ঢাকার রবীন্দ্রজয়ন্তী

১৩৫৩ বঙ্গাব্দের পঁচিশে বৈশাখ। ইংরাজিতে সেটা ১৯৪৬ সাল। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হচ্ছে। স্কুলের এক ছাত্র অসাধারণ বাঁশি বাজাতে জানে। তার বাঁশির সুরের জাদু ছড়িয়ে যাচ্ছে দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর ঘাট থেকে সদরঘাট ক্রসিং ছুঁয়ে সোজা উত্তরে জগন্নাথ হলের দিকে, পঁচিশে বৈশাখের স্নিগ্ধ সকাল ধন্য হয়ে উঠেছে, প্রফুল্লতায় পরিপূর্ণ কলেজিয়েটের প্রভাতী অঙ্গনে যেন স্বয়ং রবিঠাকুর স্বর্গ থেকে ছুটে এসেছেন কোন পুরাতন প্রাণের টানে।

কিন্তু জায়গাটার নাম ঢাকা। বিশ্ব ইতিহাসে সবথেকে বেশি রক্ত ঝরেছে এমন জায়গা যদি কোথাও থেকে থাকে, তাহলে তা অবশ্যই পূর্ববঙ্গে। ঢাকা সেই পূর্ববঙ্গেরই প্রাণকেন্দ্র। তাই ছেলেটির বাঁশি যে গানের মূর্ছনায় মাতাল করে তুলেছিল চারিদিক, আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই সেই গানটি এক নিষ্ঠুর পরিহাসে পরিণত হল। গানটির নাম — “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি!”

সেদিনের সোনাঝরা সেই সকালের অমলিন হাসি ঢেকে গিয়ে দিনে দিনে পূর্ববঙ্গ জুড়ে শুধুই ছড়িয়ে পড়তে লাগল একদল হিংস্র আরব সাম্রাজ্যবাদী নেকড়ের ক্রূর অট্টহাসি।

 

আত্মকথনে “শ্রেষ্ঠ” বাঙ্গালী

এক নেকড়ে তার আত্মজীবনীতে লিখে গেছে,

“তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। শুধু মুসলিম লীগ, আর ছাত্রলীগ।…মুসলিম লীগ বললেই গোপালগঞ্জে আমাকে বোঝাত।…পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নাই‌। খবরের কাগজ ‘আজাদ’, যা লেখে তাই সত্য বলে মনে হয়।”
[‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, পৃষ্ঠা ১৫]

না, রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা আরব সাম্রাজ্যবাদের সামনে অপরাজিত থাকতে পারেনি। দ্বিখন্ডিত হয়ে এই পাকিস্তানকামী ক্রূর নরঘাতকদের হাতে প্রায় দেড়কোটি বাঙ্গালী (হিন্দু) কে সঁপে দিয়ে দেহ রেখেছিল রবিঠাকুরের সোনার বাংলা। সফল হয়েছিল আত্মজীবনীতে লিখে যাওয়া ওই বিভেদকামী শয়তানের উদ্দেশ্য।

নাঃ পুরোপুরি সফল হয়েছিল সেটাও বলা চলেনা। সেই বিষয়ে নিজের অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে প্রবল হতাশাও ব্যক্ত করে গেছে ওই আরব সাম্রাজ্যবাদের দালাল।

“নাজিমুদ্দিন সাহেব মুসলিম লীগ বা অন্য কারোর সাথে পরামর্শ না করেই ঘোষণা করলেন ঢাকাকে রাজধানী করা হবে। তাতেই আমাদের কলকাতার উপর আর কোনো দাবী রইল না। এদিকে লর্ড মাউন্টব্যাটেন চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়েছিলেন, কলকাতা নিয়ে কী করবেন? ‘মিশন উইথ মাউন্টব্যাটেন’ বইটা পড়লে সেটা দেখা যাবে। ইংরেজ তখনও ঠিক করে নাই কলকাতা পাকিস্তানে আসবে, না হিন্দুস্তানে থাকবে।…কলকাতার হিন্দু-মুসলমান লড়বার জন্য প্রস্তুত। যে কোন সময় দাঙ্গাহাঙ্গামা ভীষণ রূপ নিতে পারে।

কলকাতা হিন্দুস্তানে পড়লেও শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত পাকিস্তানে আসার সম্ভাবনা ছিল। হিন্দুরা কলকাতা পাবার জন্য আরো অনেক কিছু ছেড়ে দিতে বাধ্য হত‌।

“একজন ইংরেজ গভর্নর হয়ে ঢাকা আসতে রাজি হচ্ছিল না, কারণ ঢাকার খুব গরম আবহাওয়া। তার উত্তরে মাউন্টব্যাটেন যে চিঠি দিয়েছিলেন তাতে লেখা ছিল, ‘পূর্ব পাকিস্তানে দুনিয়ার অন্যতম পাহাড়ি শহর, থাকার কোন কষ্ট হবে না।’ অর্থাৎ দার্জিলিংও আমরা পাব। তাও নাজিমুদ্দিন সাহেবের এই ঘোষণায় শেষ হয়ে গেল।

যখন গোলমালের কোনো সম্ভাবনা থাকল না, মাউন্টব্যাটেন সুযোগ পেয়ে যশোর জেলার সংখ্যাগুরু মুসলমান অধ্যুষিত বনগাঁ জংশন অঞ্চল কেটে দিলেন। নদীয়ায় মুসলমান বেশি, তবু কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট জংশন ওদের দিয়ে দিলেন। মুর্শিদাবাদে মুসলমান বেশি কিন্তু সমস্ত জেলাই দিয়ে দিলেন। মালদহ জেলায় মুসলমান ও হিন্দু সমান সমান তার আধা অংশ কেটে দিলেন, দিনাজপুরে মুসলমান বেশি, বালুরঘাট মহকুমা কেটে দিলেন … যাতে জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং হিন্দুস্তানে যায় এবং আসামের সাথে হিন্দুস্তানের সরাসরি যোগাযোগ হয়।

উপরোক্ত জায়গাগুলি কিছুতেই পাকিস্তানে না এসে পারত না।

এদিকে সিলেটে গণভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ করিমগঞ্জ মহকুমা ভারতবর্ষকে দিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম, আসামের কাছাড় জেলা ও সিলেট জেলা পাকিস্তানের ভাগে না দিয়ে পারবে না। আমার বেশি দুঃখ হয়েছিল করিমগঞ্জ নিয়ে। কারণ, করিমগঞ্জে আমি কাজ করেছিলাম গণভোটের সময়।

…যে কলকাতা পূর্ব বাংলার টাকায় গড়ে উঠেছিল সেই কলকাতা আমরা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলাম। …কলকাতা পাকিস্তানে থাকলে পাকিস্তানের রাজধানী কলকাতায় করতে বাধ্য হত, কারণ পূর্ব বাংলার লোকেরা দাবি করত পাকিস্তানের জনসংখ্যায়ও তারা বেশি আর শহর হিসাবে তদানীন্তন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ শহর কলকাতা‌।…”
[‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, পৃষ্ঠা ৭৮, ৭৯]

রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলাকে ছুরি মেরে ভারতমায়ের বুক থেকে কেটে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছায়াতলে এনে পাকিস্তানের সোনার ডিম পাড়া হাঁসে পরিণত করতে চাওয়ার এত বিস্তারিত ইতিবৃত্ত যে আরব লিখে গেছে, রবীন্দ্রনাথের কলকাতাকে পাকিস্তানের রাজধানী করার মত প্রবল ভারতবিদ্বেষী তথা রবীন্দ্রবিদ্বেষী মনোবাসনা ব্যক্ত করেছে ছত্রে ছত্রে, সেই জেহাদীর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বিবেকানন্দ-রবীন্দ্রনাথকে ছাপিয়ে সে আবার বিবিসি বাংলার গণভোটে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিও নির্বাচিত হয়েছে‌।

নেতাজী সুভাষ প্রসঙ্গে এই “শ্রেষ্ঠ” বাঙ্গালীর মনে হত,

“সুভাষ বাবু আসলে তো পাকিস্তান হবে না। পাকিস্তান না হলে দশ কোটি মুসলমানের কি হবে?”   [‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, পৃষ্ঠা ৩৫, ৩৬]

 বাঙালি রাষ্ট্র ও নিপীড়িত হিন্দু বাঙ্গালী

এদিকে তার শখের বাঙালি চেতনায় জন্ম নিতে চলা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে, তখন সেখান থেকে এই মুজিবেরই চ্যালা এক বাংলাভাষী আরব ইন্টেলেকচুয়াল পশ্চিমবঙ্গে এসে দুকানকাটা বেহায়ার মত আচরণ করে গেছে; পাক আমলে বাঙ্গালী হিন্দুর ওপরে তাদেরই প্রতিবেশী বাংলাভাষী মুসলমানের দল যে ভয়াবহ অত্যাচার নামিয়ে এনেছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়—চূড়ান্ত নির্লজ্জের মত সেই জেহাদী কার্যকলাপকে ডিফেন্ড করে বক্তৃতা দিয়ে গেছে:

“বাংলাদেশের এই ভয়াবহ দুর্দিনে আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন—আপনজন ভেবে কাছে টেনে নিয়েছেন। এজন্য আপনাদের জানাই আমাদের কৃতজ্ঞতা। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, আপনারা যারা সাতচল্লিশ, পঞ্চাশ, আটান্নো, বাষট্টি, কিংবা পঁয়ষট্টি সালে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে এসেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আবার তাঁরা এককালের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারবেন। …বাস্তব ক্ষেত্রে যা ঘটতে যাচ্ছে, সেই নির্মম সত্য কথাটা আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করলাম‌। অলীক স্বপ্ন দেখলে শুধু মানসিক যন্ত্রণাই বৃদ্ধি পাবে।”
(‘আমি বিজয় দেখেছি’, এম আর আখতার মুকুল, পৃষ্ঠা ৫৩)

অতএব মুখে বাঙালি রাষ্ট্রের পরিচয় দিয়ে বাঙালিত্বের পরিচয়ের পেটেন্ট বাংলাদেশী মুসলমানরা নিজেদের দখলে নিয়ে নেবে, বাংলাদেশে ফেলে আসা বাঙ্গালী হিন্দুদের ভিটেমাটিগুলোর যেভাবে দখল নিয়েছে ঠিক সেইভাবে—এটাই স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল। স্বাধীন হবার পর যে কবির লেখা গানকে তারা তাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে স্বীকৃতি দেবে, আশ্চর্যজনকভাবে সেই কবিকে জাতীয় কবি হিসাবে স্বীকৃতি তো দেবেই না, উপরন্তু সেই কবিপ্রবরের রাষ্ট্র ভারত থেকে তাদের নিজেদের বিচ্ছিন্ন থাকার পাকিস্তানী ট্র্যাডিশন বজায় রেখে তারা বুঝিয়ে দেবে, রবীন্দ্রনাথ যে নেশন (nation) এর অন্তর্ভুক্ত, তারা সেই নেশনের অন্তর্ভুক্ত তো নয়ই—বরং তার থেকে পৃথক একটি নেশন, তবেই না আলাদা রাষ্ট্রের দরকার? এখন প্রশ্ন, বাঙ্গালী তাহলে কে? রবীন্দ্রনাথ, নাকি রবীন্দ্রনাথের নেশন থেকে বিচ্ছিন্ন অন্য একটি জাতির কেউ?

 

নজরুল বাংলাদেশের গৌরব কিন্তু হেমচন্দ্র ঘোষ নন

একটা অপ্রিয় কথা বলতেই হচ্ছে। নজরুল ওদের জাতীয় কবি, কারণ নজরুল মুসলমান। সেই কারণেই ওদের জাতীয় কবি হতে পেরেছেন। কেন এইকথা বললাম?

লক্ষ্য করে দেখুন, একটু আগেই এক বাংলাদেশী আরব-সাম্রাজ্যবাদের সেবায়েত বুদ্ধিজীবীর কথা বলেছি যেখানে লোকটা বলছে পশ্চিমবঙ্গে ‘৭১ সালের আগে উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসতে বাধ্য হওয়া পূর্ব পাকিস্তানের কোনো প্রাক্তন নাগরিককে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তারা আর নিজের ভিটেমাটিতে ফিরতে দেবেনা‌। সেই হতভাগ্য লোকগুলিও কিন্তু বাঙ্গালীই, এবং বাংলাদেশ নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনার রাষ্ট্র দাবী করা সত্ত্বেও সেই হতভাগ্য বাঙ্গালী হিন্দুদের জন্য পৈতৃক ভিটেয় পাকাপাকিভাবে ফেরার পথ বন্ধ। তাহলে নজরুলের জন্য ১৯৭৩ সালে তাদের রাষ্ট্রের দরজা খুলে গেল কীকরে? বিশেষতঃ নজরুলের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। তিনি পূর্ববঙ্গের নাগরিক কোন কালেই ছিলেন না।

ভেবে দেখুন ঢাকার গৌরব বিনয়-বাদল-দীনেশের কথা। তাঁদের বড়দা, অর্থাৎ বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সর্বাধিনায়ক হেমচন্দ্র ঘোষ ছিলেন ইংরেজ সরকারের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। বাখরগঞ্জের গাভা গ্রামে হেমচন্দ্রবাবুর জন্মস্থান। ১৯৮০ সালে প্রায় ৯৬ বছর বয়সে দক্ষিণ কলকাতায় হেমবাবু দেহত্যাগ করেন। মুজিবের দেশ থেকে ব্রিটিশ প্রভুদের তাড়াতে হেমচন্দ্রের অবদান সূর্য সেনের থেকে কোনো অংশে কম নয়‌। কিন্তু মুজিবের নতুন লোকদেখানো অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলায় নজরুলের ঠাঁই হল, মুজিবের কেন একবারও মনে হলনা, দেশ থেকে বিদেশী ব্রিটিশ বিতাড়নের কর্মযজ্ঞের অন্যতম ভগীরথ হেমচন্দ্র ঘোষকেও সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসি?

 

রমেশ মজুমদার, মেঘনাদ সাহা, জগদীশ বসুর স্কুল?

যাক সে কথা। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের সেই ছেলেটার প্রসঙ্গে আসি। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল বিক্রমপুর পরগণায়। ঢাকা শহরের শাঁখারিবাজার এলাকায় এক মেসে থেকে পড়াশোনা করত কলেজিয়েট স্কুলে। সেবছর পুজোর সময় ভয়াবহ দাঙ্গা বাঁধল বিক্রমপুরে তার দেশের বাড়িতে। বিরাট বড় একান্নবর্তী পরিবারের প্রায় আটজন পুরুষ সদস্য মারা পড়লেন। বীরের মত লড়াই করে দাঙ্গাকারী প্রায় কুড়িজনের প্রাণ নেওয়ার বিনিময়ে তাঁদের এই আত্মত্যাগের কথা ‘ভীরু বাঙালি’ অপবাদের গ্লানি মাথায় করে বসে থাকা একটা জাতের ইতিহাসে কেউ লিখে যায়নি। দেশভাগের আগেই দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন পরিবারের অন্যান্য বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যেরা। দেশ ছাড়ার সময় পরনের জামাকাপড় ব্যতীত তাদের সঙ্গী ছিল শালগ্রাম শিলা, মা কালীর একটি ছোটো মূর্তি আর বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথের একটি করে বড়ো বাঁধানো ফটো।

পশ্চিমবঙ্গে এসে সেই ছাত্র রোজ সকালে উঠে রবিঠাকুরের সেই ফটোটা জড়িয়ে ধরে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ত শিয়ালদা স্টেশন সংলগ্ন ক্যাম্পের অস্থায়ী আস্তানায়। “তোমার সোনার বাংলা শ্মশান হয়ে গেল ঠাকুর…” রাতে ঘুম আসতে চাইতনা তার। ফটোটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ত কোনো এক সময়ে।ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে রবীন্দ্রজয়ন্তী কি বন্ধ হয়ে গেছে? এখনো বোধহয় পালিত হয়। তবে স্কুলের লোগোতে একটা নতুন লেখা সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে, “আল্লাহ আমাদের সহায়”…

এই স্কুলেই পড়াশোনা করে গেছেন অমর বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত, যাঁর স্বপ্নের ভারত ভাগ হয়ে গেছে কলেজিয়েট স্কুলের নতুন আদর্শ এই আল্লার নাম নিয়ে। এই স্কুলে পড়েছেন রমেশচন্দ্র মজুমদার, মেঘনাদ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসুর মত ছাত্ররা। দেশভাগের ধাক্কায় এরকম কত মেধাবী ছাত্রকে চিরতরে স্কুল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে ভারতে।

পঁচিশে বৈশাখ আসে, পঁচিশে বৈশাখ যায়। রবীন্দ্রনাথ আজও ঢাকা কলেজিয়েটের প্রভাতী প্রাঙ্গণে এসে খুঁজে বেড়ান অতীতের সোনার বাংলার স্মৃতি, সোনালি ঢাকার স্মৃতি। কিন্তু সেই সোনার বাংলা সত্যিই আর ফিরবে কি?

একটা ছোট্ট ইনফরমেশন আপনাদেরকে জানিয়ে দিই। সেদিনের সেই বংশীবাদক আজ প্রায় ৮৫ বছর বয়সের বৃদ্ধ। এখনো বেশ শক্তসমর্থ। ইডেনে কিছুদিন আগে ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচটা পর্যন্ত নিজে মাঠে গিয়ে দেখেছেন। কিন্তু স্টেডিয়ামে উপস্থিত একপাল ছাগল স্টেডিয়ামের সাউন্ড সিস্টেমে “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” গানটি ধ্বনিত হবার সময় উঠে দাঁড়ালেও সেই বৃদ্ধ নিজের চেয়ার ছেড়ে একটি মুহূর্তের জন্যেও উঠে দাঁড়াননি। অবিভক্ত ভারতের অঙ্গরাজ্য বঙ্গপ্রদেশের মধ্যে ঢাকা শহরের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাঁশির সুরে এই গানের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার শৈশবস্মৃতি মনে পড়ে যায় তাঁর। স্টেডিয়ামে উঠে দাঁড়ানো ছাগলদের প্রতি করুণায় ভরে ওঠে তাঁর মন। ব্যাটারা বুঝলনা এই গানের মর্ম। রোজ ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করেন, একদিন আবার আমার নাতিরা হারানো দেশে ফিরে গিয়ে সব অধিকার বুঝে নেবে। তারা না পারলে তাদের নাতিরা, তারাও না পারলে তাদের নাতিরা…কিন্তু একদিন সেই দিন আসবেই। আবার ফিরে আসবে সেই সোনার বাংলা।