বকেয়া ভাড়া চাওয়ার “অপরাধে” বয়স্কা বাড়িওয়ালীকে খুন করল আলম পাশা

0
756

বঙ্গদেশ ডেস্ক:- ৩৫ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়ার জন্য বাকি ছিল। আর তা চাইতে গিয়েই বিপত্তি। ভাড়াটিয়ার হাতেই খুন হতে হল হিন্দু বৃদ্ধা মালকিনকে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটকে। ৬১ বছর বয়স্কা ওই মহিলাকে খুনের ঘটনায় তিনজন‌ অপরাধীকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, নিহত মহিলার নাম রাজেশ্বরী। বৃহস্পতিবার ৪ঠা ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কোরামঙ্গলার বাসিন্দা রাজেশ্বরী তার ভাড়াটিয়া আলেম পাশা এবং তার ভাই জিলানের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় করতে পার্বতীপুরে গিয়েছিলেন। গত বছরের মার্চ মাস থেকেই পাশা তার বাড়ি ভাড়া বাবদ এক টাকাও দেয়নি। রাজেশ্বরী যখনই টাকা চাইতে গেছেন তখনই লকডাউনের কারণে ক্যাটারিং-এর ব্যবসাা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়েছে।

আর সেই কারণেই সহজ সরল রাজেশ্বরী দেবী আলম পাশাকে প্রথম তিন মাসের ভাড়া নেবেন না বলে জানান। কিন্তু তারপরেও বকেয়া অর্থ দেয়নি এই দুই ভাই। সেজন্যই সেদিন রাজেশ্বরী দেবী তাদের বাড়ি ছাড়তে বলেন।

কিন্তু টাকার কথা শুনতেই মাথায় খুন চড়ে যায় আলম পাশার।কথাকথান্তর বাড়তে শুরু করে। রড দিয়ে রাজেশ্বরী দেবীর মাথায় ও ঘাড়ে জোর করে আঘাত করে সে। তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই মহিলার।

এই ঘটনার পর পাশা তার কাকা ইব্রাহিম এবং ঠাকুমা আশরাফুন্নিসাকে পুলিশের কাছে নিজের আত্মসমর্পণের পরিকল্পনার কথা জানাতেই দুজনে এর বিরুদ্ধে পরামর্শ দেন।উল্টে দুজনেই গা ঢাকা দেওয়ার পরামর্শ দেয়। এরপর ইব্রাহিম, আলেম পাশা, তার ভাই জিলান এবং আশরাফুন্নিনিসা পলিথিন এবং বিছানার চাদরে মৃতদেহটি মুড়ে মেরিগোল্ড আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়ের কাছে একটি ড্রেনের সামনে ফেলে দেয়। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে দু’লিটার পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পর বাড়ি ফিরে ঘরে ঢুকে নিজেদের জিনিসপত্র প্যাক করে নেয় অপরাধীরা।
এদিকে রাজেশ্বরী দেবী বাড়ি না ফেরায়, তার ছেলে ড. দীপক এম আর পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে। তিনি মায়ের সন্ধানে আত্মীয় ও পরিবারের অন্যান্য লোকেদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন কিন্তু তারাও কোন‌ও খোঁজ দিতে পারে না মায়ের। রাজেশ্বরী বাড়িতে ছেলেকে জানিয়েই গিয়েছিলেন, যে তিনি পাশার কাছে বাড়ি ভাড়ার টাকা আদায় করতে যাচ্ছেন।

ঘটনার দিন রাত ১১ টা নাগাদ দীপক পাশার বাড়িতে গিয়ে মায়ের খোঁজখবর শুরু করে। কিন্তু অভিযুক্ত পাশা তারা ছেলেকে জানায়, যে রাজেশ্বরীদেবী তার কাছ থেকে ভাড়ার টাকা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। কিন্তু দীপকবাবুর সন্দেহ হ‌ওয়ায় পরের দিন সকালে ফের তার স্ত্রীকে নিয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে যান। পাশার ঘরে ঢুকে তারা সার্চ করে দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। কিন্তুু তখন অভিযুক্ত তাদের ঘরে ঢুকতে না দিয়ে দাবি করে ঘরের ভেতর ধোঁয়া হয়ে রয়েছে।

এরপরই রাজেশ্বরী দেবীর ছেলে আশেপাশের প্রতিবেশীদের থেকে জানতে পারেন পাশা পলিথিনে মোড়া একটি বড় সাইজের জিনিস অটোরিকশা করে নিয়ে কোথাও একটা গিয়েছিলেন। তখনই সন্দেহ আর‌ও দৃঢ় হয়। রাজেশ্বরীর কল রেকর্ড চেক করে দেখা যায় পার্বতীপুরার এমভি লেনে তার ফোনটি শেষবারের মতো অন ছিল। ভাড়াটেদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে পুলিশ পাশা, জিলান ও আশরাফুন্নিসাকে আটক করে। তবে জানা গিয়েছে, ইব্রাহিমকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। সে এখন‌ও ফেরার।পুলিশের তরফে জান গিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা ও প্রমাণ গায়েব করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।