বাঙ্গালী হিন্দু গণহত্যা স্মরণ দিবসে ‘দ্য বাংলাদেশ ফাইলস’-এর প্রদর্শনী যাদবপুরে

0
683

বঙ্গদেশ ডেস্ক:বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া গণহত্যার ওপর একটি প্রদর্শনীর আয়োজন হতে চলেছে কলকাতায়। তবে, শুরুটা কলকাতাতে হলেও, পরবর্তীতে ওই প্রদর্শনী রাজ্যের বিভিন্ন শহরে করার পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের। প্রথম প্রদর্শনীটি হবে আগামী রবিবার ২৭ শে মার্চ, রবিবার বেলা ১২টা থেকে। বিশেষ পোস্টার প্রদর্শনী ও বিকেলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে যাদবপুর পালবাজারে সংস্কৃতি চক্রের সভাগৃহে। সম্প্রতি বিবেক অগ্নিহোত্রী পরিচালিত‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্‌স’ ছবিটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উদ্বাস্তু বাঙ্গালীদের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। সেই আবহে আয়োজিত এই প্রদর্শনীর নাম দেওয়া হয়ছে ‘দ্য বাংলাদেশ ফাইলস্’।

ওই প্রদর্শনীর আয়োজক সংস্থা ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’। এই সংস্থার অন্যতম কর্মকর্তা মোহিত রায় বলেছেন, বাংলাদেশে কী নির্মমভাবে বাঙ্গালী হিন্দুদের উপরে অত্যাচার হয়েছে তা নিয়ে ছবি ও লেখার মাধ্যমে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। যাদবপুরে এই প্রদর্শনী শুরু হলেও আগামী দিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে করা হবে এই প্রদর্শনী। সূত্রের খবর, বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা বহু মানুষের বসবাস যেহেতু যাদবপুরে তাই প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে এখানেই। তাই উদ্বাস্তুপ্রধান এই এলাকাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।মোহিত রায় বলেছেন,এই প্রথম বার বাঙ্গালী হিন্দুর নিজভূমিতে গণহত্যার শিকার হওয়ার তথ্য নিয়ে এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। এটি বিজেপি-র কোনও উদ্যোগ নয় বলে মোহিত রায় জানিয়েছেন। তিনি একথাও বলেছেন, প্রদর্শনী আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছেন বিজেপি-র উদ্বাস্তু শাখার কর্মী-সমর্থকেরাই।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে দু’দিনের জন্য একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল ‘পশ্চিমবঙ্গের জন্য’ নামের এই সংস্থা,‌প্রদর্শনীর নাম ছিল‘বেঙ্গলি হিন্দু জেনোসাইড’।

সম্প্রতি ‘দ্যা কাশ্মীর ফাইল্‌স’ ছবি মুক্তির পর পরই কলকাতায় এই প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ‘দ্য বাংলাদেশ ফাইল্‌স’-এর লক্ষ্য কী? জবাবে মোহিত রায় বলেছেন, অতীত ইতিহাসকে ভুলে যাওয়া অন্যায়। দীর্ঘ ৫০ বছর আগে ঠিক কী ঘটেছিল তা এই প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানে না, বড়দের কাছে হয়তো বর্তমান প্রজন্মের কেউ কেউ শুনেছেন বা জেনেছেন। তবে অনেক সময়ে সামগ্রিক কাহিনী অজানা থেকে যায়। আর বর্তমান প্রজন্মের কাছে সেই অত্যাচারের ইতিহাস খুব স্পষ্টও নয়। তাই আমরা সেই বর্বরোচিত অত্যাচারের দিনগুলিকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। এটাকে ঐতিহাসিক পাঠদান বলতে পারেন। এর চেয়ে বেশি কোনও উদ্দেশ্য নেই। রাজনীতির সম্পর্ক তো নেই-ই।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২৭ মার্চকে গত দু’বছর ধরে বাঙ্গালী হিন্দু গণহত্যা স্মরণ দিবস পালন করা হয়।এর পিছনে রয়েছে করুণ ইতিহাস। রমনা কালী মন্দির ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। এই কালী মন্দির রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ঢাকার রমনা পার্কের (যার বর্তমান নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বহির্ভাগে অবস্থিত। বর্তমানে বাঙ্গলার সংস্কৃতিতে এই মন্দিরের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৭১ সালের ২৬ ও ২৭ মার্চ, এই দু দিন রমনা কালী মন্দিরের পবিত্র ভূমি ঘিরে পাকিস্তানি সেনারা যে বিভীষিকার রাজত্ব তৈরি করেছিল তার‌ হৃদয় বিদারক কাহিনী ইতিহাসের পাতায় চিরদিন লেখা থাকবে। পবিত্র তীর্থভূমি রাতারাতি পরিণত হয়েছিল বধ্যভূমিতে। রমনা কালীমন্দিরের অধ্যক্ষ স্বামী পরমানন্দ গিরি সহ সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিল প্রায় ১০০ জন নারী ও পুরুষ। তাদের নির্মমভাবে নির্বিচারে হত্যা করেছিল পাক সেনারা। এমনকি শিশুরাও রেহাই পায়নি পাক হানাদারদের হাত থেকে।

এই হত্যালীলার সময় রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম দাউ দাউ করে জ্বলেছিল। রমনা কালীমন্দিরের চূড়া ছিল ১২০ ফুট, যা বহুদূর থেকে দেখা যেত। সেটিও ধূলিসাৎ করে দেয় ওই বর্বর সেনারা।১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালানো কালীন রমনা কালী মন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রমটি ধ্বংস করে দেয়। ২৭শে মার্চ সেনারা ওই মন্দিরের ৮৫জনকে হত্যা করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাতের অন্ধকারে ২৬শে মার্চ মন্দিরে প্রবেশ করে, ঘেরাও করে রাখে, কাউকে বেরতে দেয়না। ২৭শে মার্চ রাতে কার্ফু চলাকালীন সার্চলাইট জ্বালিয়ে মন্দিরের সবাইকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে। মন্দিরের অধ্যক্ষ স্বামী পরমানন্দ গিরি তাদের মধ্যে ছিলেন।