স্বপ্ন ধরতে প্রতিমা বিসর্জনের দিন মহানন্দায় সাঁতার দেয় ওরা

0
644

বঙ্গদেশ ডেস্ক : দিন কয়েক আগেও মহানন্দার জল বাঁধের গায়ে গা ঘষছিল। এখন তা ঘাট থেকে অনেকটাই দূরে। দিকশূণ্য ভেসে যাওয়া কচুরিপানা আর ঘরছাড়া শাঁপলার দলে শালিখ, বকের মৌরসীপাট্টা। আলতা-সিঁদুর মাখা দুগ্গা ঠাকুরের মুখ মৃদু ঢেউয়ে দুলে দুলে ভেসে যায় হয়তো কৈলাশের দিকে। বাঁধের ওপর এক এক করে এসে দাঁড়ায় নয়ন, শিবু, কৃষ্ণ, শ্যামলরা।

একটুক্ষণ থেমে দেখে নেওয়া ভেসে যাওয়া মুখ গুলোকে। তারপর মওকা বুঝে ঝুপ করে ঝাঁপিয়ে পড়া মহানন্দায় ‘স্বপ্ন’ ধরতে। ঢেউ কাটিয়ে ভেসে যাওয়া কাঠামো ধরে তীরে ঠেকায় তাঁরা। প্রত্যেক বছর এভাবেই দশমীর বিসর্জনে স্বপ্নের বোধন হয় নয়ন, শিবুদের। পুরাতন মালদার সদরঘাটে নদী পাড়ের বস্তি এলাকায় নয়ন সাহানি, কৃষ্ণ মণ্ডল, শ্যামল সাহানি, শিবু সাহানিদের।

সকলেই দিন আনি দিন খাই পরিবারের প্রতিনিধি। কেউ কাজ করে ঠিকা সাফাইকর্মীর, কেউ বা দিনমজুর। তবে গত কয়েক মাসে করোনা তাদের রোজগার কেড়ে নেওয়ায় আত্মবিশ্বাসও যেন হাঁটু মুড়ে বসে।

প্রবল হৈ হট্টগোলের মাঝে বাঁধের একপাশে চুপ করে দাঁড়ায় তাঁরা। প্রবল জয়ধ্বনিতে ভাসান হয় মায়ের। স্রোতের টানে ভেসে যায় কাঠামো। ওই কাঠামোতেই তো লুকোনো থাকে স্বপ্ন। এক একটা বড় কাঠামো বিক্রি হয় সাতশো থেকে হাজার টাকায়। সাত পাঁচ না ভেবে জলে ঝাঁপায় তাঁরা। স্রোতে গা ভাসিয়ে কাঠামো ধরে তীরে ভেড়ায়। দশমী, একাদশীতে দুপুর থেকে রাত অবধি এভাবেই কাটে তাদের।

তাদেরই একজন কৃষ্ণ মণ্ডল জানালেন, ‘করোনার জন্য গত কয়েকমাস ধরে কাজ নেই। টাকা না থাকায় পুজোতেও পরিবারের সবার নতুন জামাকাপড় হয় না। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন হলে আমরা কাঠামো ধরি। এখনও পর্যন্ত সকলে মিলে সতেরোটি কাঠামো ধরেছি। বিক্রি করে যা আয় হবে, সকলে মিলে ভাগ করে নেব।’ ওই টাকা দিয়েই সাধ পূরণ হয় তাদের। ওই টাকা দিয়েই নতুন জামাকাপড়ের পাশাপাশি দু’পয়সা সঞ্চয় হয়।

কাঠামো আসলে জলে গল যাওয়া প্রতিমার কঙ্কাল। সেই কঙ্কাল থেকেই আবার নতুনের বীজ বোনে শিবু শ্যামলরা। বিসর্জন থেকেই বোধন হয় নতুনের। এই কটা দিন নাওয়া খাওয়া ভুলে আদুল গায়ে মহানন্দার জলে প্রহর গোনে তাঁরা। দূরে শোনা যায় ঢাক কাঁসরের আওয়াজ। বিসর্জনের জন্য ঘাটের দিকে এগিয়ে আসে আরেকটি দল। ধীরে ধীরে সেদিকে নিঃশব্দে এগিয়ে যায় ওরা- স্বপ্ন ধরবে বলে।