১৩-১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, যখন পশ্চিমবঙ্গ হয়েছিল পশ্চিম বাংলাদেশ: মীডিয়া কি লিখেছিল? (১)

0
1493

মোহিত রায়

সহায়তাঃ সুজিত শিকদার

 

পটভূমি

১০ ডিসেম্বর ২০১৯এ লোকসভায় পাস হয় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল। পরদিন ১১ ডিসেম্বর ২০১৯এ সেই বিল পাস হল রাজ্যসভায়। ১২ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি সেই বিলে স্বাক্ষর করলেন ও নাগরিকত্ব সংশোধন আইন চালু হল। এই আইন তৈরী হল সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক পদ্ধতি অনুসারেই। যে কোন আইন প্রণয়নের ব্যাপারে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ভিন্নমত থাকতেই পারে, গণতন্ত্রে সেটাই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রতিবাদও করা যেতে পারে। ১৩ই ডিসেম্বর থেকে ১৫ই ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদের নামে যে হিংসা নামিয়ে আনা হল এবং যারা এই কুকর্ম করলো তা আমাদের ১৯৪৬এর পাকিস্তান তৈরীর দিনগুলি স্মরণে নিয়ে এল। সেই কয়েকটি ভয়ংকর দিনের সংবাদপত্রের বিবরণ ও বিশ্লেষণ এই পুস্তিকার বিষয়। আগামী দিনগুলিতে ও ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গবাসী যাতে না ভুলে যায় সেই তিন দিন যখন পশ্চিমবঙ্গকে মিনি পাকিস্তানে পরিণত করা হয়েছিল।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন

মূল বিবরণে যাবার আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের কিছু কথা আলোচনা করা প্রয়োজনীয়। নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫কে চতুর্থবার সংশোধন করে এল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ২০১৯ এতে বলা হল৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে অথবা আশঙ্কায় সেই দেশগুলির ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন পার্শি সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে এসেছেন, যাঁদের পাসপোর্ট আইন ১৯২০ বিদেশী আইন, ১৯৪৬ থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছেতাঁরা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে গণ্য হবেন না। এজন্য তাঁদের ভারতে প্রবেশের কোন প্রমাণপত্র যেমন পাসপোর্ট, ভিসা দেখানোর প্রয়োজন নেই। এই উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ নং ধারা নিবন্ধীকরণ (Registration) অনুযায়ী বা নং ধারা স্বাভাবিক করণ (Naturalisation) অনুযায়ী আবেদন করে নাগরিকত্ব পাবেন তাঁকে ভারতে প্রবেশের পর পাঁচ বছর ভারতে থাকতে হবে

এই নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের জন্য বিলটি প্রথম লোকসভায় পেশ করা হয় ১৯ জুলাই ২০১৬তে। সেখানে আলোচনার পর সেটিকে যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠান হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন এই কমিটির সামনে তাদের বক্তব্য রাখে। ভারতীয় জনতা পার্টি, পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু সেলের পক্ষে ডঃ মোহিত রায় ও সুজিত সিকদার এই কমিটির সামনে বক্তব্য পেশ করেন। যৌথ সংসদীয় কমিটি তাদের মত ৭ জানুয়ারী ২০১৯এ লোকসভায় জানায় এবং ৮ জানুয়ারী ২০১৯এ লোকসভায় বিলটি পেশ করা হয় এবং বিলটি পাস হয়। এর কিছুদিন পর ১৬তম লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ও রাজ্যসভায় বিল পেশের সময় পাওয়া যায় নি।

এরপর ২০১৯এর মে মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতীয় জনতা পার্টি ও তার সহযোগী দলের জোট আগের নির্বাচনের চেয়ে আরো বেশী বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে। মনে রাখতে হবে ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। ভারতের জনসাধারণ ভারতীয় জনতা পার্টিকে আগের থেকেও বেশী আসনে, একক ও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছে তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়নের জন্য। নবনির্বাচিত ১৭তম লোকসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ ৯ই ডিসেম্বর ২০১৯এ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করেন। লোকসভায় ১০ ডিসেম্বর ২০১৯এ এই বিল ৩১১ বনাম ৮০ ভোটে পাশ হয়। পরদিন ১১ ডিসেম্বর ২০১৯এ রাজ্যসভায় দীর্ঘ বিতর্কের পর গভীর রাতে ১২৫ – ১০৫ ভোটে বিল পাশ হয়। ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোভিন্দ এই বিলে স্বাক্ষর করলে বিলটি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে পরিণত হয়।

এই নাতিদীর্ঘ প্রস্তাবনাটির কারণ যে

) আইনটির সংশোধনীর তৈরীর জন্য আলাপআলোচনাবিতর্ক চলেছে তিন বছর ধরে,

) সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে,

) এই সময়ের মধ্যে দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচন হয়েছে এবং এই আইনের প্রস্তাবক ভারতীয় জনতা পার্টিকে ভারতের জনসাধারণ বিপুল ও আগের থেকে বেশী সমর্থন দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করতে পুনঃনির্বাচিত করেছে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ২০১৯ কাদের জন্য ?

আপনি বা আপনার পরিবার যদি পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান থেকে এসে থাকেন তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ২০১৯ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন আইনটির সুফল প্রায় ৯০ শতাংশ পাবেন বাংলাদেশ থেকে আসা পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী হিন্দু উদ্বাস্তুরা। ১৯৭১এর আগে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুরা উদ্বাস্তু স্বীকৃতি, নাগরিকত্ব, সরকারি সাহায্য পুনর্বাসন (সীমিত হলেও) পেয়েছেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের সময়ে ভারত সরকার একটি সারকুলার জারী করে (চিঠি নং – ২৬০১১/১৬/৭১১০, তাং২৯/১১/১৯৭১) পূর্ববঙ্গ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব আবেদন নেওয়া বন্ধ করেফলে ১৯৭২এর পর ভারতে আসা ১ কোটি বাংলাদেশী হিন্দু উদ্বাস্তুরা নাগরিক হতে পারে নি। এখন সে সমস্যা মিটে গেল। এই আইনের সঙ্গে ভারতের কোন মুসলমানের কোন সম্পর্কই নেই।

কিন্তু হিন্দু উদ্বাস্তুদের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ও পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে অন্ততঃ দেড় কোটি বাংলাদেশী মুসলমানরাও এরা অনুপ্রবেশকারী। পশ্চিমবঙ্গ গঠিত হয়েছিল বাংলার হিন্দুপ্রধান অঞ্চল নিয়ে, পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বের ভিত্তিযথেষ্ট হিন্দু গরিষ্ঠতা, হিন্দুদের নিরাপত্তা এবং ভারতীয় ধর্ম সংস্কৃতির অবাধ চর্চাবাংলাদেশী অনুপ্রবেশ ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনসংখ্যা ১৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশের বেশী করে যথেষ্ট হিন্দু গরিষ্ঠতার ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিয়েছেএই মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের ভোটের, পেশী ও অস্ত্রের শক্তির জোরের উপর অবলম্বন করে আগে সিপিএম ও এখন তৃণমূল কংগ্রেস নষ্ট করেছে পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয়দের নিরাপত্তা – আগুন জ্বলেছে ধুলাগড় থেকে কালিয়াচকে দুর্গা পূজা, সরস্বতী পূজার উপর আক্রমণ, লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিতাড়ন ভারতীয় ধর্ম সংস্কৃতির অবাধ চর্চাকে করেছে বিঘ্নিতএইসব দলগুলি বাংলাদেশী মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ করবার ইসলামি পরিকল্পনায় মদত দিচ্ছেবাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু (কিছু বৌদ্ধ) উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব পেলে এই অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা সহজ হবে এবং আইনী পথে তাদের ভূয়া নাগরিকত্ব তথা সুযোগসুবিধা পাওয়ার পথ বন্ধ করে পশ্চিমবঙ্গের ধর্মীয় জনসংখ্যায় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা যাবে। এই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে নাগরিকত্ব আইনে আগে থেকেই রয়েছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ বা National Registration of Citizens (এন আর সি)-র ব্যবস্থা।

বার আমরা দেখবো পশ্চিমবঙ্গে এই আইন পাশের ও এন আর সির বিরোধিতা কারা করলো, কিভাবে করলো, কারা তাদের সাহায্য করলো ইত্যাদি।

১২ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

১১ ডিসেম্বর রাতে রাজ্যসভাতে নাগরিকত্ব বিল পাশ হবার পর কিছু জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল হয়। পরদিন ১২ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় নাগরিকত্ব বিল বিরোধীরা প্রতিবাদ করে। বর্তমান পত্রিকা জানাচ্ছে যে “বোলপুররাজগ্রা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ পুলিসের অনুরোধে সেখানে প্রতীকী বিল পুড়িয়ে এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ শেষ হয় এনআরসি বিরোধীরা এদিন মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের বরজ থেকে জাতীয় সড়ক ধরে মিছিল করেন ওমরপুরে গিয়ে শুরু করেন রাস্তা অবরোধ পোড়ানো হয় অমিত শাহের কুশপুতুল সৃষ্টি হয় যানজটের এরপর সেই মিছিল যায় দাদাঠাকুর মোড়ে সেখানে শুরু হয় বিক্ষোভ এদিন বিকেলে বিক্ষোভ দেখানো হয় বেলডাঙা সালারে ……. মেদিনীপুর শহরে মিছিল বাঁকুড়ার সোনামুখীতে হয় সভা এনআরসি সংশোধনী ফায়দা তুলতে মরিয়া গেরুয়া শিবিরও নামে ময়দানে বিলকেঐতিহাসিকবিভিন্ন এলাকার বিজেপিবিজয় মিছিলবের করে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি, তালডাংড়া, নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, কল্যাণীতেও(বর্তমান – ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০)

লক্ষণীয় যে ১২ই ডিসেম্বরের এই প্রতিবাদ পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ রাজনৈতিক প্রতিবাদের মতনই ছিল। কিছু কুশপুত্তলিকা পোড়ানো, মিছিল – যেমন প্রতিবাদ হয়। পাশাপাশি বিজেপিও বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র ‘এই সময়’ এ এই প্রতিবাদ সংক্রান্ত কোন সংবাদই ছিল না। ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার এমন কিছু ঘটে নি যাতে পরবর্তী কোন বিপদের সঙ্কেত পাওয়া যায়।

১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ শুক্রবার, জুম্মাবার

দিনটা ছিল শুক্রবার বা জুম্মাবার। মুসলিম সম্প্রদায়ের সাপ্তাহিক ধর্মীয় দিন। সাধারণতঃ এই দিন দুপুরের (জোহরের) নামাজের পর মসজিদের ধর্মীয় নেতারা কিছু ভাষণ দেন একে বলে জুমা খুৎবা বা জুমা এ খুৎবা। সেদিন মসজিদে মসজিদে কি বলা হয়েছিল তা আমরা জানি না, কিন্তু দুপুরের নামাজের পরই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শুরু হল হিংসা ও বিশৃঙ্খলার ঘটনাবলী।

টাইমস অফ ইন্ডিয়া ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, জানাচ্ছে বেলা ২টো নাগাদ কলকাতার কেন্দ্রে টিপু সুলতান মসজিদ থেকে মুসলমানদের একটি মিছিল বেরোয় যা সেন্ট্রাল এভেনিউ দিয়ে এগিয়ে মধ্য কলকাতায় যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তিনটে নাগাদ মুসলমানদের মিছিল বেরোয় পার্ক সারকাস অঞ্চলে, এরপর আরো রাতে আনোয়ার শাহ রোডে ও নারকেলবাগানে। রাজাবাজারেও পথ অবরোধ হয়।

কিন্তু অনেক বেশী হিংসাত্মক ঘটনা শুরু হয় কলকাতার বাইরে, মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে। উলুবেড়িয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গাতে আক্রমণ শুরু হয় রেল স্টেশনে।

উলুবেড়িয়াতে রেল স্টেশনে কয়েকশ মুসলমান জনতা বেলা ২টো নাগাদ রেল লাইন অবরোধ করে। তখন উলুবেড়িয়া স্টেশনে হাওড়াচেন্নাই মেল ট্রেনটি আটকে পড়ে। এরপর এই মারমুখী মুসলমান জনতা ট্রেনের উপর কাশ্মীরি কায়দায় পাথর ছোঁড়া শুরু করে। ট্রেনের কামরার কাঁচ ভাঙ্গতে থাকে। একের পর এক বিভিন্ন দুরপাল্লার ট্রেনগুলি বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে। অনেক লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়।

আজকাল সংবাদপত্রের বিবরণঃ “অবরোধকারীরা উলুবেড়িয়া স্টেশনে এবং পশ্চিম কেবিনে ভাঙচুর চালান রেল পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় জনতার ছোড়া পাথরে রেল পুলিশের এক কর্মী আহত হন তার পরেও দফায় দফায় জনতা ট্রেনটিকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে হামলাকারীদের দখলে চলে যায় পুরো স্টেশন চত্বর রেল লাইনের উপর টায়ার জ্বালানো হয়

ওই ট্রেনের এস কামরায় সপরিবার ছিলেন অমিতাভ সেন নামে এক যাত্রী তিনি ব্রহ্মপুর যাচ্ছিলেন তাঁর কথায়, ‘সাড়ে ৩টে নাগাদ ট্রেন যখন উলুবেড়িয়া পার হচ্ছে, তখনই একদল মানুষ ট্রেনে পাথর ছুড়তে শুরু করে জানালা বন্ধ করে দিই বৃষ্টির মতো পাথর পড়ছিল’।

দক্ষিণপূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “বিক্ষোভকারীরা উলুবেড়িয়া স্টেশনে ঢুকে অফিসের ৮টি কম্পিউটার, নগদ লক্ষ টাকা এবং সমস্ত ছাপা টিকিট লুট করে করমন্ডল এক্সপ্রেসের একটি নতুন রেক ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে এর জেরে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়েছেঅবরোধকারীদের কোনও নেতা নাথাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি দাবি করেছেন জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা (আজকাল ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯)

এই সময় পত্রিকা জানাচ্ছে – “শুক্রবারের প্রতিবাদ সবচেয়ে আগ্রাসী ছিল উলুবেড়িয়ায় নিম্বর জাতীয় সড়ক (বম্বে রোড), রেললাইন এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় অবরোধে এলাকা অশান্ত হয়ে ওঠে কোনও ব্যানার ছাড়া একদল লোক এনআরসি এবং ক্যাব বিরোধী পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তার পরে অবরোধ করেন সড়ক রেলপথ ফলে উলুবেড়িয়া মহাকুমার বিভিন্ন জায়গা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে দুপুরের পর থেকে দুপুর পৌনে দুটো থেকে বিকেল সওয়া চারটে পর্যন্ত বম্বে রোড অবরুদ্ধ থাকায় হাওড়া কোলাঘাটের দিকে রাস্তায় অন্তত আট কিলোমিটার পর্যন্ত সব গাড়ি আটকে যায় আটকে পড়ে ডজনখানেক অ্যাম্বুল্যান্স দমকলের দুটি গাড়িও

উলুবেড়িয়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় অবরোধকারীরা রেললাইনের উপরে স্লিপার ফেলে জাতীয় পতাকা টাঙিয়ে দেন উলুবেড়িয়া স্টেশনে দিঘাগামী তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় ভাঙচুর করা হয় নিম্বর প্ল্যাটফর্মে আরপিএফের কিয়স্ক, রিজার্ভেশন কাউন্টার কংক্রিটের বেঞ্চ অবরোধকারীদের ছোড়া পাথরে উলুবেড়িয়া জিআরপি কনস্টেবল রিন্টু পাত্র এবং তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেসের চালক আর বৈরাগী এবং এক মালগাড়ির চালক আহত হন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ অবরোধ উঠলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি রাত পর্যন্ত (এই সময়, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯)

উপরের বিবরণে দুটি বিষয় লক্ষ্য করবেন

এক, এই সব প্রতিবাদে কোন দল বা সংগঠনের পতাকা নেই। তাহলে এই জনতা কোথা থেকে এল।

দুই একটি ভয়ংকর সূচনা, জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে জাতীয় সম্পত্তি ধ্বংস। এ বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করব।

হিংসাত্মক আক্রমণের অন্য কেন্দ্র ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ জেলা। এই বিক্ষোভ কোন রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়, ধর্মীয় জিহাদ। সব জায়গাতেই দুপুরের জুম্মার নমাজের পর পথে নেমেছে উন্মত্ত জনতা। স্টেটসম্যান পত্রিকা (১৪ ডিসেম্বর) লিখছে – “Worst hit by the agitation was, Beldanga area where the protesters raided the Beldanga railway station, set fire at station premises and allegedly attacked the security personnel of Indian Railways. A number of personnel belonging to railway protection force were injured when they made an attedmpt to put up some resistance against violent mob streaming into the platform. Offices of the railways at Beldanga station were allegedly vandalised, sources informed. The mob also ransacked cars of security personnel, it was learnt.

The NH-34 at Barua crossing of Beldanga town witnessed rounds of blockades since yesterday. The protest on the national highway today spilled over to Beldanga railway stations. The state police personnel attracted wrath of the agitators when the local police were called in to serve as backup force of the beleaguered RPF on duty, said eyewitnesses. Such was the ferocity of the mob violence that the passengers as well as railway officials on duty at Beldanga railway station were found running away to save their lives. The agitators then moved on to the Beldanga police station and clashed with the police personnel there. The police allegedly resorted to lathicharge and blank firing to scare away the protesters who pelted brickbats at the security forces, sources said.

Similar protests broke out at Behrampore, Raghunathganj and other areas of Murshidabad district. Protest flared up at the hospital crossing at Sagardighi. The protesters burnt PM’s effigies and copies of CAB. “We do not want CAB. Why should we prove anew that we are Indian citizens? We would like to warn the union government of the severe consequences of NRC and CAB. The CAB must be revoked,” said a Muslim cleric who led a protest rally at Raghunathganj”. (The Statesman, 14 December, 2019).

এটি আমাদের কথা নয়, একটি সংবাদপত্রের শিরোনাম । শুক্রবার সারাদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে এরকম ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল কোন সংগঠন? কাদের পরিকল্পনা ছিল এই রেল স্টেশনে হামলার? কেন কোথাও কোন সংগঠনের নাম ছিল না? কোন সংগঠন বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আহ্বান ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রায় একই সময়ে শয়ে শয়ে লোক জমায়েত করে একই ধরণের হিংসাত্মক আন্দোলন কি সম্ভব? এটি কি হঠাত আবেগপ্রসূত কিছু মানুষের একদিনের কিছু হটকারিতা?

না, তা নয়। তাহলে তা একদিনেই শেষ হয়ে যেত। সেজন্যই এই জেহাদী আক্রমণ চললো পরের দিনও।

(ক্রমশঃ)

সৌজন্যে রাজ্য উদ্বাস্তু সেল, ভারতীয় জনতা পার্টি, পশ্চিমবঙ্গ