স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বর্ষপূর্তি স্মরণে শুরু হল বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেস

0
1173

শিকাগো থেকে আমাদের প্রতিনিধি শ্রীমতি নেহা শ্রীবাস্তবের প্রেরিত রিপোর্টের ভিত্তিতে আমাদের নিবেদন:-

পবিত্রা শ্রীনিবাসনের নৃত্য

আজ থেকে শিকাগো নগরীর লোম্বার্ডে শুরু হল বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেস। স্বামীজীর চিকাগো বক্তৃতাকে স্মরণ করে। ভারত সহ পৃথিবীর ৬০টি দেশ থেকে এসেছেন প্রতিনিধিরা। শিকাগো সরগরম। ইলিনয় স্টেটের সর্বেসর্বা গভর্নর ব্রুস্  রৌনার ইতিমধ্যে শুভকামনা জানিয়ে বার্তা জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হল এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বামীজীকে স্মরণ করে। স্বামীজীর পিতা-মাতা-গুরু কেউই সে স্মরণের সময় বাদ ছিলেন না। তারপর স্বামী নরসমুদ্রদাস বৈদিক শান্তিমন্ত্র উচ্চারণ করলেন।  শ্রীমতি পবিত্রা শ্রীনিবাসন পরিবেশন করলেন ভারতীয় নৃত্যকলার সৌন্দর্য, সঙ্গে ছিল কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সুরের মূর্ছনা। রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং রবি ঠাকুরের কবিতাপাঠের সাথে পবিত্রার নৃত্যের কোলাজকে অসাধারণ বললেও কম বলা যায়। অনুষ্ঠানে আগত বাঙালীরা তখন গর্বিত।

১২৫ বছর আগে সিমলে পাড়ার দামাল ছেলে নরেন দত্ত পা রেখেছিলেন শিকাগোতে। তার আগে বষ্টনে দর্শনের অধ্যাপক জন রাইটের সাথে তাঁর আলাপ হয়। রাইট সাহেব বলেছিলেন যে এই ব্যক্তিটির কাছে পরিচয়পত্র চাওয়া মানে সূর্যের কাছে বলা, আপনার কি অধিকার আছে আলো দেওয়ার! কিন্তু ট্রেনে করে শিকাগো আসার পথে স্বামীজী রাইট সাহেবের লেখা চিঠি হারিয়ে ফেলেন।

সেপ্টেম্বরের ঠাণ্ডা উপযুক্ত পরিচ্ছদের অভাবে স্বামীজীর কাছে তীব্র হয়ে উঠছিল। বিদেশে। একা। অর্থহীন। বন্ধুহীন। নরেন তাঁর মা কালীর বলে যুঝে যাচ্ছিলেন। একদিন তো প্যাকিং বাক্সে রাত কাটালেন। শ্রান্ত ক্লান্ত নরেন উপস্থিত হেল পরিবারের বাড়ীর সামনের সিঁড়িতে। এমন সময় তাঁর পরিচ্ছদ দেখে কৌতুহলে বেরিয়ে এলেন কুমারী হেল। তাঁকে বললেন, আপনি কি ধর্মসম্মেলনে এসেছেন? তাঁরাই যত্ন করে সব ব্যবস্থা করে দিলেন স্বামীজীর ধর্মসম্মেলনে ভাষণ দেবার।

১১ই সেপ্টেম্বর ১৮৯৩। নরেন্দ্রনাথ মা সরস্বতীকে স্মরণ করে বললেন, “Sisters and Brothers of America.” এই মানবপ্রেমী আবেদন এনে দিল তাঁকে জনতার মনের মণিকোঠায়। প্রথম দিন বক্তৃতায় জানালেন হিন্দুধর্মের সহিষ্ণুতার কথা, অপরের মতের প্রতি শ্রদ্ধার কথা। ২৭ শে সেপ্টেম্বর অবধি যে ক’দিন ধর্মমহাসভা চলল, সে ক’দিন তিনি হয়ে রইলেন আকর্ষণের শিরোমণি।

মহাসভার আয়োজন করেছিল খ্রীষ্টান মিশনারীরা। মূল উদ্দেশ্য ছিল অন্য ধর্মের চেয়ে আপন ধর্মমতকে শ্রেষ্ঠতর হিসেবে প্রতিপন্ন করা। আব্রাহামীয় মতবাদ কখনই কোন প্রকৃতি-উপাসক মতকে বিতর্কে হারাতে পারেনি। আপন মতকে রক্ষা করতে তাঁদের আনতে হয় Blasphemy Law যাতে যুক্তিবাদের আক্রমণ থেকে নিজেদের তাঁরা শক্তির জোরে রক্ষা করতে পারেন। প্রকৃতি উপাসক হিন্দুদের এ রকম আইন লাগে না। যুক্তি এবং মনীষার দিক দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের সাথে পেরে উঠতে পারলেন না তাঁরা। আমেরিকায় বিবেকানন্দ আনলেন আলোড়ন। মিশনারীদের তহবিলে মানুষ দান করা থেকে বিরত হতে লাগল বিবেকানন্দকে দেখে।

সম্মেলনে (বাঁ থেকে ডানে) প্রসিদ্ধ লেখক শ্রী আমিশ ত্রিপাঠী, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক শ্রী বিবেক অগ্নিহোত্রী, আমাদের প্রতিনিধি শ্রীমতি নেহা শ্রীবাস্তব এবং  বেঙ্গল বী পত্রিকার সম্পাদিকা শ্রীমতি সোমাঞ্জনা চ্যাটার্জি।

এবারের বিশ্ব হিন্দু সম্মেলনে আছে সাতটি পৃথক ধারা বা ট্র্যাক। অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রচারমাধ্যম, সংগঠন, নারী, যুবা এবং রাজনীতি। যোগ দিতে এসেছেন এবং আসছেন সহস্র সহস্র উৎসাহী হিন্দুরা।  সম্মেলন চলবে আগামী তিনদিন। বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে আছেন অভিনেতা শ্রী অনুপম খের, বাগ্মী শ্রী রাজীব মালহোত্রা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান শ্রী মোহন ভাগবত, ভারত সেবাশ্রম সংঘের স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ, বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশনের শ্রী যুধাজিৎ সেন মজুমদার প্রমুখ।