তফসিলী উপজাতিসমূহ: এরা কারা এবং কীভাবে এদের মুখ্যধারায় নিয়ে আসা যায়?

ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতেবনবাসীদের ঐতিহাসিক পৃথকীকরণ এই দুইয়ের মধ্যে ক্রমাগত বৃদ্ধিমান একটি উন্নয়ন ফাঁকের দিকে মোড় নিয়েছে, সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য যা অবশ্যই সেতুবন্ধ হওয়া উচিত

মাওবাদী সন্ত্রাসবাদ অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির দিকে চটজলদি একটি নজর বোলালে বোঝা যায় যে কেরালার তিনটি জেলা বাদে ৯০ টি প্রকোপগ্রস্ত জেলার ৮৭ টিই পশুপতি থেকে তিরুপতি পর্যন্ত একই নির্দিষ্ট সীমানার সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত যেটি রক্তিম ভূখন্ড (রেড করিডর) নামে আখ্যায়িত। ঘটনাক্রমে, রেড করিডর “রামায়ণ করিডরের” একটি প্রধান অংশ যেহেতু রামায়ণের বহু ঘটনা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায় এমন স্থানের নাম এবং ভৌগলিক বর্ণনাসহ এখানেই ঘটিত হয়েছে বলে বর্ণিত হয়েছে। একইভাবে, মহাভারতেও অর্জুনের সাথে নাগা রাজকন্যা উলুপী এবং মণিপুরের রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার বিবাহ সম্পর্ক, বিবিধ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীতে তাদের ভূমিকা এবং যথাক্রমে তাদের পুত্রদ্বয় ইরাবান এবং বভ্রূবাহনের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পাণ্ডবদের পক্ষে যোগদানের বিস্তৃত বর্ণনা মেলে। সেহেতু এই সমস্ত অঞ্চল এবং লোকজন বহুযুগ ধরে হিন্দু সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

জঙ্গলময় এবং পাহাড়াবৃত এই ভূখন্ডের মূল বৈশিষ্ট্য হল বনবাসী এবং অনগ্রসরতার উচ্চ অনুপাত। চিরাচরিত ঔপনিবেশিক ধাঁচে প্রশিক্ষিত একদল বুদ্ধিজীবী জাতিপরিচয় এবং বনবাসীদের অন্তরণ নিয়ে ভারত দেশ  এবং সমাজের একটি নেতিবাচক চিত্র অঙ্কন করে থাকেন।

যদিও, সূক্ষ্মতর একটি পর্যবেক্ষণ এই সত্য উদঘাটন করে যে সাধারণ সমাজের থেকে এই অঞ্চলগুলির পৃথকীকরণের পটভূমি হল সাংবিধানিক, আইনি এবং প্রশাসনিক কিছু বাধ্যবাধকতা। যদি কেউ মুখ্য সমাজে বসবাসকারী তফসিলী উপজাতিদের সাথে এই অঞ্চলগুলির অভ্যন্তরের তফসিলী উপজাতিদের একটি আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক তুলনা করেন তাহলে তিনি দেখবেন যে অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের অবস্থা তুলনামূকভাবে খারাপ ও অনুন্নত। যখন দুই দলই তফসিলী উপজাতি, তখন এই বৈসাদৃশ্য এত মাত্রাছাড়া কী করে হয়?

এই নিবন্ধে আমি কেবলমাত্র ভারতীয় মূল ভূখন্ডের তফসিলী উপজাতি সম্পর্কে তর্ক পেশ করব এবং পরবর্তী নিবন্ধে উত্তরপূর্ব ভারতের জাতিগুলি সম্পর্কে বলব।

 

ঐতিহাসিক পটভূমি

ঈশাবাস্যম্ ইদম্ সর্বম্ হল ঈশাবাস্য উপনিষদের একটি আদর্শ মহাবাক্য। ঈশ্বর সর্বপরিব্যাপক এই হিন্দু দর্শন নিহিত। প্রকৃতির অন্তর্নিহিত একতার এই বোধ হিন্দুদের প্রকৃতি থেকে ঈশ্বরের পৃথকীকরণকে দৃঢ়ভাবে নাকচ করতে বাধ্য করে। সেহেতু, পাহাড় এবং জঙ্গল সর্বদাই আমাদের ঋষি, মুনি ও সাধকদের আশ্রয়স্থল হয়ে এসেছে। জ্ঞান এবং শিক্ষার প্রাচীন পীঠ এবং আমাদের পবিত্র জ্ঞান ও সাহিত্যের অনেকাংশের উৎপত্তিস্থল গুরুকুলগুলি জঙ্গলের মধ্যে বা নিকটে অবস্থিত হত। বানপ্রস্থ, যা প্রথাগত হিন্দু জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রম বা পর্যায়, আসলে স্ব-প্রতীয়মান ভাবেই জঙ্গলে অবসর জীবন যাপনকে বোঝায়, কারণ, জীবনের সায়াহ্নকালে হিন্দুদের প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার আকুল বাসনা থাকে।

বানর (বন: জঙ্গল; নর:মানুষ) বলতে জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষদের বোঝায়। বোঝার ভুলভ্রান্তির কারণে এদের বাঁদর, ভাল্লুক বা অন্য জন্তু বলে মনে করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন আধুনিক বিশেষ সশস্ত্রবাহিনী (স্পেশ্যাল ফোর্স), যেমন গ্রে হাউন্ডস, জাগুয়ারস, চিতাস, কোবরাস, গরুড়স এবং ব্ল্যাক ক্যাটস ইত্যাদির মতই এদেরও কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের নিজস্ব প্রতীকের রূপেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। বিস্মৃত সময়কাল থেকেই আমাদের সভ্যতার দেশে আমাদের সমস্ত পবিত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্যে এইসব প্রতীক উপাসক জনগণের ধার্মিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ভূমিকার কথা সবিস্তারে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত বা ভাগবতমের মত আমাদের ভিত্তিগত ধর্মগ্রন্থ থেকে বনবাসীদের অসামান্য ভূমিকা বা বনজীবনের কথা বাদ দেওয়া অসম্ভব, এবং এই সব গ্রন্থেই আজও বিশ্বাসযোগ্য গল্প খুঁজে পাওয়া যায়।

যখন অবিরাম ইসলামিক আক্রমণ অসহ্য হয়ে উঠেছিল, তখন অবরুদ্ধ হিন্দুদের আশ্রয় দিয়েছিল এই জঙ্গল আর পর্বতই। কে এস লাল তাঁর দ্য লিগাসি অফ মুসলিম রুল ইন ইন্ডিয়ায় নথিবদ্ধ করেছেন যে মুসলিম রাজত্বকালে বন জন-সংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছিল। সুস্পষ্ট ধারণার জন্য আমি সবিস্তারে তাঁর উদ্ধৃতি উল্লেখ করলাম:

“আমির খসরুর গ্রন্থ অনুযায়ী, যখনই সেনাবাহিনী কুচকাওয়াজে নামত, প্রতিটি বসবাসের স্থান জনশূন্য হয়ে যেত। যখন সেনাবাহিনী সেখানে (ওয়ারাঙ্গল, দাক্ষিণাত্য) পৌঁছায়, হিন্দু বসবাসকারীরা নিজেদের পাহাড় ও জঙ্গলে লুকিয়ে ফেলেন।”

“…পরাজিত রাজন্যবর্গ থেকে অসহায় কৃষিজীবী সকলেই জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলেন।”

“যারা জঙ্গলে স্থান নিয়েছিলেন তাঁরা বুনো ফল, গাছের মূল এবং যখন যেমন পাওয়া গেছে তখন তেমন সবচেয়ে নিকৃষ্টমানের শস্য খেয়েও সেখানেই বাস করেছিলেন কিন্তু নিজেদের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রেখেছিলেন। কিন্তু সময়চক্রের আবর্তে একজন কৃষক একজন উপজাতি মানুষ এবং একজন উপজাতি মানুষ একটি জন্তু হয়ে ওঠে।”

“কৃষিজীবীদের দারিদ্র্যতার পেছনে থাকা সকল ধারণা, উৎসাহ এবং কার্যকলাপের মধ্যে কেবলমাত্র গ্রাসাচ্ছাদন ব্যতীত কিছুই বাকি না রাখার ধারণাটি সবচেয়ে নির্মম।” “এবং কৃষিকাজ চালিয়ে যাওয়া ক্ষতিকর দেখে এবং শাসনব্যবস্থার তাদের প্রতি ব্যবহার অসহ্য হয়ে ওঠায় তারা কৃষিজমি ফেলে রেখে জঙ্গলে পালিয়ে যায় যেখান থেকে তারা একটি সুসংবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলে।”

“এমনকী বাবর, যিনি সর্বদাই একজন উৎসাহী পর্যবেক্ষক ছিলেন, ভারতে কৃষকদের প্রায়শই উপজাতিদের স্তরে নেমে আসা তারও চোখ এড়ায়নি। নিজের স্মৃতিচারণায় (বাবর নামা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৮) তিনি লিখেছেন যে আমাদের দেশগুলিতে বনজঙ্গলে বসবাসকারীদের ( অর্থাৎ যাযাবর) উপজাতি নামকরণ করা হত; এখানে (অর্থাৎ ভারতে) কৃষিযোগ্য জমির মালিক এবং গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দারা উপজাতি নাম পান।”

“সংক্ষেপে বললে, তুর্কি-মুঘল আক্রমণকারীদের প্রবাহ এবং তাদের শাসনব্যবস্থার নীতিসমূহ বহু সাথী কৃষিজীবীকে জঙ্গলের উপজাতিতে রূপান্তরিত করে দেয়। অসংখ্য পরাজিত রাজা এবং নিপীড়িত জমিদার সুরক্ষার কারণে জঙ্গলে এবং প্রত্যন্ত গড়গুলিতে আত্মগোপন করেন। তাঁরা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন এবং তাঁদের নেস্ত- ও – নাবুদ  ( মূল ও শাখা সহ ধ্বংস করে দেওয়া) করে দেওয়ার নীতির কারণে তাঁরা তফসিলী জাতি/ উপজাতি/ অনগ্রসর জাতির স্তরে অবনমিত হন। …এইভাবেই বর্তমান কালে পরিচিত তফসিলী জাতি, তফসিলী উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর জাতির সংখ্যা ফুলে ফেঁপে উঠে বৃদ্ধি পায়।”

“মধ্যযুগে, বছরের পর বছর এবং শতাব্দীর নিপীড়নে, তাঁরা জঙ্গলের গ্রামগুলিতে উন্নত কুঁড়েঘরে প্রায় বুনো জন্তুর মত সমাজ থেকে বিচ্যুত এবং একাকী হয়ে যন্ত্রণা ভোগ করে এবং যুঝতে যুঝতে জীবন অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু জঙ্গলের গ্রামে মাথা গোঁজার ফলে তাঁরা নিজেদের স্বাধীনতা, ধর্ম এবং সংস্কৃতি সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজও বিভিন্ন রাজ্যে আখাড়ায় সুরক্ষিত থাকা তাঁদের যুদ্ধকলা অভ্যাস করা হয়।”

পশ্চিম এশীয় দেশগুলিতে এই ঘটনা ঘটিত হতে দেখা যায়নি। সেখানে, বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত মরুভূমির মাঝে, অগ্রসর মুসলিম সেনাবাহিনীর দ্বারা জনসাধারণ নিজেদের ধর্মান্তরিত হওয়া আটকাতে পারেনি। সেখানে কোন জঙ্গল ছিল না যার মধ্যে তারা পালিয়ে বাঁচতে পারে, আত্মগোপন করতে পারে বা একটি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। ফলস্বরূপ, তারা সকলেই মুসলিম হয়ে যায়।”

মুসলিম শাসন যা অর্জন করতে পারেনি সেই লাভ করেছিল ব্রিটিশরা, তাদের হিন্দু সমাজের “বিভাজন এবং ধ্বংস” নামক অসৎ নীতির মাধ্যমে। কে এস লালের বক্তব্য পুনরায় উদ্ধৃত করা হল:

“…প্রতিরোধের দুর্দমনীয় মানসিকতা তাদের উত্তম যোদ্ধায় পরিণত করেছিল। ক্রমাগত যুদ্ধ করার ফলে তারা স্বাস্থ্যও পুনরুদ্ধার করে ফেলেছিল, যা জঙ্গলে ভালো খাদ্যের অভাবের ক্ষতিপূরণ ছিল বলা যায়। তাদের যোদ্ধা মানসিকতার কারণে ব্রিটিশদের কাছে তারা ঠগ, ডাকাত এবং দস্যু হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু ব্রিটিশ এবং ইউরোপিয়ান উভয়েই এই গরীব বনবাসীদের নিয়ে নৃতাত্বিক এবং সমাজতাত্বিক গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নামের অন্বেষণে ব্রিটিশ আধিকারিকরা পরপর কয়েকটি জনগণনায় এদের বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেন, যেমন, অ্যাবরিজিনালস (১৮৮১, মানে আদিম জনগণ), অ্যানিমিস্ট (১৮৯১-১৯১১, মানে সর্বপ্রাণবাদী) এবং উপজাতি ধর্মসমূহের অনুগামী (১৯২১-১৯৩১)।”

এলিমেন্টারি অ্যাসপেক্টস অফ পেসান্ট ইনসার্জেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া গ্রন্থে রণজিৎ গুহ এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন যে ব্রিটিশবিরোধী প্রতিরোধ বিভিন্ন রূপ লাভ করেছিল এবং বিস্তীর্ণ অংশে ছড়িয়ে পড়া এই প্রতিরোধ স্থানীয় বিদ্রোহ থেকে আরম্ভ করে যুদ্ধসম অভিযান অবধি নানান মাত্রায় উপস্থিত ছিল, এবং এগুলির উনিশ শতকের শেষ অবধি অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনকালের প্রথম তিনটি ত্রৈমাসিক কাল জুড়ে দেশব্যাপী প্রকোপ ছিল। তিনি গ্রাম্য সম্প্রদায়গুলির দ্বারা সংঘটিত প্রায় ১১০ টি বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহের কথা উল্লেখ করেছেন।

অন্ধ্র/তামিল দেশে পলিগার, মারাঠা, শিখ এবং অন্যান্য দের দমন করার পর ব্রিটিশরা বনবাসীদের এবং ভ্রাম্যমান যাযাবরদের তরফ থেকে সবচেয়ে বেশি অপসবিরোধী মনোভাবাসম্পন্ন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ট্রাইবাল রিভল্টস গ্রন্থে ভি রাঘাভাইয়া ভারতে ২০০ বছরব্যাপী ব্রিটিশ শাসনকালে ঘটিত ৭০ টি মুখ্য উপজাতি বিদ্রোহের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন– সেগুলির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য নাম হল ১৭৭২ সালে মাল পাহাড়িয়াদের বিদ্রোহ, ১৮১৩ সালে রাম্পা অঞ্চলের বিদ্রোহ, ১৮১৮-৩১ ব্যাপী ভীল বিদ্রোহ, ১৮৩১ সালে সিংভূমের হো বিদ্রোহ, ১৮৩১-৩২ কালীন কোল বিদ্রোহ, ১৮৪৬ এর খোন্ড বিদ্রোহ, ১৮৫৫-৫৭ কালীন সাঁওতাল বিদ্রোহ, বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৭৪-১৯০১ ব্যাপী বিদ্রোহ।

 

বিদ্রোহী হিন্দু সম্প্রদায়ের অবৈধকরণ এবং অন্তরণ

প্রতিরোধকারী হিন্দু সম্প্রদায়গুলিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশরা তাদের ঠগ, অপরাধী উপজাতি ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে তাদের অবৈধ সাব্যস্ত করার একটি নিয়ামক গড়ে তোলে। ১৮৩৬ সালে “ঠগী অ্যাক্ট” আইন পাশ হয় এবং ১৮৩৬ থেকে ১৮৪৮ এর মধ্যে আরো ১০ টি আইন পাশ করার মাধ্যমে এটিকে আরো বিবর্ধিত করা হয়। এ  ডেপোটিসম অফ ল: ক্রাইম অ্যান্ড জাস্টিস ইন আর্লি কলোনিয়াল ইন্ডিয়া গ্রন্থে এই তর্ক দিয়েছেন যে ঠগী অ্যাক্টে কখনোই এই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি যে ঠগ বলতে ঠিক কী বোঝায় না একজন ঠগীর অপরাধ ঠিক কী। ওরিয়েন্টালিসম গ্রন্থে এডওয়ার্ড সেড প্রাচ্যের ধারণাকে এই বলে চিহ্নিত করেছেন যে ভারত সম্পর্কে বোধ কখনোই বাস্তবের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা নয়, বরং ভারতকে কোন বিশেষ শ্রেণীভুক্ত করা এবং দমন করার পাশ্চাত্য উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ মাত্র কোন ব্যক্তিকে ঠগ বলে দাগানোর জন্য এবং তার সম্পূর্ণ সম্প্রদায়কে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।

১৮৫৭ এর মহাবিদ্রোহের পরে ব্রিটিশরা অদমনীয় হিন্দু সম্প্রদায়গুলির অবৈধকরণের জন্য “কুকুরটিকে একটি বাজে নাম দিয়ে ফাঁসি দিয়ে দাও” এর রূপে দ্বিতীয় একটি নিয়ামক গঠন করে। এই সূত্রে ১৮৭১ সালে ক্রিমিনাল ট্রাইবস অ্যাক্ট (সি টি এ) পাশ হয়। প্রথমদিকে উত্তর ভারতে লাগু করার পর সি টি এ পুরো ভারতেই কার্যকরী করা হয়। ফলস্বরূপ, একটি গোটা সম্প্রদায় জন্মসূত্রেই দোষী সাব্যস্ত হয়ে যায়, শুধুমাত্র দর্শনেই গ্রেফতার করার যোগ্য হয়ে ওঠে, সাজা বসতিতে তাদের ধরে রাখা হয়, তাদের সন্তানেরা বাবা মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পুরো পরিবার উদ্ধারের অতীতে ধ্বংস হয়ে যায়। স্বাধীনতার সময়ে, ২৩ লাখ এমন পরিবার নথিবদ্ধ করা হয়েছিল যারা অপরাধী জাতি (ক্রিমিনাল ট্রাইব) হিসাবে যন্ত্রণা ভোগ করছিল।

প্রসঙ্গত, যে সম্প্রদায়গুলিকে লক্ষ্য করা হয়েছিল তারা হিন্দু জাতি ছিল, কিন্তু ব্রিটিশরা তাদের অনেককেই “উপজাতি” হিসাবে চিহ্নিত করে দেয়। এদের হিন্দু সম্প্রদায় থেকে পৃথক করার শয়তানি তখনই প্রমাণিত হয়ে যায় যখন পরপর জনগণনায় এদের ওপর নকল একটি ধর্ম নিরপেক্ষতা আরোপ করা হয় এবং তদুপরি তাদের “সভ্য” বানিয়ে তোলার দায়িত্বের খেলা আরম্ভ করা হয়।

১৮১৩ সালে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে রামাপা বিদ্রোহের পর বনবাসীদের পৃথকীকরণের রূপে তৃতীয় ঔপনিবেশিক নিয়ামকটি আসে। ১৮৩৯ এর চব্বিশতম আইনটি (অ্যাক্ট XXIV) পাশ করে সাধারণ প্রশাসন থেকে জঙ্গলময় অঞ্চলগুলি বাদ দেওয়া হয় সেগুলিকে গঞ্জাম (বর্তমানে উড়িষ্যায়) এবং বিশাখাপত্তনমের (বর্তমানে অন্ধ্র প্রদেশে) “এজেন্সি ট্র্যাক্ট” হিসাবে বর্ণনা করে। এটির সাফল্যের ফলস্বরূপ ১৮৭৪ সালে পুরো ভারতে আরো কড়া আইন শিডিউল ডিস্ট্রিক্টস অ্যাক্ট জারী করা হয়, এতে কেবল  সাধারণ প্রশাসনই নয়, সাধারন সমাজ থেকেও বনবাসী অঞ্চলগুলি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় সংবিধানের একটি অগ্রদূত হিসাবে মনে করা হয় যে দ্য গভর্ণমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট (১৯৩৫)কে সেটি বনবাসী অঞ্চলগুলির পৃথকীকরণ আরো সুদৃঢ় করে তোলে সেগুলিকে বিচ্ছিন্ন এবং আংশিক বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হিসাবে দর্শিয়ে। ফলত, সাধারণ ভারতবাসী নিজের দেশেই এই অঞ্চলগুলিতে প্রায় বিদেশী হয়ে ওঠে কারণ তাদের এখানে প্রবেশ করা বা সম্পত্তি গ্রহণ করা নিষিদ্ধ ছিল।

চতুর্থ ঔপনিবেশিক নিয়ামকটি বনবাসীদের সাধারণ হিন্দু সমাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক করে দেয় তাদের মধ্যে শারীরিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগ বন্ধ করে। ১৮৬৫, ১৮৭৮ এবং ১৯২৭ এর ফরেস্ট অ্যাক্টগুলি জঙ্গলের ওপর ব্রিটিশদের একচ্ছত্র আধিপত্য ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জঙ্গল ব্যবহারের হাজার হাজার বছর পুরোনো রীতিকে খর্ব না করে। ব্যবস্থাপূর্ণ শোষণের জন্য জঙ্গলগুলিকে সংরক্ষিত বা সুরক্ষিত ঘোষণা করা হয়। বনভূমি এবং তার উৎপাদনের ওপর মানুষের সকল অধিকারের অবসান ঘটানো হয়। জঙ্গল সম্পর্কীয় নতুন অপরাধ সৃষ্টি করা হয় যার মাধ্যমে কখনো কখনো জঙ্গলে প্রবেশ মাত্রকে শাস্তিযোগ্য করে তোলা হয়।

এইভাবে, শিক্ষা দ্বারা হিন্দু চেতনাকে পরাধীন করা ছাড়াও হিন্দু সমাজকে দুর্বল করে তোলে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করা শয়ে শয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে, তাদের “ঠগ” বলে দাগিয়ে, তাদের “অপরাধী উপজাতি” আখ্যা দিয়ে একঘরে করে এবং জঙ্গলে তাদের অন্তরিত করে।

হিন্দু সমাজ ধ্বংসের ব্রিটিশ পরিকল্পনাটি উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় এবং ব্যাপ্তিতে চীনের দক্ষিণ এশিয়ার ধার্মিক জনবিন্যাস পুরোপুরি পাল্টে ফেলার পরিকল্পনার অনুরূপ, যেটি ভারতীয় সভ্যতার শিকড় এবং প্রভাবকে চিরতরে ধুলিস্যাৎ করে দেওয়ায় নিবদ্ধ ছিল।

 

বর্তমান অবস্থা

স্বাধীনতার পর এই প্রতিবন্ধকগুলি সংবিধানের পঞ্চম তফসিলের মাধ্যমে আরো দৃঢ় করা হয়েছে। এর অধীনে বিভিন্ন রাজ্যের দ্বারা পাশ করা সমরূপ শিডিউল্ড এরিয়াস ল্যান্ড ট্রান্সফার অ্যাক্ট অন্তরণ এবং ধ্বংসের ব্রিটিশ নীতিটিকেই আরো বেশি শক্তি ও কাঠিন্য প্রদান করে চিরস্থায়ী করে তোলে। ফলস্বরূপ, তফসিলী অঞ্চলের তফসিলী উপজাতি এবং বাইরের মানুষের মধ্যের হাজার বছর পুরোনো সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধার্মিক লেনদেন বিরল হয়ে ওঠে এবং তা তাদের উপজাতিকরণ এবং অনগ্রসরতার দিকেই ধাবিত হয়

২০০৬ এর ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট এর অভিপ্রায়ের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হলেও একই অন্তরণ নীতি অনুসরণ করে। কারণ, তফসিলী উপজাতিদের দেয় জমির মালিকানা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য হলেও তা এই আইনের ৪ নং ধারা অনুযায়ী হস্তান্তরযোগ্য নয়। এইভাবে হস্তান্তরযোগ্য নয় বা বিক্রি করা যায় না এমন জমি দান করে তফসিলী উপজাতিদের চিরস্থায়ীভাবে পুরুষের পর পুরুষের জন্য এই জঙ্গলেই জর্জরিত অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গল না তফসিলী অঞ্চলের বাইরে জমি দান করলে তা তফসিলী উপজাতিদের উন্নতি করতে এবং মুখ্যধারায় শামিল হতে আরো সাহায্য করত। পরিবর্তে, যোগ্য সংক্ষিপ্ত জঙ্গল এবং তফসিলী অঞ্চলগুলির সংরক্ষণ এবং তফসিলীকরণের অবসান ঘটিয়ে সেগুলিকে নতুন উন্নতি কেন্দ্রে পরিণত করে উপজাতিদের মধ্যে বন্টন করা যেত। কিন্তু তা হওয়ার ছিল না।

তফসিলী অঞ্চলে তফসিলী উপজাতিদের এই শোচনীয় অনগ্রসরতা বাইরের জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক উন্নতির একেবারে বিপরীত। তফসিলী অঞ্চলে উপজাতিরা উচ্চমানের শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পায় না, যা এই অঞ্চলে বিরল। তফসিলী অঞ্চলে মুক্ত বাজারের অস্তিত্ব না থাকায় স্থাবর সম্পত্তির মালিক উপজাতিরা সেগুলি বেচতে বা সেগুলির থেকে অন্য কোনভাবে টাকা উপার্জন করতে পারে না। কারণ, উপজাতি বহির্ভূত জনসাধারণের এখানে জমি ক্রয় করা নিষিদ্ধ এবং অন্যান্য উপজাতি মানুষদের কাছে কখনোই এই পরিমাণে নগদ টাকা মজুত থাকে না। বিপরীতে, এই হস্তান্তর-অযোগ্য এবং মুদ্রায়ণ-অযোগ্য অনুর্বর  জমি এদের গলায় ঝুলে থাকা মাইলস্টোনে পরিণত হয়। উন্নততর জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য হয় তাদের তফসিলী অঞ্চলের এই জমি অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে হয় অথবা একেবারে পরিত্যাগ করেই চলে আসতে হয়। উপজাতিদের মালিকানার তফসিলী অঞ্চলের জমির শহুরে অঞ্চলে অন্য কোন সম্পত্তি বা নগদ মূলধনে রূপান্তরিত করার আইনি অক্ষমতা তাদের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

আমার ঠাকুরমার বলা একটি গল্প আমার মনে পড়ছে, একজন হিংসুটে রাজা তার যেকোন ধনী প্রজা যার একটি ভালো বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যান্য ধনসম্পত্তি আছে তাদের একটি বা দুটি রাজকীয় হাতি ভেট দিতেন, রাজকীয় প্রশংসার প্রতীক হিসাবে। কিন্তু একটি শর্ত থাকত: হাতিগুলিকে বিক্রি করা বা পরিত্যাগ করা যাবে না, তাদের ভালোভাবে দেখভাল করতে হবে, যা করতে ব্যর্থ হলে রাজকীয় ক্রোধের সম্মুখীন হতে হবে। প্রাথমিকভাবে লোকজন এই দয়ালু মনোভাবের জন্য রাজার জয়জয়কার করত। কিন্তু বছর গড়াতে থাকলে এই হাতিগুলিকে খাওয়াতে খাওয়াতেই তারা ফতুর হয়ে যেত। ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট এর মাধ্যমে প্রাপ্ত জমির মালিক তফসিলী উপজাতিরাও একই বিপাকে পড়েছে বলে প্রতীত হয়।

তফসিলী অঞ্চলে কাজ করা বহু এনজিও বিদেশ থেকে আর্থিক মদতপুষ্ট। আপাতদৃষ্টিতে, তফসিলী অঞ্চলের অন্তরিত এবং উপজাতিকৃত বনবাসী ভারত ভাঙিয়ে শক্তিগুলির কর্মকাণ্ডের বন্দী হয়ে রয়ে গিয়েছে। ২০০৮ সালে, স্বামী লখনানন্দা স্বরস্বতী নামের একজন উচ্চ সম্মানিত এবং বহুল পরিচিত হিন্দু আধ্যাত্মিক নেতা, যিনি বনবাসী এবং উৎপীড়িত মানুষদের সেবায় এবং উন্নতিসাধনে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, দক্ষিণ উড়িষ্যার তফসিলী অঞ্চলে নৃশংসভাবে খুন হন। এইরূপ বহুবিধ ঘটনায় ২০২০ সালের ১৬ই এপ্রিল মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার তফসিলী অঞ্চলে দুজন হিন্দু সাধুকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনা নবতম সংযোজন। হিন্দু সমাজকর্মী এবং ধার্মিক ব্যক্তিদের বেছে বেছে হত্যা করার একটি চোখে পড়ার মত নকশা রয়েছে, কারণ এদের অভূতপূর্ব কর্মকাণ্ড “সভ্যকরণের” অশুভ উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।

উপসংহারে বলা যায় যে তফসিলী অঞ্চলগুলিতে তফসিলী উপজাতিদের চরম দুর্দশার এই আবহ তাদের গহন রাজ্যের আগুনে মথের ন্যায় বানিয়ে দেওয়ার তফসিলীকৃত, বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, অন্তরণ এবং বন্দী করে রেখে দেওয়ার প্রচেষ্টার সম্মিলিত ফলাফল।

 

তফসিলী অঞ্চলের উপজাতিদের মুখ্যধারায় নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা

আমাদের সংবিধান সকল নাগরিকের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ন্যায়, মর্যাদার সাম্য এবং সুযোগ রক্ষায় রত, তাদের সম্ভ্রম নিশ্চিত করে। এছাড়াও এর দ্বারা সুযোগের অভাবে থাকা মানুষদের সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়। যদিও, কোন খাদ্যের প্রকৃত স্বাদ তা খাওয়ার পরই পুরোপুরি বোঝা সম্ভব, সংবিধানের পঞ্চম তফসিল তফসিলী অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতিদের সেই সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে যা তফসিল বহির্ভূত অঞ্চলের প্রত্যেকটি তফসিলী উপজাটিভুক্ত ব্যক্তি ভোগ করে থাকে।

২০১১ এর জনগণনা অনুযায়ী তফসিলী উপজাতির মোট জনসংখ্যা হল ১০.৪২ কোটি যার অর্ধেকের বেশি বা ৬ কোটির বেশি রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড়, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড ও হিমাচল প্রদেশের তফসিলী অঞ্চলে বাস করে। পঞ্চম তফসিল এই অঞ্চলগুলিতে উপজাতিদের দ্বারা জমির মুদ্রায়ণ নিষিদ্ধ করে। এখন জমি অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মূল একটি উপাদান হওয়ায় এই অঞ্চলের ৬ কোটির বেশি উপজাতিভুক্ত মানুষ সেই সকল অর্থনৈতিক সংস্কার ও উদারীকরণ থেকে বঞ্চিত যেগুলি অতফসিল অঞ্চলের তফসিলী উপজাতি লোকজন লাভ করে থাকে।

যেকোন উন্নতিসাধন মুখ্যধারায় অন্তর্ভুক্তি সূচিত করে। কোন অন্তরিত ব্যক্তি, সম্প্রদায়, সমাজ বা জাতির পক্ষে উন্নতি করা সম্ভব নয়। তাই, তফসিলী অঞ্চলের উপজাতিদের সর্বাঙ্গে উন্নতিসাধন ও তাদের মুখ্যধারায় শামিল করার জন্য সাংবিধানিক ও আইনি বাধাগুলি দূর করা সবচেয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ। জ্ঞাত কারণসমূহের জন্যই, সংস্কারটি নিয়ন্ত্রিত শর্তাবলীর অধীনে বৃদ্ধিমূলক হওয়া জরুরি। আরম্ভ হিসাবে, উল্লেখিত এই আইনি উদ্যোগগুলি অবশ্য কর্তব্য:

১) পঞ্চম তফসিলের ৫(২)(a) অনুচ্ছেদের সংশোধন যা বর্তমানে বলে: “(a) তফসিলী উপজাতিদের দ্বারা বা নিজেদের মধ্যে জমি হস্তান্তর নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ”, এর পরিবর্তন করে বলা উচিত, “(a) উক্ত অঞ্চলে জমি হস্তান্তর নিয়ন্ত্রিত”, এবং এর পরেও বিবিধ রাজ্যের সদৃশ শিডিউল্ড এরিয়াস ল্যান্ড ট্রান্সফার রেগুলেশন এর সমরূপ সংশোধন কর্তব্য।

২) ফরেস্ট রাইটস অ্যাক্ট, ২০০৬ এর ৪(৪) নং ধারার সংশোধন করে এর মাধ্যমে বন্টিত জমি একটি নির্দিষ্ট বন্ধকী সময়সীমার পর যেকোন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তরযোগ্য করা।

লেখক একজন বরিষ্ঠ আইপিএস আধিকারিক। মতামত ব্যক্তিগত। অনুবাদক শুভম ক্ষত্রী