বঙ্গদেশ ডেস্ক: আসামে বাঙালি অধ্যুষিত কাছাড় জেলায় ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল (এফটি) শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই ২২ জনকে ‘বিদেশী’ ঘোষণা করেছে। ২২জনের মধ্যে ১৯ জন বাঙালি হিন্দু।
আসাম সরকার গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর রাজ্যের নাগরিকত্বের বিচার করে বিদেশী ট্রাইব্যুনালগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিল একজন ব্যক্তির জাতীয়তার বিষয়ে ‘মতামত’জ্ঞাপনে অটল থাকতে এবং যেকোন ‘আনুষঙ্গিক আদেশ’ পাস করা থেকে বিরত থাকতে। আসামের ১০০টির মধ্যে কাছাড়ের ছয়টি এফটি, পৃথক রায়ে ২২জন পুরুষ এবং মহিলাকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ‘বিদেশী’ হিসাবে ঘোষণা করেছে।ট্রাইব্যুনালের একতরফা রায়ে ২২ জনের মধ্যে ১৯ জনকে ‘বিদেশী’ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সীমান্ত) নতুন ‘বিদেশীদের’ তালিকাসহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (কাছার) চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, যে কেন্দ্রের সমস্ত জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যেমন রেশন কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদি ওই ব্যক্তিদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। ভোটার তালিকা থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হবে।সূত্রের খবর, শিলচর থানার অধীন এফটি-১ এবং এফটি-২ তালিকার শীর্ষে যারা রয়েছে সেই সর্বাধিক সংখ্যক মানুষকে ‘বিদেশী’ ঘোষণা করেছে। শহর ও শহরতলিতে মোট ১০ জনকে ‘বিদেশী’ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উত্তর পূর্ব ভাষা ও জাতিগত সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কঙ্কন নারায়ণ সিকদার। তিনি বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), ২০১৯-এর অ-প্রণয়নের কারণে, দুই বছর ধরে, বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুরা “বিদেশী” সনাক্তকরণের নামে চরম হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন,’এক মাসের মধ্যে জেলায় ১৯ জন বাঙালি হিন্দুসহ মোট ২২ জনকে ‘বিদেশী’ ঘোষণা করা সত্যিই বেদনাদায়ক। সমন্বয় কমিটি উচ্চ আদালতে এফটিএসের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মামলায় ব্যক্তিদের সহযোগিতা করবে এবং প্রমাণ করবে,যে তারা ভারতীয়।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত ১০ই জানুয়ারি বঙ্গ বিজেপি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত একটি বিবৃতি জারি করেছে যা আসামের ঘটনার সঙ্গে অনেকটাই সংযুক্ত। কারণ কাউকে বিদেশী ঘোষিত করা হলে কি পরিমাণ হয়রানির শিকার হতে হয় তার উদারহণ আসামের শেফালী দেবী। এমন সময়সাপেক্ষ আইনি লড়াই করা গরিব বাঙালি হিন্দুদের পক্ষে সম্ভব নয়। বঙ্গ বিজেপির রিফিউজি সেল এই আশঙ্কাই ব্যক্ত করেছিল। আসামে বেআইনি শরণার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল কাছাড় জেলার বাসিন্দা শেফালি রানি দাসকে। ট্রাইবুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে গুয়াহাটি হাইকোর্টে মামলা করেছেন তিনি।২০১৫ সালে তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৭ সালে ১৯শে সেপ্টেম্বর কাছাড়ের ওই বাঙালি মহিলাকে অবৈধ শরণার্থী ঘোষণা করা হয়। তবে আদালতের মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত ফিরে পেয়েছেন নাগরিকত্ব। ১৭ই জানুয়ারি নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে শেফালিকে ভারতীয় বলে ঘোষণা করেন ট্রাইবুনালের সদস্য (বিচারক) ধর্মানন্দ দেব।