হিন্দুরা মার খাচ্ছে — যে ২৩ ঘটনায় তথাকথিত ইন্ডিয়ান মিডিয়া সঠিক সময়ে সঠিক প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হয়েছে

0
638

তথাকথিত ইন্ডিয়ান মিডিয়া এক আজব জিনিস। তাদের মধ্যে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বলে কোনও বস্তুই নেই। তাদের মধ্যে এমনকি ‘নিরপেক্ষতা’ বলে কোনও বস্তু আছে কিনা তাতে সন্দেহ আছে যথেষ্টই। তারা সাংবাদিকতা করতে গিয়ে দেখে সংবাদের ধরণ তাদের ‘আদর্শের’ সাথে খাপ খাচ্ছে কি না। না খেলে, যতই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটুক না কেন, তা পরিত্যাজ্য। তারা সর্বদাই তক্কে তক্কে থাকে, পীড়িত ব্যক্তি আব্রাহামিক ধর্মাবলম্বী কিংবা নিম্নবর্ণের হিন্দু কিনা, বা ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি’ উচ্চবর্ণের হিন্দু কিনা। এটাই হল তাদের ‘নিরপেক্ষতা’র আদর্শ। যেখানে আব্রাহামিক ধর্মাবলম্বীর হাতে উচ্চবর্ণ বা নিম্নবর্ণের হিন্দু যতই মার খাক না কেন বা নির্মম ভাবে হত্যার শিকার হোক না; তা চেপে যাওয়া বা এমনকি মিথ্যা প্রোপ্যাগান্ডা চালিয়ে অভিযুক্তকে আড়াল করাটাই হল তাদের ‘আদর্শ।’ বস্তুত তাদের চোখে হিন্দুদের প্রাণের কোনও দাম নেই। অথচ মুখ্যত হিন্দুদের করের টাকায় মিডিয়া চলে। এই আদর্শ একটা ‘ইকোসিস্টেমের’ ফল, যাকে সহজ ভাষায় বামৈস্লামিক ইকোসিস্টেম বলা চলে।

এখানে অন্তত ২৩ ঘটনার কথা বলা হল – যা কিনা তথাকথিত ‘ইন্ডিয়ান মিডিয়া’ এড়িয়ে গেছে কিংবা অভিযুক্তদের পরিচয় যথাসম্ভব আড়াল করার চেষ্টা করে গেছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ অজুহাতে।

পালঘর, মহারাষ্ট্র — দুই সাধু ও ড্রাইভার নীলেশ তেলগাড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হল

 

এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ১৬ এপ্রিল ২০২০ সালে। এক্ষেত্রে শিকার হয়েছেন দুই সাধু — ৭০ বছর বয়সী কল্পবৃক্ষ গিরি মহারাজ ও ৩৫ বছর বয়স্ক সুশীল গিরি মহারাজ। তাদের সাথে ৩০ বছর বয়সী ড্রাইভার নীলেশ তেলগাড়েও খুন হয়েছেন অত্যন্ত নির্মম ভাবে। এরা প্রত্যেকেই গুজরাতের জুনা আখড়ার সাথে যুক্ত ছিলেন। এরা জুনাগড় থেকে মুনবাই হয়ে পালঘর যাচ্ছিলেন আরেকজন জুনা আখড়া সাধুর অন্তিম সৎকার সম্পন্ন করতে। এবং সেখানেই ১৬০ জন উন্মত্ত জনতার হাতে নিহত হয়েছেন।

এই রক্ত জল করা গণধোলাইয়ের ঘটনায় তথাকথিত ইন্ডিয়ান মিডিয়া আশ্চর্যজনক ভাবে প্রায় নীরব। কেননা এই ঘটনায় পীড়িতরা সকলেই হিন্দু, এবং সম্ভাব্য হত্যাকারীরা সকলেই আব্রাহামিক ধর্মাবলম্বী।

এখানে বেশ কিছু হিন্দুদের লক্ষ্য করে ঘটানো হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেওয়া হল, যা যথেষ্ট মর্মান্তিক ও ভীতিপ্রদ হলেও মিডিয়া সেগুলো হয় এড়িয়ে গেছে বা উল্টে পীড়িতদেরই চরিত্রহননে ব্যস্ত থেকেছে।

দিল্লী — ইসলামিস্টদের হাতে দিল্লী পুলিসের হেড কনস্টেবল রতন লাল গুলিবিদ্ধ হলেন

 

হেড কনস্টেবল রত্ন লাল তার জীবন খুইয়েছিলেন ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে, সেদিন ইসলামিস্টরা সিএএ বিরোধিতার নামে দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে ব্যস্ত ছিল। ঘটনাচক্রে সেদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতে ছিলেন। তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই দাঙ্গা বাঁধান হয়েছিল। রতন লালের পোস্টমর্টেম হলে দেখা যায় তার মাথায় বুলেট পাওয়া গেছিল, যার আঘাতেই তার মৃত্যু হয়। ইন্ডিয়া টিভির প্রতিবেদন অনুসারে ছয় অভিযুক্তকে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিস গ্রেফতার করে — সেলিম মালিক, মহম্মদ জালাল-উদ-দিন, মহম্মদ আইয়ুব, আরিফ, দানিশ ও মহম্মদ সেলিম খান।

দিল্লী — আইবি অফিসার ইসলামিস্টদের হাতে নির্মম ভাবে নিহত হলেন

 

দিল্লী দাঙ্গায় সবচেয়ে বীভৎস ঘটনা নিঃসন্দেহে ছিল আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মার হত্যাকাণ্ড। তার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল উত্তরপূর্ব দিল্লির একটি মুসলিম প্রধান জায়গা থেকে, একটি নালার মধ্যে।

অঙ্কিত শর্মা চাঁদ বাগের বাসিন্দা ছিল। সে সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে বাড়ী ফেরার পথে একদল ইস্লামিস্টদের হাতে পড়ে, চাঁদ বাগ সেতুর সামনে তাকে ছুরিকাহত করে হত্যা করে শেষে হত্যাকারীরা তাকে নালায় ফেলে দেয়।

দিল্লী পুলিস পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে দেখতে পায় তার দেহে অন্তত চারশো বার ছুরি মারা হয়েছিল। তার দেহের বিভিন্ন জায়গায় অ্যাসিডের চিহ্ন ছিল, সম্ভবত অ্যাসিড ফেলে তার পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। পুলিস আরও জানায় যে, হত্যার পূর্বে তার পোশাক খুলে নেওয়া হয়েছিল সে মুসলিম কিনা জানতে। তার পরিচয় জানার পরেই তাকে হত্যা করা হয়। পোস্টমর্টেম অনুসারে তাকে চার ঘণ্টা ধরে ছুরি মারা হয়েছিল।

এই ঘটনার জন্য প্রধান খলনায়ক সন্দেহে আম আদমি পার্টির নেতা তাহির হুসেইনকে পুলিস গ্রেফতার করে। অভিযোগ ছিল যে, পুরো দিল্লী জুড়ে হিন্দু বিরোধী দাঙ্গার পেছনে তারই হাত ছিল।

লখনৌ — কমলেশ তিওয়ারি জিহাদিদের হাতে নিহত হলেন

 

১৮ অক্টোবর ২০১৯ সালে হিন্দুবাদী কর্মকর্তা ও প্রাক্তন হিন্দু সমাজ পার্টির নেতা কমলেশ তিওয়ারি লখনৌতে নিজেরই বাড়ীতে জিহাদিদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে নিহত হন। তারপর থেকে মার্চ ২০২০ পর্যন্ত অসংখ্য ব্যক্তি তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হয়েছে।

কমলেশ তিওয়ারীর পোস্টমর্টেম যথারীতি হয়েছিল এবং তাতে দেখা যায় তার দেহে ১৫ বার ছুরি মেরে হত্যা করা হয়েছিল। তার চোয়াল থেকে পেট পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়। প্রত্যেকটা ক্ষতচিহ্ন কমপক্ষে ১০ ইঞ্চি গভীর। তার ঘাড় ও গলাতেও আলাদা করে তলোয়ারের কোপ বসানো হয়েছিল, যাকে ইসলামিক কায়দায় আড়াই প্যাঁচের হালাল কোপ বলা হয়। এই হত্যাশৈলী দেখেই পুলিস নিশ্চিন্ত হয়ে যান — মুসলিমরা এই কাজে জড়িত।

২০ অক্টোবর নাগাদ গুজরাত অ্যান্টি টেররিষ্ট সেল গুজরাতের সুরাত থেকে মৌলবি মহসিন শেখ, রশিদ পাঠান, ফৈজ়ান পাঠানকে গ্রেফতার করে। এরা সকলেই স্বীকার করে তারা সেই ২০১৫ থেকেই কমলেশ তিওয়ারিকে খুন করার ষড়যন্ত্র করছিল। কেননা কমলেশ মহম্মদের যৌন জীবন নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, যা তাদের কাছে ধর্মদ্রোহী বলে মনে হয়েছিল।

২২ অক্টোবর নাগাদ গুজরাত অ্যান্টি টেররিষ্ট সেলের প্রধান হিমাংশু শুক্লা রাজস্থান-গুজরাত সীমানা থেকে আরও দুজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে — আশফাক ও মৈন-উদ-দিন। আশফাক রোহিত সোলাঙ্কি সেজে কমলেশ তিওয়ারির বিশ্বাস জয় করার চেষ্টা করছিল। সে এমনকি আধার কার্ড নকল করেছিল।

জেরা করার সময়ে জিহাদিরা পরিষ্কারই স্বীকার করে তারা মহম্মদের অপমান সহ্য করতে না পেরে তাকে এইভাবে হত্যা করেছিল।

তদন্তের শেষে জানা যায় তারা এই হত্যাকাণ্ড সফল করতে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ অবধি বানিয়েছিল, যাতে ৭২ জন জড়িত ছিল। এক এক করে প্রত্যেককেই ধরে ফেলা হয়।

ফতেহপুর, উত্তর প্রদেশ — বিকাশ যাদবকে গাছে বে‌ধে পিটিয়ে মারা হল

 

১৮ অক্টোবর ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশের ফতেহপুর জেলার বিন্দুকি শহরে বিকাশ যাদব নামে একজন হিন্দু আটা মিলের শ্রমিককে গাছে বেঁধে মুসলিম সহযোগীরা মারছিল। পরে একটা ভিডিও অবধি ভাইরাল হয়ে যায়, যেখানে ঐ নৃশংস ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবি পাওয়া যায়।

মুর্শিদাবাদ — ট্রিপল মার্ডার কেস

 

১০ অক্টোবর ২০১৯ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জনৈক রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের কর্মী ও শিক্ষক বন্ধু প্রকাশ পাল, তার গর্ভবতী স্ত্রী ও ছয় বছরের বাচ্চা ছেলে প্রকাশ্য দিবালোকে নিজের বাড়ীতে নৃশংস ভাবে খুন হন। এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ বাদে মুর্শিদাবাদ পুলিস উৎপল বেহরা নামে একজন উড়িষ্যার রাজমিস্ত্রিকে গ্রেফতার করে। পুলিস জানায় উৎপল নাকি ‘স্বীকারোক্তি’ দিয়েছে মাত্র ২৪,০০০ টাকার জন্য সেই এভাবে একটা পরিবারকে শেষ করে দিয়েছে।

কিন্তু এই কথা সোশ্যাল মিডিয়ার কেউই বিশ্বাস করে নি। অভিযোগ ছিল বন্ধু বিকাশ পালের বাড়ীর পেছনে একটা অবৈধ মসজিদ নির্মাণ নিয়ে পাল ও মুসলিম সমাজের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল বহুদিন ধরে। সেই দ্বন্দ্বের অন্তিম পরিণতি এই হত্যাকাণ্ড। তাছাড়া তিনজনকে যেভাবে আড়াই প্যাঁচে হালাল ভাবে কোপানো হয়েছিল, সেটা কোনও হিন্দুর কাজ নয় — বরং মুসলিম কসাইয়ের পক্ষে সহজতর কাজ।

মোরাদাবাদ — ১৩ বছর বয়সী মেয়ের অপহরণের মামলা করার জন্য গঙ্গারাম সিংহ চৌহানকে গণধোলাইয়ের শিকার হয়ে মরতে হল

 

২৭ জুন ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ জেলার আলিয়াবাদ গ্রামের মানুষ গঙ্গারাম সিংহ চৌহান একদল উন্মত্ত মুসলিম প্রতিবেশীর হাতে নির্মম ভাবে নিহত হন। কেননা তিনি কদিন আগেই তার ১৩ বছর বয়সী কন্যার অপহরণের ঘটনাকে নিয়ে দিলারই পুলিস স্টেশনে অভিযোগ জানিয়েছিল। তার অভিযোগের তীর ছিল ২৫ বছর বয়স্ক মহম্মদ দানিশের প্রতি। সে তার কন্যাকে অপহরণ করেছে এমনটাই ছিল গঙ্গারামের অভিযোগ।

৫৫ বছর বয়সী গঙ্গারাম বোঝেন নি যে, এরজন্য তার জীবনটাই চলে যাবে। তার স্ত্রী পরে জানান যে, অন্তত ছয়জন পুরুষ ও দুজন স্ত্রী এসে তার ওপর হামলা চালায়। দুজনের হাতে বড় চপার ছিল তা দিয়ে গঙ্গারামের বুকে আঘাত করে। সাথে পাথর দিয়ে তার মাথাতেও আঘাত করে। তারপর যখন গঙ্গারাম অজ্ঞান হয়ে যায়, তখন তাকে ফেলে দিয়েই ‘আততায়ীরা’ পলায়ন করে।

“কাফেররা! এত সাহস হয় কি করে আমাদের পেছনে লাগার! এক্ষুনি যত কাফের এখানে আছে, চলে যাও!” এই ছিল শাফায়াৎ নবীর পরিবারের বয়ান, যা গঙ্গারামকে মারতে মারতে বলছিল।

সেই রাতেই ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয় — শাফায়াৎ নবী, তার তিন ছেলে মহসিন, ছোটু, দানিশ এবং দুই ভাইপো — আক্রম ও ইরফান। পরে শাফায়াতের দুই স্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল।

মথুরা — হিন্দু লস্যি দোকানদার ভরত যাদব গণধোলাইয়ের শিকার হল

 

১৮ মে ২০১৯ সালে মথুরায় একদল উন্মত্ত মুসলিম ভিড় দুই হিন্দু লস্যির দোকানদার দুই ভাইয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুই ভাই পঙ্কজ ও ভরত যাদব মথুরার বিখ্যাত কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দিরের কাছে চৌক বাজারে লস্যির দোকান খুলেছিল। একটা হাল্কা ঝামেলার পর একটা বোরখাওয়ালি কয়েকশো লোক নিয়ে এসে দুই ভাইয়ের ওপর হামলার নির্দেশ দেয় এই বাক্য বলে, “ইস কাফিরকো মারো।” এরপর দুজনের ওপর পাথর ও লাঠি দিয়ে নিষ্ঠুর হামলা চালানো হয়।

পঙ্কজ মারাত্মক চোট নিয়ে কোনও রকমে পালাতে পারলেও ভরত পালাতে পারে নি। সে হাসপাতালে ভর্তি হলেও এক সপ্তাহ বাদে ২৪ মে মারা যায়। পোস্টমর্টেম করে দেখা যায় তা ঘিলু আর স্নায়ুতন্ত্র মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছিল। এই ঘটনায় ১০০ বেশী লোককে গ্রেফতার করেছিল উত্তর প্রদেশ পুলিশ।

উত্তর প্রদেশের গোন্দায় প্রতিবেশীর সাথে বিবাদের জন্য বিষ্ণু গোস্বামীকে পুড়িয়ে মারা হল

 

উত্তর প্রদেশের গোণ্ডা জেলার চিস্তিপুর তালুকের মুঘল জোট গ্রামের যুবক বিষ্ণু কুমার গোস্বামীকে ১৫ মে ২০১৯ সালে সামান্য ঝামেলার জেরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

জামুনিয়া বাগ থেকে বিষ্ণু তার বাবা রামড়ি গোস্বামীর সাথে বাড়ীতে ফিরছিল। তারা দুজনে গোণ্ডা-অযোধ্যা হাইওয়েতে এক জায়গায় থেমেছিল জল খেতে।

সেখানেই পেট্রোল ট্যাংকারের ড্রাইভারের সাথে গোস্বামীদের ঝামেলা হয়। এরপরেই চার অভিযুক্ত (ইমরান, তুফাইল, রামজ়ান ও নিজ়াম-উদ-দিন) মিলে বাবার সামনেই ছেলেকে পুড়িয়ে মারে। প্রত্যেকেই পরে গ্রেফতার হয়।

কন্যার হেনস্থা রোধে সরব হওয়ার জন্য ধ্রুব ত্যাগীকে ছুরিকাহত করে হত্যা করল জিহাদিরা

 

মে ২০১৯ সালে দিল্লির মতি নগরের বাসাই ধারাপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ধ্রুব রাজ ত্যাগীকে জাহাঙ্গীর খান ও মহম্মদ আলম ছুরি মেরে হত্যা করে। ৫১ বছর বয়সী ত্যাগীর ‘অপরাধ’ ছিল যে, তিনি জাহাঙ্গীরের নামে থানায় অভিযোগ এনেছিলেন — জাহাঙ্গীর তার কন্যাকে প্রতিদিন বিরক্ত করে। একদিন শ্লীলতাহানিও করেছিল। যে ছুরি দিয়ে পেশায় কসাই জাহাঙ্গীর তাকে হত্যা করেছিল সেটা ছিল বড় চপার। ঐ চপার আবার তার হাতে তুলে দিয়েছিল জাহাঙ্গীরের স্ত্রী স্বয়ং। তারা শুধু হত্যা করেই থামেনি, সাথে তার নখ উপড়ে নিয়েছিল, দাঁত ভেঙ্গে দিয়েছিল।

থাঞ্জাভুর, তামিল নাড়ু — ভি রামালিঙ্গমকে ইসলামিস্টদের হাতে মরতে হল

 

৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে পাতালি মাক্কা কাচ্চি নেতা ভি রামালিঙ্গমকে একদল উন্মত্ত মুসলিমরা হত্যা করে। কেননা তিনি ধর্মান্তরকরণের বিরোধিতা করছিলেন। থাঞ্জাভুর জেলার কুম্ভকোণমের কাছে রামালিঙ্গমকে উন্মত্ত ভিড় তার দুই হাত কেটে নেওয়ার পাশাপাশি তার সর্বাঙ্গে ছুরি চালায়। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই তিনি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের দরুন প্রয়াত হন।

বুলন্দশহর, উত্তর প্রদেশ — বেআইনি কসাইখানা ভাঙতে এসে ইন্সপেক্টর সুবোধ সিংহ নিহত হলেন

 

ডিসেম্বর ২০১৮ সালে বুলন্দশহরে বেআইনি কসাইখানা ভাঙতে এসে পুলিস ইন্সপেক্টর সুবোধ সিংহ মারা যান।

তিনি বেআইনি কসাইখানা ভাঙতে এসে মুসলিম কসাইদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। তারা পুলিসকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে পুলিস গুলি চালাতে থাকে। এই সময়েই সুবোধ সিংহ একটা উড়ে আসা পাথরের ঘাত পান মাথায়, তাতেই তার মৃত্যু হয়।

দিল্লী — গাড়ীর ব্যাটারির চুরির মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে অটো ড্রাইভার অবিনাশ সাক্সেনাকে গণধোলাইয়ের শিকার হতে হল

 

দিল্লির মোহন গার্ডেন অঞ্চলে ২৬ নভেম্বর ২০১৮ সালে ২৬ বছর বয়স্ক অবিনাশ সাক্সেনাকে একদল উন্মত্ত ভিড় ইলেকট্রিক পোলে বেঁধে মারধর করতে থাকে। তাদের অভিযোগ ছিল অবিনাশ নাকি গাড়ীর ব্যাটারি চুরি করেছে।

সাক্সেনা তার অভিভাবকের সাথে থাকত একটা ভাঁড়া বাড়ীতে, সেটা মুসলিম অধ্যুষিত মোহন গার্ডেন অঞ্চলের মধ্যেই পড়ে। সাক্সেনা রাতে কাজ করত। মোহন গার্ডেন থেকে প্রায় দুই কিমি দূরে পিপাল চৌকে এই গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটে রাত তিনটে নাগাদ, সকাল সাত নাগাদ মারধর বন্ধ হয়।

মুম্বাই — বাইক স্টান্টের বিরোধিতা করায় ভবেশ কোহলিকে মরতে হল

 

মুম্বাইয়ের ইএস পাতানওয়ালা মার্গে সাতজন বাইকার ছুরি মেরে ২৪ বছর বয়স্ক ভবেশ কোহলিকে হত্যা করে। কোহলি তাদের প্রচণ্ড জোরে বাইক চালানোর বিরোধিতা করেছিল। সাতজন হত্যাকারীদের মধ্যে তিনজনের নাম ছিল — শাহজাদা, উসমান শেখ ও আনাস শেখ।

আতাপাড়ি, কেরালা — আদিবাসী যুবক মধু চিন্দাকিকে পিটিয়ে মেরে উবাইদ তার সাথে সেলফি তুলল

 

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে কেরালার আতাপাড়ি জেলায় ২৭ বছর বয়সী দরিদ্র আদিবাসী যুবক মধু চিন্দাকিকে খাবার চুরির অভিযোগে পিটিয়ে মারা হয়। পরে জানা যায় মধু মানসিক প্রতিবন্ধীও বটে। উন্মত্ত ভিড় তাকে আতাপাড়ি জঙ্গলে পেয়ে ঠেঙিয়ে আধমরা করে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু সাঙ্ঘাতিক ভাবে আহত মধু একদিন পরেই মারা যায়।

পড়ে ফেসবুকে তার জীবনের শেষ মুহূর্তের ছবিও পাওয়া যায়, যেখানে তাকে “হত্যাকারীর” সাথে সেলফি তুলে দেখা গেছিল। পড়ে জানা যায় হত্যাকারী হচ্ছে উবাইদ, সে ছিল কেরালার কমিউনিস্ট সরকারের শরিক দল মুসলিম লিগের বড় নেতার বড় ছেলে। তাকে আরও ছয়জনের সাথে গ্রেফতার করা হয়।

দিল্লী — মুসলিম মেয়েকে ভালবাসার জন্য অঙ্কিত সাক্সেনাকে মরতে হল

 

ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে অঙ্কিত সাক্সেনাকে নিষ্ঠুর ভাবে মুসলিম প্রেমিকার পরিবারের হাতে নিহত হতে হয়। শেহজাদি নামে ঐ মুসলিম প্রেমিকার পরিবার আদৌ চায় নি সে হিন্দু ছেলেকে বিবাহ করুক। কিন্তু অঙ্কিত তা সত্ত্বেও এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে পেশায় কসাই শেহজাদির পিতা চপার দিয়ে আড়াই প্যাঁচের কোপে অঙ্কিত সাক্সেনার শিরচ্ছেদ করে। পরে পুরো পরিবার এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকায় গ্রেফতার করা হয়।

হাথরস, উত্তর প্রদেশ — দলিত যুবক অমিত গৌতমকে পিটিয়ে মারা হল

 

৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সালে উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলার গাধী খান্দারি অঞ্চলে ২৭ বছর বয়স্ক অমিত গৌতমকে প্রথমে পিটিয়ে মেরে তারপর পুড়িয়ে ফেলা হয়। সেখানে একটা মসজিদের ভেতরে তার অর্ধদগ্ধ দেহ পাওয়া যায়। পুলিস জানায় একটা মোটরবাইক নিয়ে ঝামেলার জেরে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।

হাথরস পুলিস এই ঘটনায় পাঁচজন মুসলিম যুবককে গ্রেফতার করে, প্রত্যেকেই ছিল মসজিদের কর্মী। এদের নাম যথাক্রমে হল — আলম, সাদ্দাম, খালিদ, সুকেল ও আশুল।

কাশগঞ্জ, উত্তর প্রদেশ — চন্দন গুপ্ত রিপাবলিক ডে রয়্যালই করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু

 

২৬ জানুয়ারি ২০১৮ সালে উত্তর প্রদেশের কাশগঞ্জ এলাকায় রিপাবলিক ডে’র র‍্যালি করতে গিয়ে মুসলিমদের দ্বারা নিক্ষেপিত গুলিবিদ্ধ হয়ে চন্দন গুপ্ত নিহত হন। তার মৃত্যুর পর পশ্চিম উত্তর প্রদেশ জুড়ে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। তাতে তিন দোকান, দুটো বাস ও একটা পুলিসের গাড়ি অগ্নিদগ্ধ হয়। তার বাবা-মা জানায় যে, চন্দন গুপ্ত ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলতে না চাওয়ায় মুসলিমরা তাদের হত্যা করে।

পাঁচদিন বাদে ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সালে প্রধান অভিযুক্ত সেলিম পুলিসের হাতে গ্রেফতার হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে আসিফ জিমওয়ালা আদালতে আত্মসমর্পণ করে।

দিল্লী — প্রকাশ্যে মূত্র বিসর্জনের বিরোধিতা করায় ই-রিক্সা ড্রাইভার রবীন্দ্র কুমারকে মরতে হল

 

২ জুন ২০১৭ সালে দিল্লী অসহিষ্ণুতার সবচেয়ে জঘন্য নিদর্শন দেখেছিল। ৩২ বছর বয়সী রবীন্দ্র কুমার নামে একজন ই-রিক্সা ড্রাইভার উত্তর দিল্লিতে প্রকাশ্যে গণ মূত্র বিসর্জনের প্রতিবাদের দরুন দুই যুবকের হাতে মার খান। রাত একটা নাগাদ রবীন্দ্র দেখতে পান দুই যুবক মহিলাদের সামনে নির্লজ্জ ভাবে মূত্র বিসর্জন করছে। তিনি এতে বিরক্ত হন এবং তাদের মাত্র ২০০ ফুট দূরে গণশৌচাগারে এই কাজ সারতে বলেন।

এরপরেই দুই যুবকের সাথে রবীন্দ্রের ঝামেলা হয়। তখন যুবকরা এলাকা ত্যাগের পূর্বে রবীন্দ্রকে হুমকি দেয়, “তোর খাল খিঁচে নেব।”

এক ঘণ্টা বাদে দুই যুবক ১০-১৫ বন্ধু নিয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মোড়া লোহার রড দিয়ে রবীন্দ্রের সর্বাঙ্গে মারতে থাকে। রবীন্দ্র অচৈতন্য হয়ে পড়তেই গোষ্ঠী পালিয়ে যায়। রবীন্দ্রের পরিবার তাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানা যায় সে পথেই মারা গেছে।

দিল্লী — এয়ার হোস্টেস রিয়া গোস্বামীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরিকাহত করে মারা হল

 

দিল্লির মানসসরোবর পার্কের রামনগর এলাকার বাসিন্দা রিয়া গৌতম ৫ জুলাই ২০১৭ সালে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ত বাজারে সবার সামনে খুন হন আদিল খানের হাতে। রামনগর কলোনিতে অবস্থিত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় আদিল চপার নিয়ে রিয়াকে তারা করছে আর রিয়া প্রাণ বাঁচাতে বাজারে ঢুকে পড়ছে। তারপর বাজারে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় আদিল তার সর্বাঙ্গে ছুরি মারছে। রক্তাক্ত রিয়াকে গুরু তেগ বাহাদু হাসপাতালে নিয়ে গেলেও লাভ হয়নি। তার লোয়ার অ্যাবডোমেনের আঘাত গুরুতর ছিল এবং তাতেই তার মৃত্যু হয়।

আদিল খান (২৩), তার দুই সহযোগী জুনেইদ সেলিম আনসারি (১৯) এবং ফাজিল রাজু আনসারি (১৮) মুম্বাইয়ের ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের দ্বারা বান্দ্রা এলাকায় ধরা পড়ে।

মুসলিম বন্ধুদের হাতে ১৪ বছরের নাবালক যোগেশ কুমার নিহত হল

 

জুন ২০১৭ সালে নিউ দিল্লী রেলওয়ে স্টেশনে অত্যন্ত রহস্যময় পরিস্থিতিতে নাবালক যোগেশ কুমারের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার সারা দেহে, বিশেষ করে মুখে ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। তার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে স্পষ্ট হয় তাকে ছুরি জাতীয় তীক্ষ্ম অস্ত্র দিয়ে মারা হয়েছিল। তার মা অভিযোগ করেছিল যে, তাকে অপহরণ করে তার মুসলিম বন্ধুরা তার কাছ থেকে টাকা চেয়েছিল। তা দিতে না পারায় তাকে এভাবে খুন করা হয়।

পরে এই ঘটনায় তার ছয়জন মুসলিম বন্ধু ধরা পড়ে। যদিও নাবালক ছিল বলে তাদের নামধাম প্রকাশিত হয়নি।

সামান্য তর্কাতর্কির জেরে পঙ্কজ নারাংকে বাড়ী থেকে বাইরে টেনে এনে পিটিয়ে মারা হল

 

২৬ মার্চ ২০১৬ সালে একদল বাংলাদেশী মুসলিম দিল্লির ডাক্তার পঙ্কজ নারাংকে তার বাড়ী থেকে টেনে বের করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। পঙ্কজ নারাঙ্গের ‘অপরাধ’ ছিল যে, তিনি দুই মোটরবাইক আরোহীকে ধমক দিয়েছিলেন, যারা তার ছেলেকে মারধর করেছিল। অতঃপর দুই বাইকার তাদের পারায় গিয়ে আরও সাতজনকে নিয়ে আসে নারাঙ্গের বাড়ীতে, তারপর রড, হকি স্টিক দিয়ে পেটাতে পেটাতে মেরেই ফেলে। দিল্লী হাইকোর্ট অতঃপর চারজন অভিযুক্তকে জুভেনাইল হোমে পাঠায় এবং পাঁচজনকে তিহার জেলে পাঠানো হয়। এই নয় জনই ছিল বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী। পাঁচজনের নাম ছিল যথাক্রমে — নাসের, মানেসার, আমির, আমির খান ও মজিদ ওরফে গোপাল।

মুদাবিদ্রি, কর্ণাটক — বজরঙ দলের সদস্য প্রশান্ত পূজারীকে গোহত্যার বিরোধিতার জন্য গণধোলাইয়ের শিকার হতে হল

 

৯ অক্টোবর ২০১৫ সালে বজরঙ দলের সদস্য প্রশান্ত পূজারীকে কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার মুদাবিদ্রি শহরে গোহত্যার প্রতিবাদ জানানোর জন্য কুখ্যাত জঙ্গি দল পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া ওরফে পিএফআইয়ের দুজন সদস্য তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে গোলায় কোপ মেরে হত্যা করে। বাজারে পূজারীকে আক্রমণ করেছিল ছজন মিলে, চারজন তার হাতপা চেপে ধরেছিল, দুজন কোপ মারে। সেদিনই পূজারি মারা যায়।

এরকম আরও শখানেক ঘটনা আছে, যেখানে ‘ডরে হুয়ে’ সম্প্রদায় হিন্দুদের আক্রমণ করছে, নির্মম ভাবে হত্যা করছে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী ইন্ডিয়ান মিডিয়া সে খবর হয় চেপে গেছে বা অভিযুক্তের নাম ব্যতীত খুব ছোট করে খবর ছেপেছে, যাতে মুসলিমদের ওপর হিন্দুরা ক্ষুব্ধ হতে না পারে।

 

অপইন্ডিয়াতে প্রকাশিত ঝঙ্কার মেহেতার মূল লেখাটির বঙ্গানুবাদ করেছেন রিচার্ড জুনিয়াস জয়বর্ধনে।