ll একটি অ-রাজনৈতিক ব্যাখ্যা ll

0
936

রাজনীতি নিয়ে আর কিছু বলতেই ইচ্ছে করেনা। প্রায় তিতবিরক্ত অবস্থা এই মুহূর্তে আমাদের সবার। একে করোণাসুর কে কাবু করা যাচ্ছে না। অসুরদলনীর পাত্তা নেই। ধর্ম সংস্থাপনার্থায় যার যুগে যুগে আসার কথা তিনি ক্ষীর সমুদ্রে নিজের বিছানায় শুয়ে ভাবছেন, এটা আমার কাজ নয় মোটেই, সংহার এর বিভাগ সামলায় তো ওই পশুপতিনাথ, যেতে হলে সে যাবে, আমি কেন। পশুপতিনাথ নেহাতই এক মধ্যবিত্ত সংসারী, হলেই বা দেবাদিদেব। সংসার গুছিয়ে, বউ কে সামলে বুঝিয়ে এখনও এদিকে খেয়াল দিতে পারেননি। আর এই সুযোগে মর্তে কারিয়া পিরেতের দল তুমুল নাচানাচি, চুলোচুলি শুরু করেছে।

সত্যি বলছি এই অবস্থায় আর রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেই ইচ্ছা করে না। ওইসব চন্দ্রবিন্দু ওয়ালাদের দলবলের কাছ থেকে আর যাইহোক মানুষের নীতি বা রাজনীতি কোনোটাই আশা করা যায়না।

ইহকাল পরকাল যাদের ভরসায় ছেড়ে রেখেছেন, তাদের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে করোনাসুর তুমুল দাপাদাপি করছে। আর এই সুযোগে প্রেত পিচাশের দল করোনসুর দেখিয়ে মানুষের মাথায় ভূতের নাচ করছে।

এই শতাব্দীর সবথেকে বড় পণ্যের নাম যদি আজ থেকে ১০০/২০০/৫০০ বছর পর কেউ জিজ্ঞাসা করে, তাহলে যে নাম টা উঠে আসবে তার নাম হলো করোনাসুর। তা কথা হলো এত বড়ো পণ্য, হাত ছাড়া করতে কি আদৌ কেউ চাইবে?! না না, কি ব্রহ্মদত্তি কি শাঁকচুন্নি কারুর দলের কাজ কর্ম দেখেই তো তা মনে হয়না। আপদ বিদায়ের থেকে আপদ ঠেকানোর জোগাড় যন্ত্রে পচ্চুর বেওসা দাদা, তাতে করে যদি তা শেষমেশ তা বিপদে পরিণত হয় তাতেও পরোয়া নেই।

গদির খেলা, খেলতে ভালো,

পয়সা লাগে ঢেরা।

অসুর বাঁচাও, অসুর ছড়াও,

পয়সা পাবে সেরা।

কি করবেন তাহলে? না, এমনি জিগাইলাম আরকি কত্তা, করণের যে কিছু নাই, সে তো আপনেরে দেখেই বুঝন যায়।

তা, এই চলুক তবে।

আমার রাজনীতি সচেতনতা প্রায় শূন্য। কিছুই বুঝিনা আমি, কে ভালো, কে মন্দ, কিসে আমাদের ভালো, কিছুই না। রাজনীতির নাম শুনলেই বিবমিষা আসে, মাথা ঝিম ঝিম করে, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ও বাবা, এ তো আবার করোণাসুরের আগমন উপসর্গ…….. না না, আমি করোণাসুর উপসর্গ মুক্ত, এটা নেহাতই রাজনীতি অ্যালার্জি।

তবে একথা সত্যি যে মানুষ শ্বাস নিতে না পেরে, ভয়ে কুঁকড়ে, মুড়ি মুড়কির মত মরছে। তা মরুক, খেতি নেইকো। মুড়ি মুড়কি আজকাল আর কেউ খায়না, ও সব বাতিল গেঁয়ো খাবার দাবার। ভয় যত বাড়বে, কারিয়া পিরেতের দলের বেওসা ততো বাড়বে। আরে কোথাও তো বেওসা হচ্ছে, এটাই বা কম কি। রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য বেওসা দরকার, মানুষ অনেক আছে ভান্ডারে, ১২০ কোটি, কিছু মরুক, খেতি নেইকো। এনারা উপদেবতা হলেও, বলতে হয় নেহাতই বড়োলোকের বখে যাওয়া ছেলে পিলের দূর্লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এনাদের মধ্যে, সেসব ছেলেপুলে খোলামকুচির মত টাকার শ্রাদ্ধ করে, এনারা মানুষের করছেন। উপদেবতা সুলভ কাজ বটে। হাসপাতালে চিকিচ্ছে হচ্ছে, নাকি মানুষের টাকার শ্রাদ্ধ হচ্ছে, বোঝা ভার।

করোনাসুর কে নিয়েও গোটা পিথিবি জুড়েই রাজনীতি। সবাই সবাই কে দোষ দিচ্ছে, আর ভারত, এক তৃতীয় বিশ্বের গরীব ভুখা নাঙ্গার দেশ। একে নিয়ে রাজনীতি করা অনেক সোজা। ক্ষমতা থাকলে চিন কে নিয়ে একই খেলা দেখাক দেখি, সেটি হবার যো নেই। চীনের মাজার জোর অনেক বেশি।

ধুর ধুর, আমি রাজনীতি টিতি বুঝিনা বাপু। শুধু বুঝি, প্রচুর লোক মরছে, কিসে মরছে জানি না অবশ্য,। ভয়ে, না ভুলের চোটে, কে জানে। কার ভুল, কি ভুল, কে জিজ্ঞাসা করে? কাকেই বা জিজ্ঞাসা করে? রাজা কে নেংটা বলতে নেই। তাতে রাজার গোঁসা হয়। আর রাজার গোঁসা হলেই আপনার আমার খোসা ছাড়িয়ে নেবে ধরে। খুব সাবধান তাই। কিছু লোক মরছে মরুক, সে তো রোজই মরে, এখন নাহয় তারাই করোনাসুরের হাতে মরছে। তাতে কি, বাণিজ্য হচ্ছে অন্যদিকে সেটা বুঝি কিছু নয়। বৃহত্তর স্বার্থে নাহয় কিছু ম্যাঙ্গো পিউপিল মারা গেলেই বা।

রাজনীতি টিতি না বুঝলেও আরেকটা জিনিস বেশ খেয়াল করতে পারছি, হ্যাঁ হ্যাঁ, ঐতো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। বলেন কি, এখনও বোঝেন নি!! আচ্ছা বোঝাই দেখুন, শুধুই কি ফজলি সম ফাজিল আম-আদমি মরছে! না না, সাথে আমাদের করোণাসুরের সাথে যুদ্ধের “প্রথম সারির” সৈনিক বহু ডাক্তারবাবু ও মারা যাচ্ছেন। দাড়ান, হড়বড় করে নড়বড়ে খোকার মত অত তাড়াহুড়ো করে পরের লাইনে যাবার আগে, একটু দাড়ান। আপনি বলবেন, এ আর নতুন কথা কি? এতো আমরা সবাই দেখছি, রোজ। খুব দুঃখের কথা। বলি ও মশাই, দেখছেন তো রোজ, বুঝছেন কি কিছু। কিছু কি ভাবছেন। না, ভাবছেন না। আমি জানি ততক্ষন আপনারা কেউ কিছু এ বিষয়ে ভাববেন না, যতক্ষণ না ওই ডাক্তারবাবু দের কেউ আপনার ঘরের বা নিজের কেউ হন। বার বার এখানে ডাক্তারবাবু লিখতে গিয়ে কেমন মনে হচ্ছে আমরা ডাক্তারদের যেন একটা অন্য অভিজাত গ্রহের প্রাণী বানিয়েই রেখে দিয়েছি। অভ্যাস অভ্যাস, মানুষ অভ্যাসের দাস। সত্যি।  এতদিন আমরা সবাই, মানে যাদের ঘরের কোনো ছেলে মেয়ে ডাক্তার নয় তারা, এনাদের দুর থেকে দেখে হিংসা করেছি, কিন্তু আজ খবরের কাগজে দেখছি এনারা সব নাকি প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা। খুব একটা বার খাওয়ানো, ক্ষুদিরাম বানানো কথা, প্রথম সারির যোদ্ধা, সেরকম যদি কারুর মনে হয়, তাহলে বলি মনে করুন আগেকার দিনের যুদ্ধের কথা, প্রথম সারিতে পদাতিক সৈন্যরাই থাকতো। সেনাপতি, রাজা, উজির, মন্ত্রী, আমির, ওমরাও এরা থাকতেন পেছনে, নিরাপদ দূরত্বে। এবার বুঝলেন, কি বলতে চাইছিলাম। দেশের সেরা প্রতিভাদের একটা অংশ ডাক্তার হয়, আর আজ তাদের ঘরের লোকেরাই নির্ঘাত, অন্তত একবারের জন্য হলেও, ভেবেছেন বা ভাবছেন যে না পড়ালেই হতো ডাক্তারি। গত এক বছরে তিরুপতির মন্দিরে যত কামানো চুল উৎসর্গ হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখুন বেশিরভাগটাই আমাদের ওই ডাক্তার ছেলেটির বা মেয়েটির বাড়ির বা প্রিয় লোকের। আর তারপরেও, এদের, মানে এই ডাক্তারদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে, করোনাসুরের জুজু দেখিয়ে, তুমুল বাণিজ্য হচ্ছে।

এই বাণিজ্য যারা করছে তাদের চরিত্র…… আচ্ছা বাণিজ্য থুড়ি বেওসা কারা করছে মনে আছে তো? সেই পিরেত, পিশাচ, বরমদেও, শাঁকচুন্নি, ডাকিনী আর তাদের নরক গুলজার করা সাঙ্গ পাঙ্গ আর দলবল। তা এদের চরিত্র, জানেন কি সেটা ঠিক কিরকম। মোটেই সেটা পাতাল ঘরের উপকারী ভূতের মতো নয়, বরং সেটা বরদা চরণের সেই খোক্কসের ভুতটার মত, ম্যাঙ্গো আদমিদের গা থেকে এক্টোপ্লাজম নিয়ে নিজেরা দেহ ধারণ করে, আর সেই সময় আপনি, একজন ছাপোষা নির্বিষ বীর্যহীন আম-মানুষ, ঝিমোতে থাকেন, আর এই ভেবে এই ঝিমুনিটা মেনে নেন, যে দেশের আর দেশের আইনের স্বার্থে এটুকু আপনার কর্তব্য।

আবার অনেকে বলতে শুরু করেছে এ নাকি কলির শেষের শুরু। তা হোক, কিন্তু কলির পর কি আসবে? কলি-তর কিছু? কে জানে। যিনি জানেন, সেই জগৎ পিতার ঘুম ভাঙ্গার কোনো লক্ষণ নেই। নাকি যা হচ্ছে সেটা ঘুম ভাঙারই পরিণতি??হতেই পারে।

তাহলে!?

তাহলে আরকি, ভূতের নাচ দেখুন। মনে করুন সত্যজিতের গুপিবাঘা চলচ্চিত্রের সেই ভূতের নাচ। প্রায় সেরকমই অবস্থা এখন চার পাশে। একদল ভুত আমাদের পরিচিত পিরেত, বরমদেও, শাঁকচুন্নি এদের পেছনে কাঠি বা আছোলা দিচ্ছে, আর এরা আমাদের এক্টোপ্লাজম নিয়ে, আমাদের পেছনে করোনাসুর লাগিয়ে নিজের গদি আর পকেট দুটোই সামলাচ্ছেন।

তাই বলছি, রাজনীতি টিতি গুলি মারুন, সাবধানে নিজের পিতৃদত্ত প্রাণ টাকে আগলে রাখুন, না পারলে পরলোকে গিয়ে নিজেকে সান্তনা দেবেন যে আপনি দেশের জন্য, বেওসার জন্য বলি প্রদত্ত।