পশ্চিমবঙ্গ কি নেতিবাচক মনোভাবের আরেক নাম থেকে যাবে?

0
1084

রাজ্যেগুলি বহুদিন তাদের ঋণ নেবার পরিমানের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধির দাবী জানিয়ে এসেছিলেন, সেটা কার্যতঃ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনজি  গতবছর অতিমারীর সময় তাঁর পাঁচ দিনের ঘোষণায় মেনে নেন l উদ্দেশ্য রাজ্যের হতে আরও নগদ l এই সীমা রাজ্য জিএসডিপির 3.0% থেকে বাড়িয়ে 5% ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী l এর জন্য রাজ্যগুলোর হাতে আরও মোট 4.28 ট্রিলিয়ন ভারতীয় মুদ্রা আসবে l কিন্তু কিছু শর্ত সাপেক্ষে l শর্ত দেবার কারণ, টাকার সঠিক ব্যাবহার নিশ্চিত করা, স্থায়ী সম্পদ বানানো এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানে স্থায়ী উন্নতি l নরেন্দ্র মোদীজি এক্ষেত্রেও  NO FREE LUNCH নীতি মেনেছেন l চারটি শর্ত মানতে হবে l প্রতিটির জন্য 0.25% করে l চারটির মধ্যে তিনটি মানলে আরও 0.5% অতিরিক্ত সীমা পাওয়া যাবে l শর্তগুলি কিছু রাজ্যগুলিকে কিছু আবশ্যিক সংস্কারে বাধ্য করবে ও বহু অপচয় কমাবে l

এই ঘটনার এক বছর পর পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী ডঃ অমিত মিত্র গতকাল 4ই জুন 2021 পত্র লিখলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে এবং সেই খবর আজ আনন্দবাজার পত্রিকায় ছাপানোও হয়েছে l কিন্তু নির্মলাজি কেন শর্ত দিয়েছেন এবং কি শর্ত দিয়েছেন, সেই ব্যাপারে যথারীতি নীরব আনন্দবাজার l তাই এই ব্যাপারে একটু বিস্তারে আলোচনা করা যাক l দেখা যাক নির্মালজি ঠিক করেছেন না ভুল l

এগুলি হল :

এক, রেশনকার্ড ও আধারের সংযুক্তিকরণ, যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে রেশন তুলতে পারে l আর এই নীতির সবচেয়ে বেশী লাভবান হবে সম্ভবতঃ পশ্চিমবঙ্গ, যেখানে IIM স্নাতক থেকে অষ্টম শ্রেণী পাশ যে কোন ব্যাক্তিকেই কাজের জন্য অন্য রাজ্যে চলে যেতে হয় l আধার সংযুক্তি হলে, আমাদের রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক জয়পুর থেকে ম্যাঙ্গালোর যেখানেই যাক না কেন, কম দামে রেশন পেয়ে যাবেন l এই সংযুক্তিতে গুজরাটি বা মারাঠিদের চেয়ে লাভ অনেক বেশী বাঙালির l তাহলে, অমিত মিত্র সাহেবের অসুবিধা কোথায়? তাঁর দল তো আজকের দিনে বাঙালীর একমাত্র অভিভাবক বলে দাবী করেন l

দুই, বিদ্যুৎ ভর্তুকি একমাত্র DBT অর্থাৎ সরাসরি ভর্তুকি যিনি নেবেন তাঁর ব্যাংকে পাঠাতে হবে l যেমন রান্নার গ্যাসে হয় l এর ফলে বিদ্যুৎ বিপনন কোম্পানির দায় অনেক কমে যাবে এবং বিদ্যুতের দামও কমে যাবে l বর্তমানে বিদ্যুতের দামে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের প্রথম তিনটি রাজ্যের মধ্যে l এর অন্যতম কারণ ত্রিফলা আলো থেকে কৃষি বিদ্যুতের ভর্তুকি বহন করতে হয় সাধারণ গ্রাহককে l ঠিক যেমন আজ থেকে 7 বছর আগে রেস্টুরেন্টে ব্যাবহার করা গ্যাসের ভর্তুকি বহন করতে হত সেই সব মানুষকে যারা কয়লার উনুনে রান্না করতেন l বিদ্যুতের ভর্তুকি ক্ষেত্রে এই সংস্কার করলে শুধু সাধারণ মানুষের মাথায় বোঝা কমবে না, বিনিয়োগকারীদের কাছেও পশ্চিমবঙ্গ আরও আকর্ষণীয় হবে l তাহলে অর্থমন্ত্রীর অসুবিধা কোথায়? তিনি তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করা মানুষ যিনি ফিকির সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন l তাহলে কেন এই প্রতিবাদপত্র?

তিন, সম্পদ করের পুনর্বিন্যাস করে মিউনিসিপালিটিগুলোর আয় বাড়ানো l এই ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ গত দশ বছরে ভালো কাজ করেছে এবং সম্ভবতঃ অন্য অনেক রাজ্যের চেয়ে এগিয়ে l তাহলে কেন এই বিরোধ?

চার, পানীয় জল উপর শুল্ক বসানো l মিটার বসানো l  শুদ্ধ পানীয় জল বানানো খুব কম খরচের ব্যাপার না l কলকাতার জলপ্রকল্পে কয়েক হাজার কোটি খরচ হচ্ছে l অথচ এই জল যথেচ্ছভাবে অপচয় করে কলকাতার বস্তি থেকে বহুতলের বাসিন্দারা l এই জলে মিটার বসলে একদিকে যেমন অপচয় কমবে, তেমনই ওই টাকায় গোসাবা, থেকে দিনহাটার প্রত্যন্ত গ্রামে জল পাঠানো যাবে l তাহলে কেন এই অনীহা?

এছাড়া ‘ ব্যবসার পদ্ধতিতে সরলীকরণে ‘ অর্থাৎ EASE OF DOING BUSINESS’ এর জন্য আরও 0.5%. শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতার নিরিখে আজকের ভারতে ব্যাবসা বোঝা দশজন মানুষ খুঁজলে তাদের একজন ডঃ অমিত মিত্র l উনি এই কাজে গত দশ বছরে কিছু সাফল্যও পেয়েছে l তাহলে কেন বিরোধীতা? বরং এর পুরস্কার ঘরে তুলুন না?

পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালাসহ কিছু রাজ্য যথারীতি এর প্রতিবাদ করেছে গত বছরেও l কিন্তু করের পয়সায় ভোট কেনার কাজে বিলিয়ে দেওয়ার দিন বোধহয় শেষ করার সময় এসে গেছে l আমাদের রাজ্য কোনদিন কোন সংস্কার এক কথায় মেনে নিয়েছে, বলে কেউ বদনাম কেউ তাকে দিতে পারবে না l 1977 -উত্তর বাঙালী বুদ্ধিজীবীর মস্তিস্ক সর্বদাই সংস্কারবিরোধী l অটলজি GST কমিটির মাথায় বসিয়েছিলেন ডঃ অসীম দাশগুপ্তকে 2000 সালে l 11 বছরে কিছুই না করে বিদায় নেন l তারপরে ডঃ মিত্র তিন বছর l কিন্তু যখন GST এলো প্রায় দেড় ডজন করকে প্রতিস্থাপন করে, বিরোধে এক নম্বরে বাঙালী l ‘ fiscal discipline’ তথা রাজস্ব বিষয়ক শৃঙ্খলা মোদীজি বরাবর অগ্রাধিকারে রেখেছে l মুদ্রাস্ফীতি, ঋণ মানুষের মাথায় অযাচিত ভাবে বসানোর তিনি বারবার বিরোধী l

এদিকে, 1977 এর পরের বাংলা একটা জিনিস মেনে এসেছে l What India thinks today, Bengal can’t even think day after tomorrow. বিশ্বব্যাংকের লোন, কম্পিউটার ইত্যাদি l এখানেও তাই l কিন্তু ভেবেছিলাম একবছরে কিছু কাজ হবেl 0.25 ট্রিলিয়নের টাকার ব্যাপার, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গেইl একবছর পর আবার বিরোধিতা করে চিঠিl