তৃণমূলের প্রাণভোমরার সন্ধান দিলেন অনুব্রত

0
468

মমতা ও অনুব্রত একদম ঠিক কথা বলেছেন তবুও এবার তারা ভোট হারবেন, কেন জানেন ??

কুমারী মমতাদেবী ও তাঁর সাকরেদ শ্রী অনুব্রত মন্ডল সমানে বলে চলেছেন একটাই কথা – যত কোটি কেন্দ্রীয় বাহিনীই পশ্চিমবঙ্গে আনা হোক না কেন তৃণমূল লোকসভা ভোটএ শুধু জিতবেই না, ৪২ টা আসনেই জিতবে। তাঁরা বলেছেন আমেরিকার সেনাবাহিনী এসে ভোট করালেও একই ফল হবে। কথাটা কি সত্যি !?

দুর্ভাগ্যজনক হলেও কথাটা সত্যি। কিন্তু সেটা এই জন্য নয় যে পশ্চিমবাংলার মানুষ তৃণমূলকে মনের থেকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে জেতাবে। আসল কারণটা কি জানেন ? ভারতে প্রতিটি বুথ স্তরে ভোটের ফল প্রকাশ করা হয়। এক একটি বুথে ১০০/১৫০ থেকে ৭০০/৮০০ মানুষ ভোট দেন। এর মধ্যে অনেক মানুষ বস্তি কলোনি বা কোনও ঘন সন্নিবদ্ধ পাড়ায় থাকেন। অনেক সময়ে এরকম একটা মাত্র বস্তি বা কলোনি নিয়েই একটি বুথ তৈরি হয়ে যায়। এই বুথ স্তরের ভোটের রেজাল্ট বিশ্লেষণ করে প্রতিটি পরিবার কোন দলকে ভোট দিয়েছে, তা সহজেই বের করা যায়। কি ভাবে তা সম্ভব হয় তার ব্যাখ্যা করে একাধিক গবেষণা পত্র – এরকম একটি থিসিস প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার শ্রী নাসিম জায়েদি সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করে বলেছিলেন যে বুথ স্তরে ভোটের ফল প্রকাশ বন্ধ করার জন্যে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা দরকার কারণ এটাই ভারতের সমস্ত নির্বাচনী দুর্নীতির মূল কারণ। এই ছোট রচনাটিতে ঐ গবেষণা পত্রটি নিয়ে বিশদ ভাবে আলোচনা করার সুযোগ নেই। কোন ভোটারের পরিবার কোন দলকে ভোট দিয়েছেন তা বোঝার প্রক্রিয়া বাম আমলেই শুরু হয়েছিল। এক কথায় বলতে গেলে, বুথ স্তরে ভোটের ফল প্রকাশের ফলে ভোটারদের কোনও গোপনীয়তা থাকছে না, ভোটাররা একদম নগ্ন হয়ে পড়ছেন। অথচ গোপনে ভোটই গণতন্ত্রের মূল কথা।

বুথ-স্তরের ভোটের ফল হাতে পাওয়া যাবে, এই ভরসাতেই শ্রী অনুব্রতর মতো মানুষরা কোন বুথে কত ভোটের লিড নিতে হবে তা স্থানীয় মাস্তানদের নির্দেশ দিয়ে চলেছেন। আর সেই বুথগুলি থেকে আশানরুপ ভোট না এলে ঐ বুথের মানুষের পিঠে পড়বে বেদম পেটানি। যেখানে বস্তিতে মানুষ পাবলিক বাথরুম ব্যবহার করেন কিংবা রাস্তার কল থেকে জল নেন, তাদের জল-কল-বাথরুম সব বন্ধ হয়ে যাবে, তারা আর ওখানে থাকতেই পারবেন না। এই অবস্থায় যে কোন গরীব ব্যক্তি তৃণমূলের বিরোধী হয়েও শুধু নিজেই তৃণমূলকে যে ভোট দেবেন তাই নয় বরং পাড়ার অন্যদেরও ভোট দিতে বাধ্য করবেন তৃণমূলের প্রার্থীদের – নইলে সকলকেই মার খেতে হবে যে!!

পশ্চিমবঙ্গে এবং অন্য অনেক রাজ্যেই সমস্ত রাজনৈতিক সন্ত্রাসই নির্ভর করছে এই বুথ-স্তরের ভোটের ফল প্রকাশের ওপর। সরকার যেমন ব্যবসার কন্ট্রাক্ট টেন্ডার ডেকে দেয়, তেমনি অনুব্রতর মত মানুষরা মাস্তানদের মধ্যে টেন্ডার ডাকে – কে কত বুথে কত ভোট লিড দিতে পারবে। বিনিময়ে তারা পাবে বাজার থেকে তোলা তুলবার অধিকার, যথেচ্ছ ধর্ষণের লাইসেন্স, ডাকাতি বা অন্য অপরাধ করার অধিকার। পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকে তোলার ভাগ পাবে I তৃণমূলের আমলে পুলিশ শুধু নিষ্ক্রিয়ই নয়, বরং সক্রিয় ভাবে এই রাজনৈতিক গুণ্ডামিতে তৃণমূলের ক্যাডারদের মত অংশ নিয়ে থাকে। এই থ্রেট জারি থাকে সারা বছর – ৩৬৫ x ২৪ দিন। তাই এক মাস কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল দিয়ে হয়তো তাৎক্ষণিক বুথ দখল আটকাতে পারে কিন্তু সারা বছরের ভয়টা যাবে কোথায় ? তাছাড়া সব সময়ে কেন্দ্রীয়বাহিনী জেলাশাসক, মহকুমাশাসক বা রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসকদের হাতেই থাকে; কেন্দ্রীয় বাহিনীকে খাইয়ে-দাইয়ে বেড়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত কোনও দিন শোনা যায়নি কেন্দ্রীয় বাহিনী কোনও বুথ দখলে বাধা দিয়েছে বা গুলি চালিয়েছে।

এবার ২০১৯ এর ভোটে কেন্দ্রীয়বাহিনীকে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে না রাখার দাবী ওঠাতেই সুকুমারী মমতাদেবী একটু ভয় পেয়েছেন। কিন্তু বুথ স্তরের ফল প্রকাশ হবে যেহেতু, দিনের শেষে তিনি জিতে এসে বলবেন মানুষকে ভালোবেসে ভোটে জিতেছেন। কেন্দ্রীয়বাহিনী ওনার জয় আটকাতে পারেনি।

কুমারী মমতাদেবী দাবী তুলেছেন ই. ভি. এম মেশিনে কারচুপি হতে পারে – অর্থাৎ পেপার ব্যালটে ভোট হলে ভালো হয়। অর্থাৎ কিনা প্রয়োজন মত ব্যালট লুঠ এবং লোপাট করা যায় I প্রতিটা বুথে একই রকম পদ্ধতির দরকার পরে না। যেখানে যেখানে ভোটের মার্জিন একটু কম পড়তে পারে, সেই কটা বুথের মানুষকে ভয় দেখালে বা দু-দশটা বুথ দখল করলেই কাজ হয়ে যাবে। মমতাদিদি পেপার ব্যালট হলে খুশি হন ? বেশ ভালো কথা। ওনাকে বলুন, পেপার ব্যালট এই ভোটে হোক কিন্তু কোনও বুথ-স্তরের ভোটের ফল প্রকাশ করা হবে না – সব বুথের ব্যালট একসাথে মিশিয়ে গোনা হবে এবং পুরো লোকসভা কেন্দ্রের ভোটের ফলই একেবারে প্রকাশ করা হবে। দেখুন উনি রাজি হন কিনা। এখানেই লুকিয়ে আছে তৃণমূলের প্রাণভোমরা।

বিশ্বাস হচ্ছে না ? ভাবছেন শুধুমাত্র বুথ-স্তরের ফল প্রকাশ করার মধ্যেই তৃণমূলের প্রাণ ভোমরা হবে কি করে ? বেশ, একটা কাজ করুন। শ্রীমতী মমতাদেবীর সামনে গিয়ে বলুন, নির্বাচন কমিশনের থেকে এইমাত্র খবর এসেছে যে বুথ-স্তরের ভোটের ফল এখন থেকে প্রকাশ করা হবে না, বদলে পুরো লোকসভা কেন্দ্রের ভোটের রেজাল্টই কেবল প্রকাশ করা হবে। এর ফল কি হবে জানেন ? শ্রীমতি দিদি চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যাবেন, ওনার হার্ট ফেল হয়ে যেতে পারে। কেন জানেন ? এটাই ওনার প্রাণ ভোমরা। কারণ বুথের ভোটের ফল জানতে না পারলে তৃণমূল পার্টি শুধু হারবেই না, বহু জায়গায় জামানত জব্দ হবে এবং এই পার্টি সাইনবোর্ড পার্টিতে পরিণত হবে। দিদিদেবীর জনপ্রিয়তার মিথ্যে মিথ চুরমার হয়ে যাবে। যে যে বামপন্থী ক্লাবগুলিকে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে হাত করেছেন, তারাও TMC কে ভোট দেবে না। এই সত্য পিসি দেবী জানেন, ওনার অনুব্রত অনুচরেরা জানে, ওনার পুলিশরা জানে – পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি মানুষ জানেন।

তৃণমূল বলে বেড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রার্থী মমতাদেবী। প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের আসল প্রার্থী হলো ওদের গুন্ডা, তাদের দোসর রাজ্য পুলিস, সিন্ডিকেটরাজ ও ইসলামিক মাফিয়া – তৃণমূল তথা পশ্চিমবঙ্গের আসল ক্ষমতা তাদের হাতে। অনুব্রত আজ প্রতিদিন ভোটারকে ভয় দেখিয়েও যেভাবে জেলের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার থেকে ওনার এই কথাই প্রমাণিত হয় যে – নির্বাচন কমিশনও নকুলদানা খায়। কিন্তু বুথের ভোটের ফল প্রকাশ না করা হলে বিশাল বেলুন থেকে ফুস করে হাওয়া বেরিয়ে যাবে। পশ্চিমবাংলার মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পাবে। এটা হলে প্রতিটি মানুষের মনে যে উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরি হবে সেই ইউফোরিয়াতে দেশের অর্থনীতি ও প্রগতিতে বান আসবে। যেদিন বুথ স্তরের ভোটের ফল প্রকাশ বন্ধ হবে সেদিনটা হবে ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা নির্বাচন কমিশনএর কাছে আবেদন রাখছি যেহেতু পশ্চিমবঙ্গে অনুব্রতর মত মানুষরা প্রতিদিন প্রকাশ্যে ভোটেরদের ভয় দেখাচ্ছে, অন্তত শুধু পশ্চিমবঙ্গের বুথ-স্তরের ভোটের ফল প্রকাশ বন্ধ করা হোক। আমরা সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলাও করবো। পিসির পেষণে পিষ্ট পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃত ভোট হোক।