তিন তালাক রদের পর খোরপোশ আদায়ের লড়াইয়েও জয় আতিয়া সাবিরের

0
756

বঙ্গদেশ ডেস্ক: আবার একটা কঠিন লড়াই। আবারও সেখানে জয়। ফের বিজয়ীর নাম আতিয়া সাবরি। তাৎক্ষণিক তিন তালাক মামলায় যে ছ’জন ব্যক্তি আর্জি জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের দরবারে তাদের মধ্যে অন‌্যতম ছিলেন আতিয়া সাবরি। সেই মামলার রায় কী হয়েছিল তা সবার জানা। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের এই সাহসী মহিলার সাম্প্রতিকতম জয়নিশানটি যেখানে গাঁথা হল, সেখানে বিবাহবিচ্ছিন্ন আতিয়া আদায় করে নিলেন খোরপোশও। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের পারিবারিক আদালতের নির্দেশ মতো দুই কন‌্যার ভরনপোষণের জন‌্য তাঁকে প্রতি মাসে খোরপোশ বাবদ ২১ হাজার টাকা দিতে হবে তাঁর প্রাক্তন স্বামীকে।

তাঁর প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে চলছিল ভরপোষণের এই মামলা। এরই মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সুপ্রিম নির্দেশে ১৪০০ বছরের প্রাচীন তিন তালাক ব্যবস্থা রদ হয়। ভারতে বাতিল ঘোষণা করা হয় তাৎক্ষণিক তিন তালাক (Triple Talaq)। এরপর ফের একটি কঠিন লড়াইয়ে বিজয়ী তিনি।

২০১২ সালে বিয়ের পর থেকেই শশুরবাড়ীতে শুরু হয় সমস্যা। নানা টালমাটালের মধ‌্য দিয়ে আতিয়ার বিবাহিত জীবন শেষ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। ওই বছরই তাঁর দ্বিতীয় কন‌্যার জন্মের পরপরই তাঁকে বাড়ি থেকে জোরজবরদস্তি বের করে দেন তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আতিয়া জানিয়েছে, তাঁর কাছ থেকে পণ বাবদ ২০ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এর কিছুদিন পর ২ নভেম্বর তাঁর প্রাক্তন স্বামী ওয়াজিদ আলি একটি কাগজে তিনবার ‘তালাক’ লিখে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। তার ঠিক ২০দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ দেওয়ার এই তাৎক্ষণিক তিন তালাকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন আতিয়া। প্রথম থেকেই তাঁর কন‌্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া নিয়ে পরিবারের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় সন্তানও কন‌্যা হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে দাঁড়ায়। যা শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়। একদিকে তিনি প্রাগৈতিহাসিক তালাক পদ্ধতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন অন‌্যদিকে তেমনি নিজের দুই কন‌্যার ভরনপোষণের জন‌্য মামলা চালিয়ে গিয়েছেন। এদিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে, প্রতি মাসে ২১ হাজার টাকাই শুধু নয়, এই ছ’বছর সময়ের জন‌্য ‘এরিয়ার’ অর্থাৎ গোটা সময়ের জন‌্য বকেয়া অর্থ বাবদ ১৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকাও আতিয়াকে দিতে হবে ওয়াজিরকে।

আতিয়ার কাছে এটা ছিল ‘সম্মানের জন‌্য লড়াই’। তাঁর কাছে এই মামলায় জয়টাও ছিল ‘মর্যাদার জয়’। এমনটাই জানিয়েছেন আতিয়া। অন‌্য মুসলিম মহিলাদেরও এমন অন‌্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আদালতে দাঁড়িয়ে আতিয়া বলেছেন, “বিয়ে যখন দু’জন মানুষের সম্মতিতে একটা চুক্তি, তাহলে শুধুমাত্র পুরুষটির কেন সেই অধিকার থাকবে সেই বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার? কেন একজন মহিলার এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার অধিকার থাকবে না। তাঁরও সেই অধিকার থাকা উচিত।” সেই অধিকারেই দাবিতেই সায় দিয়েছে পারিবারিক আদালত।