অসাধারণ গৌড়দেশের চিত্র যেমনটি সপ্তদশ শতকের সংস্কৃত পণ্ডিত ধুন্দিরাজা বর্ণনা করেন

0
1197


সন্দীপ বালকৃষ্ণ

 

মনোরম সকালের স্নিগ্ধ রোদ দেখা দিয়েছিল মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃত পাণ্ডিত্যে। এই পাণ্ডিত্যের দুর্দান্ত ইতিহাস শিবাজীর সময় থেকে প্রায় বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় তিন শতাব্দী ধরে সমুজ্জ্বল ছিল। দেখা যায় যে এই যুগে একের পর এক  অসাধারণ সমস্ত সংস্কৃত বিদ্বানের আবির্ভাব হয়েছিল।

 

এইরকম এক বিশিষ্ট সংস্কৃত পণ্ডিত হলেন ধুন্ধিরাজা। ধুন্ধিরাজা  ১৬৫০ ১৭১০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন মহারাষ্ট্রীয় সংস্কৃত পণ্ডিতদের এক প্রাচীন বংশের বংশধর। তাঁর পিতা শ্রীরঙ্গভট্টও ছিলেন প্রখ্যাত এক সংস্কৃত পণ্ডিত। ধুন্ধিরাজা কাশীতে বাস করতেন এবং শম্ভাজী মহারাজের শাসনকালে তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

 

সংস্কৃত ব্যাকরণ নিয়ে তাঁর বিখ্যাত রচনাটি হল গীর্বাণপদমঞ্জরী, যেখানে কথোপকথনের মাধ্যমে ব্যাকরণ শেখানোর একটি কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। কথোপকথনের বিষয়: বারাণসী ভিত্তিক ব্রাহ্মণের জীবনের একদিন – সকাল থেকে রাত অবধি। এটি এক ব্রাহ্মণের সংক্ষিপ্ত কাহিনী: প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী তিনি একবার তাঁর বাড়িতে এক সন্ন্যাসীকে নৈশভোজের জন্য নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সন্ন্যাসী যখন তাঁর সাথে দেখা করেন, ব্রাহ্মণ  বলেন, “আমি গৌড়দেশে (বাংলায়) জন্মগ্রহণ করেছি এবং সেখানে বহু বছর কাটিয়েছি।

নৈশভোজের আয়োজন বেশ জমজমাট ছিল এবং সন্ন্যাসীও সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। নৈশভোজের পরের কথোপকথন কিছুটা এরকম হয়।
সন্ন্যাসী : “আপনি এতদিন গৌড়দেশে কেন থাকলেন?”
ব্রাহ্মণ: “তর্ক নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য, যা ছিল আমার বাবার বিশেষত্ব। গৌড় দেশে দুর্দান্ত তর্ক পন্ডিত এবং শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়াও আমি আরও অনেক বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। সেখানকার লোকেরা তাদের আচরণে স্মৃতি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে পরিচালিত হয়।”


সন্ন্যাসীর কৌতূহল আরও প্রকট হয় এবং তিনি বাংলা সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী হন। তিনি বাংলার পবিত্র তীর্থ সম্পর্কেও খোঁজখবর নেন। নিমন্ত্রণকর্তা তখন নিম্নলিখিত প্রধান তীর্থগুলি তালিকাভুক্ত করেন:

গঙ্গাসাগর তীর্থ

কুমারিকা ক্ষেত্র যার প্রধান আকর্ষণ হল দেবী কুমারিকা

ব্রহ্মপুত্র, যার প্রধান দেবতা কামরূপেশ্বর আর সাথে দেবী কামাক্ষী

এবং এইভাবে কথোপকথন চলতে থাকে। তারপর সন্ন্যাসী বঙ্গদেশের পূর্ণ বিবরণ জানতে চান। উত্তরে যা উদঘাটিত হয়, তা হল গৌড়দেশের একটি পূর্ণ উজ্জল এবং বর্ণময় চিত্র, একটি বিস্তারিত গৌরবগাথা যেখানে বাদ যায় নি প্রায় কিছুই। ধুন্দিরাজার চিত্র এবং অন্যান্য বিদেশী পর্যটকদের যেমন ইবন বতুতা, বা হুয়ান ও বার্নিয়ার প্রদত্ত ছবিগুলির মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা পরিষ্কার, এবং সেই পার্থক্যও আমরা দেখব।


উপাদানের প্রাচুর্য

বস্ত্র

বিভিন্ন ধরণের দারুন দামী পোশাক। রঙিন বস্ত্র খুব ব্যয়বহুল ছিল।

২। অত্যন্ত সূক্ষ্ম রেশমের পোশাক।

রঙিন রেশমবস্ত্র যা একমাত্র বাংলায় উৎপাদিত হত। 

৪। মসলিন বা  খুব সূক্ষ্ম সুতির কাপড় (ধুন্দিরাজা অতিসূক্ষ্মশব্দটি ব্যবহার করেন)

 

ভুট্টা, ডাল এবং শস্য

চাল, গম, যব, ছোলা, মটরশুটি, মসুর, রাজমা, লঙ্কা (একটি জাতের শস্য), তিল, লম্বা মরিচ, জাফরান, বুনো চাল, ভুট্টা, সরিষা (তিন রকমের) এবং চিঁড়ে।

সাদা চিনির এক দারুণ প্রজাতি।

গুড়

৪। আটা/ময়দা

বলা হত যে এক যুবতী মহিলার, তার পুরুষের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠার জন্য একটা মূল্যবান গুণ ছিল নিজের পদ্মের মতো হাত দিয়ে দুধ ও চিনিতে ভিজিয়ে রাখা শুকনো চিঁড়ের সুস্বাদু খাবারপরিবেশন করা।

তেল

তিল, সরিষা, তিসি, রেড়ি, সূর্যমুখী এবং বিভিন্ন ধরণের সুগন্ধযুক্ত তেল। তেলের উৎপাদন একটি সমৃদ্ধ শিল্প ছিল।

 

উদ্ভিদকুল

১। ফল: আম, কাঁঠাল, নারকেল, সুপারি, কলা, কুল, গোলাপআপেল, ডালিম, কমলা, আতা, আনারস, ডুমুর, চুন, তেঁতুল, কুঁচি এবং জায়ফল।

২। ফুল: কদম্ব, বকুল, পারিজাত, অশোক, চম্পক, কেতকী, তমাল, করঞ্জা, হরিতকী, বিভীতকী, প্লক্ষ, নাগকেশরী, সেবন্তিকা, মল্লিকা, কন্দপুষ্প, আসন, মন্দার, জাজি, বন্ধুক, সিন্ধুর, মাচি, দমন, মরুগা, পদ্ম (নীল এবং লাল)

৩। গাছ: শাল, সরল, অর্জুন, কেদুর, অশ্বত্থ, নারকেল, অগুরু (কালো), বট, বাঁশ, ধা খাদিরা, বিভীতক, পলাশ, ভল্লাতক, গুগ্গুল (আঠা), অগস্তি, ধাত্রী, তেঁতুল, করোন্দা, পাইন, চন্দন, লাল চন্দন…

৪। লতা ও ঘাস: মাধবী, আকাশবল্লী, পিপ্পলি (লম্বা মরিচ), গুদাচি, নাগদমনী, গুঞ্জা, নাগবল্লী, অপস্মর, কুশ, কাশ, শর (সাদা ঘাস), বিষ্ণুক্রান্তা ও দূর্বা।

 

প্রাণীকুল

পাখি: রাজহাঁস, বক, কাক, কোকিল, ময়ূর, চাতক, চক্রবাক, তোতা, সারিকা, তিতির (বিভিন্ন জাতের), জলপাখি, সাদা সারস, পানকৌড়ি, হাঁস, শকুন, নীলকণ্ঠ, পেঁচা, পায়রা (বিভিন্ন জাতের) এবং তিত্তীভা।

২। বন্যপ্রাণী: বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বন্য মহিষ, বাইসন, নেকড়ে, শিয়াল, গণ্ডার, হরিণ, ভাল্লুক, বাঁদর, বন্য কুকুর এবং মৃগ।

. লোকালয়ের প্রাণী: গরু, মহিষ, ছাগল, বন্য ছাগল, ভেড়া, উট, হাতি, ঘোড়া, খচ্চর, গাধা, বিড়াল, ইঁদুর, নেউল, সাপ, ব্যাঙ, গন্ধগোকুল, গিরগিটি, টিকটিকি, বিছা, মাছি, মশা, ছারপোকা, মৌমাছি বা বোলতা, পোকা (বা পঙ্গপাল বা গঙ্গাফড়িং), ভীমরুল এবং পিঁপড়ে।

জলজ প্রাণী: মাছ, ছোট চকচকে মাছ, কচ্ছপ, কুমির, জলজসাপ, চিংড়ি, জলের কাঁকড়া, জোঁক, জল ইঁদুর এবং মৎস্যপুরুষ।

ধুন্দিরাজা গৌড়দেশকে যেভাবে নিখুঁত এবং বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ হল পূর্বোক্ত সংগ্রহটি। তিনি বিশেষত বাংলার উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের বিবরণ বর্ণনার সময় প্রসন্নতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন।

এ ছাড়া ধুন্দিরাজা আরও বর্ণনা করেছেন তাজা দুধ, জমাট দই, মাখন এসব জিনিসের কী ধরণের প্রাচুর্য ছিল এবং সুগন্ধি ঘি এর কেমন পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল; ধনী নাগরিকরা কীভাবে দুর্দান্ত এবং ব্যয়বহুল রেশমের পোশাক, অন্যরা সূক্ষ্ম সুতীর তৈরি পোশাক পরতেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে সেখানে গম, তিল, ছোলা সহ প্রত্যেক ধরণের শস্য ও ডাল জন্মাত এবং কীভাবে বিশেষত ছোলাকলাই এবং মাসকলাই বাজারে প্রচুর পরিমাণে উপলব্ধ ছিল।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপাদানের মধ্যে যেটি ধুন্দিরাজাকে খুব মুগ্ধ করেছে তা হল সমৃদ্ধ নৌকা তৈরি এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্প। বাংলার নদনদীর পাড় এবং উপকূলরেখা সমস্ত আকার, আকৃতির নৌকায় ভরপুর ছিল। বাংলার নাবিকদের তিনি বিশেষভাবে প্রশংসা করেন, যারা নৌবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ। কিছু জেলেও জাহাজ নির্মাণের শিল্পে নিযুক্ত অত্যন্ত দক্ষ কর্মী হিসাবে নাম করেছিল।

 

সমাজ

সমাজ ও এর বিভিন্ন উপাদানগুলির এক বিস্ময়কর প্রতিকৃতি তুলে ধরার জন্য ধুন্দিরাজা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মসী ব্যয় করেছেন। এখানে তার একটি সংক্ষিপ্ত অংশ দেওয়া হল।

গৌড়দেশের সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রের একটি স্বাস্থ্যকর মিশ্রণ ছিল। তারপরে তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত প্রবাসীদের একটি অত্যন্ত তথ্যমূলক তালিকা সরবরাহ করেছেন: গুর্জর, অন্ধ্র, কর্ণাট, দ্রাবিড়, মহারাষ্ট্র, চিত্তপাবন, কাণ্বব, মধ্যান্দিন, জৈন, কান্যকুব্জ, সারস্বত, মাথুর, পাশ্চাত্য (অর্থাৎ ইউরোপীয়), মরুজ (মারোয়ার, রাজস্থান), মগধীয় (মগধ, বিহার), মৈথিল (মিথিলা, বিহার), পার্বত্য (পাহাড়ের লোক), ত্রিহুতজ (তিরহুতের লোক), এবং উৎকল (ওড়িশা)। মজার বিষয় হচ্ছে, ধুন্দিরাজা লক্ষ্য করেছেন যে গয়া ও প্রয়াগ থেকে ব্রাহ্মণগণ কীভাবে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত তীর্থযাত্রীদের সাথে বাংলায় গঙ্গার তীরবর্তী পবিত্র নগর এবং শহরগুলি ঘুরে দেখতেন এবং তীর্থযাত্রার সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন আচারঅনুষ্ঠান করতেন। এই ব্রাহ্মণগণ গয়াপালক এবং প্রয়াগপালক নামে পরিচিত ছিলেন।

এটা স্পষ্ট যে বিশ্বের মধ্যে বাংলা ছিল অভিবাসীদের এক প্রিয় গন্তব্য, ঠিক যেমন বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল।

প্রতিটি পেশা, দক্ষতা এবং নৈপুণ্য তার চর্চাকারীদের যথেষ্ট পরিমাণে আয়ের সুযোগ করে দিয়েছিল। নাপিত, জেলে, নৌকা তৈরীর কারিগর, তামাশিল্পী, কামার, ধোপা, তাঁতি, মুচি, ছুতোর, বাঁশকর্মী, ফুল বিক্রেতা, শিকারি, কারিগর, চিত্রশিল্পী, দর্জি, বণিক, আন্তর্দেশীয় ব্যবসায়ী এবং কবিরা আরামদায়ক জীবনযাপন করতে পারত। চিকিৎসক, জ্যোতিষী এবং জাদুকরদের খুব চাহিদা ছিল। এবং প্রতিটি সমাজের মতো এখানেও নৃত্যশিল্পী, রাস্তার সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা, নাটকের দল, বেশ্যা ও তার দালালদের প্রাচুর্য ছিল।

তারপরে গৌড়দেশের সমাজের অন্য একটি সর্বব্যাপী বৈশিষ্ট্য ছিল: তপস্বী, সাধু, সন্ন্যাসী এবং ভিক্ষুরা কেবল সমাজের আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক অভিভাবকরূপে বিরাজমান ছিলেন না, তাঁরা সকলের ভয় ও শ্রদ্ধার ছিলেন। এঁদের দুটি বিস্তৃত বিভাগ ছিল। সকলেই তাঁরা জটাজুটধারী ছিলেন এবং তাঁদের সমস্ত আবেগকে বশীভূত করে সাধনার প্রতি অনুগত হয়েছিলেন।প্রথম বিভাগটি ছিল ভৈরবউপাসক (দেবতা ভৈরব বা শিবের ভক্ত) এবং দ্বিতীয়টি ছিল শক্তি (কালী ও দুর্গা) উপাসক। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানকাল সহ দীর্ঘকাল ধরে — বাংলা শক্তিআরাধনার একটি মহান কেন্দ্র হিসাবে খ্যাত। এ ছাড়া তন্ত্রের গোপন বিষয়গুলি জানতে গোটা ভারতবর্ষের লোকেরা গৌড়দেশে আসতেন।

বারাণসীর ওই ব্রাহ্মণ আয়োজক শেষে বলেন, “এই পৃথিবীতে যা কিছু জিনিসকে সেরা বলে বিবেচনা করা হয় সেগুলি সবই বাংলায় পাওয়া যায়।

এরপর সন্ন্যাসী যিনি এখন পর্যন্ত নিবিড় মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন ,পুরোপুরি মুগ্ধ হলেন এবং নড়েচড়ে বসলেন। তিনি তাঁর আমন্ত্রণকারীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন যে তাঁর পরবর্তী গন্তব্য হতে চলেছে গৌড়দেশ। আনন্দিত হয়ে ব্রাহ্মণ বললেন যে এটি একটি দুর্দান্ত পরিকল্পনা, এবং কিছু পরামর্শও দিলেন। তিনি তাঁকে প্রথমে পবিত্র গঙ্গাসাগরে একটি পবিত্র ডুব নিতে বললেন, যেখানে মা গঙ্গা সমুদ্রের সাথে মিশে গেছেন (বঙ্গোপসাগর)। গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রা, যা প্রতিবছর মকর সংক্রান্তি চলাকালীন হয়, হল কুম্ভ মেলার পরে তীর্থযাত্রীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সঙ্গম।

এরপরে, ব্রাহ্মণ পরামর্শ দিলেন যে সন্ন্যাসীর উচিত দুর্দান্ত পুরুষোত্তম ক্ষেত্র পরিদর্শন করা এবং তারপর গৌড়দেশের অন্যান্য পবিত্র তীর্থক্ষেত্রগুলিও ঘুরে দেখা। সন্ন্যাসী তাঁর আয়োজককে আশ্বাস দিয়ে বললেন যে তিনি কাশীতে চাতুর্মাস্য শেষ করে তাঁর পরামর্শ মতই কাজ করবেন।

এই গভীর ভাবের মধ্য দিয়ে ধুন্দিরাজা তাঁর বর্ণনা শেষ করলেন।

 

একটি অসাধারণ আদর্শ

গীর্বাণপদমঞ্জরীর এই অংশটি সবদিক দিয়ে অসাধারণ। দুঃখজনক ভাবে ভারতীয় ভাষায় এ জাতীয় ব্যাপকতার সাথে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখিত একটি সম্পূর্ণ ও বিশদ ভূগোল বিবরণ বেশ বিরল। একাধারে এটি একটি জ্ঞানকোষ, ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক অভিধান এবং একটি ছোটোখাটো ভৌগোলিক শব্দকোষ। এটি নিবিড়, নিখুঁত আবেগ এবং নিষ্ঠার সাথে লেখা। ধুন্ধিরাজের কলম যেন এখানে আদিম সনাতন সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের মধুতে নিমজ্জিত হয়েছে। এই সুনির্দিষ্ট গুণ, এই মহিমান্বিত অনুভূতি এবং এর পবিত্রতা যা এর মধ্যে আছে, তা ইবন বতুতা, বা হুয়ান এবং বার্নিয়ারের বর্ণনায় অনুপস্থিত।
ভারতবর্ষের সভ্য, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, পেশাগত এবং আধ্যাত্মিক ইতিহাসের পুনর্গঠন তখন অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে এবং সত্যিই সমৃদ্ধ হবে যখন আমরা আমাদের নিজস্ব লোকেদের দ্বারা লিখিত এ জাতীয় বিবরণগুলি সন্ধান করব। বিদেশী বর্ণনাগুলি কার্যকর তবে কেবলমাত্র গৌণ, সহায়ক উপায়ে। আমরা যেমন আমাদের নিজস্ব শ্বাসের ছন্দ সম্পর্কে অভ্যন্তরীণভাবে সচেতন, তেমনই আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির শ্বাসের ছন্দটি সচেতনভাবে ধরা দরকার, যেভাবে ধুন্দিরাজা করেছিলেন। তবে, ধুন্দিরাজার মতো ব্যক্তিরা তাঁর যুগের আদর্শ ছিলেন, ব্যতিক্রম নয়।

সুতরাং, আমাদের নিজস্ব সময়ের জন্য, ধুন্দিরাজার মতো গুণী ব্যক্তিরা এক মহান আদর্শ হিসেবে কাজ করেন, যে কিভাবে সনাতন আধ্যাত্মিক সভ্যতার সুগন্ধ গ্রহণ করে, এটি আরও আত্মস্থ করে, আমাদের শিরায়শিরায় বাহিত করা যেতে পারে। সেই আদর্শের লিখিত বা অন্য ধরণের বহিঃপ্রকাশ তখন স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটবে।

 

মূল লেখাটি ধর্ম ডিসপ্যাচ পত্রিকায় প্রকাশিত। অনুবাদ করেছেন সূর্যদেব। মতামত লেখকের, বঙ্গদেশ তার জন্য দায়ী নয়।