বঙ্গদেশ ডেস্ক:শাস্ত্রানুসারে, নবরাত্রির অষ্টম দিন বা ‘অষ্টমী’ হল দুর্গাপূজার পবিত্রতম দিন। আশ্বিন মাসের শুক্লাষ্টমী তিথির এই দিনটিকে ‘দুর্গাষ্টমী’, ‘মহাষ্টমী’, ‘বীরাষ্টমী’ বলে থাকি। আশ্বিন মাসের এই অষ্টমী তিথিতেই অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভশক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল। সনাতন ধর্মে এই বিশেষ দিনটির মাহাত্ম্য অনেক। এই অষ্টমীর দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অস্ত্র পুজো করেন। কিন্তু, কেন অষ্টমী তিথিতে এই অস্ত্র পুজো করা হয়?
শাস্ত্রীয় মতে, এই বিশেষ দিনেই দেবী দুর্গার অস্ত্রশস্ত্রকে দেবজ্ঞানে অর্ঘ্য প্রদানের মতো পুজো করা হয়। কারণ দেবতাগণ অস্ত্র প্রদান করে এই দিনেই দেবীকে রণসজ্জায় সজ্জিত করে তুলেছিলেন। তাই এই দিনটিকে বীরাষ্টমী আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবার ভিন্ন মতে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই দিনটিকে বলা হয় ‘অস্ত্র পূজা’র দিন। বীর সন্তান লাভের জন্য এই বীরাষ্টমী ব্রত পালন করেন মহিলারা।
< বাঙ্গালী হিন্দু যে একসময় অস্ত্র ধারণ করতে পারত, অস্ত্র নিয়ে প্রবল তেজে যুদ্ধ করতে পারত, সেই তেজ আজ ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় রমরমা শুরু হয়েছে থিম পুজোর। বীরাষ্টমী সম্পর্কে তাই বর্তমান প্রজন্ম অজ্ঞাত। তারা কখনও জানবেও না যে বাঙ্গালী হিন্দু বীর যোদ্ধার মত অস্ত্রশস্ত্র হাতে লড়তে পারত, পাল্লা দিয়ে লাঠি খেলত। তবে প্রাচীন এই রীতিকে মুষ্টিমেয় যেকজন বাঁচিয়ে রেখেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ভারত সেবাশ্রম সংঘ। এছাড়া উত্তর কলকাতার বাগবাজারে সার্বজনীনেও পালিত হয় বীরাষ্টমী ব্রত। https://fb.watch/fWyQptvEGF/
শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে, এই অষ্টমী তিথি অসুরবিনাশী শুদ্ধসত্তার আবির্ভাব তিথি। এই দিনে দেবী মহালক্ষ্মীরূপা বৈষ্ণবী শক্তি। দেবী সেদিন রাজরাজেশ্বরী রূপধারণ করেন। দু’হাত খুলে বর দেন ভক্তদের। তাই এই বিশেষ দিনে বীর সন্তান লাভের আশায় বীরাষ্টমী ব্রত পালন করেন মহিলারা। আশ্বিন মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে বীরাষ্টমী ব্রত রাখা হয়। দীর্ঘ আট বছর এই ব্রত পালন করতে হয়।
ব্রিটিশ শাসন আমলে দেবী দুর্গার পুজোকে আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার করে তুলেছিলেন তৎকালীন স্বাধানতী সংগ্রামীরা। সেইসময়ই বিভিন্ন কুস্তির ঠেকে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করা হয়। আগে অষ্টমী তিথিতে কুস্তি প্রদর্শিত হত। একইসঙ্গে এই বিশেষ দিনে বীরদের সম্মান জানানোরও রেওয়াজ ছিল। কিন্তু সময় পরিবর্তনের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্ম ভুলেছে অষ্টমীর ব্যাখ্যা। অস্ত্র পুজোর রীতি এখন বিলুপ্তির পথে বলাই যায়।
১৯২৭ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন নেতাজি। ১৯২৮ সালের কলকাতার বিভিন্ন দুর্গাপুজোর সঙ্গে তিনি যুক্ত হলেন। প্রথম থেকেই তিনি লাঠি খেলা, কুস্তি প্রভৃতিকে উৎসাহ দিতেন। তিনি যুক্ত হওয়ায় উৎসাহ আরও বাড়ল। ১৯৩০ সালে কলকাতার মেয়র হওয়ার পর, বেশ কিছু পুজো কমিটি নেতাজিকে সভাপতি করল। নেতাজির উদ্যোগে ক্লাবগুলিতে চালু হল বীরাষ্টমী। ফলে বৃহত্তর পরিসরে বাংলাজুড়ে বীরাষ্টমী পালিত হতে শুরু হয়েছিল।
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বারাণসী আশ্রমে শ্রীশ্রী দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে হিন্দুজনগণের লুপ্ত বীরত্ব, পরাক্রম জাগরণের জন্য সঙ্ঘের সন্ন্যাসী, ব্রহ্মচারী, সেবক, স্বেচ্ছাসেবকগণের আত্মরক্ষামূলক প্রদর্শন।
Demonstration of heroic actions with sword, trident at Bharat Sevashram Sangha, Varanasi. pic.twitter.com/0qZoLf9j2O— শ্রী শ্রী প্রণব মঠ ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ (@Pranav_Math) October 3, 2022