বঙ্গদেশ ডেস্ক – ফ্রান্স থেকে কোলকাতার দূরত্ব অনেকটাই, কিন্তু তাতে কি আর ‘উম্মাহ’ বাঁধ মানে? ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবার উপরে নবি। সেই নবি মহম্মদের একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করায়, ফ্রান্সের এক স্কুল শিক্ষকের শিরচ্ছেদ করে চেচেন বংশোদ্ভূত এক কট্টরপন্থী জঙ্গি। এর পরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁন পলিটিকাল ইসলামের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হন।
ম্যাক্রঁন কিন্তু কোনোভাবেই বিশেষ ধর্মবিরোধী নন, দক্ষিণপন্থী ও নন, বরং তিনি সেন্ট্রিস্ট লিবারাল হিসেবে পরিচিত এবং তেমন একটি দলেরই সদস্য। এই চরমপন্থী হামলার পরে ঘোষণা করেন যে ফ্রান্সে ব্যঙ্গাত্মক চিত্র প্রদর্শন কোনো দিন বন্ধ করা হবে না। সেই সাথে ইতিহাসের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যা এবং শিরচ্ছেদ করার প্রতিক্রিয়ায় কট্টর ইসলামের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়া ভাষার প্রয়োগ করেন, সাতগে ফরাসী সরকার কঠোর পদক্ষেপও নিচ্ছে।
এই নিয়েই শুরু হয় সমস্যা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী দেশগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তুর্কি ও পাকিস্তান। অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় আক্রমণ করেন এর্দোগান, লক্ষ লক্ষ ফ্রেঞ্চ নাগরিকের হত্যা করাকে ট্যুইটারে সমর্থন করেন মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহাথির মহম্মদ। সারা বিশ্বের ইসলামিক দেশগুলি প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। ম্যাক্রোঁর কুশপুত্তলীও পোড়ানো হয়। কোথাও কোথাও আবার তার পোস্টারে জুতো দিয়েও মারা হয়।
পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজও। ফরাসী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে শনিবার বাংলাদেশের মতই কলকাতার আলিপুর সন্তোষ রায় রোডের ফ্রান্স কনসুলেটের সামনে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যায়। তারা কনসুলেটের সামনে প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখায়, স্লোগান দেয়। তবে কনসুলেটের প্রায় ৩০০ মিটার আগে কলকাতা পুলিশ তাদেরকে আটকে দেয়, নাহলে এই ঘটনা বড় আকার নিতে পারত। এরা মূলত একটি ডেপুটেশন জমা দেওয়ার জন্য এসেছিল কিন্তু তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
খুব নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় প্যাটিকে। এর আগেও চার্লি হেব্দো হত্যাকাণ্ডের মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে। এর পরেও ফ্রান্সের নিস শহরের একটি গির্জার সামনে এক কট্টরপন্থী ইসলামবাদী জঙ্গি দুজন সাধরণ নাগরিকের শিরোচ্ছেদ করে। বার বার এমন নৃশংস ঘটনা ঘটতে থাকায় ফ্রান্স কঠোর হতে বাধ্য হয়। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিও তাদের সমর্থন করেন, এমনকি এঞ্জেলা মার্কেলের মত লিবারাল নেতাও এর প্রতিবাদ করতে বাধ্য হন। তবে ভারত কিন্তু শুরু থেকেই “অল ওয়েদার ফ্রেন্ড” ফ্রান্সের পাশে ছিল, যেখানে পাকিস্তান হত্যাকাণ্ডের পরে বিভিন্নভাবে ঘটনাটিকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করে গেছে। ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর অংশ হয়েও কিভাবে পশ্চিমবঙ্গের বুকে এমন একটি ইসলামবাদী সংগঠন এরুপ জমায়েত করতে পারে, সেই প্রশ্নও উঠছে সাধারণ মানুষের মনে। সাথে এই প্রশ্নটাও থেকে যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় কার পাশে?