ইসলামপুরের ঘটনা নিয়ে কিছু প্রশ্ন, উত্তর এবং পাল্টা প্রশ্ন

0
390

প্রশ্ন ১) ওই ছেলেগুলি বিদ্যালয়ের ছাত্র নয়, তারা কী করতে ওখানে গেছিলো ?

উত্তর:- যতদূর জানা যাচ্ছে, ছেলেগুলি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে করিয়ে দিই, ২০১৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট থ্রি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার আন্দোলনে শরিক হতে যাদবপুর থেকে এলিট ছাত্রদের আগমন ঘটেছিল, যদিও পার্ট থ্রি পরীক্ষার রেজাল্ট দেরি করে বেরোলে আখেরে ছাত্রছাত্রীদেরই ক্ষতি।

হোক কলরব পর্বে যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের সমর্থন করতে সমাজের সর্বস্তর থেকে সুশীল মানুষের ঢল নেমেছিল।

যেসব তথাকথিত আঁতেল মানুষ এই ঘটনায় বিজেপি, আরএসএস এর ভূত দেখছেন এবং উপরের প্রশ্নগুলি তুলছেন, তারা এগুলো ভুলে যান কীভাবে?

শুধু তাই নয়, মজার ব্যাপার হলো,আজও মালদহ গনি খান ইনস্টিটিউট এর ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে যোগ দিতে এই সুশীলরাই আহবান জানাচ্ছেন।

তাহলে ইসলামপুরের বেলায় এই দ্বিচারিতা কেন? এত কলকাতা থেকে কুড়ি কিলোমিটারের মধ্যে নয় বলে? এই ছেলেমেয়েগুলো এলিট নয় বলে? এখানে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের ছায়া টেনে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার সম্ভব নয় বলে?

প্রশ্ন ২) এত বহিরাগত এলো কোথা থেকে?

উত্তর: – বহিরাগত নয়, ওখানকার গ্রামবাসী। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নিই, সবাই বহিরাগত, তারাই প্রথম পুলিশকে আক্রমণ করে, তাহলেও একটি প্রশ্ন ওঠে। ইসলামপুরের ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি রাজ্যের ” চিকেন নেক’ এর অন্তর্গত, কাছেই বাংলাদেশ সীমান্ত। বাইরে থেকে এত লোক রাতের অন্ধকারে অস্ত্র নিয়ে চলে এলো, পুলিশ প্রশাসন কিছুই জানলো না?! এটি কার ব্যর্থতা? পুলিশমন্ত্রী পদত্যাগ করুন।

প্রশ্ন ৩) শিক্ষক নিয়োগে গ্রামের মানুষের কথা শোনা হবে কেন?

উত্তর: – কলকাতার এলিট সুশীল বুদ্ধিজীবী মহল এই প্রশ্ন তুলবেই, স্বাভাবিক।

আজ অবধি গ্রাম বাংলায় যেসব স্কুল কলেজ গড়ে উঠেছে, দেখবেন অধিকাংশই কোনো ব্যক্তি, কোনো ব্যক্তিবিশেষের দান করা জমিতে। আমার বাড়ির কাছেই একটি বিখ্যাত বিদ্যালয় আছে, নাম কালাচাঁদ হাইস্কুল। নামটা চাকচিক্যময় নয় যদিও স্কুলটির রেজাল্ট প্রতিবছর ভালোই হয়। তাহলে, এবার প্রশ্ন ওঠা উচিত – এহেন নাম কেন? স্কুলের জন্য যিনি জমি দান করেছিলেন, তার নামের স্মৃতিতে।

গ্রামে এক একটি স্কুলের সাথে এলাকার মানুষের আবেগ জড়িত থাকে কারণ হামেশাই দেখা যায় সাত আটটা গ্রামের ছেলেমেয়েদের জন্য একটি স্কুলই ভরসা। কলকাতার ছেলেমেয়েদের মতো তাদের প্রতিটা বিষয়ের জন্য প্রাইভেট টিউটর থাকে না। তাই দেখা যায়, এলাকার চাহিদা মেটাতে কোনো ব্যক্তি  জমি বা নিজের সঞ্চয় দান করছেন, স্কুলের জন্য গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রম দান করছেন। এগুলো যদি তারা করেন, তাহলে একশোবার  স্কুলের ভালো মন্দ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলবেন।কলকাতার এলিট বুদ্ধিজীবীদের মাথায় এগুলো ঢুকবে না, এসি ঘরের ঠান্ডা হাওয়ার চোটে পালিয়ে যাবে।

প্রশ্ন ৪) বাংলার শিক্ষক নিয়োগে স্থগিতাদেশ আছে, কীভাবে বাংলার শিক্ষক নিয়োগ হবে?

উত্তর: –  সম্পূর্ন মিথ্যা কথা। মহামান্য হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, তা ক্লাস নাইন টেনের শিক্ষকের জন্য প্রযোজ্য, পিজি স্কেলের টিচারদের জন্য নয়।এখন যা রিক্রুট হচ্ছে, যেসব শিক্ষক কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছেন তারা সবাই পিজি স্কেলের। পশ্চিমবঙ্গে আর যাই হোক, বেকারের অভাব নেই। বাংলা শিক্ষকের জন্য যোগ্য ব্যক্তি পাওয়া যাচ্ছে না , এই অভিযোগ তোলার জায়গা নেই।

প্রশ্ন ৫) সংস্কৃতর কথা চেপে যাওয়া হচ্ছে কেন?

উত্তর: –  সংস্কৃতর কথা কেউ চাপছে না, কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের নীতি ই পরিষ্কার করে দিচ্ছে উর্দুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব কতখানি চলছে।

কিছুদিন আগের খবর দেখে নিন। ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা যার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যের প্রশাসনে আমলা নিয়োগ করা হয়, সেখানে প্রত্যেক পরীক্ষার্থী কে একটি করে ঐচ্ছিক বিষয় বেছে নিতে হয় গ্ৰুপ এ এবং বি সার্ভিসের জন্য। ২০১৮ র ডব্লিউবিসিএস এর মেইন্স দিতে বসে ছাত্রছাত্রীরা অবাক হয়ে দেখলো, উর্দু ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে যারা বেছে নিয়েছে টেডেট প্রশ্নপত্র হুবুহু গত বছরের প্রশ্নপত্রের কার্বন কপি। তুমুল হৈচৈ হলো, বিপাকে পড়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষা বাতিল করলো। কিন্তু একইসঙ্গে ঘোষণা করলো উর্দুর পরীক্ষা নেওয়া হবে প্রায় দুই সপ্তাহ বাদে।  এই মহা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যাতে এক নম্বরে জন্য চাকরিপ্রার্থীর তালিকা বদলে যায়, সেখানে উর্দু ভাষার ক্যান্ডিডেট রা বাড়তি দশদিন সময় পেয়ে গেলেন। কেন? কার জন্য?

জি নিউজের লিঙ্কে দেখা যাচ্ছে , ওই স্কুলে কয়েক মাস আগেই উর্দু এবং সংস্কৃত ভাষার শিক্ষকের বদলে বাংলা ও বিজ্ঞান বিষয়ের জন্য গ্রামবাসীরা আন্দোলন করেছিল, তাদের দাবী প্রশাসন মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু ঘটনার দিন এস শিক্ষকরা কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন , তারা উর্দু ভাষার ই শিক্ষক। এরপরেই গ্রামবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ( সবশেষে লিংক দেওয়া হলো)

প্রশ্ন ৬)  সাম্প্রদায়িকতার রঙ দেওয়া হচ্ছে কেন?

উত্তর: – কেউ সাম্প্রদায়িকতার রঙ দেয়নি, রঙ দিচ্ছেন আপনারা, দিচ্ছে প্রশাসন, সুশীল সমাজ। আমাদের লড়াই স্থানীয় প্রত্যাশাকে চূর্ণ করে উর্দু চাপানোর বিরুদ্ধে। আমরা কেউ বলছি না উর্দু শুধুই মুসলিমদের ভাষা, কেউ না। উর্দু ভারতীয় ভাষা, যার বেশিরভাগ শব্দ সংস্কৃত থেকে এসেছে। কিন্তু এটা পশ্চিমবঙ্গ। এখানে বাঙালি থাকে, এখানকার ভাষা বাংলা। এখানে  উর্দু বা হিন্দি , যাই চাপানো হোক, প্রতিবাদ হবে। রঙ না দেখেই হবে।

এবার কিছু প্রশ্ন

১) ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয়ের কোনো সম্পত্তি ভাঙচুর করেনি। যে পুলিশ এতগুলো দাঙ্গা হওয়ার সময় ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকে, টেবিলের তলায় লুকোয়, তারা ছাত্রছাত্রীদের ওপরে গুলি চালালো কেন? কার নির্দেশে?

২) পুলিশ সুপারের কথামতো যদি ধরেও নিই, বহিরাগতরা অস্ত্র জড়ো করেছিল, তাহলে প্রশাসন সেই ব্যাপারে অন্ধকারে ছিল কেন? জবাবদিহি কে করবে?

৩) পুলিশ প্রশাসন হবে রাজনীতি নিরপেক্ষ, দল নিরপেক্ষ। সেখানে পুলিশ সুপার সাংবাদিক বৈঠকে বলছেন, বিজেপির লোক ধরা পড়েছে!! সারদাকান্ডের সময়ে রাজীব বাবুকে তো বলতে শুনিনি, টিএমসির লোক ধরা পড়েছে।

পুলিশ শাসকদলের চামচাগিরি কেন করছে?

উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। আমরা। সেইসঙ্গে তিনখানি শবদেহ।  বঙ্গে ভাষা আন্দোলনের প্রথম মৃত্যুঞ্জয়ী এঁরা।

বিশে সেপ্টেম্বর বাঙালির আত্মবলিদানের দিন। বাংলা ভাষা বাঙালির ভাষা। এর উপরে উর্দু চাপানো মানছি না মানবো না ।