ইসলামিক বাংলাদেশে নির্বাচনে দাঁড়ানোয় হিন্দু ধর্মীয় পরিচয় তুলে গালাগাল, ভিডিও ভাইরাল

0
824

বঙ্গদেশ ডেস্ক: ইসলামিক রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও ইসলামিক আগ্রাসনের খবর পাওয়া যায়। ভারতবর্ষের অনেক তথাকথিত সেক্যুলার ব্যক্তিরা এসব খবরকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দিলেও বাস্তবে ইসলামিক বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ইসলামিক আগ্রাসনের যে চিত্র তা মিথ্যা হয়ে যায় না। কারণ ইন্টারনেটে বিভিন্ন সময়ে সেখানকার বিভিন্ন ভিডিও ভাইরাল হয় যেগুলো দেখলে সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি ইসলামিক বাংলাদেশের উগ্র ইসলামিক জনগোষ্ঠীর মনোভাব প্রত্যক্ষভাবে জানা যায়। কিছুদিন আগেও এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যা দেখলে যে কোন সুস্থ বুদ্ধির মানুষ ধারণা করতে পারবে সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস্তব অবস্থাটি কেমন। 

চট্টগ্রামের ১১, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রাধা রানী দেবী টুনটু মুন। কিছুদিন আগেই নির্বাচনী প্রচারের জন্য রাস্তায় রাধা রানী দেবীর পোস্টার টাঙানো হয়। সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যায় একদল মুসলিম যুবক যারা স্থানীয় আওয়ামিলীগ কর্মী, তারা রাধা রানী দেবীর পোস্টারগুলো ছিঁড়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আসল চমক এখানে নয়, আসল চমক সেই আওয়ামিলীগ কর্মী মুসলিম যুবকদের কথোপকথনে যা ভিডিওতে শোনা যায়। 
ভিডিওটিতে দেখা যায় হলুদ জ্যাকেট পরিহিত এক যুবক বাঁশের মাধ্যমে রাধা রানীর পোস্টারগুলো নামিয়ে আনছে এবং সেগুলো জড়ো করে আগুন লাগানো হচ্ছে। পোস্টারগুলো পোড়ানোর এক পর্যায়ে ভিডিওতে উপস্থিত মুসলিম যুবকদের মাঝে একজনকে বলতে শোনা যায় যে, “ডেডারে পুড়ি ফেলন পরেদ্দে, ডেডারে এইল্লা রাখন নো যায়।” কথোপকথনটি চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ দাঁড়ায় এই যে “ডেডাকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, ডেডাকে এভাবে এভাবে রাখা যায় না।”

এটুকু পড়ার পর চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষা অর্থাৎ চাঁটগাইয়া ভাষার সাথে পরিচিতি না থাকা যে কেউ নিশ্চয়ই ভাববে যে এই কথার সাথে সাম্প্রদায়িক মানসিকতার সম্পর্কটা ঠিক কি! ইসলামিক বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে উগ্র মুসলিম সম্প্রদায় হেয় করার জন্য একাধিক অপমানজনক গালাগাল ও শব্দ ব্যবহার করে থাকে। যেমন, কাফের, মালাউন ইত্যাদি। চাঁটগাইয়া ভাষাতেও হিন্দুদেরকে দেওয়া গালাগাল হিসেবে ব্যবহৃত এমনই একটি শব্দ হলো “ডেডা” বা “ডান্ডি / ডান্ডির পুত”। চট্টগ্রামের হিন্দুরা এই শব্দগুলোর সাথে বহুল পরিচিত কারণ এই গালাগালগুলোর মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় এবং ছোটবেলা থেকেই তাদের মুসলিম প্রতিবেশী, সহপাঠী ইত্যাদিদের কাছ থেকে তারা মেন্টাল বুলিইং এর শিকার হয়ে এসেছে এবং তারা জানে যে ভবিষ্যতেও তাদের সাথে এমনই করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে রাধা রানী জানান, “নির্বাচনে দাঁড়ানোয় প্রথম থেকেই আমাকে হুমকি দেওয়া হয়ে আসছে। আমি সনাতনী বলে কি আমার নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার নেই? আমার বাবা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলেন কি নিজের ধর্ম ও সম্প্রদায়কে এভাবে গালাগাল শোনানোর জন্য? আমি যে কোনও দোষে দোষী হতে পারি কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে আমার ধার্মিক পরিচয় তুলে তারা গালাগাল দেবে? আমি হতাশ এই দেশের একজন হতভাগ্য হিন্দু হিসেবে।” ভিডিওতে হলুদ জ্যাকেট পরিহিত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আবু ছালেহ সুমন যিনি আওয়ামিলীগ কর্মী এবং আওয়ামিলীগ নেতা আবদুস সবুর লিটনের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তার বাকি মুসলিম সহযোগীরাও আওয়ামিলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। এই একটি ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে ইসলামিক বাংলাদেশে আওয়ামিলীগ হোক বা বিএনপি, তাদের চোখে যে কোন হিন্দুধর্মের অনুসারী কাফের, মালাউন, ডেডা বা ডান্ডির পুত ছাড়া যে কিছুই নয় এই ভিডিওটিই তার প্রমাণ। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ইসলামিক বাংলাদেশের কদর্য রূপের বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে। কারণ ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলমান ব্যতীত যে কোন বিধর্মীই তাদের কাছে কাফের, মালাউন, ডেডা ইত্যাদি।