হ্যাঁ, আমি ক্ষমতা পাগল দিদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার বীজমন্ত্র পেয়েছি

 

                ============================বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ==========================

এই রচনাটি একটি রাজনৈতিক বাঙ্গধর্মী রচনা। একটি বিখ্যাত রাজনৈতিক চরিত্রের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও  কার্যকলাপের থেকে তাঁর যে মানসিকতা ফুটে উঠেছে বলে লেখকগণ মনে করেন, এই রচনায় তারই প্রতিফলন রয়েছে। এই রচনার লেখকগণ, সম্পাদক ও প্রকাশকগণ কখনোই দাবী করছেন না যে এই রচনার বক্তব্য ঐ ব্যক্তির proven চিন্তাধারা। সংবিধান নাগরিকদের মতামত ও অভিব্যক্তি প্রকাশের যে স্বাধীনতা দিয়েছে সেই অনুসারে এটি একটি শ্লেষাত্মক রচনা এবং কারো প্রামাণ্য বক্তব্য বা মনোভাব নয়।

          ===================================================================

 

বিশ্বাস হচ্ছে না, মনে মনে ভাবছেন এতজন বিরোধী দলের তাবড় তাবড় নেতা থাকতে আমার মতো একটি আঞ্চলিক দলের নেত্রী কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়? সি.পি.এম ও তাই ভেবেছিল এবং অচিরেই তাদের ভুল ভেঙ্গেছে। শুধু তাই নয় যারা আমাকে তাদের অপছন্দের তালিকার শীর্ষে রেখেছি অথচ আমাকে সমর্থন বা ভোট দিয়ে সাহায্য করেছিল কেবলমাত্র সি.পি.এম কে ক্ষমতা থেকে সরাবে বলে। তারপর আমাকে অচিরেই সরিয়ে দেওয়া যাবে ভেবেছিল। কিন্তু তারা আমাকে চিনতে ভুল করেছিল। ঠিক যেমন এখনও সব বিরোধী দলের নেতারা ভাবছে এবং ভুল করছে। তারা জানে না যে আমি ক্ষমতা পিপাসু। ক্ষমতার জন্যে আমি সবকিছু করতে পারি ও করে এসেছি। কোনো শক্তি আমাকে আটকাতে পারে নি, পারবেও না। তার জন্যে যে কোনো মূল্য আমি দিতে ও নিতেও পারি। শয়তানের কাছে নিজেকে বিক্রি করতেও আমি পিছুপা হবো না। তাতে দেশ ও জাতি রসাতলে গেলেও আমার কিছু আসে যায় না। ভারতবর্ষ হাজার বৎসরের বেশি সময় ধরে মুসলমান ও ব্রিটিশের কাছে পরাধীন ছিল। আগামী দিনে আবার না হয় দশ হাজার বৎসরের জন্য অন্ধকার যুগে চলে যাবে। কিন্তু আমরা যারা একমাত্র ক্ষমতার পূজারী তাদের কাছে কোনো কিছু আসে যায় না।

আমি আমার অক্ষমতা জানি। জানি নেতা হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। আমার সে পড়াশুনা করার ধৈর্য্য বা ক্ষমতা নেই, তাই 15 বয়সের আগেই রাজনীতিতে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক দাদাদের দিয়ে পরীক্ষার খাতা লিখিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সত্যি কথা বলতে কি টোকাটুকির জন্য অনেক ধৈর্য্য ও ব্যুৎপত্তির প্রয়োজন যা আমার নেই।০ পাশ করার দরকার, তাই আমি বরাবর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব পরীক্ষা দিয়ে এসেছি। আমি এ পর্যন্ত কোনো লুকোছাপা করিনি, আমার জ্ঞানগম্মি বোঝার জন্য আমার কবিতা বা গল্প বা ভাষণ অথবা আঁকাই যথেষ্ট। ভারতবর্ষে সবচেয়ে বুদ্ধিমান সন্তানরা নিশ্চয় তা বুঝতে পেরেছেন বা পারছেন। আমি এগুলো না লিখতে বা আঁকতে পারতাম। এটাও আমার একটা স্ট্র্যাটেজি। তবে হ্যাঁ প্রথম দিকে এম. পি প্রার্থী হয়ে জেতার জন্যে আমেরিকার ডক্টরেট হিসেবে মিথ্যে ডিগ্রির আশ্রয় নিতে হয়েছিল। বুদ্ধিমান বাঙালি ও গবেট সি. পি. এম নেতৃত্ব আমার হাওয়াই চটি আর সাজপোশাক দেখে এতটাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলো যে একবারও  প্রশ্ন পর্যন্ত তোলেনি। যাচাই করেনি যে আমেরিকার কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি ডক্টরেটটা পেয়েছি।

সোজা ফাঁকা মাঠে গোল, ওদের মতো বড়ো নেতাকে ডিগবাজি খাইয়ে। এই একটা চাল আমাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছে যে নিজেকে যারা বুদ্ধিমান ভাবে তারা ততই গবেট। হ্যাঁ, তবে আমি আমার মিথ্যেকে সত্যি করেছি, বড় নেত্রী হয়ে নিজেই নিজেকে অনারারি ডক্টরেট প্রদান করে। শুধু মাঝখানে কিছু বৎসর ডক্টরেটটা লিখতে পারিনি এই যা।

এইভাবে প্রথম এম. পি হওয়ার কায়দা আমার চোখ খুলে দিল। শুরু হলো প্রতিটি সুযোগে তিলকে তাল করার খেলা। যাতে এসে পড়লো বাদশা আলমের ঘটনা, ও তার পরবর্তী একগাদা মারের ঘটনা। প্রতিটা সুযোগই আমি কাজে লাগালাম। প্রতিবার আমার বাঁধা নার্সিং হোমে যেতাম, বাঁধা ডাক্তারকে দিয়ে চিকিৎসা করাতাম; কোনো রকম সাংবাদিকদের আমার ক্ষত দেখতে দিইনি। সে কারণে আমার কোনো ছবিও নেই একমাত্র ব্যাণ্ডেজ করা অবস্থায় দেখে থাকবে। আর সারা পশ্চিমবঙ্গে হাহাকার পরে গেলো যে মেয়েটা মার খেতে খেতে মরে যাবে রে। এই সহানুভূতি আমাকে রাজনীতিতে অনেক দূর পর্যন্ত উঠতে সাহায্য করেছে।

সুযোগ আমাকে অনেকদিন থেকে হাতছানি দিচ্ছিলো, কংগ্রেস অনেকদিন আগেই এই প্রদেশে মুসলমান পার্টি হিসেবে পরিনত হয়েছিল। আর ভারতবর্ষের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিজেপির নেতৃত্ব পচিমবঙ্গের পরিবর্তিত মনের ধ্যানধারণার অভাবে অচিরেই আমার নতুন গড়া দলকে প্রধান দল করে নিজেরা জুনিয়র পার্টনার হয়ে নির্বাচনে লড়তে গেলো। অথচ ওদের হাতের কাছেই আগের ভোটের রেজাল্ট ছিল সেখানে নাম মাত্র প্রচারহীন বিজেপি প্ৰাৰ্থীরা প্রায় ২০ শতাংশের নাকের ডগায় ভোট পেয়েছিলেন যা সিপিএমের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাছে অবিশ্বাস্য। মজা হলো, সি.পি.এম এবং পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি-বিরোধী প্রচারমাধ্যম বিজেপির উত্থান রুখতে আমার দলকে প্রধান দল হিসেবে গলা ফাটাতে লাগলো। আর তাতে যজ্ঞাহুতি দিলেন বিজেপির মহৎ নেতা বাজপেয়ীজি আমার বাড়িতে এসে আমার মাকে  প্রণাম করে। বিনীত হওয়া খুব ভালো কিন্তু  রাজনীতিতে অঙ্গভঙ্গিমা থেকে, দুই নেতার করমর্দনের ভঙ্গিমা থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ হয় যে কে কার কাছে নতজানু হলেন। এটা ছিল বাজপেয়ী তথা তখনকার বিজেপি নেতৃত্বের সবচেয়ে বড়ো ব্লান্ডার। শুধু তাই নয়, আজ এই মুহূর্তে আমার পার্টির শতকরা ৮০ ভাগ হিন্দু ভোটার মনেপ্রাণে বিজেপির সমর্থক। শুধু তাই নয়, সিপিএমের হিন্দু ভোটের পঞ্চাশ ভাগের বেশী বিজেপির সমর্থক। ওদের কেবলমাত্র এই সমর্থকদের জানাতে হবে যে বিজেপি এবার সত্যি জেতার জন্যে লড়ছে। আমার সঙ্গে কোনো গোপন বা অনুক্ত সমঝোতা করে নয়।

বাস্তবিকই, ভারতবর্ষের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গই বিজেপির সবচেয়ে উর্বরভূমি। যেখানে একবার ক্ষমতায় আসলে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে বিজেপিকে কেউ সরাতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সমর্থকদের অসীম দুর্ভাগ্য যে ওদের নেতৃত্ব তাদের রাজ্যের আত্মার খবর রাখে না। বিজেপির বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের প্রায় সকলে আমার  মিথ্যে মামলার ভয়ে আমার প্রকৃত বিরোধী হবার সাহস জোগাড় করে উঠতে পারে নি। তবে আমি মনে করি যে বিজেপি চাইলে দশ হাজার নেতা এই রাজ্যে খুঁজে পাবে যাদের যে কেউ আমার প্রকৃত বিরোধী হয়ে আমার দলকে পোস্টার পার্টিতে পরিণত করতে পারে। কিন্তু মজার কথা হলো বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দশ হাজারের মধ্যে একজনকেও খুঁজে বের করতে পারলো না। সঙ্গে আমার সৌভাগ্য যে বিজেপির ৮০ শতাংশ হিন্দু ভোটারের সমর্থন নিয়ে আমি রাজত্ব করছি।

তবে হ্যাঁ, আমার আসল তুরুপের তাসের কথা জানে না বা বলে না। আসল কথা হলো ডিরেক্ট বা ইন্ডিরেক্ট থ্রেট, যা সাধারণভাবে কারো নজরেই পড়বে না। এক কোটি কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিয়েও আমার জেনারেল রিগিং বন্ধ করেও আমাকে হারানো যাবে না। প্রতিটি কলোনি বা বস্তি বা গ্রামের গরিবদের দেওয়া ভোট প্রতিটি বুথের রেজাল্ট প্রকাশ করে দেওয়া হয়। এর থেকে আমি সহজেই জানতে পারি কারা আমাদের ভোট দিয়েছে এবং কারা দেয়নি। আর এই গরীব লোকেদের ১০ ফুট X ১০ ফুট ঘরে ছয় সাতজন থাকে; হয়তো পুরো বুথের লোকেরা বস্তির একটা চালার মধ্যেই থাকে। সেখানে বুথের ভোটার ফল প্রকাশ করা , প্রত্যেকটি ব্যক্তি কাকে ভোট দিয়েছে তা প্রকাশ করার সমান।                     

প্রথমবারের সিপিএম তাড়ানি ভোট জয়যুক্ত হওয়ার পর থেকে আমি জানতাম আমার ভবিষ্যৎ জেতার সূত্রগুলো কোথায় কোথায় লুকিয়ে  আছে। আমার জেতার প্রথম শর্ত হলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলায় মাৎসন্ন্যায় বা সিন্ডিকেট রাজ প্রতিষ্ঠা করা। পাড়ায় পাড়ায়, অলিতে গলিতে, রাজপথে সর্বত্র সকলকে লেলিয়ে দেওয়া। কিছু বড়ো মাছ ছোট মাছকে খাবে; যে যার আখের গোছাবে, আবার পাকাপাকি ভাবে গুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠা করা আর অঞ্চলের প্রতিটা ঘটনা থেকেই কিছু না কিছু প্রাপ্তি ঘটাবে, আর প্রতিটা গরীব গ্রামের বা কলোনি বা বস্তি বা প্রত্যেকটা বুথের ভোটের ফল দেখে আমার গুন্ডারা সহজেই বুঝতে পারে কারা আমাদের ভোট দেয়নি। ফল দেখে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি আমার ভোট ব্যাঙ্ক অক্ষত রাখে। মিডিয়া তৈরি করে আমার জনপ্রিয়তার মিথ (গল্প)| যেহেতু এইসব বস্তি বা কলোনির ছোট ঘরটি ছাড়া সবই পাবলিক – জল-কল- বাথরুম। তাই সহজে তা বন্ধ করে দেওয়ার ভীতি প্রদর্শনই যথেষ্ট ওই গরীব লোকদের দিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক ভরানোর জন্য।

সত্যি কথা বলতে ওদের সবসময় ভয় দেখানোর দরকার পরে না কারণ ওই বুথের বুদ্ধিমান লোকেরা; তাদের মতাদর্শ যাই হোক না কেন, তারাই বুথের সকলকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমার দলকে ভোট দেওয়ায় – পরিণামের কথা আগাম ভেবে। এক কোটি সেন্ট্রাল ফোর্স মোতায়েন করে হয়তো আমার সামান্য রিগিং বন্ধ করতে পারে, কিন্তু বুথের রেজাল্ট থেকে পাওয়া ফিয়ার সাইকোলজি থেকে ভোটারদের বার করে আনতে পারবে না। যতদিন নির্বাচন কমিশন বুথ ভিত্তিক ফল প্রকাশ করবে, ততদিন ওরা আমার মাৎস্যন্যায় সিস্টেমকে ব্রেক করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, কোনোদিন যদি এই আলাদা করে বুথের ফল প্রকাশ বন্ধ করে গোটা কনষ্টিটুয়েন্সির ভোটের ফল প্রকাশ করা হয়, তখন হয়তো আমার পার্টি সাইনবোর্ড পার্টিতে পরিণত হবে। তবে আমি জীবিত থাকতে কখনও এইটা হতে দেব না কারণ ক্ষমতায় আমায় থাকতেই হবে। ক্ষমতায় থাকতে জানতে হয়।

আমি অনেক বছর ধরে দেখেছি বামপন্থীরা কিভাবে বাংলাদেশ থেকে মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার লিস্টে নাম যোগ করে, তাদের ভোটে নিজেদের জয় সুনিশ্চিত করেছে। আমি মনে মনে ভাবতাম এই নিশ্চিত ভোট ব্যাঙ্ক কবে আমার হবে। বি.জে.পি বরাবর এই অনুপ্রবেশকারী ভোট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছে। কিন্তু তোমরা লক্ষ্য করে দেখ, আমি যখন বি.জে.পি’র সাথে ছিলাম তখনও কখনো অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলিনি।

বামপন্থীদের লোহার দুর্গে যখন আমি দাঁত বসাতে পারছিনা, তখন আমার মাকে  বাজপেয়িজীর করা একটি প্রণাম,  আমার কাছে স্বর্গের থেকে খসে পড়া একটা পারিজাতের মালার মতো নেমে এল। বি.জে.পি নিজেই ধরে নিল, বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা সাম্প্রদায়িক তকমা আঁটা বি.জে.পি কে নেবে না। বি.জে.পি করলে সি.পি.এমের হাতে মার খেতে হবে; অতএব আমাকেই ভরসা। ব্যাস বি.জে.পি’র ভোট ব্যাঙ্ক চলে এলো আমার পকেটে।  

অবশেষে মুসলমানদের দাবি ক্রমশঃ বাড়তে বাড়তে এমন জায়গাতে চলে গেল যে, বামপন্থীরা তাদের দাবি আর মেটাতে পারলো না বা মেটানো সম্ভব হল ন। তখন মুসলমানদের সময় এল নতুন সঙ্গী খোঁজার। ঠিক এই সময়টার জন্যে আমি বহু বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। ওদের দাবি মানার পরিণতি কি হবে, তা সম্পূর্ণ জেনেও বি.জে.পি’কে নিমেষে “সাম্প্রদায়িক” তকমা দিয়ে, তাদের সঙ্গ ছেড়ে, ইসলামিক লবির হাত ধরতে আমার এক মুহূর্তও সময় লাগল না। দেশ বিদেশের মৌলবাদীদের আশীর্বাদ আমার মাথার ওপর বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ল। সংবাদ মাধ্যম, বড় বড় প্রচার বিশেষজ্ঞ, নির্বাচনী রচয়িতা এবং সর্বোপরি বাংলার সমস্ত মস্তান-সমাজ আমার পেছনে এসে দাঁড়াল। হল বাংলার পটপরিবর্তন। তারপরের ইতিহাস সকলের জানা। আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি।

সংবিধানকে কাঁচকলা দেখিয়ে ইমামদের ভাতা ঘোষণা করে দিলাম। হাইকোর্ট মামলার দিন পিছিয়ে পিছিয়ে, আড়াই বছর মামলা টানল। আমার কাজ ততক্ষণে হয়ে গেছে। প্রগতিশীল মুসলমান মহিলারা, হাজারে হাজারে কলেজ স্কোয়ারে জড়ো হয়ে সভা করে, মুসলমান সমাজের তালাক, বহুবিবাহ সহ অনেক কুপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করল। কোনো মিডিয়া তা প্রকাশ করল না। মৌলবাদী মুসলমানেরা মুসলমান নারীদের এই আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করল। আমি মৌলবাদীদের পক্ষ নিলাম  কারণ আমি জানতাম প্রগতিশীল মুসলমান মহিলারা কিছুই করতে পারবে না, বরং মৌলবাদীদের সাথে থাকলে, আমার মুসলমান ভোটব্যাংক অক্ষুন্ন থাকবে। হলও তাই।

এদিকে বাম আমলে শুরু হওয়া চিট-ফান্ড দুর্নীতি আমার আমলে অকল্পনীয় মাত্রায় বেড়ে গেল। দলীয় নেতা, অভিনেতাদের লাগিয়ে দেওয়া হল। গ্রাম-বাংলার মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে গরীবতম মানুষের কাছে, যেটুকু খুদকুঁড়ো ছিল, তা চিটফান্ড হয়ে চলে এলো আমাদের হাতে। বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখে বাংলার মানুষ একটুও সন্দেহ করেনি যে তাদের পুরো টাকা বেহাত হয়ে যাবে।

২০১১ তে বাংলার সরকার গড়ার পর থেকে আমি ক্রমাগতই বিজেপিকে তুলোধোনা করে গেছি। কিন্তু আল্লার কি করিশ্মা কে জানে, বিজেপি নেতাদের মধ্যে বরাবরই একটা ক্ষীণ আশা ছিল যে, আমি হয়তো কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রকে সাহায্য করার জন্যে বিজেপিকে সাহায্য করলেও করতে পারি। তাই ২০১৪র লোকসভা ভোটে বিজেপি পশ্চিমবাংলায় কোনও উদ্যোগ নিলই না। আমার পোয়া বারো।

২০১৪ তে কেন্দ্রে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেসের সরকার হবে ধরে নিয়ে, আমি সারদা-সহ সব চিট-ফান্ডের দুর্নীতির ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির সরকার হলেও আল্লা এক অভাবিত সুযোগ এনে দিল। রাজ্যসভাতে আমার অনেকগুলো এম. পি.। বিভিন্ন বিল পাশ করাতে রাজ্যসভাতে আমার ভোটগুলো বিজেপির দরকার ছিল।

চিটফান্ডের তদন্ত দুর্বল হল। বলির পাঁঠা হয়ে কয়েকজন জেল খাটল, আবার অনেকে ছাড়াও পেয়ে গেল। যারাই আমার বিরুদ্ধে সামান্যতম মুখ খুলেছে, বা একটা কার্টুন এঁকেছে, তাদেরই ধরে জেলে দিলাম। আমার আঁকা ছবি কোটি টাকাতে বিক্রি হল, কারোর প্রশ্ন করার সাহস নেই। পুলিশ আমার ব্যক্তিগত গুণ্ডাবাহিনীর মতো হয়ে গেল। আমার দলের অনুমোদন ছাড়া কলেজে কারো ভর্তি হবার উপায় রাখলাম না। ঠিক এমনই একটা রাজত্ব কায়েম করারই আমি স্বপ্ন দেখতাম।

এবার আমি  ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের কথায় আসি। মোদীর দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ‘ত্রাহি ত্রাহি’ রব উঠেছে। আমার উদ্যোগে তাই দুনিয়ার চোরসমাজ এক হল। রব তুলে দিলাম ‘মোদী হঠাও দেশ বাঁচাও’। লালুরা জেলের মধ্যে থেকেও এর প্রতিধ্বনি করল। আমার অনুগত মিডিয়া রটিয়ে দিল, আমার দল পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৪০ টা লোকসভা আসন জিতে, কেন্দ্রে সরকার গড়ার নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে। অন্য সব দল থেকে প্রধানমন্ত্রী হবার দাবীদার যথেষ্ট। তারা ভাবল, ৩৫ – ৪০ টা এম. পি. আসন নিয়ে আমি কি করে প্রধানমন্ত্রী হব। অতএব এখন আমার দলের সমর্থন ও সুবিধা নিলেও, আমি তাদের প্রধানমন্ত্রী হবার পথে কোনও কাঁটা হব না।

এইখানেই ওদের মূর্খতা আর এটাই আল্লার করিশমা। ওরা খালি এম. পি.র সংখ্যা দেখছে, কিন্তু আমার পেছনে যে আন্তর্জাতিক ইসলামিক লবির আশীর্বাদ আছে, তা দেখার দূরদৃষ্টি ঐ বিজেপি বিরোধী হিন্দু নেতাদের নেই। আমি পশ্চিমবাংলায় ইসলামের প্রসারে যা অবদান রেখেছি মৌলবাদী মুসলমানেরা তা বোঝে। লালু-অখিলেশ-মায়াবতী-কেজরিওয়াল-রাহুলরা জানে না, যে এন.ডি.এ যদি সরকার গড়ার মতো সংখ্যা না পায়, সব বিরোধীদলের মুসলমানরা আমাকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবী করবে ; তারা নিজের নিজের দলকে চূড়ান্ত হুমকি দেবে, মিডিয়া আমাকে দেবী দূর্গা বলে তুলে ধরবে, কারণ তারা জানে আমার সাথে বাণিজ্য করে তারা কত আরাম পাবে। ইসলামিক দুনিয়ার সমর্থন এবং তাদের মদতপুষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, বুদ্ধিজীবী ও বিশাল মস্তানকুলের সমর্থনের কথা তো বলাই বাহুল্য।

সম্মিলিত বিরোধীজোট কল্পনাও করতে পারছে না আমি একবার প্রধানমন্ত্রী হলে বি.জে.পি বিজেপি তো দূরের কথা, বিরোধীদের কেউ আগামী ৫০ বছরেও আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। ভারতের আমি চিরতরে এমন পরিবর্তন এনে দেব, যার থেকে ভারত হাজার বছরের মধ্যেও বেরিয়ে আসতে পারবে না। তখন বিজেপি তো ছাড়, কোথায় থাকবে বি.এস.পি-এস.পি-কংগ্রেস। তখন ভারতে থাকবে একটি দল, একটি মতবাদ, একটিই ক্ষমতা কেন্দ্র। আর আমি? আমার নাম চিরদিন ইতিহাসে লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে, ভারতের শেষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।

কারণ তারপর আর গণতন্ত্র থাকবে না। ভারতে শুরু হবে এক নতুন ধরনের রাজত্ব। আগের সব ইতিহাস ধুয়ে মুছে দেওয়া হবে, যেমন ইরান ইরাক বা আফগানিস্তানে হয়েছে। তারপর এই নতুন মডেল ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। তাই ভারতে আমার প্রধানমন্ত্রীত্ব হবে পৃথিবীর ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণ।