মার্কিন গণহত্যা সংস্থা স্বীকৃত ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা পাকিস্তানের

0
498

বঙ্গদেশ ডেস্ক:পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন (এলআইজিপি) দ্বারা জারি করা একটি বিবৃতিকে ‘অসম্মান’ করতে চাইছে, যা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের গণহত্যার নৃশংসতাকে পুনরায় নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫০ তম বার্ষিকীতে লেমকিন ইনস্টিটিউট ২০২১ সালের ১ লা ডিসেম্বর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জাতিসংঘকে অবিলম্বে বাঙালি গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিতে বলেছিল। ভুক্তভোগীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং অপরাধীদের দায়ী করার উপায় হিসেবে গণহত্যার বিভিন্ন তথ্য‌ও তুলে ধরেছিল।এদিকে, ইসলামাবাদ স্পষ্টতই লেমকিন ইনস্টিটিউটের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এলআইজিপিকে তার অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য বিবৃতিতে থাকা অভিযোগগুলিকে অবৈধ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে৷

১৯৭১ সালের গণহত্যার সময়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ৪০০,০০০ বাঙালি নারী ও মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল। হলোকাস্টের পর এটিকে দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা বলে মনে করা হয়েছে।

LIGP-এর বিবৃতিতে আরও সংযোজন করা হয়েছে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি (বর্তমানে বাংলাদেশ) পশ্চিম পাকিস্তানের (যা এখন পাকিস্তান) বৈষম্যমূলক আচরণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের নীতিগুলি পূর্ব পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক নীতি ধ্বংসের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়কে ক্ষুণ্ন করেছে এবং তাদের উপর এককভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের পরিচয় প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তখন বাংলা ভাষায় কথা বলার উপর বিধিনিষেধ ছিল, এবং উর্দুকে সরকারী ভাষা হিসাবে মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল, যা বিভাজনের পরপরই শুরু হয়েছিল। এটির জন্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের নির্মম নিপীড়ন এবং দমনের মাধ্যমে এটি হয়েছিল।

বিবৃতি অনুসারে, পাকিস্তান বিরোধীদের নীরবে হত্যার জন্য কঠোর এবং ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন সহ গণহত্যার কৌশল গ্রহণ করতে “অপারেশন সার্চলাইট” শুরু করা হয়েছিল। পরাজয়ের সম্মুখীন হয়ে হাজার হাজার বাঙালি বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেসময় বহু সাংবাদিক, দার্শনিক, কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, লেখক, শিক্ষাবিদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা, আইনজীবী, চিকিৎসক এবং আরও কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছিল।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতাকে আন্ডারলাইন করে, বিবৃতিটি বাঙালিদের বিরুদ্ধে যৌন হিংসার ভয়ঙ্কর নীতির নিন্দা করেছে এবং বেশিরভাগ বাঙালি হিন্দু নারী ও মেয়েদের, জঘন্যভাবে গণধর্ষণ, জীবনশক্তির নৃশংসতা, যৌন দাসত্ব, যৌন নির্যাতন এবং জোরপূর্বক যৌনহিংসতার সমালোচনা করা হয়েছে।

এলআইজিপি-এর বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকারের দ্বারা জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হ‌ওয়ার পরে বাঙালি নাগরিকদের বিচারের জন্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার এবং অপরাধীদের জবাবদিহির জন্য বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত প্রচেষ্টাকেও সাধুবাদ জানানো হয়েছে।

লেমকিন ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে তার ন্যায়বিচারের প্রচেষ্টায় সাহায্য ও সমর্থন প্রদানের পাশাপাশি পাকিস্তানকে সত্য ও ন্যায়ের সন্ধানে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে রাজি করার জন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গতবছর হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যা সম্পর্কে একটি তথ্য প্রকাশ করেছিল এবং এই গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দেওয়ার আলোচনা প্রস্তাব করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি ওয়েব অ্যানালাইসিস ডিভিশন এটি “বাঙালি হিন্দু গণহত্যা” ওয়েব পেজটি ওই দেশে কালো তালিকাভুক্ত করে।